তাফসীরুল কুরআন: সুমহান সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালনই সর্বশ্রেষ্ঠ আমল

সংখ্যা: ২৫৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

يايها الناس قد جاءتكم موعظة من ربكم وشفاء لـما فى الصدور وهدى ورحمة للمؤمنين. قل بفضل الله وبرحمته فبذالك فليفرحوا هو خير مـما يجمعون.

তরজমা: হে মানুষেরা! তোমাদের রব তায়ালা উনার তরফ থেকে তোমাদের নিকট এসেছেন নছীহতকারী, অন্তরের আরোগ্য দানকারী, হিদায়েত দানকারী এবং মু’মিনদের জন্য রহমত দানকারী। (অতএব হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি (উম্মতদেরকে) বলে দিন, মহান আল্লাহ পাক উনার ফদ্বল ও রহমত স্বরূপ আপনাকে যে তারা পেয়েছে, সেজন্য তাদের কর্তব্য তথা ফরয হচ্ছে খুশি প্রকাশ করা। এই খুশি প্রকাশের ইবাদত মুবারক হবে তাদের সমস্ত ইবাদত বা আমল অপেক্ষা উত্তম বা শ্রেষ্ঠ। (পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৭-৫৮)

তাফসীর: মুহব্বত, মা’রিফাত, তায়াল্লুক-নিসবত, রহমত, বরকত, সালাম-সাকীনাহ, নিয়ামত, মাগফিরাত, সুপারিশ-শাফায়াত, নাজাত, কুরবত, কামিয়াবী, রিযামন্দী-সন্তুষ্টি অর্জন ও হাছিলের ক্ষেত্রে মূল উছীলা হচ্ছেন কুল মাখলূক্বাতের যিনি নবী ও রসূল, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, ইমামুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অতঃপর উছীলা হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূত-পবিত্র সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ ও আওলাদ পাক আলাইহিমুস সালাম উনারা। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সমস্ত প্রকার নিয়ামত মুবারক হাছিল করেছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাধ্যমে। কিন্তু পরবর্তীকালে অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর উম্মতকে সেই নিয়ামত মুবারক হাছিল করতে হলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যেসকল সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ ও আওলাদ পাক আলাইহিমুস সালাম উনারা যমীনে অবস্থান করছেন উনাদের মাধ্যমে হাছিল করতে হবে। এ লক্ষ্যেই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

قُل لَّا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِى الْقُرْبَىٰ

অর্থ: “(আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি উম্মতদেরকে বলে দিন, আমি তোমাদের নিকট কোন প্রতিদান চাই না। (বস্তুত আমার পক্ষে প্রতিদান চাওয়াটাও যেরূপ স্বাভাবিক নয় তদ্রƒপ তোমাদের পক্ষে প্রতিদান দেয়াটাও সম্ভব নয় বরং প্রতিদান দেয়ার চিন্তা করাটাও কুফরীর সামিল।) তবে যেহেতু তোমাদেরকে নাজাত ও নিয়ামত হাছিল করতে হবে সেজন্য তোমাদের প্রতি ফরয হচ্ছে আমার সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করা। (পবিত্র সূরা শূরা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ২৩)

সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে, “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা তিনি বলেন, আমি দেখেছি যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (বিদায়) হজ্জের সময় আরাফার দিন উনার ক্বাছওয়া নামক উষ্ট্রীর উপর সওয়ার হয়ে খুতবাহ দিচ্ছেন। খুতবার মধ্যে তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে মানুষেরা! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মাঝে এমন দুই নিয়ামত রেখে যাচ্ছি; উক্ত দুই নিয়ামত মুবারক উনাদেরকে যদি ধারণ করে রাখতে পার, তবে কখনোই তোমরা গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট হবে না। (এক) মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাব (দুই) আমার ইতরাত বা আহলু বাইত শরীফ।

উপরোক্ত সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা প্রতিভাত যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত কিতাব কুরআন শরীফ উনার সম্পর্ক যেরূপ উনার পূত-পবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে সম্মানিত কুরআন শরীফ উনার সম্পর্ক তদ্রƒপই।

অতএব, কোন ব্যক্তি, কোন গোষ্ঠী, কোন জাতী শত-সহ¯্র বছর ধরে যদি সম্মানিত কুরআন শরীফ, সম্মানিত হাদীছ শরীফ, সম্মানিত তাফসীর শরীফ, সম্মানিত ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাব  পড়ে ও পড়ায়, আমল করে ও করায় তবুও তারা হিদায়েত ও নাজাত পাবে না যতক্ষণ পর্যন্ত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং উনার সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে তারা হাক্বীক্বীভাবে মুহব্বত না করবে, উনাদের প্রতি পরিপূর্ণ হুসনে যন বা সুধারণা পোষণ না করবে, উনাদের প্রতি শুদ্ধ আক্বীদা পোষণ না করবে, উনাদের ছানা-ছিফত মুবারক না করবে, উনাদেরকে সম্মান না করবে এবং উনাদের খিদমত মুবারক উনার আঞ্জাম না দিবে।

যেমন এ প্রসঙ্গে হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে, তিনি সম্মানিত কা’বা শরীফ উনার দরজা মুবারক ধরে বলেছেন যে, আমি শুনেছি, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সাবধান! নিশ্চয়ই আমার সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ উনারা হলেন তোমাদের মাঝে হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার কিশতীর ন্যায়। যে তাতে আরোহন করেছে সে রক্ষা পেয়েছে আর যে আরোহন করেনি, সে ধ্বংস হয়ে গেছে। (মুসনাদে আহমদ শরীফ)

কাজেই, ধ্বংস থেকে রক্ষা পেতে হলে, জাহান্নামের কঠিন আযাব থেকে মুক্তি পেতে চাইলে সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ ও আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে মুহব্বত করতে হবে। সর্বোপরি উনাদের বিরোধিতা ও সমালোচনা করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

তাফসীরুল কুরআন: কুরআন ও সুন্নাহ’র বিধান অনুসারে চলা প্রত্যেকের জন্য ফরয অন্যথায় পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ-৮

তাফসীরুল কুরআন : কুরআন ও সুন্নাহ’র বিধান অনুসারে চলা প্রত্যেকের জন্য ফরয অন্যথায় পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ-৯

তাফসীরুল কুরআন: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনই সর্বশ্রেষ্ঠ আমল

তাফসীরুল কুরআন: কুরআন ও সুন্নাহ’র বিধান অনুসারে চলা প্রত্যেকের জন্য ফরয অন্যথায় পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ-১০

তাফসীরুল কুরআন:  কুরআন ও সুন্নাহ’র বিধান অনুসারে চলা প্রত্যেকের জন্য ফরয অন্যথায় পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ-১১