يايها الناس قد جاءتكم موعظة من ربكم وشفاء لـما فى الصدور وهدى ورحمة للمؤمنين. قل بفضل الله وبرحمته فبذالك فليفرحوا هو خير مـما يجمعون.
তরজমা: হে মানুষেরা! তোমাদের রব তায়ালা উনার তরফ থেকে তোমাদের নিকট এসেছেন নছীহতকারী, অন্তরের আরোগ্য দানকারী, হিদায়েত দানকারী এবং মু’মিনদের জন্য রহমত দানকারী। (অতএব হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি (উম্মতদেরকে) বলে দিন, মহান আল্লাহ পাক উনার ফদ্বল ও রহমত স্বরূপ আপনাকে যে তারা পেয়েছে, সেজন্য তাদের উচিত খুশি প্রকাশ করা। এই খুশি প্রকাশের আমলটি হবে তাদের সমস্ত নেক আমল অপেক্ষা উত্তম বা শ্রেষ্ঠ। (পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৭-৫৮)
তাফসীর: যিনি কুল মাখলূক্বাতের নবী ও রসূল, যিনি সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরুম মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনে আগমন, তাশরীফ মুবারক গ্রহণ তথা বিলাদত শরীফ গ্রহণের মহিমান্বিত পবিত্র সুমহান দিনটিই হচ্ছে ‘সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ’। ‘সাইয়্যিদ’ অর্থ শ্রেষ্ঠ, সেরা, প্রধান, মহান ইত্যাদি এবং আ’ইয়াদ শব্দটি ‘ঈদ’ শব্দের বহুবচন; যার অর্থ খুশি প্রকাশ করা, আনন্দ প্রকাশ করা, ঈদ পালন করা ইত্যাদি। আর শরীফ অর্থ সম্মানিত। অর্থাৎ ঈদ বা খুশি প্রকাশের যত দিন রয়েছে তন্মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বাপেক্ষা, সবচেয়ে সেরা, সবচেয়ে মহান, সবচেয়ে সম্মানিত, মহিমান্বিত, রহমতপূর্ণ, বরকতপুর্ণ, নিয়ামতপূর্ণ দিনটিই হচ্ছে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ। সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে বিলাদত শরীফ গ্রহণ করার কারণে আমরা উনাকে পেয়েছি। এই যে, আমরা উনাকে পেলাম সেজন্য আমাদের কি করণীয়? সে বিষয়টিই যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার স্বীয় কালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উদ্ধৃত পবিত্র আয়াত শরীফ দুখানা নাযিল করে আমাদেরকে জানিয়ে দেন। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يايها الناس
অর্থ: হে মানুষেরা! এখানে الناس শব্দ মুবারক দ্বারা খাছভাবে মানুষকে বুঝানো হয়েছে। কারণ মানুষ হচ্ছেন আশরাফুল মাখলূক্বাত। আর আম বা সাধারণভাবে সমস্ত কায়িনাতকে বুঝানো হয়েছে। তবে এখানে বিশেষভাবে জ্বীন ও ইনসান উভয়ের জন্য উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার হুকুম খাছভাবে প্রযোজ্য।
অতঃপর ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
قد جائتكم موعظة من ربكم
অর্থ: তোমাদের রব তায়ালা উনার তরফ থেকে তোমাদের নিকট এসেছেন নছীহতকারী।
পবিত্র আবূ দাউদ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে, স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মানুষদেরকে সতর্ক করে দিয়ে ইরশাদ মুবারক করেন-
انى والله قد امرت ووعظت
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার কসম, নিশ্চয়ই আমি (তোমাদেরকে) আদেশ দিয়েছি এবং নছীহত করেছি।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বলেন, একদা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নামায পড়ানোর পর আমাদের দিকে ফিরে-
موعظة بليغة
“মর্মস্পর্শী নছীহত মুবারক করলেন।” (আহমদ, আবূ দাউদ শরীফ)
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে শ্রেষ্ঠতম নছীহতকারী হিসেবে যমীনে প্রেরিত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وشفاء لـما فى الصدور
অর্থ: অন্তরের শেফা বা আরোগ্য দানকারী অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মতের যাহির বা বাহ্যিক পরিশুদ্ধ করার পাশাপাশি তাদের আভ্যন্তরীণ তথা অন্তরসমূহও পরিশুদ্ধ করেন। যেমন পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ উনার ১৬৪ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে يزكيهم অর্থাৎ তিনি (নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে পবিত্র করবেন। এ পবিত্র আয়াতাংশ উনার ব্যাখ্যায় সকল তাফসীরগ্রন্থে অন্তর পরিশুদ্ধ করার কথা উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মানুষের অন্তরসমূহ পবিত্র করেন। অর্থাৎ উনার ওসীলায় উম্মত কুফ্র, র্শিক, কিব্র, হাসাদ, গীবত, রিয়া ইত্যাদি বদস্বভাব থেকে আরোগ্য বা মুক্তি লাভ করে।
তাফসীরুল কুরআন: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনই সর্বশ্রেষ্ঠ আমল