যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস্ সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেছেন, “আশুরা উপলক্ষে আলোচনা করতে গিয়ে যারা ছাহিবে ছির, কাতিবে ওহী হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে দোষারোপ করে; তারা মূলতঃ তাঁর মহান মর্যাদা সম্পর্কে নেহায়েতই জাহিল বা অজ্ঞ।”
পবিত্র আশুরা সম্পর্কিত এক আলোচনা প্রসঙ্গে গতকাল রাজারবাগ শরীফ-এ তিনি এসব কথা বলেন।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছাহাবীগণের মধ্যে একজন বিশেষ শ্রেণীর ছাহাবী যাকে ‘উলুল আ’যম’ বা ‘জলীলুল ক্বদর’ ছাহাবী বলা হয়।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুবারক সান্নিধ্যে থেকে তা’লীম ও তরবিয়ত হাছিল করেছেন এবং অর্জন করেছেন শরীয়তের অগাধ ইল্ম। যার কারণে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে ‘ফক্বীহুল উম্মত’ মনে করতেন। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “একবার হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সম্পর্কে বলেন, ‘হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যা বলেছেন তা ঠিকই বলেছেন। কেননা তিনি নিজে একজন ফক্বীহ।’
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী ‘ছহীহ বুখারী শরীফ’-এর হাদীছ শরীফ উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে তাঁর নিজ অবস্থায় ছেড়ে দাও। কারণ তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ ছোহবতে ছিলেন।’
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী ‘তাহযীবুল আসমা লিন্ নববী’ কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছোহবতে থেকে যেমনিভাবে খাছ ফয়েজ ও তাওয়াজ্জুহ হাছিল করেন, তেমনিভাবে হাদীছ শরীফ-এর ভা-ার হতে সংরক্ষণ করেন অসংখ্য মূল্যবান হাদীছ শরীফ।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইসলাম গ্রহণ করার পর আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে হুনাইনের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী ‘মুসলিম শরীফ’-এর হাদীছ শরীফ উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বুযূর্গ পিতা হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবার শরীফ-এ এসে আরজ করলেন, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে আপনি কাতিবে ওহী নিযুক্ত করলে ভাল হতো। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে কাতিবে ওহী নিযুক্ত করলেন।”
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী ‘তিরমিযী শরীফ’-এর হাদীছ শরীফ উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাছ দু’য়া করেছেন এভাবে, ‘আয় আল্লাহ পাক! হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে হাদী ও হিদায়েতপ্রাপ্ত করুন এবং তাঁর দ্বারা লোকদের হিদায়েত দান করুন।”
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী ‘আল ইছাবাহ, মাজমাউয্ যাওয়ায়িদ’ কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর জন্য আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু’য়া করেছেন এভাবে, ‘আয় আল্লাহ পাক! হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে হিসাব-কিতাব শিক্ষা দিন এবং তাঁকে জাহান্নাম থেকে নাযাত দিন।”
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী হাদীছ শরীফ-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার সাওয়ারীর উপর বসা, তাঁর পিছনে হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বসালেন। কিছুক্ষণ পর আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘হে মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! তোমার শরীরের কোন অংশ আমার শরীর মুবারক স্পর্শ করে আছে কি?’ হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার বুক ও পেট আপনার শরীর মুবারকের সাথে লেগে আছে।’ এটা শুনে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু’য়া করেন যে, আয় আল্লাহ পাক! হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে ইল্ম দ্বারা পরিপূর্ণ করে দিন।”
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, আখিরী রসূল্ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দু’য়া নির্ঘাত কবুলযোগ্য। যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর প্রতি কি করে বিদ্বেষ পোষণ করা, উনার সমালোচনা করা সম্ভব? মূলতঃ কাফির তথা গুমরাহ লোক ব্যতীত কারো পক্ষেই তাঁর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা সম্ভব নয়।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মর্যাদা-মর্তবার মধ্যে অন্যতম মর্যাদা হলো, তিনি ছিলেন একজন আদিল বা ইনসাফগার খলীফা। অর্থাৎ খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন। তাঁর ন্যায়বিচার ও ইনসাফ সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ করা হয়, জান্নাতের সু-সংবাদপ্রাপ্ত ছাহাবী হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, ‘আমার দৃষ্টিতে হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, এরপর হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর চেয়ে অধিক ন্যায় বিচারক কেউ নেই।’
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী ‘ফতওয়ায়ে হাদীছিয়াহ’ কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ফযীলত সম্পর্কে আমীরুল মু’মিনীন ফিল হাদীছ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহিকে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু শ্রেষ্ঠ, না হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি শ্রেষ্ঠ? হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আল্লাহ পাক-এর কসম! হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে ঘোড়ায় চড়ে জিহাদে যেতেন তখন ঘোড়ার নাকে যে ধুলাবালিগুলো প্রবেশ করতো সে ধুলাবালিগুলোও হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি অপেক্ষা বহুগুণে শ্রেষ্ঠ।’ (সুবহানাল্লাহ)
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর অসংখ্য ফযীলতের মধ্যে আরো একটি ফযীলত হলো, তিনি যমীনে থাকতেই জান্নাতের সু-সংবাদ পেয়েছেন। যদিও তিনি আশারায়ে মুবাশ্শিরার অন্তর্ভুক্ত নন। এ প্রসঙ্গে ‘বুখারী শরীফ’-এর হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, ‘আখিরী রসূল’ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের প্রথম যে দল সমুদ্রের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে, তাদের জন্যে জান্নাত ওয়াজিব।”
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, হযরত ইমাম তাবারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আটাশ হিজরীতে সর্বপ্রথম সমুদ্র যুদ্ধের মাধ্যমে কারবাসের উপর আক্রমণ করেন এবং কারবাস তিনিই বিজয় করেন।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, এত সব মর্যাদা-মর্তবার পরও যারা হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, তাঁকে নাক্বিছ বলে, দোষারোপ করে, তাঁর সমালোচনা করে তাদের জন্যে হযরত ইমাম শিহাবুদ্দীন খাফফাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর কথাই অধিক প্রযোজ্য। তিনি বলেছেন, “যে ব্যক্তি হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, গালি দেয়, নাক্বিছ বলে, সমালোচনা করে, সে হাবিয়া দোযখের কুকুরসমূহের মধ্য হতে একটি কুকুর।”
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু শুধু ছাহাবীই নন, বরং মর্যাদাপূর্ণ, জলীলুল ক্বদর কাতিবে ওহী ও গুপ্তভেদ জাননেওয়ালা ছাহাবী এবং ন্যায় পরায়ন খলীফাও ছিলেন। সুতরাং তাঁর সম্পর্কে সাবধানে কথা বলতে হবে। নচেৎ কুফরী করে ঈমানহারা হয়ে জাহান্নামী হতে হবে।