তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

সংখ্যা: ১৮৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে, “হযরত হাকীমা বিনতে আমীমা বিনতে দাক্বীক্বা রহমতুল্লাহি আলাইহা তাঁর মাতা হযরত আমীমা বিনতে দাক্বীক্বা রহমতুল্লাহি আলাইহা থেকে বর্ণনা করেছেন। নিশ্চয়ই তিনি বলেছেন, একদা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি পাত্রে প্রস্রাব মুবারক রাখলেন অতঃপর চকি মুবারকের নিচে রেখে দিলেন। এরপর তার একটা ব্যবস্থা করার ইচ্ছা করলে এসে দেখলেন পাত্রের মধ্যে কিছু নেই। তখন তিনি বারাকা নামের এক মহিলা, যে হাবশা হতে হযরত উম্মু হাবীবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর খাদিমা হিসেবে এসেছিলেন, তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, পাত্রের মধ্যে যে প্রস্রাব মুবারক ছিল তা কোথায় গেল? উত্তরে তিনি বললেন, আমি উহা পান করে ফেলেছি। তখন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, অবশ্যই তুমি তোমার নিজেকে জাহান্নাম থেকে নিরাপদ রাখলে।” (আবূ দাউদ শরীফ, নাসায়ী শরীফ, আল মুসতাদরিক লিল হাকিম, মুসনাদে আব্দুর রযযাক)

প্রতিভাত হলো, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রক্ত ও ইস্তিঞ্জা মুবারক পবিত্র ও হালাল এবং তা পান করলে জাহান্নাম হারাম হয়ে যায়।

এখন প্রশ্ন হলো, যারা নিজেদেরকে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মতো ‘বাশার’ মনে করে তাদের রক্ত ও ইস্তিঞ্জা কি হালাল ও পবিত্র এবং তা পান করলে কি জাহান্নাম হারাম হবে? তাহলে কি করে তারা নিজেদেরকে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মতো ধারণা করতে পারে।

আরো বলতে হয় যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন নূরের সৃষ্টি। তিনি নূরে মুজাস্সাম অর্থাৎ আপাদমস্তক নূর মুবারকের। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে, ‘হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবানী হয়ে যাক, আপনি আমাকে জানিয়ে দিন যে, আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম কোন জিনিস সৃষ্টি করেছেন? তিনি বললেন, হে জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক সবকিছুর পূর্বে আপনার নবীর নূর মুবারককে সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর প্রথম সৃষ্টিই হচ্ছে নূরে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।  অতঃপর সেই নূর মুবারক আল্লাহ পাক-এর ইচ্ছানুযায়ী কুদরতের মধ্যে অবস্থান করছিলেন। আর সে সময় লওহো, কলম, বেহেশ্ত, দোযখ, ফেরেশ্তা, আসমান, যমীন, চন্দ্র, সূর্য, মানুষ ও জিন কিছুই ছিল না। অতঃপর আল্লাহ পাক যখন মাখলূকাত সৃষ্টি করতে ইচ্ছা করলেন তখন তিনি সেই নূরকে চারটি ভাগে ভাগ করলেন। অতঃপর তা থেকে সৃষ্টি করলেন সমস্ত মাখলূকাত।’ (মুসনাদে আব্দির রয্যাক্ব, দালায়িলুন নুবুওওয়াত, তারীখুল খামীছ, মাওয়াহিব, শরহে যুরকানী, মাদারিজুন নুবুওওয়াহ, নূরে মুহম্মদী)

অতঃপর আল্লাহ পাক হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে সৃষ্টি করার পর উনার মধ্যে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নূর মুবারক রেখে দিলেন। এর ফলে হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম-এর ললাট মুবারকে উক্ত নূর মুবারক চমকাতে থাকলো। তা দেখার জন্য ফেরেশ্তারা হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম-এর সম্মুখে এসে কাতার ধরে দাঁড়িয়ে গেলেন। হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম উক্ত নূর মুবারকের আশিক হয়ে আরজ করলেন, বারে ইলাহী! দয়া করে এ নূর মুবারককে এরূপ স্থানে রাখুন যেন আমি নিজেও তা দেখতে পাই। আল্লাহ পাক উনার আরজু কবুল করে উক্ত নূর মুবারককে উনার মুসাব্বাহ বা শাহাদাত অঙ্গুলী মুবারকে রাখলেন। তিনি সে অঙ্গুলী মুবারক উত্তোলন করে স্বচক্ষে নূর মুবারক অবলোকন করে ঈমান এনে বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ পাক ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ পাক-এর রসূল।

এরপর আল্লাহ পাক-এর ফায়ছালা অনুযায়ী যখন হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম যমীনে আগমন করলেন এবং আরাফার ময়দানে হযরত হাওয়া আলাইহাস্ সালাম-এর সাথে একত্রিত হলেন তখন আল্লাহ পাক হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম-এর নিকট বেহেশ্তের নহর পাঠিয়ে দিলেন। তিনি বেহেশ্তের নহরে গোসল করে হযরত হাওয়া আলাইহাস্ সালামকে আলিঙ্গন করলেন। এর ফলে নূরে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম-এর মধ্য হতে হযরত হাওয়া আলাইহাস্ সালাম-এর রেহেম শরীফে স্থানান্তরিত হলেন। এরপর এক পুরুষ হতে আরেক পুরুষ এবং এক মহিলার রেহেম শরীফ থেকে আরেক মহিলার রেহেম শরীফে স্থানান্তরিত হয়ে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিতা ও মাতা সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা আব্দুল্লাহ যবীহুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম এবং সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস্ সালাম-এর মাধ্যমে যমীনে তাশরীফ আনেন। (মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়াহ, নূরে মুহম্মদী, সীরাতে হালবিয়া)

এখন প্রশ্ন হলো, যে বা যারা ‘বাশার’ বলে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মতো নিজেদেরকে দাবি করছে তাদের সৃষ্টি কি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সৃষ্টি রহস্যের মতো? এবং তারা কি সরাসরি নূরের সৃষ্টি? তাদের অজুদ বা অস্তিত্ব কি সর্বপ্রথম সৃষ্টি করা হয়েছে? এবং সে অজুদ থেকে কি সমস্ত মাখলূকাত সৃষ্টি হয়েছে? এসব প্রশ্নের জাওয়াব হবে অবশ্যই না বা নেতিবাচক। তাহলে তারা কি করে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো দাবি করতে পারে?

অতএব, বলার অপেক্ষা রাখেনা, যারা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো দাবি করবে তারা কাট্টা কাফির ও চিরজাহান্নামী।

 তাফসীরুল কুরআন: হিদায়েত আসার পরও অহংকারবশতঃ যারা হিদায়েত গ্রহণ করলনা তারা জাহান্নামী

তাফসীরুল কুরআন: হিদায়েত আসার পরও অহংকারবশতঃ যারা হিদায়েত গ্রহণ করলনা তারা জাহান্নামী

 তাফসীরুল কুরআন: হিদায়তে আসার পরও অহংকারবশতঃ যারা হিদায়েত গ্রহণ করলনা তারা জাহান্নামী

তাফসীরুল কুরআন

তাফসীরুল কুরআন: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনই সর্বশ্রেষ্ঠ আমল