খলীফাতুল্লাহ্, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, হুজ্জাতুল ইসলাম, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, সুলত্বানুল ওয়ায়িজীন, গউছে আ’যম, ছাহিবু সুলত্বানিন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার
এজন্য বিখ্যাত তাবিয়ী ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এর ব্যাখ্যায় বলেন-
انما الفقيه
নিশ্চয়ই ফক্বীহ বা আলিম আল্লাহওয়ালা যিনি হবেন উনার যে ছিফত থাকা শর্ত তা হচ্ছে-
الزاهد فى الدنيا
তিনি অবশ্যই দুনিয়া থেকে বিরাগ হবেন।
والراغب الى الاخرة
পরকালের দিকে রুজু থাকবেন সব অবস্থায়
والبصير بذنبه
গোনাহ থেকে সবসময় সতর্ক থাকবেন।
والـمداوم على عبادة ربه
দায়িমীভাবে তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত বন্দিগীতে মশগুল থাকবেন।
والوارع
তিনি মুত্তাকী হবেন সুন্নতের পাবন্দ হবেন।
والكاف عن اعراض الـمسلمين
তিনি মুসলমানদের ইজ্জত সম্মান নষ্ট করবেন না।
والعفيف عن اموالـهم
এবং মুসলমাদের মাল বা ধন দৌলত-এর প্রতি লোভ করবেন না।
والناصح لجماعتهم
এবং মুসলমানদের তিনি সবসময় নছীহত করবেন।
এটা হচ্ছে বাহ্যিক অর্থ। আর এর আভ্যান্তরিন যে একটা অর্থ রয়েছে সেটা হচ্ছে যিনি হক্কানী রব্বানী আলিম হবেন তিনি
الزاهد فى الدنيا
অর্থাৎ গাইরুল্লাহ থেকে তিনি বিরত থাকবেন
والراغب الى الاخرة
সবসময় মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি রুজু থাকবেন। যার কারণে জাহিরী এবং বাতিনী জিসমানী এবং রূহানী বাহ্যিক আভ্যান্তরিন সমস্ত গোনাহ থেকে তিনি সতর্ক থাকবেন। কোন প্রকার গোনাহতে তিনি লিপ্ত হবেন না।
والـمداوم على عبادة ربه
এবং দায়িমীভাবেই তিনি জাহিরী-বাতিনী সমস্ত ইবাদতে মশগুল থাকবেন। সেটা বাহ্যিকভাবে সম্মানিত সুন্নত উনার ইত্তিবা। আভ্যান্তরিনভাবে। ক্বল্ব এবং নফস যত বদ খাছলত রয়েছে সেগুলো থেকে ইছলাহী লাভ করার জন্য তিনি মশগুল থাকবেন
والوارع
তিনি অবশ্যই মুত্তাকী হবেন।
যা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
ان اكرمكم عند الله اتقاكم
নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে সবচেয়ে বেশি সম্মানিত যিনি মুত্তাকী বা পরহেযগার অর্থাৎ যিনি সুন্নত উনার পাবন্দ তিনি।
والعفيف عن اموالهم
মুসলমানদের মাল-সম্পদ টাকা-পয়সা ধন- দৌলত ইত্যাদির প্রতি উনার কোন লোভ থাকবে না। মোহ, আকর্ষন থাকবেনা। অর্থাৎ তিনি সব অবস্থাতেই গইরুল্লাহ থেকে ফিরে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রতি রুজূ থাকবেন। যার কারণে তিনি নিজেও ইছলাহতে মশগুল থাকবেন এবং মানুষকে নছীহতে মশগুল রাখবেন। এটা হচ্ছে উলামায়ে হক্কানী রব্বানী উনাদের নিদর্শন। এর বিপরীতটা হচ্ছে উলামায়ে ‘সূ’দের নিদর্শন। এরা সবসময় দুনিয়াতে মশগুল থাকবে, পরকালের কথা তারা কখনও স্মরণ করবে না। আর এরা গোনাহকে কোন গুরুত্ব দিবে না। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে মুনাফিকের খাছলত হচ্ছে, সে পাহাড় পরিমান গোনাহ করলেও সে মনে করবে, সে কিছুই করেনি। নাউযূবিল্লাহ! আর ইবাদতকে সে কোন গুরুত্বই দিবে না। নাঊযুবিল্লাহ! বরং রসম-রেওয়াজ যা করার, সেটাই সে করবে। আর সুন্নত উনার পাবন্দ হওয়ার কোন প্রয়োজনই সে মনে করবে না। নাঊযুবিল্লাহ! সুন্নত উনাকে কোন গুরুত্ব দিবে না। নাঊযুবিল্লাহ! সে বলবে ফরয করলেই চলে, এতো সুন্নতের প্রয়োজন নেই। নাউযুবিল্লাহ! এবং সে সব সময়ই দুনিয়াবী ধন-দৌলত টাকা পয়সা ইত্যাদির দিকে মশগুল থাকবে এবং এসবের লোভে সে লালায়িত থাকবে। আর মুসলমানদের তো নছীহত করার প্রশ্নই আসে না বরং সে মানুষকে গইরুল্লাহর দিকে রুজূ করে দিবে। এটা হচ্ছে উলামায়ে ‘সূ’দের নিদর্শন। একদিক থেকে সে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করবে না অর্থাৎ আল্লাহভীতি বলতে যে বিষয়টি রয়েছে সেটা তার মধ্যে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত থাকবে। আল্লাহভীতির লক্ষণ তার মধ্যে থাকবে না এবং সবসময়ই সে গইরুল্লাহতে মশগুল থাকবে। তার চাল-চলন, কথা-বার্তা, আচার-আচরন, উঠা-বসা, সবদিক থেকে অর্থাৎ কোন অবস্থাতেই সে মহান আল্লাহ পাক উনাকে স্মরণ করবে না। যেহেতু তার অন্তরে মহান আল্লাহ পাক উনার স্মরণ থাকবে না সেহেতু সে সবসময় গুনাহতে মশগুল থাকবে। ইবাদতের সাথে তার কোন সম্পর্ক থাকবে না যদিও সে ইবাদত করে। তবে সেটা রছম রেওয়াজ
فويل للمصلين
মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন মুছল্লি জাহান্নামে যাবে। কারণ সেতো মানুষকে দেখানোর জন্য নামায পড়ে থাকে। এই শ্রেণীর ইবাদতে সে মশগুল থাকবে। আর সুন্নত বলতে যা বুঝানো হয়েছে তা তার মধ্যে থাকবে না অর্থাৎ সে সুন্নত আমল করবে না বরং যত প্রকার বিদআত-বেশরা, কুফরী-শিরকী ও হারাম রয়েছে সেগুলিকে সে হালাল করার কাজে মশগুল থাকবে। নাউযুবিল্লাহ! এবং সব অবস্থাতেই দুনিয়াবী ধন-সম্পদ গইরুল্লাহ বলতে যা বুঝানো হয় তাতেই সে মশগুল থাকবে, আর তা হাছিলের কোশেশেই সে নিয়োজিত থাকবে এবং মানুষকে সে তাই বলবে। কারণ কিতাবে রয়েছে
كل اناء يترشح بما فيه
পাত্রে আছে যাহা, ঢালিলে পড়িবে তাহা। অর্থাৎ পাত্রে যেটা রয়েছে সেটাই পড়বে। এজন্য হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাযযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন-
ایک زمانہ بدنام علماء سوء + بہتر از شست سال طاعت بے ریاء
কিছুক্ষণ সময় যারা উলামায়ে ‘সূ’ বা দুনিয়াদার মালানা তাদের দোষত্রুটি বর্ণনা করা হচ্ছে ষাট বৎসর মকবুল নফল ইবাদত থেকে উত্তম। সুবহানাল্লাহ! এখন এখানে ফিকির করতে হবে হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাযযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে মুসলমান মাত্রই চিনে থাকে। তিনি এ কথা বললেন কি কারণ? এর যে ওয়াক্বিয়া বর্ণনা করা হয়েছে কিতাবে, হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাযযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে মুহাক্কিক্ব মুদাক্কিক্ব করেছেন। তিনি ইমাম ছিলেন। একদিন তিনি উনার মজলিসের মধ্যে উলামায়ে ‘সূ’দের কিছু হাক্বীক্বত প্রকাশ করলেন। কারণ উনার যামানাটা ছিলো ফিৎনার যামানা উলামায়ে ‘সূ’দের খুব প্রাধন্য ছিলো, খুব প্রভাব ছিলো; যার কারণে দেখা যায়, উনার বিরুদ্ধে উলামায়ে ‘সূ’রা অনেক আন্দোলন করেছিল। উনার সমস্ত কিতাবাদী যা ছিলো পবিত্র হাদীছ শরীফ, তাফসীর, ফিক্বাহ, ফতওয়া, তাছাওউফের কিতাব প্রায় অনেকগুলি উলামায়ে ‘সূ’রা একত্রিত হয়ে বাদশাহর কাছে নালিশ করে উনার কিতাবগুলি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিলো। নাউযুবিল্লাহ! এবং উনাকে দেশ থেকে বের করে দেয়ারও তারা ষড়যন্ত্র করেছিলো। যেহেতু উলামায়ে ‘সূ’দের প্রভাব ছিলো প্রাধান্য ছিলো তাদের হাক্বীক্বত প্রকাশ করা প্রয়োজন ছিলো। যার কারণে তিনি উনার তা’লীম গাহে দর্স গাহে যেখানে তিনি তা’লীম দিতেন সেখানে উলামায়ে ‘সূ’দের হাক্বীক্বত প্রকাশ করতেন। একদিন তিনি উলামায়ে ‘সূ’দের কোন কোন উলামায়ে ‘সূ’ নির্দিষ্ট করে তাদের দোষ ত্রুটি বর্ণনা করতেছিলেন যে, এরা উলামায়ে ‘সূ’ বাদশাহর সাথে এদের সম্পর্ক রয়েছে, এরা গইরুল্লাহ হাছিলের জন্য মশগুল রয়েছে।
তিনি যখন উলামায়ে ‘সূ’দের হাক্বীক্বত বর্ণনা করতেছিলেন তখন একজন আলিম ছাহেব সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, হে শায়েখ! আপনি উলামায়ে ‘সূ’ দের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা না করে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ আলোচনা করলে উত্তম হতো। এটা যখন সে বললো তখন তিনি গোস্বা করলেন তাকে ধমক দিলেন যে তোমার আদব-কায়দা শেখা উচিৎ, কখন কি আলোচনা করতে হবে সেটা আমার জানা রয়েছে, সেটা তোমার থেকে আমাকে জানতে হবে না। তখন তিনি বললেন-
ایک زمانہ بدنام علماء سوء + بہتر از شست سال طاعت بے ریاء
‘কিছুক্ষন সময় উলামায়ে ‘সূ’দের দোষ-ক্রুটি বর্ণনা করে দেয়া তাদের হাক্বীক্বত প্রকাশ করে দেয়াটা হচ্ছে ষাট বৎসর মকবুল নফল ইবাদত থেকে উত্তম।’ সুবহানাল্লাহ! এর ব্যাখ্যায় যা বলা হয়েছে সেটা হলো একজন মানুষ যদি কোন উলামায়ে ‘সূ’-এর ধোকাতে পড়ে যায় তাহলে তার জীবনটা নষ্ট হয়ে যায়, সে বিভ্রান্ত গোমরাহ হয়ে যায়। যেহেতু ষাট বৎসর বলতে বলা হয়েছে, একটা মানুষের জীবন। সাধারণভাবে একজন মানুষের স্বাভাবিক হায়াত ধরা হয়েছে ষাট বৎসর। অর্থাৎ একজন মানুষ যদি কোন উলামায়ে ‘সূ’র বিভ্রান্তিতে পড়ে যায় বা ধোকায় পড়ে যায়, তাহলে তার জীবনটা বরবাদ হয়ে যায় কারণ সে তার গুমরাহীতে গোমরাহ হয়ে বেঈমান হয়ে মারা যাবে। তাই উলামায়ে ‘সূ’দের বিভ্রান্তি থেকে, কুফরী থেকে, বেঈমানী থেকে বাঁচানোর জন্য উলামায়ে ‘সূ’দের হাক্বীক্বত প্রকাশ করার প্রয়োজন রয়েছে। সেটাই হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন যে, উলামায়ে ‘সূ’দের হাক্বীক্বত প্রকাশ করা ফরয এবং ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!
এখন এই বিষয়ে কেউ কেউ চু-চেরা, ক্বীল-ক্বাল করে থাকে। এরা মনে করে থাকে যে, উলামায়ে ‘সূ’ সে দুনিয়াদার মালানা, তার দোষ-ত্রুটি বললে সেটা কেমন হবে, সেটা গীবত হবে কিনা? আসলে গীবতের যে সংজ্ঞা রয়েছে এ সম্পর্কে তাদের ইলম যথেষ্ট নয়।
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَلا يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَحِيمٌ
মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে-
وَلا يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا
তোমরা একজন আরেকজনের গীবত করো না। গীবত করলে কি হবে? মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই বলেন-
أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ
তোমরা কি এটা পছন্দ করবে বা করো, তোমার কোন মৃত ভাইয়ের গোস্ত খাওয়াটা। কখনই সেটা পছন্দ করবে না। অবশ্যই তোমরা সেটা অপছন্দ করবে। এ বিষয় মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। তিনি ক্ষমাশীল তাওবা কবুলকারী, দয়াশীল। (অসমাপ্ত)