কুল-কায়িনাতের নবী ও রসূল, নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বত্র হাযির ও নাযির। বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-
انما انا قاسم والله يعطى
অর্থ: “আল্লাহ পাক তিনি হাদিয়া করেন আর নিশ্চয়ই আমি হলাম (উক্ত হাদিয়া) বণ্টনকারী।”
অর্থাৎ আল্লাহ পাক উনার সর্বপ্রকার নিয়ামত উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাদিয়া করেছেন আর হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুল-মাখলূক্বাতের যাকে যতটুকু ইচ্ছা তাকে ততটুকু বণ্টন করে দিয়ে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!
এখন যিনি কুল-মাখলূক্বাতের জন্য নিয়ামতের বণ্টনকারী তিনি যদি কুল-মাখলূক্বাতের কাছে হাযির বা উপস্থিত না থাকেন এবং তাদেরকে নাযির বা দেখে না থাকেন তাহলে তিনি তাদের মাঝে কিভাবে নিয়ামত বণ্টন করবেন। কাজেই, কায়িনাতের সমস্ত সৃষ্টির জন্য তিনি যেহেতু নিয়ামতের বণ্টনকারী সেহেতু বলার অপেক্ষা রাখে না তিনি সবখানেই হাযির ও নাযির।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কায়িনাতের সমস্ত স্থানে হাযির বা উপস্থিত ও সবকিছু নাযির বা প্রত্যক্ষকারী। এ প্রসঙ্গে হযরত ইমাম তবারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত নঈম ইবনে উমর রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে একখানা হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-
ان الله قد رفع لى الدنيا فانا انظر اليها والى ما هو كائن فيها الى يوم القيامة كانما انظر الى كفى هذه.
অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি এই পৃথিবীকে আমার চোখের সামনে এরূপভাবে রেখেছেন যে, আমি এ সমগ্র পৃথিবীকে এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত তার মধ্যে যা কিছু সৃজিত বা সংঘটিত হবে তদসমূহকে ওইরূপভাবে দেখি যেরূপ আমার হাত মুবারকের তালু মুবারককে দেখে থাকি। সুবহানাল্লাহ! (তবারানী, মিশকাত)
আশাদ্দুদ দরজার জাহিল, ধর্মব্যবসায়ী, উলামায়ে ছূরা মিথ্যা, মনগড়া, দলীলবিহীনভাবে অপপ্রচার করে যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাযির ও নাযির জানা শিরক। নাঊযুবিল্লাহ! তারা কারণস্বরূপ উল্লেখ করে, একমাত্র আল্লাহ পাক তিনিই সর্বত্র হাযির ও নাযির। সুতরাং আর কাউকে হাযির ও নাযির জানাটা শিরকের অন্তর্ভুক্ত। নাঊযুবিল্লাহ!
এসব জাহিলদের উদ্দেশ্যে বলতে হয়, আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত আর অন্য কাউকে হাযির ও নাযির জানা ও মানা যে শিরক; এটা তোমরা কোথায় পেলে? এর কোন দলীল তোমাদের নিকট আছে কি? আসলে এর কোন দলীল নেই। সেহেতু তারা কস্মিনকালেও এর কোন দলীল দিতে পারবে না। আর দলীলবিহীন কোন কথা শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রসঙ্গত কারণে এসব জাহিলদের বলতে হয়, তোমরা যে তোমাদের নামের সাথে মাওলানা উপাধি ব্যবহার করো; এটা কী শিরক হয় না? এবং যারা তোমাদেরকে মাওলানা বলে সম্বোধন করছে তারা শিরক করে কী মুশরিক হচ্ছে না?
কেননা ‘মাওলানা’ এ উপাধি তো স্বয়ং খালিক্ব, মালিক, রব, আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ও তাআলা উনার। তিনি নিজের শানে তা ব্যবহার করেছেন। যা সূরা বাক্বারার শেষ আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে। তাহলে সেই মাওলানা উপাধি তোমরা কি করে নিজের নামে ব্যবহার করতে পারো? কই, নিজেদের ব্যাপারে তো শিরকের ফতওয়া আদৌ উচ্চারণ করলে না? এবং তোমাদেরকে মাওলানা বলে মানুষেরা যে আল্লাহ পাক-উনার সাথে শিরক করে মুশরিক হচ্ছে সে ফতওয়া দেয়ার ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকছো কেন? অথচ যিনি ঈমান, হিদায়েত, নাজাত ও শাফায়াত দানকারী উনার শান মুবারকের বিরুদ্ধে তোমাদের ফতওয়া। নাঊযুবিল্লাহ! তোমরা কী মুসলমান? না মুনাফিক ও মুরতাদ?
জাহিলের দল! আল্লাহ পাক তিনি যে হাযির ও নাযির সে মাসয়ালা কি তোমরা জানো? আল্লাহ পাক তিনি তো জিসিম অর্থাৎ শরীর বা দেহ মুবারক হতে এবং ছূরত বা আকৃতি মুবারক হতে পবিত্র। তাহলে তিনি কিভাবে হাযির ও নাযির? মূলত আল্লাহ পাক তিনি জিসিম ও ছূরত এ দুটির কোন একটি হিসেবে হাযির ও নাযির নন। বরং তিনি ছিফত-অর্থাৎ ইলম ও কুদরতের দ্বারা এবং ছিফত- মিছালী ছূরত মুবারক হিসেবে কায়িনাতের সমস্ত স্থানে হাযির ও নাযির।
আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিফত-ইলম ও মু’জিযা দ্বারা এবং ছিফত- নূর ও রহমত হিসেবে কায়িনাতের সমস্ত স্থানে হাযির ও নাযির। আর উনার যেহেতু জিসিম ও ছূরত মুবারক রয়েছে সেহেতু তিনি যে জিসিম মুবারক-এ রওযা শরীফ-এ অবস্থান করছেন উনার ইখতিয়ার ও ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তিনি সেই জিসিম মুবারক নিয়ে কোথাও হাযির হবেন না। আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের মুজতাহিদ ইমামগণ এ বিষয়ে একমত যে, তিনি ওই জিসিম মুবারক নিয়ে রওযা শরীফ থেকে উঠলে ক্বিয়ামত হয়ে যাবে। তাই তিনি উক্ত জিসিম মুবারকের অনুরূপ জিসিম ও ছূরত মুবারক ধারণ করে এবং মিছালী ছূরত মুবারকে কায়িনাতের সমস্ত স্থানে হাযির ও নাযির থাকেন, যে কারণে উনার আশিকগণ উনাকে স্বপ্নে, মুরাক্বাবা-মুশাহাদার হালতে এমনকি জাগ্রত অবস্থার মধ্যেও দেখে থাকেন এবং কথোপকথনও করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!
প্রতিভাত হলো, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কায়িনাতের সমস্ত স্থানে হাযির ও নাযির। সুতরাং উনাকে যারা তাদের মতো বলছে, নাঊযুবিল্লাহ! তারা কি উনার মতো কায়িনাতের সমস্ত স্থানে হাযির ও নাযির? কখনোই নয়। তাহলে তাদের এ কথা কি করে শুদ্ধ হতে পারে যে, তিনি তাদের মতো। মূলত তাদের একথা সম্পূর্ণরূপে কুফরী এবং কাফির ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।
তাফসীরুল কুরআন যে কোনো ধরণের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৪
তাফসীরুল কুরআন যে কোনো ধরণের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৫
তাফসীরুল কুরআন: যে কোনো ধরনের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৬
তাফসীরুল কুরআন যে কোনো ধরনের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৭
তাফসীরুল কুরআন যে কোনো ধরনের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৮