হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, æহযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, যখন নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের নিকট আসতেন, তখন উনার দেহ মুবারকের ঘ্রাণের সৌরভে আমরা অনুধাবন করতে পারতাম যে, তিনি আসছেন।” (আবূ দাঊদ, শামায়েলে তিরমিযী, আখলাকুন্ নবী)
হযরত জাবির ইবনু সামুরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বর্ণিত হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ রয়েছে, একদা নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় হস্ত মুবারক আমার গ-দেশে সঞ্চালন করলেন। এতে আমি এত শীতলতা এবং সৌরভ অনুভব করলাম, যেন নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক হাতখানা এইমাত্র আতরের শিশি থেকে বের করে এনেছেন। সুবহানাল্লাহ! এ অবস্থায় কেউ যদি উনার সাথে মুছাফাহা করতো, তাহলে সারাদিন তার হাতের মধ্যে সুবাস লেগে থাকতো। তিনি কখনো কোন শিশুর মাথায় যদি স্নেহের হাত বুলিয়ে দিতেন, তাহলে ঐ শিশুটি অন্যান্য ছেলে-মেয়েদের মধ্যে এক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়ে যেত। সুবহানাল্লাহ! (মাদারিজুন নুবুওওয়াত)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খোশ্বু পছন্দ করতেন এবং ব্যবহার করতেন। তবে উনার ব্যবহৃত খোশ্বুর চেয়ে উনার দেহ মুবারকের খোশ্বুই ছিল অধিকতর সুরভিত ও সুগন্ধিযুক্ত।
সাইয়্যিদুনা হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, যত প্রকারের সুগন্ধি আছে, চাই তা মেশ্ক হোক বা আম্বর, আমি তার সুঘ্রাণ নিয়েছি। কিন্তু নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম দেহ মুবারকের সুরভীর তুলনায় কোন কিছুই অধিক সুগন্ধযুক্ত হতে পারেনা।
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের গৃহে আগমন করলেন এবং æকায়লুলা” করলেন। উনার শরীর মুবারক থেকে ঘাম মুবারক প্রবাহিত হতে লাগল। আমার জননী একটি শিশি (ছোট বোতল) নিয়ে এলেন এবং ঘাম মুবারক মুছে তাতে ভরতে লাগলেন। নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চোখ মুবারক খুলে গেল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, হে উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা! কি করছেন? তিনি বললেন, এ মুবারক ঘাম সুগন্ধিরূপে আমরা ব্যবহার করি। কেননা, এটা অত্যন্ত সুগন্ধি। সুবহানাল্লাহ! (তবারানী শরীফ, খাছায়িসুল কুবরা)
একবার জনৈক ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মেয়ের বিয়েতে সুগন্ধির প্রয়োজন দেখা দিল। কিন্তু কোথাও সুগন্ধি পাওয়া গেলনা। অবশেষে নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফ-এ হাজির হয়ে সমস্যার কথা ব্যক্ত করা হলো। নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকটও তখন কোন খোশবু ছিলনা। তিনি তখন উক্ত ছাহাবীকে বললেন, æএকটি শিশি নিয়ে এসো।” ছাহাবী শিশি নিয়ে আসলে তিনি নিজের শরীর মুবারক থেকে নির্গত পবিত্র ঘাম মুবারক দিয়ে শিশি পুরে দিয়ে বললেন, এই ঘাম তোমার মেয়ের গায়ে মেখে দিও। ঐ শিশির পবিত্র ঘাম মুবারক যখন মেয়েটির গায়ে মেখে দেয়া হলো, তখন সে ঘাম মুবারকের সৌরভে সমস্ত মদীনা মুনাওওয়ারা সুরভিত হয়ে গেল। সুবহানাল্লাহ! এরপর থেকে উক্ত বাড়িটির নাম রাখা হয়েছিল বাইতুল মুআত্তার বা আতর ভবন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্ নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র খোশবুর প্রশংসায় আশিকে রসূল হযরত আবূ আব্দুল্লাহ আত্তার রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর কবিতায় এভাবে বর্ণনা করেন-
بطيب رسول الله فطاب نسيمها
فما المشك والكافور المندل الرطب
æরসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খোশবুতে মদীনা তাইয়্যিবার পরিবেশ সুরভিত। এ তুলনায় মেশ্ক ও কর্পূরের সুগন্ধি কোথায়? সে রকম সুগন্ধি তো সেখানকার খেজুরের মধ্যেই বিদ্যমান।
হযরত আবূ নঈম রহমতুল্লাহি আলাইহি উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরানী চেহারা মুবারকের ঘাম মুবারক মোতির দানার মত চক চক করতো। আর তার খোশবু ছিল মেশ্কের চেয়েও অধিক সুগন্ধিযুক্ত। (মাদারিজুন নুবুওওয়াত)
হাদীছ শরীফ-এর উপরোক্ত বর্ণনাসমূহ থেকে প্রতিভাত হলো, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র দেহ মুবারকের ঘাম মুবারক সমস্ত খোশবু অপেক্ষা অধিক খোশবুময়।
এখন প্রশ্ন হলো, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যারা তাদের মতো বলছে, তাদের শরীরের ঘাম কি খোশবুযুক্ত? না তাদের ঘাম তো আদৌ খুশবুযুক্ত নয়। বরং তাদের ঘাম হচ্ছে অতীব দুর্গন্ধযুক্ত। তাহলে তারা কি করে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মতো নিজেদেরকে ধারণা করতে পারে। মূলতঃ তাদের সে ধারণা কাট্টা কুফরী এবং কাফির ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।
তাফসীরুল কুরআন: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনই সর্বশ্রেষ্ঠ আমল