রিয়া অর্থ লৌকিকতা বা লোক দেখানো কাজ। যারা রিয়ার পর্যায়ে কোন প্রকারের ইবাদত করে তাদের সেই ইবাদতের পরিণাম খুবই ভয়ানক। কালামুল্লাহ শরীফ-এ রিয়াকারীদের সম্পর্কে বহু আয়াত শরীফ উল্লেখ রয়েছে এবং একইভাবে অনেক হাদীছ শরীফও উল্লেখ রয়েছে। রিয়া এটি মুনাফিকদের স্বভাব-বৈশিষ্ট্যও বটে। এছাড়া এটি ইখলাছ বা একনিষ্ঠতার পরিপন্থী। অতএব, রিয়া নামক বদ খাছলত বা বদ স্বভাবটি নিজেদের দেহ মন থেকে দূরীভূত করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীদের জন্য ফরযের অন্তর্ভুক্ত।
কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
فمن كان يرجوا لقاء ربه فليعمل عملا صالحا ولايشرك بعبادة ربه احدا.
অর্থ: যে ব্যক্তি তার রব তা‘য়ালা উনার সাক্ষাতের আশা রাখে সে যেনো নেক কাজ করে এবং তার রব তা‘য়ালা উনার ইবাদতের মধ্যে কাউকে শরীক না করে। (সূরা কাহফ: আয়াত শরীফ ১১০)
আরো ইরশাদ হয়েছে-
فويل للمصلين. الذين هم عن صلاتهم ساهون. الذين هم يراءون.
অর্থ: ঐ সকল নামাযীদের জন্য আক্ষেপ! যারা তাদের নামাযে অন্যমনস্ক থাকে। যারা অন্যকে দেখানোর জন্য নামায পড়ে। (সূরা মাঊন: আয়াত শরীফ ৪, ৫, ৬)
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, æমহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, আমি শরীককারীদের শরীক থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। যে ব্যক্তি কোন আমলে (ইবাদতে) আমার সাথে অন্যকে শরীক করে, আমি তাকে তার শরীকসহ বর্জন করি। অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।” (মুসলিম শরীফ)
তিনি আরো ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে নামায পড়লো, সে শিরক করলো। এবং যে দেখানোর নিয়তে রোযা রাখলো, সেও শিরক করলো। আর যে দেখানোর জন্য ছদক্বা-খয়রাত করলো সেও শিরক করলো। (মুসনাদে আহমদ, মিশকাত)
তিনি আরো ইরশাদ করেন, আমি আমার উম্মতের উপর গোপন শিরকের ভয় করছি। বর্ণনাকারী হযরত শাদ্দাদ ইবনে আওস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার পরে আপনার উম্মত কি শিরকে লিপ্ত হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, লিপ্ত হবে। অবশ্য তারা সূর্য, চন্দ্র, পাথর ও মূর্তির উপাসনা করবে না; কিন্তু নিজেদের আমলসমূহ মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে করবে। (আহমদ, বায়হাক্বী, মিশকাত)
তিনি আরো ইরশাদ করেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি বিষয় সম্পর্কে অবহিত করবো না, যা আমার নিকট তোমাদের জন্য মসীহ দাজ্জাল অপেক্ষা অধিক আশঙ্কাজনক? তা হলো শিরকে খফী বা গোপন শিরক। (ইবনে মাজাহ শরীফ)
ছহীহ মুসলিম শরীফ-এর হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় শহীদ, ধন-সম্পদে দানবীর এবং মহান আল্লাহ পাক উনার কুরআন শরীফ-এর আলিম ও ক্বারী। এই তিন ব্যক্তিকে তাদের কার্য সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করবেন এবং তারা উত্তর দিলে তিনি শহীদকে বলবেন, তুমি মিথ্যা কথা বলেছ; বরং তোমার উদ্দেশ্য ছিল যে, লোকে তোমাকে বাহাদুর এবং বড় যোদ্ধা বলবে। তারপর তিনি আলিম ও ক্বারীকে বলবেন, তুমিও মিথ্যা কথা বলেছ; বরং তোমার উদ্দেশ্য ছিল যে, লোকে তোমাকে বড় আলিম ও বড় ক্বারী বলবে। তারপর তিনি দানবীরকে বলবেন, তুমিও মিথ্যা কথা বলেছ; বরং তোমার উদ্দেশ্য ছিল যে, লোকে তোমাকে মহাদাতা বলবে। নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন যে, তাদের কোন নেকীই হয়নি বরং তাদের রিয়া তাদের সমস্ত ইবাদতকে বিনষ্ট করে দিয়েছে।
অপর এক হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে বলবেন, এসব ব্যক্তিরা আমার উদ্দেশ্যে তাদের ইবাদত করেনি; কাজেই এদেরকে চুলে ধরে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করে দাও। অতঃপর তাদেরকে সেভাবেই জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। নাউযুবিল্লাহ!
হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ পাক সাত আসমান তৈরি করার পূর্বে সাতজন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সৃষ্টি করেন অতঃপর উনাদের সেই সাতজনকে সাত আসমানের দায়িত্ব দিলেন যে, বান্দাদের আমলগুলি উনাদের সামনে দিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট যখন পৌঁছানো হবে তখন উনারা সেই আমলগুলি যাচাই-বাছাই করবেন যেনো কোনো রকম ত্রুটি-বিচ্যুতিযুক্ত কোন আমল উপরে যেতে না পারে। অতঃপর আমল বহনকারী ফেরেশতা আলাইহিস সালামগণ যখন এক এক করে সপ্তম আকাশে গিয়ে পৌঁছবেন তখন সপ্তম আকাশের দায়িত্বশীল ফেরেশতা আলাইহিস সালাম বলবেন, যাদের আমলের মধ্যে রিয়া আছে তাদের আমলগুলি এ আকাশ দিয়ে অতিক্রম করতে পারবে না।
কাজেই, রিয়াসহ যাবতীয় বদস্বভাব দূর করতে হলে বান্দাহকে অন্তর পরিশুদ্ধ করতে হবে। আর অন্তর পরিশুদ্ধ করার মাধ্যম হচ্ছে পীরানে তরীক্বত উনাদের নিকট বাইয়াত হয়ে তরীক্বার সবক অনুযায়ী ক্বলবী যিকির করা।
তাফসীরুল কুরআন: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনই সর্বশ্রেষ্ঠ আমল