যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস্ সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, আল্লাহ পাক-এর রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারীদেরকে ‘রাবী’ বলা হয়। এই রাবীগণের মধ্যে যাঁরা প্রথম শ্রেণীর, তাঁদেরকে বলা হয় ‘ছিক্বাহ রাবী’।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, ‘ছিক্বাহ রাবী’ হওয়ার জন্য উম্মত যে মানদ- নির্ধারণ করেছেন, তার মধ্যে মূল বিষয় হচ্ছে- (১) আদালত ও (২) জব্ত। জব্ত হচ্ছে- প্রখর স্মরণশক্তি। তা এমন যে, একবার শুনলে আর ভুলেনা।
আর আদালত-এর মধ্যে চারটি শর্ত রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান হলো দু’টি। যথা- (ক) তাক্বওয়া, (খ) মুরুওওয়াত।
(ক) তাক্বওয়া হচ্ছে- কুফরী, শিরকী, বিদ্য়াতী, ফাসিকী কাজ থেকে বেঁচে থাকার সাথে সাথে কবীরা গুনাহ থেকে, এমনকি ছগীরা গুনাহও বার বার করা থেকে বেঁচে থাকা। শুধু তাই নয়, যিনি ছিক্বাহ রাবী হবেন তিনি হাদীছ শরীফ সম্পর্কে তো মিথ্যা বলবেনই না এমনকি সাধারণ বিষয়েও মিথ্যা বলবেন না এবং তিনি মশহুর হবেন অর্থাৎ অপরিচিত হবেন না। (খ) আর মুরুওওয়াত হচ্ছে- অশালীন, অশোভনীয়, অপছন্দনীয়, এমনকি দৃষ্টিকটু কাজ ও কথা থেকে বিরত থাকা। যেমন- রাস্তায় হেঁটে হেঁটে খাদ্য খাওয়া, রাস্তায় অট্টহাস্য করা, চিৎকার করা, রাস্তা-ঘাটে যেখানে সেখানে ইস্তেঞ্জা করা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা। (তাদরীবুর রাবী, মুকাদ্দামাতুশ শায়খ, মীযানুল আখবার)
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, এখন ফিকিরের বিষয় এই যে, হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী ছিক্বাহ রাবী যদি এত গুন ও যোগ্যতাসম্পন্ন এবং তাক্বওয়াধারী হন অর্থাৎ হাদীছ বিশারদ উম্মতে হাবীব-এর নিকট যদি ছিক্বাহ্ রাবী হিসেবে হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী হওয়ার জন্য ছগীরা গুনাহ বার বার না করা এবং দৃষ্টিকটু সাধারণ অপছন্দনীয় কাজ করা ও কথা না বলা শর্ত হয়, তাহলে যাঁরা আল্লাহ পাক-এর নবী ও রসূল হবেন এবং আল্লাহ পাক-এর কালাম বর্ণনা করবেন, তাঁদের জন্য আল্লাহ পাক কি মানদ- নির্ধারণ করেছেন বা তাঁদের ক্ষেত্রে কতটুকু মা’ছুম বা পবিত্র হওয়া নির্দিষ্ট করেছেন তা ফিকির করতে হবে।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণই হলেন আল্লাহ পাক-এর খাছ ও মনোনীত বান্দাহগণের অন্তর্ভুক্ত এবং তাঁরা প্রত্যেকেই ওহীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, যেমন- মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, আল্লাহ পাক ফেরেশ্তা ও মানুষের মধ্য থেকে নবী-রসূল মনোনীত করেন। (সূরা হজ্জ)
আর কুরআন শরীফ-এর একাধিক স্থানে ইরশাদ হয়েছে, “আমি তাঁদের (নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণের) প্রতি ওহী পাঠাতাম।” (সূরা ইউসূফ-১০৯, নহল-৪৩, আম্বিয়া-৭)
অর্থাৎ নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণের যাবতীয় কার্যাবলীই ওহীর দ্বারা (আল্লাহ পাক কর্ত”ক) পরিচালিত হতো। তাই হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণের সমালোচনা করার অর্থই হলো মহান আল্লাহ পাক-এর সমালোচনা করা। কেননা তারা আল্লাহ পাক-এর ওহী ব্যতীত কিছুই করেননা ও বলেননা।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, আক্বাইদের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে, “সকল আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামগণ মা’ছূম বা নিষ্পাপ।”
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, আক্বাইদের কিতাবে আরো উল্লেখ আছে- “সকল আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণই ছগীরা, কবীরা, কুফরী, শিরকী এমনকি অপছন্দনীয় কাজ হতেও পবিত্র।”
এ প্রসঙ্গে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র সীরত মুবারক থেকে একটি ঘটনা উল্লেখ আছে, “একবার আল্লাহ পাক-এর রসূল, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুজরা শরীফ-এ বসা ছিলেন। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি এসে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাত করার অনুমতি চাইলেন। এ সংবাদ উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট পৌঁছালেন। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সে ব্যক্তিকে অপেক্ষা করতে বলুন। একথা বলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পাগড়ী মুবারক, জামা বা কোর্তা মুবারক ইত্যাদি গোছগাছ করে নিলেন। এমন কি হুজরা শরীফ থেকে বের হওয়ার মুহূর্তে পানির গামলাতে নিজের চেহারা মুবারক দেখে গুছিয়ে নিচ্ছিলেন। তা দেখে সে সময় হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনিও কি এরূপ করেন?” তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “কিরূপ করি?” হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন, “এরূপ পরিপাটি।” এর জবাবে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “হ্যাঁ, আমরা আল্লাহ পাক-এর নবী ও রসূল। আমাদের কোন কাজ কারো অপছন্দ হলে, সে ঈমান হারা হয়ে যাবে।” (আল্ মুরশিদুল আমীন)
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ যে কতটুকু অপছন্দনীয় কাজ থেকে বেঁচে থাকতেন, এ হাদীছ শরীফ-এর বর্ণিত ঘটনা তারই প্রমাণ। তাহলে কি করে এ কথা বলা যেতে পারে বা বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ ভুল-ত্রুটি করেছিলেন? মূলতঃ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ ভুল-ত্রুটি করেছেন একথা বলা ও এ আক্বীদা পোষণ করা কাট্টা কুফরী। কেননা তাঁরা মহান আল্লাহ পাক-এর ওহী ব্যতীত কিছুই বলেন না ও করেন না।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, মানুষ আক্বাইদ সম্পর্কিত অজ্ঞতা ও সঠিক ইতিহাস না জানার কারণে এবং কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর সঠিক ব্যাখ্যা না বুঝার কারণে, নবী রসূল আলাইহিমুস সালামগণের শানে বেয়াদবীমূলক কুফরী কথাবার্তা বলে থাকে।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণের সাথে কতটুকু আদব রক্ষা করতে হবে, সে প্রসঙ্গে কিতাবে একটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়। ইমামুত শরীয়ত ওয়াত্ব তরীক্বত, হযরত ইমাম র্সারী সাক্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি- তিনি হযরত মা’রুফ কারখী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর প্রধান খলীফা এবং সাইয়্যিদুত্ ত্বয়িফা হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহির শায়েখ ছিলেন। তাঁর ঘটনা উল্লেখ করা হয়, তিনি তাঁর যামানায় আল্লাহ পাক-এর লক্ষ্যস্থল ছিলেন। তিনি ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ব তরীক্বত ছিলেন। তিনি একবার স্বপ্নে দেখেন আল্লাহ পাক-এর নবী হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামকে। দেখে প্রশ্ন করেছিলেন, হে আল্লাহ পাক-এর নবী হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম! আমরা জানি আপনার অন্তরে আল্লাহ পাক-এর মহব্বত পরিপূর্ণভাবে অবশ্যই বিদ্যমান রয়েছে; তারপরেও আপনি কি কারণে আপনার ছেলে আল্লাহ পাক-এর আরেক নবী হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর জুদায়ীর (বিচ্ছেদের) কারণে তাঁর মহব্বতে চল্লিশ বছর যাবত কেঁঁদে কেঁদে আপনার চক্ষু মুবারক নষ্ট করেছিলেন? একথা বলার সাথে সাথে গায়িব থেকে নেদা (আওয়াজ) হলো, “হে ইমাম র্সারী সাক্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি! নবীগণের শানে মুখ সামলিয়ে সতর্কতার সহিত কথা বলুন।” এরপর হযরত ইউসুফ আলাইহিস্ সালামকে তাঁর সামনে পেশ করা হলে তিনি দেখে বেহুশ হয়ে পড়ে যান এবং এভাবে একাধারা তের দিন, তের রাত্রি বেহুঁশ থাকার পর হুঁশ ফিরে পান। তখন গায়িব থেকে পুনরায় নেদা হয়, “আল্লাহ পাক-এর নবীগণের শানে আদবের খিলাফ কথা বললে এরূপই অবস্থাই হয়ে থাকে।”
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, আদব কত সূক্ষ্ম বিষয় এবং হযরত নবী আলাইহিস সালামগণের ক্ষেত্রে কি পরিমাণ সতর্কতা ও সাবধানতা এবং আদবের সাথে কথা বলতে হবে। তা ফিকির করতে হবে।
(৮২ পৃষ্ঠার পর)
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, হযরত ইমাম র্সারী সাক্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইমামুয্ যামান, ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ব তরীক্বত ও আল্লাহ পাক-এর লক্ষ্যস্থল ওলী হওয়া সত্ত্বেও তাঁর প্রতি সতর্কবাণী ও সাবধানবাণী উচ্চারিত হয়েছে।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, এখানে ফিকিরের বিষয় যে, শুধু আদবের খিলাফ কথা বললেই যদি এই অবস্থা হয়, তবে যারা হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণের বিরোধিতা করে এবং নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ গুনাহ করেছিলেন বলে আক্বীদা পোষণ করে তাদের কি অবস্থা হবে? মূলতঃ তাদের অবস্থা হবে ইবলীসের ন্যায়। কারণ ইবলীস শয়তান আল্লাহ পাক-এর রসূল হযরত আদম আলাইহিস সালাম-এর শানে বেয়াদবী ও বিরোধিতা করার কারণে মালউন ও রজীম হয়ে বিতাড়িত হয়েছে। শুধু তাই নয় অনন্তকাল ধরে তার উপর লা’নত বর্ষিত হতেই থাকবে।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, মূল কথা হলো- হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী ছিক্বাহ রাবী যদি এত গুণ ও যোগ্যতাসম্পন্ন এবং তাক্বওয়াধারী হন অর্থাৎ হাদীছ বিশারদ উম্মতে হাবীব-এর নিকট যদি ছিক্বাহ রাবী হিসেবে হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী হওয়ার জন্য ছগীরা গুনাহ বার বার না করা ও দৃষ্টিকটু সাধারণ অপছন্দনীয় কাজ করা ও কথাও না বলা শর্ত হয়, তাহলে যাঁরা আল্লাহ পাক-এর নবী ও রসূল হবেন এবং আল্লাহ পাক-এর কালাম বর্ণনা করবেন, তাঁদের জন্য আল্লাহ পাক কি মানদ- নির্ধারণ করেছেন বা তাঁদের ক্ষেত্রে কতটুকু মা’ছুম বা পবিত্র হওয়া নির্দিষ্ট করেছেন তা ফিকির করতে হবে।