বিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমাউল উম্মাহ শরীফ ও পবিত্র ছহীহ ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত, দিন, সময় ও মুহূর্তের আমলসমূহের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া- ৬ষ্ঠ পর্ব
[সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি। মহান আল্লাহ পাক উনার অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-উনার ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব উনার অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীলভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে- ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উনার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা) ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যা) এবং ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা) ২৭. ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬১-১৭৫তম সংখ্যা) ২৮. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬৮-২৩৭), ২৯. জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯২-১৯৩তম সংখ্যা) ৩০. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯৫-২১৩তম সংখ্যা), ৩১. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে “কুলাঙ্গার, পাপিষ্ঠ ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে শরীয়তের সঠিক ফায়ছালা ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” (২০৩তম সংখ্যা), ৩২. হানাফী মাযহাব মতে নামাযে সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর ইমাম ও মুক্তাদী উভয়ে ‘আমীন’ অনুচ্চ আওয়াজে বা চুপে চুপে পাঠ করাই শরীয়তের নির্দেশ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১২তম সংখ্যা), ৩৩. পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২২০তম সংখ্যা থেকে যা এখনো চলছে) পেশ করার পাশাপাশি-
৩৪তম ফতওয়া হিসেবে
“পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত ও দিনের আমলসমূহের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত ও দিনের আমলসমূহের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ
সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলাম উনার নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরক ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” উনার মধ্যে এমনসব লেখাই পত্রস্থ হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।
বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো “উলামায়ে সূ”। ইহুদীদের এজেন্ট উলামায়ে ‘সূ’রা হারাম টিভি চ্যানেলে, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদি ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে মুসলমান উনাদের বিশেষ বিশেষ ফযীলতযুক্ত আমলের রাত ও দিনসমূহ পালন করাকে বিদয়াত, নাজায়িয ও শিরক বলে ফতওয়া দিয়ে মুসলমান উনাদেরকে অশেষ খায়ের, বরকত, নিয়ামত, নাজাত অর্থাৎ রেযামন্দি বা সন্তুষ্টি মুবারক থেকে মাহরূম করছে। যেমন তারা বলে থাকে যে, পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা বিদয়াত, শিরক। নাউযুবিল্লাহ! পবিত্র শবে বরাত পালন করা বিদয়াত, নাজায়িয। নাউযুবিল্লাহ! পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ পালন করা বিদয়াত। নাউযুবিল্লাহ! অনুরূপ আরো অনেক বিষয়কেই তারা বিনা দলীলে মনগড়াভাবে নাজায়িয ও বিদয়াত বলে থাকে। নাউযুবিল্লাহ!
অপরদিকে বেদ্বীনী-বদদ্বীনী অর্থাৎ কাফির মুশরিক, ইহুদী, নাছারাদের যত পর্ব বা দিবস রয়েছে সেগুলোকে শুধু জায়িযই নয় বরং নিয়ামত বলে আখ্যা দিয়ে থাকে। নাউযুবিল্লাহ! যেমন বাইতুল মুকাররমের সাবেক খতীব ওবায়দুল হক্ব প্রকৃতপক্ষে উবাই বলেছিল, “পহেলা বৈশাখ আল্লাহ পাক উনার নিয়ামত।” নাঊযুবিল্লাহ!
অথচ তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, চরম বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক। তাদের এসব বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ্ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
কারণ, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যারা এ আক্বীদা পোষণ করবে যে, “পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা বিদয়াত শিরক এবং পহেলা বৈশাখ মহান আল্লাহ পাক উনার নিয়ামত।” নাউযুল্লিাহ! তারা ঈমানহারা হয়ে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। কারণ সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে হালাল বা জায়িয বিষয়কে হারাম বা নাজায়িয বলা এবং হারাম বা নাজায়িযকে হালাল বা জায়িয বলা কুফরী। কেননা কিতাবে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে-
استحلال الـمعصية كفر.
অর্থাৎ “গুনাহের কাজ বা হারামকে হালাল মনে করা কুফরী।” (শরহে আক্বাইদে নাসাফী শরীফ)
অতএব, বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, উলামায়ে “সূ”দের উক্ত বক্তব্য সাধারণ মুসলমান উনাদের আক্বীদা বা ঈমানের জন্য বিশেষভাবে হুমকিস্বরূপ।
অনুরূপ উলামায়ে “সূ”দের এ কুফরীমূলক বক্তব্য মুসলমানদের আমলের ক্ষেত্রেও বিশেষ ক্ষতির কারণ। কেননা যারা তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে “পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা থেকে বিরত থাকবে এবং হারাম পহেলা বৈশাখ পালন করবে” তারা অশেষ খায়ের, বরকত ও নিয়ামত থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কর্তৃক নিষিদ্ধকৃত কাজে তথা হারাম কাজে মশগুল হওয়ার কারণে কঠিন গুনাহগার অর্থাৎ জাহান্নামী হবে। নাউযুবিল্লাহ!
কাজেই, যারা এ ধরনের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী তারা ও হক্ব সমঝদার মুসলমানগণ তারা তাদের ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে অর্থাৎ সকল বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করে মহান আল্লাহ পাক উনার রিযামন্দি হাছিল করতে পারে সে জন্যেই “পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত ও দিনের আমলসমূহের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াটি” প্রকাশ করা হলো।
সম্মানিত ইসলামী মাস, বিশেষ বিশেষ রাত, দিন, মুহুর্ত ও সময় সমূহ সম্পর্কে এবং চন্দ্র ও সূর্যের গতিবিধির ব্যাপারে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার ২৬ খানা পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের তাফসীর
বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ
সূর্য ও চাঁদ এই দু’টি ইসলামী মাস, রাত, দিন, মুহুর্ত ও সময় নিরুপনের ব্যাপারে মানদন্ড হিসেবে বিবেচিত। অর্থাৎ সূর্য ও চন্দ্র উনাদের আবর্তনের কারণে বিশেষ বিশেষ রাত, দিন, মুহুর্ত ও সময়গুলো সুচারুরূপে আগমণ করে থাকে। এজন্য আমরা ইসলামী মাস, রাত, দিন, মুহুর্ত ও সময় ইত্যাদীর আলোচনার পাশাপাশি চন্দ্র ও সূর্যের আবর্তন ও তাদের গতিবিধি সম্পর্কে আলোচনা করবো। যাতে করে বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে যায় এবং বুঝতে সহজ হয়। নি¤েœ এ সম্পর্কিত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের তাফসীর বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হলো:
আয়াত শরীফ নম্বর-২
يَسْاَلُوْنَكَ عَنِ الْاَهِلَّةِ قُلْ هِىَ مَوَاقِيْتُ لِلنَّاسِ وَالْحَجّ. (سورة البقرة ۱۸۹ الاية(
অর্থ: লোকেরা আপনাকে চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। আপনি বলে দিন সেটা হলো মানুষের জন্য সময় নির্ধারক এবং হজ্জের সময় নিরূপক বা সময় ঠিক করার মাধ্যম। (পবিত্র সূরাতুল্ বাক্বারাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮৯)
(يَسْاَلُونَكَ عَنِ الاَهلة) عن زيادة الاهلة ونقصانها لماذا (قُلْ) يا محمد صلى الله عليه وسلم (هِىَ مَوَاقِيتُ لِلنَّاسِ) علامات للناس لقضاء دينهم وعدة لنسائهم وصومهم وانظارهم (والحج) وللحج، نزلت فى معاذ بن جبل رضى الله عنه حين سال النبى صلى الله عليه وسلم عن ذلك. (تنوير المقباس من تفسير ابن عباس رضى الله عنهما المتوفى ۶۸ هجرى سورة البقرة الشريفة ۱۸۹ الاية الشريفة جمعه: محمد بن يعقوب الفيروزآبادى رحمة الله عليه المتوفى ۸۱۷ هجرى(
অর্থ: (লোকেরা আপনাকে চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে।) কেন ইহা বৃদ্ধি ও হ্রাস প্রাপ্ত হয় (আপনি বলে দিন) হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সেটা হলো মানুষের জন্য সময় নির্ধারক) ইহা তাদের ঋণ পরিশোধ করার এবং তাদের স্ত্রীদের ইদ্দত গণনা ও রোযা ও ইফতারের সময়সূচীর জন্য নিদর্শন স্বরূপ। (এবং হজ্জের সময় ঠিক করার মাধ্যম।) এবং হজ্জের জন্যও। যখন হযরত মুয়ায বিন জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে নতুন চাঁদ সম্বন্ধে জিজ্ঞাস করেছিলেন, তখন এ পবিত্র আয়াত শরীফ অবতীর্ণ হয়েছিলো। (তানবীরুল মাকবাস মিন তাফসীরি ইবনি আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা ওয়াফাত মুবারক: ৬৮ হিজরী পবিত্র সূরাতুল্ বাক্বারাহ শরীফ: ১৮৯ নং পবিত্র আয়াত শরীফ সঙ্কলনকারী: হযরত মুহাম্মাদ বিন ইয়া’কূব ফীরোযাবাদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৮১৭ হিজরী)
قال العوفى رحمة الله عليه عن ابن عباس رضى الله عنهما: سال الناسُ رسولَ الله صلى الله عليه وسلم عن الاهلة فنزلت هذه الاية: {يَسْاَلُونَكَ عَنِ الاَهِلَّةِ قُلْ هِىَ مَوَاقِيتُ لِلنَّاسِ وَالْحَجِّ} يعلمون بها حِلَّ دَيْنهم وعدّة نسائهم ووقتَ حَجِّهم.
وقال ابو جعفر رحمة الله عليه عن الربيع رحمة الله عليه عن ابى العالية رحمة الله عليه: بلغنا اَنَّهم قالوا: يا رسول الله صلى الله عليه وسلم لم خُلِقَت الاهلة؟ فانزل الله {يَسْاَلُونَكَ عَنِ الاَهِلَّةِ قُلْ هِىَ مَوَاقِيتُ لِلنَّاسِ} يقول: جَعَلَهَا الله مواقيت لصَوْم المسلمين وافطارهم وعدة نسائهم ومَحَلّ دَيْنهم.
وكذا رُوىَ عن عَطَاء رحمة الله عليه والضحاك رحمة الله عليه وقتادة رحمة الله عليه والسدى رحمة الله عليه والربيع بن انس رحمة الله عليه نحو ذلك.
وقال عبد الرزاق رحمة الله عليه عن عبد العزيز بن ابى رَوّاد رحمة الله عليه عن نافع رحمة الله عليه عن ابن عمر رضى الله عنهما قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: “جعل الله الاهلة مواقيت للناس فصوموا لرؤيته وافطروا لرؤيته فان غم عليكم فَعُدُّوْا ثلاثين يومًا”.
ورواه الحاكم رحمة الله عليه فى مستدركه من حديث ابن ابى رواد رحمة الله عليه به. وقال: كان ثقة عابدًا مجتهدًا شريف النسب فهو صحيح الاسناد.
وقال محمد بن جابر رحمة الله عليه عن قيس بن طلق رحمة الله عليه عن ابيه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: “جعل الله الاهلَّة فاذا رايتم الهلال فصُوموا واذا رايتموه فافطروا فان اغْمى عليكم فاكملوا العدة ثلاثين”. وكذا روى من حديث ابى هريرة رضى الله عنه ومن كلام على بن ابى طالب عليه السلام. (تفسير القران العظيم اى تفسير ابن كثير سورة البقرة الشريفة ۱۸۹ الاية الشريفة المؤلف: ابو الفداء اسماعيل بن عمر بن كثير القرشى الدمشقى الشافعى رحمة الله عليه الولادة ۷۰۰ الهجرى والوفاة ۷۷۴ هجرى(
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা উনার থেকে হযরত আওফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে একদল লোক নতুন চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করায় অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ “লোকেরা আপনাকে চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। আপনি বলে দিন সেটা হলো মানুষের জন্য সময় নির্ধারক এবং হজ্জের সময় ঠিক করার মাধ্যম” নাযিল হয়। চাঁদ দ্বারা লেন-দেনের সময়কাল জানা যায়, মহিলাদের ইদ্দতকাল জানা যায় এবং পবিত্র হজ্জ উনার সময় সম্পর্কেও জানা যায়।
হযরত আবূ জা’ফর ত্ববারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত রবী’ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত আবুল আলিয়াহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করে বলেন: আমাদের কাছে এই বর্ণনা পৌঁছেছে যে, একদল লোক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! চাঁদ কেন সৃষ্টি করা হয়েছে? এ প্রেক্ষিতে অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ “লোকেরা আপনাকে চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। আপনি বলে দিন সেটা হলো মানুষের জন্য সময় নির্ধারক এবং হজ্জের সময় ঠিক করার মাধ্যম” নাযিল হয়। রাবী বলেন: মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি মুসলমান উনাদের রোযার সময় নির্ধারণ করার জন্য, উহার ইফতার করার জন্য, মহিলাদের ইদ্দতকাল জানানোর জন্য এবং ঋণগ্রস্থদের ঋণের সময়সীমা জানার জন্য চাঁদ সৃষ্টি করেছেন। অনুরুপ বর্ণনা করেছেন হযরত আত্বা রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত দ্বহহাক রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ক্বতাদাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত সুদ্দী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত রবী’ বিন আনাস রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
হযরত আব্দুর রয্যাক্ব রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আব্দুল আযীয বিন আবূ রওওয়াদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত ইমাম নাফে’ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা উনার থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নূরুম্ মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: “মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি চাঁদ সৃষ্টি করেছেন মানুষের সময় নির্ধারণের জন্য। তাই তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখ এবং চাঁদ দেখে রোযা শেষ কর। আর যদি ঊনত্রিশ তা’রীখে দেখা না যায় তাহলে মাস ত্রিশদিন পূর্ণ কর।” হযরত হাকিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি স্বীয় কিতাব ‘আল্ মুস্তাদরাক’ উনার মধ্যে হযরত ইবনে আবূ রওওয়াদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ খানা উল্লেখ করে বলেছেন: তিনি হযরত ইবনে আবূ রওওয়াদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন ছিক্বাহ, আবিদ, মুজতাহিদ ও শরীফ বংশজাত বর্ণনাকারী। তাই উনার বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ খানার সনদ ছহীহ।
হযরত মুহাম্মাদ ইবনে জাবির রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ক্বায়েস বিন ত্বল্ক রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি উনার পিতা হযরত ত্বল্ক রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নূরুম্ মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: “মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি চাঁদ সৃষ্টি করেছেন। অতএব যখন তোমরা চাঁদ দেখতে পাবে তখন রোযা রাখবে এবং যখন পরবর্তী চাঁদ দেখবে তখন রোযা বন্ধ করবে। কিন্তু যদি ঊনত্রিশ তা’রীখে চাঁদ দেখা না যায় তাহলে মাস ত্রিশ দিনে পূর্ণ করবে।” হযরত আবূ হুরাইরাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও হযরত আলী বিন আবূ ত্বালিব আলাইহিস সালাম উনাদের থেকেও অনুরুপ বর্ণনা পাওয়া যায়। (তাফসীরুল্ কুরআনিল আযীম অর্থাৎ তাফসীরে ইবনু কাছীর পবিত্র সূরাতুল্ বাক্বারাহ: ১৮৯ নং আয়াত শরীফ লেখক: হযরত আবুল্ ফিদা ইসমাঈল বিন উমর বিন কাছীর কুরাশী দামিশকী শাফিয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বিলাদত: ৭০০ হিজরী ওয়াফাত: ৭৭৪ হিজরী)
قال ابو جعفر رحمة الله عليه: فتأويل الاية اذا كان الامرُ على ما ذكرنا عمن ذكرنا عنهُ قوله فى ذلك: يسالونك يا محمد صلى الله عليه وسلم عن الاهلة ومحاقها وسِرَارِها وَتمامها واستوائها وتغير احوالها بزيادة ونُقصان وَمحاق واستسرار، وما المعنى الذى خَالف بينه وبين الشمس التى هى دائمة ابدًا على حال واحدة لا تتغير بزيادة ولا نقصان؟ فقلْ يا محمد صلى الله عليه وسلم: خالف بين ذلك ربُّكم لتصييره الاهلة التى سالتم عن امرها ومخالفة ما بينها وبين غيرها فيما خالف بينها وبينه مواقيتَ لكم ولغيركم من بنى ادم فى معايشهم ترقبون بزيادتها ونقصانها ومحاقِها واستسرارها واهلالكم اياها، اوقات حَلّ ديونكم وانقضاء مدة اجارة من استأجرتموه وتصرُّم عدة نسائكم ووقت صومكم وافطاركم فجعلها مواقيت للناس.
واما قوله “والحج” فانه يعنى وللحجِّ يقول: وجعلها ايضًا ميقاتًا لحجكم، تعرفون بها وقت مناسككم وحَجكم. (جامع البيان في تأويل القران اى تفسير الطبري سورة البقرة الشريفة ۱۸۹ الاية الشريفة المؤلف: محمد بن جرير بن يزيد بن كثير بن غالب الاملى ابو جعفر الطبرى رحمة الله عليه المتوفى ۳۱۰ هجرى(
অর্থ: হযরত আবূ জা’ফর ত্ববারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উল্লেখিত বর্ণনার প্রেক্ষিতে অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যা হলো: হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তারা আপনাকে নতুন চাঁদ, উনার উদয়-অস্ত, বাড়া-কমা এবং পরিবর্তন-পরিবর্ধন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে এবং তারা আরো প্রশ্ন করে যে, কি কারণে চাঁদ ও সূর্যের মাঝে এ ব্যতিক্রম অবস্থা যে, সূর্য সর্বদা এক অবস্থায়ই থাকে, উনার মাঝে কোন বাড়তি ও কমতি নেই, অথচ চাঁদ কখনো বাড়ে আবার কখনো কমে? হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলুন, চাঁদ ও সূর্যের মাঝে এ ব্যতিক্রম মহান আল্লাহ তায়ালা উনিই করে দিয়েছেন। কারণ, তিনি চাঁদকে তোমাদের জন্য এবং তোমাদের ব্যতিত সমগ্র মানব জাতীর জন্য সময় নির্দেশক বানিয়েছেন। উনার উদয়-অস্ত এবং বাড়া-কমা উনাদের ভিত্তিতে তোমরা জীবিকা অর্জনের পথ অবলম্বন কর এবং নতুন চাঁদ উদয়ের দ্বারা তোমরা ঋণ পরিশোধের, ইজারার, তোমাদের আহলিয়াদের ইদ্দতের, পবিত্র রোযার এবং পবিত্র ইফতারের সময় সম্পর্কে অবগতি লাভ করতে পার। তাই তা মানুষের জন্য সময় নির্দেশক।
মহান আল্লাহ তায়ালা উনার বাণী: والحج উনার ব্যাখ্যা বা তাৎপর্য হলো: তোমাদের পবিত্র হজ্জ উনার সময়ের জন্যও চাঁদকে মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি সময় নির্দেশক বানিয়েছেন। তাই তোমরা উনার দ্বারা হজ্জ ও হজ্জের অনুষ্ঠানাদীর সময়কাল সম্পর্কে জানতে পার। (জামিউল বায়ান ফী তা’বীলিল কুরআন অর্থাৎ তাফসীরুত্ ত্ববারী পবিত্র সূরাতুল্ বাক্বারাহ: ১৮৯ নং আয়াত শরীফ লেখক: হযরত মুহাম্মাদ বিন জারীর বিন ইয়াযীদ বিন কাছীর বিন গালিব আমালী আবূ জা’ফর ত্ববারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৩১০ হিজরী)
قوله تعالى: {يَسْاَلُونَكَ عَنِ الاهلة} الاهلة جمع هلال واشتقاقه من قولهم استهل الصبى اذا صاح واهلّ بالحج اى رفع صوته بالتلبية. وكذلك الهلال يسمى هلالاً لانه يهل الناس بذكره اى يرفعون الصوت عند رؤيته وانما سمى الشهر شهراً لشهرته. وقال الضحاك رحمة الله عليه فى معنى الاية: ان المسلمين سالوا رسول الله صلى الله عليه وسلم عن خرص النخيل والتصرف فى زيادة الشهر ونقصانه فنزلت هذه الاية {يَسْاَلُونَكَ عَنِ الاهلة}.
{قُلْ هِىَ مَوَاقِيتُ لِلنَّاسِ والحج} اى التصرف فى حال زيادته ونقصانه سواء. قال ابن عباس رضى الله عنهما فى رواية ابى صالح رحمة الله عليه نزلت هذه الاية فى شأن معاذ بن جبل رضى الله عنه وثعلبة بن عنمة الانصارى رضى الله عنه لانهما قالا: يا رسول الله صلى الله عليه وسلم ما بال الهلال يبدو فيطلع دقيقاً مثل الخيط ثم يزيد حتى يعظم ويستوى ويستدير ثم ينقص؟ فنزلت هذه الاية: {يَسْاَلُونَكَ عَنِ الاهلة قُلْ هِىَ مَوَاقِيتُ لِلنَّاسِ والحج} اى هى علامات للناس فى حل ديونهم وصومهم وفطرهم وعدة نسائهم ووقت الحج. (بحر العلوم اى تفسير السمرقندي سورة البقرة ۱۸۹ الاية الكريمة المؤلف: الفقيه المفسر ابو الليث نصر بن محمد بن أحمد بن إبراهيم السمرقندي الحنفي رحمة الله عليه المتوفى ۳۷۳ هجري(
অর্থ: মহান আল্লাহ তায়ালা উনার বাণী: (লোকেরা আপনাকে চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে) ‘আল্ আহিল্লাহ’ শব্দ মুবারক ‘আল্ হিলাল’ শব্দ মুবারক উনার বহুবচন। অভিধান শাস্ত্রের পরিভাষায়- শিশু চিৎকার করলে বলা হয় استهل الصبى অর্থাৎ শিশুটি উঁচু আওয়াজে চিৎকার করেছে এবং اهلّ بالحج হজ্জের জন্য আওয়াজ উঁচু করেছে অর্থাৎ হাজী উঁচু আওয়াজে তালবিয়া পাঠ করেছে। হিলাল উনাকে হিলাল রূপে নামকরণ করার কারণ হলো- চাঁদ তালাশকারীরা চাঁদের নাম বলে জোড়ে চিৎকার করে অর্থ্ৎা চাঁদ দেখার সময় চাঁদ চাঁদ করে তাঁরা তাঁদের আওয়াজকে উঁচু করে। হযরত দ্বহহাক রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাৎপর্য সম্পর্কে বলেন: একদা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নূরুম্ মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে খেজুর শাখা এবং নতুন চাঁদ চিকন ও বড় রুপান্তরিত হওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার প্রেক্ষিতে অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ (লোকেরা আপনাকে চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে) নাযিল হয়।
(আপনি বলে দিন সেটা হলো মানুষের জন্য সময় নির্ধারক এবং হজ্জের সময় ঠিক করার মাধ্যম) অর্থাৎ পবিত্র চাঁদ উনার বড় ও চিকন রুপান্তরিত হওয়ার বিষয়টি সমান গতিতে হয়। হযরত আবূ ছালিহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণনায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা তিনি বলেন: অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ হযরত মুয়ায বিন জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও হযরত ছা’লাবাহ বিন আনমাহ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাদের শানে নাযিল হয়েছিল। কেননা, উনারা দুজন আরজ করেছিলেন যে, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! চাঁদ শুরুতে রেখার মত চিকন থাকে, অতপর বৃদ্ধি পেতে থাকে এমনকি পূর্ণাঙ্গতা লাভ করে, অতপর স্বাভাবিকভাবে ক্রমান্নয়ে কমতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত আবারো চিকন হয়- চাঁদের এ অবস্থা কেন? এ জিজ্ঞাসার প্রেক্ষিতে অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ (লোকেরা আপনাকে চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। আপনি বলে দিন সেটা হলো মানুষের জন্য সময় নির্ধারক এবং হজ্জের সময় ঠিক করার মাধ্যম) নাযিল হয়।
চাঁদ মানুষের জন্য তাদের ঋণ পরিশোধ, রোযা, ইফতার, মহিলাদের ইদ্দত ও পবিত্র হজ্জ উনার সময়সীমা নির্ধারণ করার ব্যাপারে নিদর্শন। (বাহরুল উলূম অর্থাৎ তাফসীরুস্ সামরকান্দী পবিত্র সূরাতুল্ বাক্বারাহ: ১৮৯ নং আয়াত শরীফ লেখক: ফক্বীহ মুফাসসির হযরত আবুল লাইছ নাছর বিন মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন ইবরাহীম সামারকান্দী হানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৩৭৩ হিজরী)
{قُلْ هِىَ مَوَاقِيتُ لِلنَّاسِ والحج} اى معالم يوقت بها الناس مزارعهم ومتاجرهم ومحال ديونهم وصومهم وفطرهم وعدة نسائهم وايام حيضهن ومدة حملهن وغير ذلك ومعالم للحج يعرف بها وقته. (مدارك التنزيل وحقائق التأويل اى تفسير النسفى سورة البقرة الشريفة ۱۸۹ الاية الشريفة المؤلف ابو البركات عبد الله بن احمد بن محمود النسفى الحنفى رحمة الله عليه المتوفى ۷۱۰ هجرى(
অর্থ: (আপনি বলে দিন চাঁদ হলো মানুষের জন্য সময় নির্ধারক এবং হজ্জের সময় ঠিক করার মাধ্যম) অর্থাৎ চাঁদের হিসেবের মাধ্যমে কৃষকরা তাদের ফসল ফলায়, ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করে, ইহা ঋণগ্রস্থদের সময় নিরুপক, রোযা, ইফতার, মহিলাদের ইদ্দত, হায়েযের দিন গণনা, গর্ভকালের সময়সীমা ও এছাড়া অন্যান্য বিষয়ের সময় নির্ধারণ করার জন্য চাঁদের হিসেব করা হয়। এছাড়া পবিত্র হজ্জ উনার সময় জানার জন্যও চাঁদের হিসেব প্রয়োজনীয়। (মাদারিকুত তানযীল ওয়া হাক্বায়িকুত্ তা’বীল অর্থাৎ তাফসীরুন্ নাসাফী পবিত্র সূরাতুল্ বাক্বারাহ: ১৮৯ নং আয়াত শরীফ লেখক: হযরত আবুল্ বারাকাত আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন মাহমূদ নাসাফী হানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৭১০ হিজরী)
فاما التفسير فانما سالوه عن وجه الحكمة فى زيادة الاهلَّة ونقصانها، فاخبرهم انها مقادير لما يحتاج الناس اليه فى صومهم وحجهم وغير ذلك. والاهلَّة جمع هلال. وكم يبقى الهلال على هذه التسمية؟ فيه للعرب اربعة اقوال. احدها: انه يسمى هلالاً لليلتين من الشهر، والثانى: لثلاث ليال ثم يسمى قمرا، والثالث: الى ان يحجر وتحجيره: ان يسير بخطة دقيقة وهو قول الاصمعى رحمة الله عليه، والرابع: الى ان يبهر ضوؤه سواد الليل، حكى هذه الاقوال ابن السرى رحمة الله عليه واختار الاول. (زاد المسير فى علم التفسير اى تفسير الجوزى سورة البقرة الشريفة ۱۸۹ الاية الشريفة المؤلف: جمال الدين عبد الرحمن بن على بن محمد الجوزى الحنبلى الاشعرى رحمة الله عليه المتوفى ۵۹۷ هجرى(
অর্থ: তাফসীর বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ: নিশ্চয়ই চাঁদ বড় হওয়া ও তা চিকন হওয়ার হিকমত কি এ ব্যাপারে হযরত ছহাবাহ কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনারা নূরুম্ মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। উত্তরে উনাদেরকে জানিয়ে দেয়া হয় যে, ইহা পবিত্র রোযা পালন, হজ্জ পালন ও এছাড়া অন্যান্য বিষয়ে মানুষের উপকারের জন্য সময় নির্ধারক। ‘আল্ আহিল্লাহ’ শব্দ মুবারক খানা ‘আল্ হিলাল’ শব্দ মুবারক উনার বহুবচন। কত দিনের চাঁদকে হিলাল নামে নাম করণ করা হয়? এ ব্যাপারে চারটি মতামত রয়েছে। (১) মাসের প্রথম দুই দিনের চাঁদকে হিলাল বলা হয়। (২) মাসের প্রথম তিনদিনের চাঁদকে হিলাল বলা হয়, অতপর তা ক্বমার নামে পরিগনিত হয়। (৩) চিকন রেখার মতো হলে তা হিলাল। যেমনটি বলেছেন হযরত আছমায়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। (৪) পূর্ণ দীপ্ত আলো আসার পূর্বের চাঁদই হলো হিলাল। হযরত ইবনুস্ র্সুরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ মতামত গুলো বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি প্রথম মতটিকে পছন্দ করেছেন। (যাদুল্ মাসীর ফী ইলমিত্ তাফসীর অর্থাৎ তাফসীরুল্ জাওযী পবিত্র সূরাতুল্ বাক্বারাহ: ১৮৯ নং আয়াত শরীফ লেখক: হযরত জামালুদ্দীন আব্দুর রহমান বিন আলী বিন মুহাম্মাদ জাওযী হাম্বালী আশয়ারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৫৯৭ হিজরী)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ ও উনার তাফসীর থেকে প্রমাণিত হলো যে, চাঁদ উনার দ্বারা ইসলামী অনেক বিষয়ের সময়সীমা গণনা করা হয়, যা চাঁদের হিসাব ছাড়া কখনোই সম্ভব নয়। যেমন, রোযা, ইফতার, হজ্জ, ঋণের হিসাব, গর্ভকালের সময়সীমা, হায়েয, নিফাস, তালাক প্রাপ্তা নারীর ইদ্দত, ওয়াদা রক্ষার সময়সীমা, বিশেষ বিশেষ দিন রাত সময় ইত্যাদী নিরুপন করার জন্য পবিত্র চাঁদ উনার হিসাব রাখা ফরয-ওয়াজিব। তাই পবিত্র চাঁদ মহান আল্লাহ তায়ালা উনার পক্ষ থেকে বান্দাদের প্রতি এক মহান নিয়ামত। সুবহানাল্লাহ।
অসমাপ্ত
পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন