যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আ’ইম্মাহ, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, মুসলমান হিসেবে আমাদেরকে, সরকারকে- আমাদের ঈমানের মূল আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অকল্পনীয় ও বেমেছাল মর্যাদা-মর্তবা এবং ফাযায়িল-ফযীলতই শুধু নয় পাশাপাশি তাঁর সাথে সম্পৃক্ত বিশেষ দিন ও ঘটনা সম্পর্কেও বিশেষভাবে অবগত হতে হবে এবং অত্যন্ত আদব ও মুহব্বতের সাথে তাঁর হক্বও বিশেষভাবে পালন করতে হবে।
আসন্ন পবিত্র ‘আখিরী চাহার শোম্বাহ’ উপলক্ষে এক আলোচনা মজলিসে গতকাল রাজারবাগ শরীফ-এ তিনি এসব কথা বলেন।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যথাযথ তা’যীম-তাকরীমের মাঝেই মাখলুকাতের কামিয়াবী নিহিত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “যারা তাঁর প্রতি ঈমান আনবে, তাঁর তা’যীম করবে এবং তাঁর উপর অবতীর্ণ কুরআন শরীফ-এর অনুসরণ করবে তাঁরাই হবে সফলকাম।”
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, সমস্ত ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম-এর ইজমা হয়েছে যে, “রওজা শরীফ-এর যে মাটি মুবারক আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কদম মুবারক স্পর্শ করে আছে তার মর্যাদা লক্ষ-কোটি আরশে আযীমের চেয়েও বেশি।” (সুবহানাল্লাহ)
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে তায়াল্লুক-নিছবত থাকার কারণে মাটি মুবারকের যদি এত মর্যাদা-মর্তবা হয়ে থাকে; তাহলে যে তারিখে, যে দিবসে, যে মাসে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিশেষ ঘটনা সংঘটিত হয়ে থাকে তার মর্যাদা-মর্তবা কতটুকু হতে পারে সেটা খুব সহজেই অনুধাবনীয়।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বেছাল শরীফ-এর পূর্বে আখিরী চাহার শোম্বাহ বিশেষ তাৎপর্যম-িত ও ফযীলতপূর্ণ ঘটনা। তাই সব মুসলমানেরই উচিত এ দিনের ফযীলত হাছিল করা ও আমল করা।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, ‘আখির’ শব্দটি আরবী। এর অর্থ- শেষ। আর ‘চাহার শোম্বাহ’ হচ্ছে ফার্সী শব্দ। এর অর্থ- বুধবার। আরবী ও ফার্সী শব্দের সংমিশ্রণে ‘আখিরী চাহার শোম্বাহ’ বলতে ছফর মাসের শেষ বুধবারকে বুঝানো হয়ে থাকে। মূলতঃ এ দিনটি মুসলিম উম্মাহ্র জন্য খুশির দিন।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, এ মুবারক দিনটির ফযীলত সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, রহমতুল্লিল আলামীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিদায়ের পূর্ববর্তী মাসের অর্থাৎ ছফর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে তিনি ভীষণভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। দিন দিন তাঁর অসুস্থতা বাড়তেই থাকে। কিন্তু এই মাসের ২৯ তারিখ বুধবার দিন ভোর বেলা ঘুম থেকে জেগে তিনি বললেন, ‘আমার নিকট কে আছেন?’ এ কথা শুনামাত্রই উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ছুটে আসলেন এবং বললেন, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার মাতা-পিতা আপনার জন্য কুরবান হোক। আমি হাযির আছি।’ তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘হে আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা! আমার মাথা মুবারকের ব্যথা দূর হয়ে গেছে এবং শরীর মুবারকও বেশ হালকা মনে হচ্ছে। আমি আজ বেশ সুস্থতা বোধ করছি।’ (সুবহানাল্লাহ) এ কথা শুনে হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা অত্যন্ত আনন্দিত হলেন এবং তাড়াতাড়ি পানি আনয়ন করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাথা মুবারক ধুয়ে দিলেন এবং সমস্ত শরীর মুবারকে পানি ঢেলে ভালভাবে গোসল করিয়ে দিলেন।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, এই গোসলের ফলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম-এর শরীর মুবারক হতে বহু দিনের রোগজনিত ক্লান্তি ও অবসাদ অনেকাংশে দূর হয়ে গেল। তারপর তিনি বললেন, ‘হে আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা! ঘরে কোন কিছু খাবার আছে কি?’ তিনি জবাব দিলেন, ‘জী-হ্যাঁ, কিছু রুটি পাকানো আছে।’ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আমার জন্য তা নিয়ে আসুন আর হযরত মা ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে খবর দিন, তিনি যেন তাঁর আওলাদগণকে সঙ্গে নিয়ে তাড়াতাড়ি আমার নিকট চলে আসেন।’ হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে সংবাদ দিলেন এবং ঘরে যে খাবার তৈরি ছিল তা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট পরিবেশন করলেন।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তাঁর আওলাদগণকে নিয়ে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকটে হাযির হলেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত মা ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে নিজের গলা মুবারকের সাথে জড়িয়ে স্নেহের পরশ বুলিয়ে দিলেন, নাতিগণের কপালে চুমো খেলেন এবং তাঁদেরকে সাথে নিয়ে আহারে বসলেন। কয়েক লোকমা খাবার গ্রহণ করার পর অন্যান্য উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ খিদমতে এসে হাযির হলেন। অতঃপর পর্যায়ক্রমে বিশিষ্ট ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণও বাইরে এসে হাযির হন। কিছুক্ষণ পর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাহিরে এসে তাঁদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘হে ছাহাবীগণ! আমার বিদায়ের পর আপনাদের অবস্থা কিরূপ হবে?’ এ কথা শুনে ছাহাবীগণ ব্যাকুলচিত্তে কান্না শুরু করলেন। তাঁদের এ অবস্থা দেখে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদেরকে সান্ত¡না দান করলেন। অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে নববী শরীফ-এ ওয়াক্তিয়া নামাযের ইমামতি করলেন।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দীর্ঘদিন অসুস্থতার পর সুস্থ দেহ মুবারকে মসজিদে নববী শরীফ-এ আগমন করেন এবং নামাযের ইমামতি করেন এই অপার আনন্দে ছাহাবীগণ নিজ নিজ সামর্থ্য অনুসারে অনেক কিছু দান-খয়রাত করেন। কোন কোন বর্ণনায় জানা যায় যে, খুশিতে বাগবাগ হয়ে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সাত হাজার দীনার, হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পাঁচ হাজার দীনার, হযরত উসমান যুন্ নূরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দশ হাজার দীনার, হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিন হাজার দীনার, হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু একশত উট ও একশত ঘোড়া আল্লাহ পাক-এর রাস্তায় দান করতঃ আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুহব্বত লাভ করেন। আল্লাহ পাক-এর মারিফত-মুহব্বতে দুগ্ধিভূত ব্যক্তিগণ সে দিনটিকে মারিফত-মুহব্বত লাভের উছীলা সাব্যস্ত করেছেন।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, উক্ত দিনের শেষ প্রান্তে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুনরায় অসুস্থ হন এবং তা নিয়েই রফীকে আ’লার পরম দীদারে মিলিত হন।
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের নীতি অনুসরণে মুসলমানগণ যুগ যুগ ধরে ‘আখিরী চাহার শোম্বা’ পালন করে আসছেন। কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “যারা ছাহাবীগণকে উত্তমভাবে অনুসরণ করে আল্লাহ পাক তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট।” (সূরা তওবা-১০০)
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, অনেকে ‘আখিরী চাহার শোম্বাহ’ উদ্যাপন করাকে নাজায়িয ও বিদ্য়াত বলে আখ্যায়িত করে থাকে। যা সম্পূর্ণ অশুদ্ধ ও ভুল। বরং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের অনুসরণে ‘আখিরী চাহার শোম্বাহ’ উপলক্ষে সাধ্যমত গরিব-মিসকীনদেরকে দান-সদকা করা, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি অধিক পরিমাণে ছলাত-সালাম, মীলাদ শরীফ, ক্বিয়াম ও দুরূদ শরীফ পাঠ করা অত্যন্ত ফযীলত ও মর্যাদা লাভের কারণ। অতএব, বাংলাদেশ ও সমস্ত মুসলিম সরকারের উচিত আখিরী চাহার শোম্বাহ-এর দিনের ভাবগাম্ভীর্য রক্ষা করা এবং যথাযথ মর্যাদার সাথে এ দিন পালনের ব্যবস্থা গ্রহণসহ সরকারি ছুটি নির্ধারণ করা।