৩৫তম ফতওয়া হিসেবে
“পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ অর্থাৎ সম্মানিত শরীয়ত উনার আলোকে খাছ সুন্নতী বাল্যবিবাহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। আলহামদুলিল্লাহ।
খাছ সুন্নতী বাল্যবিবাহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ
সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলাম উনার নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” উনার মধ্যে এমনসব লেখাই পত্রস্থ হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।
বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো “উলামায়ে সূ”। ইহুদীদের এজেন্ট উলামায়ে ‘সূ’রা হারাম টিভি চ্যানেল, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদি ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে খাছ সুন্নতী বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে বলছে। অর্থাৎ তাদের বক্তব্য হচ্ছে সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্য বাল্য বিবাহকে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। তাই বাল্য বিবাহ করা বা দেয়া যাবে না। নাউযুবিল্লাহ!
অথচ তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, চরম বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক। তাদের এসব বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ্ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এবং হবে। নাউযুবিল্লাহ!
কারণ, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যারা এ আক্বীদা পোষণ করবে যে, সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে বাল্যবিবাহকে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। তাই বাল্যবিবাহ করা বা দেয়া যাবে না। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! তারা ঈমানহারা হয়ে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। কারণ বাল্য বিবাহ শুধু জায়িযই নয় বরং খাছ সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত। আর সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে হালাল বা জায়িয বিষয়কে হারাম বা নাজায়িয বলা এবং হারাম বা নাজায়িযকে হালাল বা জায়িয বলা কুফরী। কেননা কিতাবে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে-
اِسْتِحْلَالُ الْـمَعْصِيَةِ كُفْرٌ.
অর্থাৎ “গুনাহের কাজ বা হারামকে হালাল মনে করা কুফরী।” (শরহে আক্বাইদে নাসাফী শরীফ)
অতএব, বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, উলামায়ে “সূ”দের উক্ত বক্তব্য সাধারণ মুসলমান উনাদের আক্বীদা বা ঈমানের জন্য বিশেষভাবে হুমকিস্বরূপ।
উল্লেখ্য, বাল্যবিবাহ করতে বা দিতে হবে এরূপ বাধ্যবাধকতা সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে নেই। কারণ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শরীয়ত বিবাহের বয়স নির্দিষ্ট করে দেয়নি। তবে বাল্যবিবাহ যেহেতু সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে জায়িয ও সুন্নত তাই বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে বলা যাবে না। বললে কুফরী হবে, ঈমান নষ্ট হবে। নাউযুবিল্লাহ!
অনুরূপ উলামায়ে “সূ”দের এ কুফরীমূলক বক্তব্য মুসলমানদের আমলের ক্ষেত্রেও বিশেষ ক্ষতির কারণ। কেননা যারা তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে প্রয়োজন থাকা স্বত্বেও বাল্যবিবাহ থেকে বিরত থাকবে তারা একটি খাছ সুন্নত পালন করা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি অশ্লীল, অশালীন, অসামাজিক কাজে মশগুল হতে পারে। নাউযুবিল্লাহ!
কাজেই, যারা এ ধরনের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী তারা ও হক্ব সমঝদার মুসলমানগণ তারা তাদের ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে অর্থাৎ সকল বিষয়ে সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ মোতাবেক আমল করে মহান আল্লাহ পাক উনার রিযামন্দি হাছিল করতে পারে সে জন্যেই “পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ অর্থাৎ সম্মানিত শরীয়ত উনার আলোকে খাছ সুন্নতী বাল্যবিবাহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়াটি” প্রকাশ করা হলো।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং নিজেই বাল্যবিবাহ দিয়েছেন
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
(৯৯)
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ شَدَّادٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ قَالَ كَانَ زَوْجُ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اُمَّ سَلَمَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ اِبْنَهَا سَلَمَةَ فَزَوَّجَه رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِنْتَ حَمْزَةَ وَهُمَا صِبْيَانِ صَغِيْرَانِ فَلَمْ يَـجْتَمِعَا حَتّٰى مَاتَا
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে শাদ্দাদ রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম উনার আওলাদ হযরত সালামাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ সম্পন্ন করেন হযরত হামযাহ রদ্বিয়াল্লাহ তা’য়ালা আনহু উনার বানাত (মেয়ে) উনার সাথে। সে সময় উনারা দু’জনই ছিলেন অল্প বয়স মুবারকের অধিকারী। উনারা দু’জন মিলিত হওয়ার আগেই পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। (আহকামুল কুরআন লিল জাস্সাস ২য় খ- ৩৪৪ পৃষ্ঠা)
(১০০)
শুধু তাই নয়, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার দুই বানাত অর্থাৎ আন নূরুছ ছানিয়াহ (হযরত রুক্বাইয়া) আলাইহাস সালাম ও আন নূরুছ ছালিছাহ (হযরত উম্মু কুলছূম) আলাইহাস সালাম উনাদের আক্বদ মুবারকও বাল্য বয়স মুবারকে করিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! (সীরত গ্রন্থসমূহ)
হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অনেকেই বাল্যবিবাহ মুবারক দিয়েছেন ও করেছেন
প্রথম খলীফা আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া, খলীফাতু রসূলিল্লাহ হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি অভিভাবক হিসেবে নিজ বানাত (কন্যা) উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে ৬ বছর বয়স মুবারকে আক্বদ ও ৯ বছর বয়স মুবারকে নিসবাতুল আযীম (শাদী) মুবারক করিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! যা উপরে বর্ণিত অসংখ্য পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা আকট্যভাবে প্রমাণিত হয়েছে। যেমন- এ প্রসঙ্গে “তাফসীরে আহকামুল কুরআন লিল জাসসাস” উনার ২য় খ- ৩৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
(১০১)
اِنَّ النَّبِـيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَزَوَّجَ اُمَّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةَ الصِّدِّيْقَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ وَهِيَ بِنْتُ سِتِّ سِنِيْنَ زَوَّجَهَا اِيَّاهُ اَبُوْ بَكْرِنِ الصِّدِيْقِ عَلَيْهِ السَلَامُ
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতু নিসায়িল ‘আলামীন উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা আলাইহাস সালাম উনাকে ৬ বছর বয়স মুবারকে আক্বদ মুবারক করেন। আর খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি স্বয়ং নিজে (অভিভাবক হিসেবে) এ পবিত্র আক্বদ মুবারক সুসম্পন্ন করেন। সুবহানাল্লাহ!
দ্বিতীয় খলীফা আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি স্বয়ং নিজেই বাল্যবিবাহ মুবারক করেছেন। আর চতুর্থ খলীফা আমীরুল মু’মিনীন হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি স্বয়ং নিজেই উনার বানাত বা কন্যা হযরত উম্মু কুলছূম আলাইহাস সালাম উনাকে ছোট বা বাল্যবস্থায় নিসবাতুল আযীম বা শাদী মুবারক দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ উনার মশহূর কিতাব “মুছান্নিফ ইবনে আবি শায়বাহ শরীফ” উনার মধ্যে উল্লেখ আছে-
(১০২)
حَدَّثَنَا اِبْنُ عُلَيَّةَ عَنْ يُوْنُسَ عَنِ الْـحَسَنِ أَنَّ حَضْرَتْ عُمَرَ بْنَ الْـخَطَّابِ عَلَيْهِ السَّلَامُ خَطَبَ اِلٰـى حَضْرَتْ عَلِىٍّ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَه عَلَيْهِ السَّلَامُ اِبْنَتَه حَضْرَتْ اُمَّ كُلْثُوْمٍ عَلَيْهَا السَّلَامُ فَقَالَ حَضْرَتْ عَلِىٌّ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَه عَلَيْهِ السَّلَامُ اِنَّـهَا صَغِيْرَةٌ فَانْظُرْ إِلَيْهَا. فَأَرْسَلَهَا إِلَيْهِ بِرِسَالَةٍ فَمَازَحَهَا. فَقَالَتْ لَوْلَا أَنَّكَ شَيْخٌ أَوْ لَوْ لَا أَنَّكَ أَمِيْرُ الْـمُؤْمِنِينَ فَأَعْجَبَ حَضْرَتْ عُمَرُ بْنُ الْـخَطَّابِ عَلَيْهِ السَّلَامُ مُصَاهِرَتَه فَخَطَبَهَا فَأَنْكَحَهَا اِيَّاهُ.
অর্থ: হযরত ইবনে উলাইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইউনুস রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে এবং তিনি হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। নিশ্চয়ই হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার নিকট উনার বানাত (কন্যা) হযরত উম্মু কুলছুম আলাইহাস সালাম উনাকে নিসবাতুল আযীম বা শাদী মুবারক করার প্রস্তাব দিলেন। তখন হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! আমার বানাত (কন্যা) তিনি তো ছোট (অল্প বয়স্কা/নাবালিগা) অতএব, আপনি সংবাদ পাঠিয়ে উনাকে দেখুন। তখন তিনি উনাকে সংবাদ পাঠালেন এবং উনার সাথে আনন্দদায়ক কথাবার্তা বললেন। হযরত উম্মু কুলছূম আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, আপনি যদি উম্মতের প্রধান ও আমীরুল মু’মিনীন না হতেন (তবে আমি রাজি হতাম না) অতঃপর উনার সাথে নিসবাতুল আযীম মুবারক সম্পন্œ করার ব্যাপারে তিনি অতি আগ্রহী হলেন। তাই তিনি উনাকে প্রস্তাব দিলেন এবং নিসবাতুল আযীম মুবারক সম্পন্ন করলেন। সুবহানাল্লাহ!
অন্যান্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে অনেকেই বাল্যবিবাহ দিয়েছেন ও করেছেন
এ প্রসঙ্গে ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাব “আল মাবসূত লিস সুরুখসী” উনার মধ্যে উল্লেখ আছে-
(১০৩)
وَكَذَالِكَ سَائِرٌ مَّا ذَكَرْنَا مِنَ الْاٰثَارِ فَإِنَّ قُدَامَةَ بْنَ مَظْعُوْنَ تَزَوَّجَ بِنْتَ حَضْرَتِ الزُّبَيْرِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ يَوْمَ وَلَدَتْ وَقَالَ اِنْ مِّتُّ فَهِيَ خَيْرٌ وَرَثَنِيْ وَاِنْ عِشْتُ فَهِيَ بِنْتُ الزُّبَيْرِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ. وَزَوَّجَ اِبْنُ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ بِنْتًا لَّه صَغِيْرَةً مِّنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ وَزَوَّجَ عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ بِنْتَ أَخِيْهِ بْنِ اُخْتِهٖ وَهِيَ صَغِيْرَانِ وَوَهَبَ رَجُلٌ اِبْنَتَهُ الصَّغِيْرَةَ مِنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ الْـحَسَنِ فَاَجَازَنَ ذَالِكَ حَضْرَتْ عَلِىٌّ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَه عَلَيْهِ السَّلَامُ وَزَوَّجَتْ اِمْرَأَةُ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ بِنْتًا لَّـهَا صَغِيْرَةً اِبْنَا لِلْمُسَيِّبِ بْنِ نُـخْبَةَ فَاَجَازَ ذَالِكَ حَضْرَتْ عَبْدُ الله رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ.
অর্থ: আমরা আছার থেকে যা বর্ণনা করেছি অনুরূপ আরো বহু বর্ণনা রয়েছে। যেমন হযরত কুদামাহ ইবনে মাযউন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বানাত বা কন্যাকে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার (অর্থাৎ জন্মের) দিনেই বিবাহ করেন এবং বলেন, যদি আমি ইন্তেকাল করি তবে তিনি আমার উত্তম উত্তরাধিকারিনী হবেন। আর যদি আমি বেঁচে থাকি তবে তিনি হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মেয়ে অথাৎ আমি উনার উত্তরাধিকারী হবো। সুবহানাল্লাহ! হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার এক নাবালিগা মেয়েকে হযরত উরওয়া ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট বিবাহ দিয়েছেন। আর হযরত উরওয়া ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার ভাইয়ের মেয়েকে উনার বোনের ছেলের সাথে বিবাহ দিয়েছেন। তখন উনারা দুজনেই ছিলেন নাবালিগ ও নাবালিগা। অনুরূপ এক ব্যক্তি উনার নাবালিগা মেয়েকে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট বিবাহ দেন। আর এটা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি সমর্থন করেন। হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আহলিয়া তিনি উনার নাবালিগা মেয়েকে হযরত মুসাইয়্যিব ইবনে নুখবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ছেলের সাথে বিবাহ দেন। আর এতে সম্মতি দান করেন ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি স্বয়ং নিজেই। সুবহানাল্লাহ!
বাল্যবিবাহ জায়িয বা বৈধ হওয়ার ব্যাপারে সকল ইমাম মুজতাহিদ উনাদের মধ্যে ইজমা বা ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে “তাফসীরে আহকামুল কুরআন লিল জাসসাস” উনার ২য় খ- ৩৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
(১০৪)
وَفِيْ هٰذِهِ الْاٰيَةِ دَلَالَةٌ أَيْضًا عَلٰى أَنَّ لِلْأَبِ تَزَوِّيْجَ اِبْنَتِهِ الصَّغِيْرَةِ مِنْ حَيْثُ دَلَّتْ عَلٰى جَوَازِ تَزْوِيْجِ سَائِرِ الْأَوْلِيَاءِ اِذْ كَانَ هُوَ أَقْرَبُ الْأَوْلِيَاءِ وَلَا نَعْلَمُ فِيْ جَوَازٍ ذٰلِكَ خِلَافًا بَيْنَ السَّلَفِ وَالْـخَلَفِ مِنْ فُقَهَاءِ الْاَمْصَارِ
অর্থ: এ পবিত্র আয়াত শরীফ থেকে এ কথার প্রতিও ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, পিতার জন্যে নিজের নাবালিগ কন্যাকে বিবাহ দেয়ার ইখতিয়ার রয়েছে। কেননা এ পবিত্র আয়াত শরীফ থেকে সকল অভিভাবকের জন্য বিবাহ দেয়ার বৈধতা বুঝা যায়। আর পিতা যিনি অভিভাবকদের মধ্যে নিকটতম তার তো আরো আগেই থাকবে। এ মাসয়ালায় পৃথিবীর কোনো দেশের পূর্ববর্তী যুগ ও পরবর্তী যুগের ফুকাহাদের মাঝে কোনো মতিবিরোধ আমরা পাইনি। অর্থাৎ এ বিষয়ে সকলেই ইজমা বা ঐক্যমত পোষণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে কিতাবে আরো উল্লেখ আছে-
(১০৫)
قَالَ اِبْنُ عَبْدِ البَرِّ رَحْمَةَ اللهِ عَلَيْهِ أَجْمَعَ العُلَمَاءُ عَلٰى أَنَّ لِلْأَبِ أَنْ يُّزَوِّجَ اِبْنَتَهُ الصَّغِيْرَ وَلَا يُشَاوِرَهَا
অর্থ: “হযরত ইবনে আব্দুল বার রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সমস্ত উলামায়ে কিরাম উনারা এ ব্যপারে ইজমা বা ঐক্যমতে পৌঁছেছেন যে, পিতার জন্য তার নাবালিগা মেয়েকে তার সাথে পরামর্শ ছাড়াই বিবাহ দেয়া জায়িয। (আল ইস্তিযকার ৪৯ পৃষ্ঠা)
বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত কিতাব ‘ফাতহুল বারী শরহে বুখারী’ উনার ৯ম জিলদ ২৩৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
(১০৬)
وَالْبِكْرُ الصَّغِيْرَةُ يُزَوِّجُهَا أَبُوْهَا اِتِّفَاقًا
অর্থ: সকলের ঐক্যমতে পিতা তার নাবালিগা মেয়েকে বিবাহ দিতে পারবে।
পবিত্র হাদীছ শরীফ ও ইতিহাস গ্রন্থসমূহে ছহীহ সনদসহ এমন অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে যে, একজন নানী বা দাদীর বয়সই হতো ২১ বছর। অর্থাৎ বাল্যবিবাহ ঘরে ঘরে বিরাজমান ছিলো। হযরত ইমাম বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত কিতাব “সুনানে কুবরা বায়হাক্বীতে” বর্ণনা করেছেন-
(১০৭-১০৮)
حَدَّثَنِى الشَّافِعِىُّ قَالَ : رَأَيْتُ بِصَنْعَاءَ جَدَّةً بِنْتَ إِحْدَى وَّعِشْرِيْنَ سَنَةً، حَاضَتْ اِبْنَةَ تِسْعٍ وَوَلَدَتْ اِبْنَةَ عَشْرٍ، وَحَاضَتِ الْبِنْتُ اِبْنَةَ تِسْعٍ وَوَلَدَتْ اِبْنَةَ عَشْرٍ. وَيُذْكَرُ عَنِ الْـحَسَنِ بْنِ صَالِحٍ أَنَّه قَالَ: أَدْرَكْتُ جَارَةً لَنَا صَارَتْ جَدَّةً بِنْتَ إِحْدَى وَّعِشْرِيْنَ سَنَةً. وَعَنْ مُغِيْرَةَ الضَّبِّىِّ أَنَّه قَالَ : اِحْتَلَمْتُ وَأَنَا اِبْنُ اِثْنَتَىْ عَشَرَةَ سَنَةً. وَرُوِيْنَا عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ أَنَّهَا قَالَتْ : إِذَا بَلَغَتِ الْـجَارِيَةُ تِسْعَ سِنِيْنَ فَهِىَ اِمْرَأَةٌ.
অর্থ: হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করছেন, “আমি (ইয়ামানের) সানা শহরে এক নানীকে দেখেছি, তখন উনার বয়স ছিল ২১ বছর। ৯ বছর বয়সে উনার স্বাভাবিক মাজুরতা শুরু হয় অর্থাৎ তিনি বালেগা হন এবং ১০ বছর বয়সে তিনি এক মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন”। এবং উক্ত মেয়ে সন্তান তিনিও ৯ বছর বয়সে বালেগা হন এবং ১০ বছর বয়সে এক সন্তানের জন্ম দেন। হযরত হাসান বিন সালেহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, আমাদের এক কিশোরীকে পেলাম যিনি ২১ বছরে নানী হয়েছেন। হযরত মুগীরাতাদ্ব দ্বব্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, আমি যখন বালেগ হই, তখন আমার বয়স ছিলো ১২ বছর। হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, মেয়েদের বয়স (৯) নয় বছর হলে সে মহিলা।” (সুনানে কুবরা বায়হাক্বী : ১ম খন্ড ৪৭২ পৃষ্ঠা হাদীছ নং ১৫৩১ প্রকাশনা: দারুল কুতুবুল ইলমিয়া বইরুত লেবানন, জাওয়াহিরুন নক্বী ১/৩১৯)
উপরোক্ত দলীল দ্বারা আমরা দেখতে পেলাম যে, পূর্ববর্তী সময়ে বাল্যবিবাহ সবখানেই বিরাজমান ছিলো। ছেলে ও মেয়ে উভয়ের বাল্যবিবাহ হতো। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের দেশেও আমাদের দাদী নানীদেরও কম বয়সে বিবাহ হয়েছে। তবে কেন আজ বাল্যবিবাহের বিরোধিতা?