পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৩৮

সংখ্যা: ২৫৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

[সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামউনার প্রতি। মহান আল্লাহ পাক উনার অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ” উনার ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-উনার অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীলভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” পত্রিকায় যথাক্রমে- ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন উনার শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উনার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা) ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যা) এবং ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা)  ২৭. ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬১-১৭৫তম সংখ্যা) ২৮. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬৮-চলমান), ২৯. জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯২-১৯৩তম সংখ্যা) ৩০. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯৫-২১৩তম সংখ্যা), ৩১. পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও ক্বিয়াস উনাদের দৃষ্টিতে “কুলাঙ্গার, পাপিষ্ঠ ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে শরীয়তের সঠিক ফায়ছালা ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করার পর-

 

৩২তম ফতওয়া হিসেবে

 

“পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া”-

পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব উনার উপর মউত পর্যন্ত ইস্তিক্বামত থাকা ফরয

পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র তাফসীর শরীফ উনাদের মধ্যে ‘আত-তাক্বলীদুশ্ শাখছী’ অর্থাৎ নির্দিষ্ট ইমাম-মুজতাহিদ উনার অনুসরণ করা জরুরী সম্পর্কিত দলীল

 

পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর- ৮

وَمَا اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ الَّا رِجَالًا نُوحِى الَيْهِمْ فَاسْالُوا اَهْلَ الذِّكْرِ انْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ. (سورة النحل شريفة ۴۳ الاية الشريفة(

অর্থ: আপনার পূর্বেও আমি পবিত্র ওহী মুবারকসহ পুরুষদেরকেই রসূলরূপে তাঁদের প্রতি পাঠিয়েছিলাম। অতএব, তোমরা যদি না জান তাহলে আহলে যিক্র অর্থাৎ আল্লাহওয়ালা বা ওলীআল্লাহ উনাদেরকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নাও। (পবিত্র সূরাতুন্ নাহ্ল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৪৩)

অত্র পবিত্র আয়াত উনার বিশুদ্ধ

তাফসীর বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ

(৮৬১)

واجيب بانه ثبت جواز العمل بالقياس باجماع الصحابة والاجماع اقوى من هذا الدليل.

অর্থ: আমি জাওয়াবে বলি যে, ইজমাউছ ছহাবাহ্ উনার ভিত্তিতে ক্বিয়াসের উপর আমল করা জায়িয প্রমাণিত। আর এ দলীল দ্বারা পবিত্র ইজমা শক্তিশালী দলীল হিসেবে স্বীকৃত। (রূহুল মায়ানী ফী তাফসীরিল কুরআনিল আযীম ওয়াস সাবয়িল মাছানী অর্থাৎ তাফসীরুল আলূসী পবিত্র সূরাতুন্ নাহ্ল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৪৩ লেখক: আল্লামা শিহাবুদ্দীন সাইয়্যিদ মাহমূদ বিন আব্দুল্লাহ আবিছ ছানা আলূসী মুফতিউল বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ১২৭০ হিজরী)

(৮৬২)

فَسْئَلُوا اَهْلَ الذِّكْرِ انْ كُنْتُمْ لا تَعْلَمُونَ… ان ثبت جواز العمل بالقياس باجماع الصحابة والاجماع اقوى من هذا الدليل.

অর্থ: ‘তোমরা যদি না জান তাহলে আহলে যিক্র উনাদেরকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নাও’ অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ প্রমান করে যে, … ইজমাউছ ছহাবাহ অনুযায়ী ক্বিয়াসের উপর আমল করা জায়িয। এ দলীল দ্বারা ইজমা’ শক্তিশালী প্রমাণিত হলো। (মাফাতীহুল গইব অর্থাৎ আত্ তাফসীরুল কবীর অর্থাৎ তাফসীরুর রাযী পবিত্র সূরাতুন্ নাহ্ল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৪৩ লেখক: ইমাম হযরত মুহাম্মাদ বিন উমর ফখরুদ্দীন রাযী শাফিয়ী আশয়ারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৬০৬ হিজরী)

অত্র দু’খানা ইবারত থেকে জানা যায় যে, ইজমাউছ ছহাবাহ উনার ভিত্তিতে ক্বিয়াসের উপর আমল করা জরুরী। সকল আলিম ইজতিহাদ বা ক্বিয়াস করার ক্ষমতা রাখেন না। বরং  ক্বিয়াস বা ইজতিহাদ করার ক্ষমতা যাঁরা রাখেন উনারা নির্দিষ্ট ইমাম-মুজতাহিদ হয়ে থাকেন। যেমন উনারা হলেন হযরত আহলু বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের ১২ ইমাম আলাইহিমুস সালাম, ইল্মুল ক্বিরায়াত উনার প্রতিষ্ঠাতা মূল সাত ক্বারী, মাযহাব চতুষ্ঠয়ের ইমাম, আক্বায়িদ উনার ইমামদ্বয়,  চার ত্বরীক্বা উনাদের ইমাম এবং প্রত্যেক হিজরী শতকের মূল মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা। তাই নির্দিষ্ট ইমাম-মুজতাহিদ উনাদেরকে অনুসরণ করা ওয়াজিব বা জরুরী সাব্যস্ত হয়। লক্ষনীয় যে, আমাদের হানাফী মাযহাব উনার মূল ক্বারী হলেন হযরত ইমাম আছিম কূফী রহমতুল্লাহি আলাইহি, আক্বায়িদ ও ফিক্হ বিষয়ক মূল ইমাম হলেন আল-ইমামুল আ’যম নূ’মান বিন ছাবিত আবূ হানীফাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং পরবর্তী চারশত হিজরী থেকে হানাফী অনুসারীদের আক্বায়িদ বিষয়ক ইমাম হলেন হযরত ইমাম আবূ মানছূর মাতুরীদী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

(৮৬৩)

ما نقل عن الجلال الـمحلى رحمة الله عليه انه يلزم غير الـمجتهد عاميا كان او غيره التقليد للمجتهد لقوله تعالى: فَسْئَلُوا اَهْلَ الذِّكْرِ انْ كُنْتُمْ لا تَعْلَمُوْنَ والصحيح انه لا فرق بين الـمسائل الاعتقادية وغيرها وبين ان يكون المجتهد حيا او ميتا.

অর্থ: হযরত জালাল মাহাল্লী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে নক্বল করা হয়েছে যে, যারা মুজতাহিদ নয় তারা সাধারণ ব্যক্তি হোক অথবা সাধারণ ব্যক্তি না হোক (তথা আলিম হোক) সকলের জন্য মুজতাহিদকে অনুসরণ করা ফরয। যেমনটি মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘তোমরা যারা জানো না তারা যাঁরা জানেন উনাদেরকে জিজ্ঞাসা কর’। ছহীহ কথা এই যে, এ অনুসরণের ব্যাপারে ই’তিকাদী মাসয়ালা ও অন্যান্য মাসয়ালা তথা ফিক্হী মাসয়ালায় কোন পার্থক্য নেই। সেই মুজতাহিদ তিনি জীবিত হোন অথবা ইন্তিকাল প্রাপ্ত হন এতেও কোন পার্থক্য নেই। অর্থাৎ সর্বাবস্থায় মুজতাহিদ উনাকে অনুসরণ করা ওয়াজিব। (রূহুল মায়ানী ফী তাফসীরিল কুরআনিল আযীম ওয়াস সাবয়িল মাছানী অর্থাৎ তাফসীরুল আলূসী পবিত্র সূরাতুন্ নাহ্ল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৪৩ লেখক: আল্লামা শিহাবুদ্দীন সাইয়্যিদ মাহমূদ বিন আব্দুল্লাহ আবিছ ছানা আলূসী মুফতিউল বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ১২৭০ হিজরী)

অত্র ইবারত থেকে জানা যায় যে, চার মাযহাব উনাদের ইমাম উনাদের পর সর্বশ্রেণীর ব্যক্তিদের জন্য উক্ত ইমাম চতুষ্ঠয়কে অনুসরণ করা ফরয-ওয়াজিব। অনুসারী ব্যক্তি পরবর্তী মুজতাহিদ হোক, আলিম হোক, আবিদ বা বেশী বেশী ইবাদতগুজার হোক অথবা জাহিল বা মুর্খ হোক। এতে কোন তফাত নেই।

(৮৬৪)

فقول السبكى رحمة الله عليه: ان مخالف الاربعة كمخالف الاجماع.

অর্থ: হযরত ইমাম সুবুকী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উক্তি এই যে, নিশ্চয়ই চার মাযহাবের ইমাম উনাদের মাসয়ালার বিপরীত আমল করা মূলত: ইজমাউল উম্মাহ উনার বিরোধিতা করার শামিল। (রূহুল মায়ানী ফী তাফসীরিল কুরআনিল আযীম ওয়াস সাবয়িল মাছানী অর্থাৎ তাফসীরুল আলূসী পবিত্র সূরাতুন্ নাহ্ল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৪৩ লেখক: আল্লামা শিহাবুদ্দীন সাইয়্যিদ মাহমূদ বিন আব্দুল্লাহ আবিছ ছানা আলূসী মুফতিউল বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ১২৭০ হিজরী)

অত্র ইবারত থেকে জানা যায় যে, চার মাযহাব উনাদের ইমাম উনাদেরকে অনুসরণ করা ফরয-ওয়াজিব। কেননা, উনাদের প্রদত্ত মাসয়ালার বিপরীত আমল করার অর্থই হচ্ছে পবিত্র ইজমাউল উম্মাহ উনার বিরোধিতা করা। আর আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ উনার চুড়ান্ত ফাতাওয়া হল- পবিত্র ইজমাউল উম্মাহ-র বিরোধীতা করা, পবিত্র ইজমাউল উম্মাহ উনাকে অস্বীকার করা কুফরী। তাই প্রমাণিত হয় যে, মাযহাব চতুষ্ঠয়ের অনুসরণ করা ফরযে আইন।

(৮৬৫)

كمذهب الثورى رحمة الله عليه والاوزاعى رحمة الله عليه وابن ابى ليلى رحمة الله عليه وغيرهم ثم ان تقليد الغير بشرطه انما يجوز فى العمل واما للافتاء والقضاء فيتعين احد المذاهب الاربع.

অর্থ: হযরত ইমাম সুফ্ইয়ান ছাওরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম আওযায়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম ইবনু আবী লায়লা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও অন্যান্য ইমাম উনাদের মাযহাব উনার অনুসরণ শর্ত সাপেক্ষে করা হবে। উনাদের তাক্বলীদ বা অনুসরণ আমলী মাসয়ালার ক্ষেত্রে জায়িয। কিন্তু ফাতাওয়া ও বিচার-মিমাংসার ব্যাপারে নির্দিষ্টভাবে চার মাযহাবের ইমাম উনাদের যে কোন একজনকে মান্য করতে হবে। (রূহুল মায়ানী ফী তাফসীরিল কুরআনিল আযীম ওয়াস সাবয়িল মাছানী অর্থাৎ তাফসীরুল আলূসী পবিত্র সূরাতুন্ নাহ্ল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৪৩ লেখক: আল্লামা শিহাবুদ্দীন সাইয়্যিদ মাহমূদ বিন আব্দুল্লাহ আবিছ ছানা আলূসী মুফতিউল বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ১২৭০ হিজরী)

অত্র ইবারত থেকেও চার মাযহাব উনাদের ইমাম উনাদেরকে অনুসরণ করা ফরয সাব্যস্ত হয়।

(৮৬৬)

وكذا قول ابى جعفر الباقر عليه السلام: نحن اهل الذكر ومراده ان هذه الامة اهل الذكر صحيح، فان هذه الامة اعلم من جميع الامم السالفة، وعلماء اهل بيت الرسول عليهم السلام والرحمة من خير العلماء اذا كانوا على السنة المستقيمة كعلى عليه السلام وابن عباس رضى الله عنهما وبنى على الحسن عليه السلام والحسين عليه السلام ومحمد بن الحنفية عليه السلام وعلى بن الحسين زين العابدين عليه السلام وعلى بن عبد الله بن عباس عليه السلام وابى جعفر الباقر عليه السلام وهو محمد بن على بن الحسين  عليه السلام وجعفر عليه السلام ابنه.

অর্থ: অনুরূপ আল্ ইমামুল্ খামিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবূ জা’ফর বাকির আলাইহিস সালাম তিনি বলেন: আমরা আহলু বাইতগণই আহলুয্ যিক্র। উনার দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, এ উম্মাতে হাবীবীই হচ্ছেন আহলুয যিক্র। কেননা, এই উম্মাত পূর্ববর্তী সমস্ত উম্মাতের থেকে অধিক জ্ঞানী। আর পরিপূর্ণ সুন্নাতের উপর প্রতিষ্ঠার শর্তে হযরত আহলু বাইতির রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারাই হচ্ছেন শ্রেষ্ঠ আলিম। যেমন, উনারা হলেন: হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস আলাইহিস সালাম, হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার বংশধর আল ইমামুছ ছানী হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম ও আল ইমামুছ ছালিছ হযরত ইমাম হুসাঈন আলাইহিস সালাম, হযরত মুহাম্মাদ বিন হানাফিয়্যাহ আলাইহিস সালাম, হযরত আলী আওছাত্ব যাইনুল আবিদীন বিন হুসাঈন আলাইহিস সালাম, হযরত আলী বিন আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস আলাইহিস সাল্লাম, হযরত আবূ জা’ফর বাক্বির আলাইহিস সালাম তিনি হলেন হযরত মুহাম্মাদ বাক্বির বিন আলী আওসাত্ব বিন হুসাঈন আলাইহিস সালাম, হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম উনার আওলাদ। (তাফসীরুল কুরআনিল আযীম অর্থাৎ তাফসীরু ইবনি কাছীর পবিত্র সূরাতুন্ নাহ্ল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৪৩ লেখক: হযরত আবুল ফিদা ইসমাঈল বিন উমর বিন কাছীর কুরাশী দামেশকী শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বিলাদত: ৭০০ হিজরী ওয়াফাত: ৭৭৪ হিজরী)

(৮৬৭)

حدثنا به ابن وكيع رحمة الله عليه قال: حدثنا ابن يمان رحمة الله عليه عن اسرائيل رحمة الله عليه عن جابر رضى الله عنه عن ابى جعفر عليه السلام (فَاسْاَلُوا اَهْلَ الذِّكْرِ انْ كُنْتُمْ لا تَعْلَمُونَ) قال: نحن اهل الذكر.

অর্থ: হযরত ইমাম ত্ববারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে ছহীহ হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত ওয়াকী’ রহমাতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন আমাদের কাছে হযরত ইসরাঈল রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে হযরত ইবনু ইয়ামান রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেছেন, তিনি হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে, তিনি হযরত আবূ জা’ফর বাক্বির আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি ‘তোমরা যদি না জান তাহলে আহলে যিক্র উনাদেরকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নাও’ অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে বলেন, আমরা আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস্ সালাম আমরাই আহলুয যিক্র। সুবহানাল্লাহ! (জামিউল বায়ান ফী তা’বীলিল কুরআন অর্থাৎ তাফসীরুত ত্ববারী পবিত্র সূরাতুন্ নাহ্ল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৪৩ লেখক: হযরত মুহাম্মাদ বিন জারীর বিন ইয়াযীদ বিন কাছীর বিন গালিব আমালী আবূ জা’ফর ত্ববারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৩১০ হিজরী)

(৮৬৮)

واهل الذكر على هذا الـمسلمون مطلقا وخصهم بعض الامامية بالائمة اهل البيت احتجاجا بما رواه جابر رضى الله عنه. ومحمد بن مسلم منهم عن ابى جعفر رضى الله تعالى عنه قال: نحن اهل الذكر، وبعضهم فسر الذكر بالنبى صلى اللّه عليه وسلم لقوله تعالى: ذِكْرًا رَسُولًا [سورة الطلاق: ۱۰، ۱۱].

অর্থ: সাধারণত: আহলুয যিক্র দ্বারা এ উম্মাতের মুসলমানগণকে বুঝানো হয়। আর বিশেষভাবে ইমামিয়াহ উনাদের কতকের মতে, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ইমাম উনারা উদ্দেশ্য। যার প্রমাণ হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার বর্ণনা। হযরত মুহাম্মাদ বিন মুসলিম আলাইহিস সালাম উনাদের মধ্যে একজন। হযরত আবূ জা’ফর বাক্বির আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আমরা আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম আমরাই আহলু যিক্র। আর কতক মুফাসসিরীন কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা যিক্র দ্বারা নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হযরত নাবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বুঝিয়েছেন। উনাদের দলীল যেমনটি মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘উপদেশ দানকারী রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। পবিত্র সূরাতুত্ ত্বলাক শরীফ: ১০-১১’। (রূহুল মায়ানী ফী তাফসীরিল কুরআনিল আযীম ওয়াস সাবয়িল মাছানী অর্থাৎ তাফসীরুল আলূসী পবিত্র সূরাতুন্ নাহ্ল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৪৩ লেখক: আল্লামা শিহাবুদ্দীন সাইয়্যিদ মাহমূদ বিন আব্দুল্লাহ আবিছ ছানা আলূসী মুফতিউল বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ১২৭০ হিজরী)

উল্লেখিত তিনখানা ইবারত থেকে জানা যাচ্ছে যে, হযরত আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা হচ্ছেন আহলুয্ যিক্র তথা সঠিক নির্দেশদাতা বা উপদেশদাতা। তাই নির্দিষ্টভাবে উনাদেরকে অনুসরণ করা ওয়াজিব বা ফরয।  ইহাই আত-তাক্বলীদুশ শাখছী তথা নির্দিষ্ট ইমাম-মুজতাহিদ উনাদেরকে অনুসরণ করা।

(৮৬৯-৮৭১)

وفى الاية دليل على وجوب المراجعة الى العلماء للجهال فيما لا يعلمون وان الاخبار مفيدة للعلم ان كان المخبر ثقة يعتمد عليه.

অর্থ: এ পবিত্র আয়াত শরীফ প্রমাণ করে যে, যারা যে বিষয় জানে না, সে ব্যাপারে হযরত উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কাছে জিজ্ঞাসা করা ওয়াজিব। আরো প্রমাণ করে যে, সংবাদ একটি উপকারী ইল্ম বা মাধ্যম, যদি সংবাদদাতা এরূপ বিশ্বস্ত হয় যার উপর নির্ভর করা যায়। (আত্ তাফসীরুল্ মাযহারী পবিত্র সূরাতুন্ নাহ্ল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৪৩ লেখক: হযরত মুহাম্মাদ ছানাউল্লাহ হিন্দী পানীপথী নকশবন্দী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ১২১৬ হিজরী, রূহুল বয়ান ফী তাফসীরিল কুরআন অর্থাৎ তাফসীরুল্ হাক্কী পবিত্র সূরাতুন্ নাহ্ল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৪৩ লেখক: হযরত ইসমাঈল হাক্কী বিন মুছতফা ইস্তাম্বুলী হানাফী খালওয়াতী বারূসাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ১১২৭ হিজরী, রূহুল মায়ানী ফী তাফসীরিল কুরআনিল আযীম ওয়াস সাবয়িল মাছানী অর্থাৎ তাফসীরুল আলূসী পবিত্র সূরাতুন্ নাহ্ল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৪৩ লেখক: আল্লামা শিহাবুদ্দীন সাইয়্যিদ মাহমূদ বিন আব্দুল্লাহ আবিছ ছানা আলূসী মুফতিউল বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ১২৭০ হিজরী)

(৮৭২)

{اَهْلَ الذِّكْرِ} هم العلماء.

অর্থ: (তোমরা আহলুয্ যিক্র উনাকে অনুসরণ কর) আহলুয যিক্র হচ্ছেন হক্কানী ও রব্বানী উলামা কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম। (লাত্বায়িফুল ইশারাত অর্থাৎ তাফসীরুল কুশাইরী পবিত্র সূরাতুন্ নাহ্ল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৪৩ লেখক: হযরত আব্দুল করীম বিন হাওয়াযিন বিন আব্দুল মালিক কুশাইরী রহমতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৪৬৫ হিজরী)

উল্লেখিত দু’খানা ইবারত থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, নির্দিষ্টভাবে শুধু হক্কানী-রব্বানী উলামা কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকেই অনুসরণ করা ওয়াজিব বা ফরয। ইহাই তো আত-তাক্বলীদুশ শাখছী বা নির্দিষ্ট ইমাম-মুজতাহিদ উনাদেরকে অনুসরণ।

পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর- ৯

وَمَا اَرْسَلْنَا قَبْلَكَ اِلَّا رِجَالًا نُوْحِىْ اِلَيْهِمْ فَاسْاَلُوْا اَهْلَ الذِّكْرِ اِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ.

অর্থ: আপনার পূর্বেও আমি পবিত্র ওহী মুবারকসহ মানবকেই তাঁদের প্রতি রসূলরূপে পাঠিয়েছিলাম। অতএব, তোমরা যদি না জান তাহলে আহলে যিক্র (হযরত আহলু বাইত আলাইহিমুস সালাম, ইমাম, মুজতাহিদ, ওলীআল্লাহ, ফক্বীহ, মুফতী) উনাদেরকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নাও। (পবিত্র সূরাতুল্ আম্বিয়া শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৭)

অত্র পবিত্র আয়াত উনার বিশুদ্ধ

তাফসীর বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ

(৮৭৩)

وقيل: اهل الذكر: اهل القران. ذكر من قال ذلك: عن جابر الجعفى رضى الله عنه قال: لما نزلت (فَاسْاَلُوْا اَهْلَ الذِّكْرِ اِنْ كُنْتُمْ لا تَعْلَمُوْنَ) قال: على عليه السلام نحن اهل الذّكر.

অর্থ: কোন কোন হযরত মুফাসসিরীন কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বলেন: আহলুয যিক্র হচ্ছেন আহলুল কুরআন উনারা। যাঁরা এ মত পোষণ করেন উনারা উল্লেখ করেন যে- হযরত ইমাম জারীর ত্ববারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হযরত জাবির জু’ফী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি বলেছেন: যখন ‘অতএব, তোমরা যদি না জান তাহলে আহলে যিক্র উনাদেরকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নাও’ আয়াত শরীফ নাযিল হয়, তখন হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আমরাই তো আহলুয যিক্র। সুবহানাল্লাহ। (জামিউল বয়ান ফী তা’বীলিল কুরআন অর্থাৎ তাফসীরুত ত্ববারী পবিত্র সূরাতুল্ আম্বিয়া শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৭ লেখক: হযরত মুহাম্মাদ বিন জারীর বিন ইয়াযীদ বিন কাছীল বিন গালিব আমালী আবূ জা’ফর ত্ববারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৩১০ হিজরী)

(৮৭৪-৮৭৮)

وقال ابن زيد رحمة الله عليه: اراد بالذكر القران اى فاسالوا الـمؤمنين العالمين من اهل القران، قال جابر الجعفى رضى الله عنه: لما نزلت هذه الاية قال على كرم الله وجهه عليه السلام نحن اهل الذكر.

অর্থ: হযরত ইবনু যায়েদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: এখানে যিক্র দ্বারা কুরআন মাজীদ উনাকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। অর্থাৎ পবিত্র কুরআন মাজীদ অনুসরণকারী মু’মিন আলিম ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করুন। হযরত জাবির জু’ফী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি বলেছেন: যখন অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হয়, তখন হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আমরাই তো আহলুয যিক্র। সুবহানাল্লাহ। (আল-জামিউ লিআহকামিল কুরআন অর্থাৎ তাফসীরুল কুরতুবী পবিত্র সূরাতুল্ আম্বিয়া শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৭ লেখক: হযরত আবূ আব্দিল্লাহ মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন আবূ বকর বিন ফারাহ আনছারী খাযরাযী শামসুদ্দীন কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৬৭১ হিজরী, মায়ালিমুত তানযীল অর্থাৎ তাফসীরুল বাগবী, তাফসীরুল কুরআনিল আযীম লিত ত্ববারানী, মাফাতীহুল গইব অর্থাৎ আত-তাফসীরুল কবীর অর্থাৎ তাফসীরুর রাযী, লুবাবুত তা’বীল ফী মায়ানিত তানযীল অর্থাৎ তাফসীরুল খাযিন)

উল্লেখিত দুই খানা ইবারত থেকে জানা যাচ্ছে যে, হযরত আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা হচ্ছেন আহলুয্ যিক্র তথা সঠিক নির্দেশদাতা বা উপদেশদাতা। তাই নির্দিষ্টভাবে উনাদেরকে অনুসরণ করা ওয়াজিব বা ফরয। ইহাই আত-তাক্বলীদুশ শাখছী তথা নির্দিষ্ট ইমাম-মুজতাহিদ উনাদেরকে অনুসরণ করা।

(৮৭৯)

واهلُ الذكر العلماءُ من اكابر هذه الامة والذين امنوا بنبينا محمد صلى الله عليه وسلم ويقال هم اهل الفهم من الله اصحاب الالهام الذين فى محل الاعلام من الحقّ سبحانه او من يُحْسِنُ الافهامَ عن الحق. ويقال العالم يرجع الى الله فى المعاملات والعبادات.

অর্থ: আহলুয যিক্র হচ্ছেন এই উম্মতের নেতৃস্থানীয় উলামা কিরাম (মাযহাব চতুষ্ঠয়ের মহান প্রতিষ্ঠাতা ইমাম ও যামানার মুজাদ্দিদ) রহমতুল্লাহি আলাইহিম এবং আমাদের নবী নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান পোষণকারী ব্যক্তিত্বগণ। আরো বলা হয় যে, আহলুয যিক্র হচ্ছেন মহান আল্লাহ তায়ালা উনার তরফ থেকে সঠিক বুঝ প্রাপ্ত ইলহাম ধারী ব্যক্তিত্বগণ যাঁরা মহান আল্লাহ সুবহানাহূ তায়ালা উনার পক্ষ থেকে ইল্ম প্রাপ্ত অথবা যাঁরা মহান হক্ব তায়ালা উনার পক্ষ থেকে উত্তম সমঝ উনার অধিকারী। বলা হয়ে থাকে যে, সত্যিকার আলিম হচ্ছেন তিনি যিনি মুয়ামালাত ও ইবাদত সর্ব ব্যাপারে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার দিকে ঝুকে থাকেন। (লাত্বায়িফুল ইশারাত অর্থাৎ তাফসীরুল কুশাইরী পবিত্র সূরাতুল্ আম্বিয়া শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৭ লেখক: হযরত আব্দুল করীম বিন হাওয়াযিন বিন আব্দুল মালিক কুশাইরী রহমতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৪৬৫ হিজরী)

উক্ত ইবারতখানা থেকে প্রমাণিত হয় যে- নেতৃস্থানীয় ইলহামধারী উলামা কিরাম হলেন আহলুয যিক্র তথা উপদেশদাতা। মহান আল্লাহ তায়ালা উনাদেরকেই নির্দিষ্টভাবে অনুসরণ করতে বলেছেন। ইহাই তো আত-তাক্বলীদুশ শাখছী।

(৮৮০)

فاما تعلق كثير من الفقهاء رحمة الله عليهم بهذه الاية فى ان للعامى ان يرجع الى فتيا العلماء رحمة الله عليهم وفى ان للمجتهد ان يأخذ بقول مجتهد اٰخر.

অর্থ: অত্র আয়াত শরীফ দ্বারা হযরত ফুক্বাহা কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উদ্দেশ্য হওয়াই অধিক সম্বন্ধযুক্ত। নিশ্চয়ই সর্বসাধারণের জন্য হযরত উলামা কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ফাতাওয়ার দিকে প্রত্যাবর্তন করা উচিৎ। আর এখানে এটাও ইঙ্গিত রয়েছে যে, একজন মুজতাহিদ অপর মুজতাহিদ উনার সঠিক মতকে গ্রহণ করবেন। (মাফাতীহুল গইব অর্থাৎ আত-তাফসীরুল কবীর অর্থাৎ তাফসীরুর রাযী পবিত্র সূরাতুল্ আম্বিয়া শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৭ লেখক: আল-ইমামুল আলিমুল আল্লামা, আল-হিবরুল আহরুল ফাহ্হামাহ ফখরুদ্দীন  মুহাম্মাদ বিন উমর তামীমী রাযী শাফিয়ী আশয়ারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৬০৬ হিজরী)

উক্ত ইবারতখানা থেকে জানা যায় যে, ফক্বীহ উলামা কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে সর্বসাধারণ সকলেই অনুসরণ করবে। এমনকি পরবর্তী মুক্বাল্লিদ শ্রেণীর মুজতাহিদ উনারা পূর্ববর্তী মুতলাক্ব মুজতাহিদ তথা যার যার মাযহাব উনার মূল প্রতিষ্ঠাতা ইমামকে অনুসরণ করবেন। এভাবে করে নির্দিষ্ট মাযহাব উনার ইমামকে অনুসরণ করার ব্যাপারে অসংখ্য দলীল-প্রমাণ রয়েছে।

 

অসমাপ্ত

পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা লুঙ্গি চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৭

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৮

ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া— (১)

ফতওয়া বিভাগ-গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া- (২)

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-(৩)