মুহম্মদ সাদী
মানুষের অবয়ব, মন, মনন, আচরণ, স্বভাব, চরিত্র ও মেধাসহ সকল বিষয়েই পিতা ও পিতৃকুলের প্রভাব প্রত্যক্ষ ভূমিকায় থাকে। এ ক্ষেত্রে মাতা, মাতৃকুল ও উনাদের উর্ধ্বতন পুরুষের প্রভাব, প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্বও অপরিহার্য। কথায় বলে: “পিতা-মাতা যেমন সন্তান তেমন।” এ বিষয়টি আওলাদে রসূল, মাদারজাদ ওলী সাইয়্যিদাতুনা হযরত সাইয়্যিদাহ দাদী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার ক্ষেত্রে পুরোপুরি প্রযোজ্য। নূরাণীগঞ্জ জেলার বৈদ্যের বাজার থানাধীন ‘পাকুণ্ডা’ গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত ও আল্লাহওয়ালা পরিবারের স্বনামধন্য ব্যক্তিত্বের নাম মুবারক হযরতুল আল্লামা মুহম্মদ আব্দুল লতীফ খান ছাহিব আলাইহিস সালাম। তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত দাদী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত নানাজান। আল্লাহওয়ালা ও অভিজাত বংশীয় হযরতুল আল্লামা মুহম্মদ আব্দুল লতীফ খান আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন পরিবারের প্রধান ব্যক্তিত্ব এবং এলাকার সকলের মান্যবর। শরাফত, সৌজন্য, পরোপকার, দানশীলতা আল্লাহভীরুতা, সুন্নত পালনের অভ্যস্ততা এবং পরহিযগারিতে তিনি ছিলেন অনন্য। এসব গুণ-বৈশিষ্ট্যে উনার আহলিয়া আলাইহাস সালাম তিনিও ছিলেন অনুপমা। অতুলনীয় এসব গুণ-বৈশিষ্ট্যের কারণে উনারা উভয়েই হয়ে উঠেছিলেন সকলের অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়।
দু’জন মাত্র কন্যা সন্তান উনাদের। একজন হযরত মুসাম্মত আয়িশা আক্তার আলাইহাস সালাম এবং অপরজন হযরত মুসাম্মত কাওসার আক্তার আলাইহাস সালাম। ইলম, প্রজ্ঞা, শরয়ী পর্দা পালনের অভ্যস্ততা, সুন্নত পালনের একনিষ্ঠতা, যিকির-ফিকির ও ইবাদত-বন্দেগীর নিবিষ্টতা এবং পরহিযগারিতে উনারা দু’জনেই ছিলেন অতুলনীয়। পর পর দু’জনেরই মুবারক শাদী অনুষ্ঠিত হয়ে গেলে বয়:বৃদ্ধ বুযূর্গ পিতা-মাতা একান্ত একলা হয়ে পড়েন। বুযূর্গ বড় মেয়ের ঘরে একজন পূণ্যবান সন্তানের পরম প্রত্যাশায় মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তা’য়ালা উনার কাছে অহর্ণিশ মুনাযাত উনাদের।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত দাদী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার মুবারক বিলাদত শরীফ
ওলীয়ে মাদারজাদ, আওলাদুর রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ সালাহুদ্দীন আলাইহিস সালাম উনার অধস্তন মুবারক তৃতীয় পুরুষ আওলাদুর রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুস সবূর আলাইহিস সালাম উনার সঙ্গে ইতোপূর্বে উল্লিখিত ‘পাকু-া’ গ্রামের হযরতুল আল্লামা মুহম্মদ আব্দুল লতীফ খান ছাহিব আলাইহিস সালাম উনার বুযূর্গ মেয়ে হযরত মুসাম্মত আয়িশা আক্তার আলাইহাস সালাম উনার মুবারক শাদী অনুষ্ঠিত হয়। শাদী মুবারক অনুষ্ঠানের কিছুদিন পর থেকে আওলাদুর রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত সাইয়্যিদ আব্দুস সবুর আলাইহিস সালাম তিনি ‘বাড়ী মজলিস’ গ্রাম থেকে “পাকুণ্ডা” গ্রামস্থ শ্বশুরালয়ে চলে যান এবং সেখানেই তিনি উনার ছাহিবাতুল মুকাররামা (আহলিয়া) উনার সঙ্গে বসবাস শুরু করেন। বুযূর্গ শ্বশুর-শ্বাশুড়ির পরম মমতা ঘেরা মুবারক সান্নিধ্যে বুযূর্গ ব্যক্তিত্ব আওলাদুর রসূল হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুর সবুর আলাইহিস সালাম এবং হযরত মুসাম্মত আয়িশা আক্তার আলাইহাস সালাম উনাদের যিকির-ফিকির, ইবাদত-বন্দেগী ও পারস্পরিক নিবিড় সান্নিধ্যে সময় কাটতে থাকে।
উনাদের প্রত্যাশা একজন নেক সন্তানের, যিনি হবেন লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ। বুযূর্গ শ্বশুড়-শ্বাশুড়ির প্রত্যাশাও অভিন্ন। প্রত্যাশা একদিন পূরণ হয়। হযরত মুসাম্মত আয়িশা আক্তার আলাইহাস সালাম উনার মুবারক কোল আলো করে মহান আল্লাহ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের আখাছছুল খাছ লক্ষ্যস্থল এক পূণ্যবতী কন্যা সন্তান আলাইহাস সালাম তিনি বিলাদত শরীফ লাভ করেন। সুবহানাল্লাহ! তিনিই হলেন মাদারজাদ ওলী, আওলাদুর রসূল, সাইয়্যিদাতু নিসাইল আলামীন, ক্বায়িম মাক্বামে হযরত মা আমিনা আলাইহাস সালাম, উম্মুল খইর, ছিদ্দীক্বায়ে কুবরা, রাহনুমায়ে দ্বীন, ছাহিবাতুল ইলম ওয়াল হিকাম ওয়াল কাশফ ওয়াল কারামত, মিছদাক্বে কুরআন ওয়াল হাদীছ, কুতুবুল আলম, মাহবূবায়ে ইলাহী, হাবীবাতুল্লাহ, হাবীবাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, জাদ্দাতু খলীফাতুল উমাম আলাইহিস সালাম, উম্মু মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম, ছাহিবাতুল মুকাররামা, লি আবী মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত দাদী হুযূর ক্বিবলা হযরত সাইয়্যিদাহ মুসাম্মত জাহানারা বেগম আলাইহাস সালাম। উনার সুমহান বিলাদত শরীফ-এর তারিখ ১৩৩৩ হিজরীর জুমাদাল উখরা মাস মুতাবিক ১৯১৫ ঈসায়ী সাল। (চলবে)