কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক রোয আযলে অর্থাৎ সৃষ্টির শুরুতে সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের কাছ থেকে ওয়াদা নিলেন এই শর্তে যে, “আমি আপনাদেরকে কিতাব ও হিকমত দান করবো অতঃপর আমার যিনি হাবীব যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ নিবেন এবং আপনাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে সেসব বিষয়কে তিনি সত্য বলে নিরূপন করবেন। কাজেই, আপনারা উনার উপর ঈমান আনুন এবং উনাকে পেলে উনার খিদমত করবেন। আল্লাহ পাক বললেন, আপনারা কি আমার এ ওয়াদা স্বীকার করে নিলেন? তাঁরা বললেন, আমরা স্বীকার করে নিলাম।” (সূরা আলে ইমরান-৮১)
এ আয়াত শরীফ-এর দ্বারা প্রতিভাত হয় যে, কোন নবীর নুবুওওয়াত প্রকাশ করা হয়নি এবং কোন রসূল-এর রিসালত প্রকাশ করা হয়নি যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁরা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ঈমান ও খিদমতের স্বীকৃতি না দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
মোটকথা, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণসহ সমস্ত সৃষ্টির জন্যে নবী ও রসূল।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-
قل يايها الناس انى رسول الله اليكم جميعا
অর্থ: “হে আমার হাবীব! আপনি বলুন, হে মানুষেরা, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সকলেরই রসূল।” (সূরা আ’রাফ-১৫৮)
আর আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
ارسلت الى الخلق كافة
অর্থ: “আমাকে সমস্ত মাখলূক্বাতের জন্য নবী-রসূল হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে।” (মুসলিম শরীফ)
হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত রয়েছে, “হযরত সালমান ফারিসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো- মহান আল্লাহ পাক হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম-এর সাথে কথা বলেছেন, হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালামকে ‘রুহুল কুদুস’ থেকে সৃষ্টি করেছেন, হযরত ইব্্রাহীম আলাইহিস্ সালামকে খলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন, হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে মনোনীত করেছেন। আপনাকে আল্লাহ পাক কি ফযীলত দান করেছেন? হযরত জিব্্রাঈল আলাইহিস্ সালাম এসে বললেন: ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার রব বলছেন, যদিও আমি হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম-এর সাথে যমীনে কথা বলেছি, কিন্তু আপনার সাথে আমি আসমানে কথা বলেছি। আর যদিও হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালামকে ‘রুহুল কুদুস’ থেকে সৃষ্টি করেছি, কিন্তু আপনাকে আমি সকল মাখলূকাত সৃষ্টি করার দুই হাজার বৎসর পূর্বে সৃষ্টি করেছি। আমি যদিও হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালামকে খলীল হিসেবে গ্রহণ করেছি, কিন্তু আপনাকে আমি হাবীব হিসেবে গ্রহণ করেছি। আমি যদিও হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে প্রথম নবী হিসেবে মনোনীত করেছি, কিন্তু আপনাকে আমি শেষ নবী করেছি। তাছাড়া আপনার নাম মুবারককে আমার নাম মুবারকের সাথে সংযুক্ত করে দিয়েছি। ফলে, সৃষ্টি জগতে এমন কোন স্থান নেই যেখানে আমাকে স্মরণ করা হয় অথচ আপনাকে স্মরণ করা হয় না।” (হাক্বীক্বতে মুহম্মদী)
উল্লিখিত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুল-মাখলূক্বাতের জন্য নবী ও রসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। এমনকি অন্যান্য নবী ও রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণেরও তিনি নবী ও রসূল। শুধু তাই নয়, উনার প্রতি ঈমানের স্বীকৃতি না দেয়া পর্যন্ত কোন নবী ও রসূলগণ-এর নুবুওওয়াত ও রিসালত প্রকাশ করা হয়নি। যার সাথে আল্লাহ পাক আসমানে কথা বলেছেন। যাঁর সৃষ্টি কুল-মাখলূক্বাত সৃষ্টির দু’হাজার বৎসর পূর্বে। নবী-রসূল আলাইহিম্স্ সালামগণের মধ্যে আল্লাহ পাক যাকে এককভাবে স্বীয় হাবীব হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং যার মাধ্যমে আল্লাহ পাক নুবুওওয়াত ও রিসালতের ধারা বন্ধ করেছেন এবং যাঁর নাম মুবারককে আল্লাহ পাক নিজের নাম মুবারকের সাথে সংযুক্ত করে দিয়েছেন। ফলে, সৃষ্টি জগতের এমন কোন স্থান নেই যেখানে আল্লাহ পাককে স্বরণ করা হয় অথচ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্মরণ করা হয় না। সুবহানাল্লাহ!
অর্থাৎ আল্লাহ পাক যেমন কুল-কায়িনাতের খালিক্ব ও রব তেমনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুল-কায়িনাতের জন্য নবী ও রসূল।
সুতরাং, সৃষ্টি বান্দা যেরূপ আল্লাহ পাক-এর সমকক্ষতা দাবি করতে পারে না তদ্রুপ সৃষ্টি উম্মতও হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সমকক্ষতা দাবি করতে পারে না।
এরপরও যদি কেউ দাবি করেই ফেলে বলার অপেক্ষা রাখেনা তার অবস্থা হবে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী ফিরআউনের মতো। ফিরআউন সে তো রব দাবি করেছিল। এখন তার পরিণতি কি? এখন সে তো জাহান্নামের কীট।
কাজেই, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যে বা যারা তাদের মতো মনে করবে ফিরআউনের মতোই তারাও কাট্টা কাফির ও জাহান্নামের কীট হবে।
তাফসীরুল কুরআন যে কোনো ধরণের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৪
তাফসীরুল কুরআন যে কোনো ধরণের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৫
তাফসীরুল কুরআন: যে কোনো ধরনের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৬
তাফসীরুল কুরআন যে কোনো ধরনের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৭
তাফসীরুল কুরআন যে কোনো ধরনের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৮