আল্লাহ তায়ালার অসংখ্য অগণিত ছিফত বা গুণের মধ্যে একটি হচ্ছে صابر ‘ছাবির’ অর্থাৎ ধৈর্যশীল। আর আল্লাহ তায়ালার বান্দাদের মধ্যেও অনেকের নাম রয়েছে ছাবির। এখন কেউ কি একথা বলবে বা দাবি করবে যে, ছাবির নামের ব্যক্তিরা তারা আল্লাহ পাক-এর মতো ছাবির? কখনোই না। তদ্রুপ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এরও অসংখ্য অগণিত ছিফত বা গুণের মধ্যে একটি হলো بشر ‘বাশার’। আর হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যারা উম্মত তারাও বাশার।
প্রশ্ন হলো, বান্দারা যদি ছাবির নাম বা ছিফতের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও তাদেরকে আল্লাহ পাক-এর মতো ছাবির বলা শুদ্ধ না হয়, তাহলে উম্মতের হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মতো বাশার হওয়ার দাবি কি করে শুদ্ধ হতে পারে?
মূলতঃ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাশার ছিফতটির কারণেই মানুষ হয়েছে আশরাফুল মাখলূক্বাত অর্থাৎ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ। যদি বাশার না হয়ে উনার ছিফতটি ملك ‘মালাক’ অর্থাৎ ফেরেশ্তা হতো তাহলে ফেরেশ্তারা হয়ে যেতেন আশরাফুল মাখলূক্বাত।
কাজেই, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামসহ সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ সকলেই বাশার ছিফতের অধিকারী। এটা অবশ্যই সত্য এবং এটা আক্বীদারও বিষয়। তাই বলে উম্মতদের একথা বলার বা ধারণা করার বিন্দুমাত্র সুযোগ ও অধিকার নেই যে, নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ কোন দিক থেকে তাদের মতো।
কেননা কুরআনুল কারীম-এর একাধিক আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, যারা কাফির কেবল তারাই নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণকে নিজেদের মতো ‘বাশার’ ধারণা করতো।
এমনকি যিনি নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কেও কাফিররা বলেছিল-
هل هذا الا بشر مثلكم افتاتون السحر وانتم تبصرون.
অর্থ: “ইনি তো তোমাদের মতো ‘বাশার’ ব্যতীত কেউ নন। তা সত্ত্বেও কি তোমরা দেখে শুনে জাদুর শিকার হবে।” (সূরা আম্বিয়া-৩)
অর্থাৎ কালামুল্লাহ শরীফ তিলাওয়াতের মিষ্টতা, প্রাঞ্জলতা ও ক্রিয়াশক্তি কোন কাফিরও অস্বীকার করতে পারতো না। এ থেকে লোকের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে তারা একে জাদু আখ্যায়িত করে লোকদেরকে বলত যে, তোমরা জান যে, এটা জাদু এমতাবস্থায় এই ব্যক্তির কাছে যাওয়া এবং এই কালাম শ্রবণ করা বুদ্ধিমত্তার কাজ নয়।
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে তারা আরো বলতো-
ما لهذا الرسول ياكل الطعام ويمشى فى الاسواق
অর্থ: “ইনি কেমন রসূল যিনি খাদ্য খান এবং বাজারে যান।” (সূরা ফুরকান-৭)
মূলতঃ আল্লাহ পাক-এর সাথে বান্দাদের যেরূপ কোন তুলনা চলে না ঠিক তেমনি নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম এবং বিশেষ করে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে উম্মতদের কোন দিক থেকে কোন তুলনা চলে না।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিষয় তো অনেক অনেক উর্ধ্বের। বরং উনার যারা ছাহাবী তাঁদের সাথেই পূর্ববর্তী কিংবা পরবর্তী কোন উম্মতের তুলনার কথাও চিন্তা করা যায় না। যেমন বর্ণিত রয়েছে, আমীরুল মু’মিনীন ফিল হাদীছ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহিকে জিজ্ঞেস করা হলো, হুযূর! হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু শ্রেষ্ঠ, না হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি শ্রেষ্ঠ? তিনি বললেন, আল্লাহ পাক-এর কসম! হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে ঘোড়ায় চড়ে জিহাদে যেতেন তখন ঘোড়ার নাকে যে ধুলাবালিগুলো প্রবেশ করতো সে ধুলাবালিগুলোও হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ন্যায় শত-সহস্র ব্যক্তি হতেও শ্রেষ্ঠ। (ফতওয়ায়ে হাদীছিয়াহ)
স্মরণীয় যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছোহবত লাভের মাধ্যমে যাঁরা ছাহাবী হয়েছেন তাঁদের সাথেই যেখানে কোন উম্মতের কোন তুলনা চলেনা সেখানে যিনি নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, যিনি হাবীবুল্লাহ, স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর পরেই যাঁর মাক্বাম বা স্থান উনার সাথে উম্মতদের তুলনার চিন্তা আসে কি করে? তুলনা করাটা অবশ্যই হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুমহান শান বা মর্যাদার খিলাফ যা চরম বেয়াদবি ও কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
অতএব, হাবীবুল্লাহ নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কোন বিষয়কে যারা নিজেদের মতো মনে করবে নিঃসন্দেহে তারা কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী।
তাফসীরুল কুরআন ক্বমীছ বা কোর্তা মুবারকের বুযুর্গী
তাফসীরুল কুরআন: হিদায়েত আসার পরও অহংকারবশতঃ যারা হিদায়েত গ্রহণ করলনা তারা জাহান্নামী
তাফসীরুল কুরআন: হিদায়েত আসার পরও অহংকারবশতঃ যারা হিদায়েত গ্রহণ করলনা তারা জাহান্নামী
তাফসীরুল কুরআন: হিদায়তে আসার পরও অহংকারবশতঃ যারা হিদায়েত গ্রহণ করলনা তারা জাহান্নামী