পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমাউল উম্মাহ শরীফ ও পবিত্র ছহীহ ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত, দিন, সময় ও মুহূর্তের আমলসমূহের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৮তম পর্ব)

সংখ্যা: ২৫৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

[সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি। মহান আল্লাহ পাক উনার অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-উনার ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব উনার অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীলভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে- ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উনার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা)  ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যা) এবং  ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা) ২৭.  ইসলামের  নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬১-১৭৫তম সংখ্যা) ২৮. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬৮-২৩৭), ২৯. জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯২-১৯৩তম সংখ্যা) ৩০. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯৫-২১৩তম সংখ্যা), ৩১. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে “কুলাঙ্গার, পাপিষ্ঠ ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে শরীয়তের সঠিক ফায়ছালা ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” (২০৩তম সংখ্যা), ৩২. হানাফী মাযহাব মতে নামাযে সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর ইমাম ও মুক্তাদী উভয়ে ‘আমীন’ অনুচ্চ আওয়াজে বা চুপে চুপে পাঠ করাই শরীয়তের নির্দেশ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১২তম সংখ্যা), ৩৩. পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২২০তম সংখ্যা থেকে যা এখনো চলছে) পেশ করার পাশাপাশি-

৩৪তম ফতওয়া হিসেবে

“পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত ও দিনের আমলসমূহের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত ও দিনের আমলসমূহের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ

সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলাম উনার নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরক ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” উনার মধ্যে এমনসব লেখাই পত্রস্থ হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।

বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো “উলামায়ে সূ”। ইহুদীদের এজেন্ট উলামায়ে ‘সূ’রা হারাম টিভি চ্যানেলে, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদি ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে মুসলমান উনাদের বিশেষ বিশেষ ফযীলতযুক্ত আমলের রাত ও দিনসমূহ পালন করাকে বিদয়াত, নাজায়িয ও শিরক বলে ফতওয়া দিয়ে মুসলমান উনাদেরকে অশেষ খায়ের, বরকত, নিয়ামত, নাজাত অর্থাৎ রেযামন্দি বা সন্তুষ্টি মুবারক থেকে মাহরূম করছে। যেমন তারা বলে থাকে যে, পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা বিদয়াত, শিরক। নাউযুবিল্লাহ! পবিত্র শবে বরাত পালন করা বিদয়াত, নাজায়িয। নাউযুবিল্লাহ! পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ পালন করা বিদয়াত। নাউযুবিল্লাহ! অনুরূপ আরো অনেক বিষয়কেই তারা বিনা দলীলে মনগড়াভাবে নাজায়িয ও বিদয়াত বলে থাকে। নাউযুবিল্লাহ!

অপরদিকে বেদ্বীনী-বদদ্বীনী অর্থাৎ কাফির মুশরিক, ইহুদী, নাছারাদের যত পর্ব বা দিবস রয়েছে সেগুলোকে শুধু জায়িযই নয় বরং নিয়ামত বলে আখ্যা দিয়ে থাকে। নাউযুবিল্লাহ! যেমন বাইতুল মুকাররমের সাবেক খতীব ওবায়দুল হক্ব প্রকৃতপক্ষে উবাই বলেছিল, “পহেলা বৈশাখ আল্লাহ পাক উনার নিয়ামত।” নাঊযুবিল্লাহ!

অথচ তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, চরম বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক। তাদের এসব বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ্ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

কারণ, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যারা এ আক্বীদা পোষণ করবে যে, “পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা বিদয়াত শিরক এবং পহেলা বৈশাখ মহান আল্লাহ পাক উনার নিয়ামত।” নাউযুল্লিাহ! তারা ঈমানহারা হয়ে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। কারণ সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে হালাল বা জায়িয বিষয়কে হারাম বা নাজায়িয বলা এবং হারাম বা নাজায়িযকে হালাল বা জায়িয বলা কুফরী। কেননা কিতাবে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে-

استحلال الـمعصية كفر.

অর্থাৎ “গুনাহের কাজ বা হারামকে হালাল মনে করা কুফরী।” (শরহে আক্বাইদে নাসাফী শরীফ)

অতএব, বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, উলামায়ে “সূ”দের উক্ত বক্তব্য সাধারণ মুসলমান উনাদের আক্বীদা বা ঈমানের জন্য বিশেষভাবে হুমকিস্বরূপ।

অনুরূপ উলামায়ে “সূ”দের এ কুফরীমূলক বক্তব্য মুসলমানদের আমলের ক্ষেত্রেও বিশেষ ক্ষতির কারণ। কেননা যারা তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে “পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা থেকে বিরত থাকবে এবং হারাম পহেলা বৈশাখ পালন করবে” তারা অশেষ খায়ের, বরকত ও নিয়ামত থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কর্তৃক নিষিদ্ধকৃত কাজে তথা হারাম কাজে মশগুল হওয়ার কারণে কঠিন গুনাহগার অর্থাৎ জাহান্নামী হবে। নাউযুবিল্লাহ!

কাজেই, যারা এ ধরনের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী তারা ও হক্ব সমঝদার মুসলমানগণ তারা তাদের ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে অর্থাৎ সকল বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করে মহান আল্লাহ পাক উনার রিযামন্দি হাছিল করতে পারে সে জন্যেই “পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত ও দিনের আমলসমূহের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াটি”  প্রকাশ করা হলো।

পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত, দিবস ও সময়ের গুরুত্ব, ফযীলত ও আহকাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-

আস-সানাতুল্ ক্বমারিয়্যাহ তথা হিজরী বছরের ১২টি সম্মানিত মাস উনাদের আলোচনা

 

আস-সানাতুল্ ক্বমারিয়্যাহ তথা হিজরী বছর উনার মাসের সংখ্যা ১২টি। যা পবিত্র কুরআন মাজীদ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ ও পবিত্র তাফসীর শরীফ উনাদের দলীলের ভিত্তিতে উপস্থাপিত হল:

আস-সানাতুল্ ক্বমারিয়্যাহ তথা হিজরী বছর উনার সম্মানিত মাস সমূহ

১. পবিত্র মুর্হারমুল হারাম শরীফ (محرم الحرام)

২. পবিত্র ছফর শরীফ (صفر)

৩. পবিত্র ও সম্মানিত রবীউল আউয়াল শরীফ (ربيع الاول شريف)

৪. পবিত্র রবীউছ্ ছানী শরীফ (ربيع الثانى)

৫. পবিত্র জুমাদাল ঊলা শরীফ (جمادى الاولى)

৬. পবিত্র জুমাদাল উখরা শরীফ (جمادى الاخرى)

৭. পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ (رجب الحرام)

৮. পবিত্র শা’বান শরীফ (شعبان)

৯. পবিত্র ও বরকতময় রমাদ্বান শরীফ (رمضان المبارك)

১০. পবিত্র শাওওয়াল শরীফ (شوّال)

১১. পবিত্র যুল্ ক্ব’দাহ শরীফ (ذو القعدة الحرام)

১২. পবিত্র যুল্ হিজ্জাহ শরীফ (ذو الحجة الحرام)

যেমটি মহান আল্লাহ তায়ালা রব্বুল আলামীন তিনি উনার পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ তথা পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,

اِنَّ عِدَّةَ الشُّهُوْرِ عِنْدَ اللهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِىْ كِتَابِ اللهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّموتِ وَالْاَرْضَ مِنْهَا اَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذلِكَ الدِّيْنُ الْقَيّمُ فَلَا تَظْلِمُوْا فِيهِنَّ اَنْفُسَكُمْ وَقَاتِلُوا الْمُشْرِكِيْنَ كَافَّةً كَمَا يُقَاتِلُوْنَكُمْ كَافَّةً وَاعْلَمُوْا اَنَّ اللهَ مَعَ الْمُتَّقِيْنَ.

অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট উনার বিধানে আসমানসমূহ ও যমীনসমূহ সৃষ্টির দিন হতেই গণনা হিসেবে মাসের সংখ্যা ১২টি। তন্মধ্যে ৪টি হারাম (যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ) মাস। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং এ মাসগুলোর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি যুলূম করো না। তোমরা মুশরিকদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে জিহাদ করবে, যেমন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ করে থাকে। আর জেনে রাখুন! মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি মুত্তাক্বীন উনাদের সঙ্গে আছেন। (পবিত্র সূরাতুত তাওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-৩৬)

অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের তাফসীর তথা ব্যাখ্যায় ১২টি চন্দ্রমাস উনাদের সম্পর্কে যথেষ্ট আলোচনা বিদ্ধমান আছে। যা নিম্নে আলোচিত হল:

قوله تعالى: {اِنَّ عِدَّةَ الشُّهُوْرِ} اى عدد الشهور {عِنْدَ اللهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِىْ كِتَابِ اللهِ} وهى المحرم وصفر وربيع الاول وشهر ربيع الثانى وجمادى الاولى وجمادى الآخرة ورجب وشعبان وشهر رمضان وشوال وذو القعدة وذو الحجة، وقوله: {فِىْ كِتَابِ اللهِ} اى فى حكم الله وقيل: فى اللوح المحفوظ، قرأ ابو جعفر رحمة الله عليه: اثنا عشر وتسعة عشر واحد عشر بسكون الشين، وقرأ العامة بفتحها {يَوْمَ خَلَقَ السَّموتِ وَالاَرْض} والمراد منه: الشهور الهلالية وهى الشهور التى يعتد بها المسلمون فى صيامهم وحجهم واعيادهم وسائر امورهم، وبالشهور الشمسية تكون السنة ثلاث مائة وخمسة وستين يوما وربع يوم، والهلالية تنقص عن ثلاث مائة وستين يوما بنقصان الاهلة. والغالب انـها تكون ثلاثمائة واربعة وخمسين يوما {مِنْهَا اَرْبَعَةٌ حُرُمٌ} من الشهور اربعة حرم وهى: رجب وذو القعدة وذو الحجة والـمحرم واحد فرد وثلاثة سرد {ذلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ} اى الحساب الـمستقيم.

অর্থ: মহান আল্লাহ তায়ালা উনার ইরশাদ মুবারক: (নিশ্চয়ই ইদ্দাতিশ্ শুহূর) অর্থাৎ মাস সমূহের সংখ্যা (মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট উনার বিধানে মাসের সংখ্যা ১২টি) সেগুলো হচ্ছে মুহররম, ছফর, রবীউল আউওয়াল শরীফ, রবীউছ ছানী, জুমাদাল ঊলা, জুমাদাল আখিরাহ, রজব, শা’বান, শাহরু রমাদ্বান, শাওওয়াল, যুল্ ক্ব’দাহ ও যুল্ হিজ্জাহ। (মহান আল্লাহ তায়ালা উনার বিধানে) অর্থাৎ মহান আল্লাহ তায়ালা উনার ফায়সালায়। কারো কারো মতে: পবিত্র লাওহো মাহফূয উনার মধ্যে এভাবেই আছে। হযরত আবূ জা’ফর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘শীন’ র্হফ উনার মধ্যে সুকূন যোগে ‘ইছ্না আশ্র, তিস্য়াতা আশ্র ও আহাদা আশ্র’ হিসেবে পড়েছেন। আর সকল ক্বারী উনারা ‘শীন’ র্হফ উনার মধ্যে যবর যোগে ‘ইছ্না আশার, তিস্য়াতা আশার ও আহাদা আশার’ হিসেবে পড়েছেন। (আসমানসমূহ ও যমীনসমূহ সৃষ্টির দিন হতেই) উনার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: আশ-শুহূরুল হিলালিয়া অর্থাৎ চন্দ্র মাস সমূহ হচ্ছে এমন মাস যার দ্বারা মুসলিম উনারা উনাদের পবিত্র রোযা সমূহ, পবিত্র হজ্জ উনার দিন সমূহ, ঈদ সমূহ ও তৎসংশ্লিষ্ট যাবতীয় কাজ সমূহ গণনা করে থাকেন। আর আশ-শুহূরুশ্ শামসিয়্যাহ অর্থাৎ সৌর মাস সমূহ যা মোট ৩৬৫ দিন ৪ ঘণ্টায় হয়। আর চন্দ্র মাস সমূহ মোট ৩৬০ দিনের থেকে কম দিনে হয়ে থাকে। ইহা সর্বোচ্চ ৩৫৪ দিনে হয়ে থাকে। (তন্মধ্যে ৪টি হারাম মাস) ১২টি মাসের মধ্যে ৪টি মাস পবিত্র তথা যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ মাস। সেগুলো হলো: রজব, যুল্ ক্ব’দাহ, যুল্ হিজ্জাহ ও মুহররম। একটি আলাদা এবং তিনটি একসাথে। (এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান) অর্থাৎ সহজ-সরল হিসাব বা গণনা। (মায়ালিমুত্ তানযীল অর্থাৎ তাফসীরুল্ বাগবী পবিত্র সূরাতুত তাওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-৩৬ লেখক: মুহইস সুন্নাহ আবূ মুহাম্মাদ হুসাঈন বিন মাসঊদ বাগবী শাফিয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৫১০ হিজরী)

قوله عز وجل: {ان عدة الشهور عند الله اثنا عشر شهرًا} هى الـمحرم وصفر وربيع الاول وربيع الآخر وجمادى الاولى وجمادى الآخرة ورجب وشعبان ورمضان وشوال وذو القعدة وذو الحجة، وهذه شهور السنة القمرية التى هى مبنية على سير القمر فى الـمنازل وهى شهور العرب التى يعتد بها المسلمون فى صيامهم ومواقيت حجهم واعيادهم وسائر امورهم واحكامهم، وايام هذه الشهور ثلثمائة وخمس وخمسون يوما، والسنة الشمسية عبارة عن دور الشمس فى الفلك دورة تامة وهى ثلثمائة وخمسة وستون يوما وربع يوم، فتنقص السنة الهلالية عن السنة الشمسية عشرة ايام فبسبب هذا النقصان تدور السنة الهلالية فيقع الحج والصوم تارة فى الشتاء وتارة فى الصيف.

অর্থ: (নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট উনার বিধানে গণনা হিসেবে মাসের সংখ্যা ১২টি) সেগুলো হচ্ছে মুহররম, ছফর, রবীউল আউওয়াল শরীফ, রবীউল আখির, জুমাদাল ঊলা, জুমাদাল আখিরাহ, রজব, শা’বান, রমাদ্বান, শাওওয়াল, যুল্ ক্ব’দাহ ও যুল্ হিজ্জাহ। ইহা হচ্ছে আস-সানাতুল ক্বমারিয়্যাহ অর্থাৎ হিজরী চন্দ্রমাস, যা চাঁদের কক্ষপথে পরিভ্রমণের পদ্ধতির উপর প্রতিষ্ঠিত। ইহা আরববাসী উনাদের মাস, যা দ্বারা মুসলমান উনারা উনাদের পবিত্র রোযা সমূহ, পবিত্র হজ্জ উনার সময় সমূহ, পবিত্র ঈদ সমূহ, তৎসংশ্লিষ্ট যাবতীয় কাজ ও হুকুম হিসাব করে থাকেন। এই মাস সমূহের বাৎসরিক মোট হিসাব ৩৫৫ দিন হয়ে থাকে। আর সূর্য আকাশে পূর্ণ এক বছর পরিভ্রমণ করে আস-সানাতুশ্ শামসিয়্যাহ তথা সৌর বছর প্রতিষ্ঠিত হয়। যা ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টায় হয়ে থাকে। চন্দ্রবছর সৌর বছরের থেকে ১০ দিন কম হয়ে থাকে। এই কম দিনের কারণেই চন্দ্র বছরের মধ্যে হজ্জ ও রোযা কখনো শীতকালে আবার কখনো গ্রীষ্মকালে সংঘটিত হয়ে থাকে। (লুবাতুত্ তা’বীল ফী মায়ানিত্ তানযীল অর্থাৎ তাফসীরুল খাযিন পবিত্র সূরাতুত তাওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-৩৬ লেখক: হযরত আবুল হাসান আলী বিন মুহম্মদ বিন ইবরাহীম বিন উমর শাইহী খাযিন শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি)

فالواجب على المسلمين الاخذ بهذا الحساب والعدد فى صومهم وحجهم واعيادهم وبياعاتهم واجل ديونهم وغير ذلك من سائر احكام المسلمين المرتبة على الشهور، عن ابى بكر عليه السلام ان النبى صلى الله عليه وسلم قال: ان الزمان قد استدار كهيئته يوم خلق الله السموات والارض السنة اثنا عشر شهرًا منها اربعة حرم ثلاث متواليات ذو القعدة وذو الحجة والمحرم ورجب مضر الذى بين جمادى وشعبان اى شهر هذا قلنا الله ورسوله اعلم.

অর্থ: মুসলমান উনাদের জন্য এই হিজরী বছরের হিসাব করা ওয়াজিব। সেই গণনা হবে পবিত্র রোযা সমূহ, পবিত্র হজ্জ উনার দিন সমূহ, পবিত্র ঈদ সমূহ, ব্যবসায়ী কারবার সমূহ, ঋণ পরিশোধের সময় সমূহ এবং মুসলমান উনাদের যাবতীয় বিধান সমূহ পালনের সময় সমূহ উনাদের ব্যাপারে মাস সমূহের ভিত্তিতে। ছিদ্দীক্বে আকবর হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি যখন থেকে সৃষ্টির সূচনা করেন, তখন থেকেই সময় বা যুগ ঘুরছে। বছর হচ্ছে ১২টি মাসে। তন্মধ্যে ৪টি মাস হারাম বা পবিত্র। তিনটি মাস একসাথে- যুল্ ক্ব’দাহ, যুল্ হিজ্জাহ ও মুহররম। আর মুদ্বার গোত্রের রজব মাস, যা জুমাদাল উখরা ও শা’বান মাস উনাদের মধ্যবর্তী মাস। (তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন:) ইহা কোন মাস? জাওয়াবে আমরা বললাম, মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি ও উনার রসূল নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই ভাল জানেন। (লুবাতুত্ তা’বীল ফী মায়ানিত্ তানযীল অর্থাৎ তাফসীরুল খাযিন পবিত্র সূরাতুত তাওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-৩৬ লেখক: হযরত আবুল হাসান আলী বিন মুহম্মদ বিন ইবরাহীম বিন উমর শাইহী খাযিন শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি)

{اِنَّ عِدَّةَ الشهور عِندَ الله اثنا عَشَرَ شَهْرًا فِىْ كتاب الله} فاعلم الله تعالى المسلمين اَنَّ عدة الشهور التى يعدون اثنا عشر شهرا على منازل العمر، فجعل حجهم واعيادهم وصيامهم على هذا العدد، فالحج والصوم يكون مرة فى الشتاء ومرة فى الصيف، وكانت اعياد اهل الكتاب فى متعبداتهم فى سنتهم على حساب دوران الشمس على كل سنة ثلاثمائة وخمسة وستين يوما، فجعل شهور المسلمين بالاهلة.

অর্থ: (নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট উনার বিধানে গণনা হিসেবে মাসের সংখ্যা ১২টি) মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি মুসলমান উনাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, নিশ্চয়ই চাঁদের কক্ষপথে পরিভ্রমণের পদ্ধতির উপর নির্ভর করে বছরে মাসের সংখ্যা ১২টি হয়। পবিত্র হজ্জ উনার সময় সমূহ, পবিত্র ঈদ সমূহ ও পবিত্র রোযা সমূহ পালন করা এই চাঁদের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন। হজ্জ ও রোযা কখনো শীতকালে আবার কখনো গ্রীষ্মকালে সংঘটিত হয়ে থাকে। আহলে কিতাবদের ঈদ সমূহ সূর্যের ঘূর্ণয়নের দ্বারা সৌর বছরের হিসাব অনুযায়ী প্রত্যেক বছরে ৩৬৫ দিনের মধ্যে তাদের ইবাদতগাহে পালিত হত। আর মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি মুসলমান উনাদের জন্য চন্দ্র মাস সমূহ দান করেছেন। (বাহরুল উলূম অর্থাৎ তাফসীরুস সামারকান্দী পবিত্র সূরাতুত তাওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-৩৬ লেখক: হযরত আবুল লাইছ নছর বিন মুহম্মদ বিন আহমদ বিন ইবরাহীম সামারকান্দী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৩৭৩ হিজরী)

قَوْلُه تَعَالى: {اِنَّ عِدَّةَ الشُّهُوْرِ عِنْدَ اللهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِىْ كِتَابِ اللهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّموتِ وَالاَرْضَ} معناهُ: اِنَّ عِدَّةَ الشُّهُوْرِ التى تتعلَّقُ بها الاحكامُ من الحجِّ والعُمرة والزكاةِ والاعياد وغيرها اثنَا شهرًا على منازِل العُمرة، تارةً يكون الحجُّ والصومُ فى الشِّتاء وتارةً فى الصيفِ على اعتبار الاهِلَّة.

অর্থ: (নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট উনার বিধানে গণনা হিসেবে আসমান সমূহ ও যমীন সমূহ সৃষ্টির সূচনা লগ্ন থেকেই মাসের সংখ্যা ১২টি) উহার তৎপর্য হচ্ছে: নিশ্চয়ই মাস সমূহের গণনা পবিত্র হজ্জ, পবিত্র উমরাহ, পবিত্র যাকাত, পবিত্র ঈদসমূহ ও অন্যান্য বিষয়ের হুকুমের সাথে সংশ্লিষ্ট। চাঁদের হিসাব অনুযায়ী পবিত্র হজ্জ ও পবিত্র রোযা কখনো শীতকালে, আবার কখনো গ্রীষ্মকালে সংঘটিত হয়। (তাফসীরুল কুরআনিল আযীম লিত্ ত্ববারনী পবিত্র সূরাতুত তাওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-৩৬ লেখক: হযরত আবুল ক্বাসিম সুলাইমান বিন আহমদ বিন আইয়্যূব বিন মুত্বীর লাখমী শামী ত্ববারনী রহমতুল্লাহি আলাইহি)

}ان عدة الشهور} العدة مصدر بمعنى العدد اى ان عدد الشهور التى تتعلق بها الاحكام الشرعية من الحج والعمرة والصوم والزكاة والاعياد وغيرها وهى الشهور العربية القمرية التى تعتبر من الهلال الى الهلال وهى تكون مرة ثلاثين يوما ومرة تسعة وعشرين ومدة السنة القمرية ثلاثمائة واربعة وخمسون يوما وثلث يوم دون الشهور الرومية والفارسية التى تكون تارة ثلاثين يوما وتارة احدا وثلاثين ومدة السنة الشمسية ثلاثمائة وخمسة وستون يوما وربع يوم.

অর্থ: (নিশ্চয়ই মাস সমূহ উনাদের গণনা) আল-ইদ্দাতু শব্দটি মাছদার বা ক্রিয়ামূল। যা গণনা অর্থে ব্যবহার হয়েছে। অর্থাৎ মাস সমূহর গণনা সম্পর্কিত পবিত্র হজ্জ, পবিত্র উমরাহ, পবিত্র রোযা, পবিত্র যাকাত, পবিত্র ঈদ সমূহ ও অন্যান্য শরয়ী বিধানের সাথে সম্পর্কিত। যা আরবী চন্দ্র মাস এক চাঁদের পর আরেক চাঁদের আগমণের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। কোন কোন সময় ইহা ত্রিশ দিনে হয়, আবার কোন কোন সময় ঊনত্রিশ দিনে হয়। চন্দ্র বছর তথা হিজরী বা আরবী বছর ৩৫৪ দিন ৮ ঘণ্টায় হয়ে থাকে। যা রোম ও পারস্যের মাস গণনার মতো নয়, কেননা তাদের গণনায় মাস কখনো ৩০ দিনে আবার কখনো ৩১ দিনে হয়ে থাকে। আর সৌর বছরের সময় হলো ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টা। (রূহুল বয়ান ফী তাফসীরিল কুরআন পবিত্র সূরাতুত তাওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-৩৬ লেখক: হযরত ইসমাঈর হাক্কী বিন মুছ্তফা ইস্তাম্বূলী হানাফী খালওয়াতী বারূসাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ১১২৭ হিজরী)

উল্লেখিত পবিত্র আয়াত শরীফ ও উনার তাফসীর থেকে যে সমস্ত বিষয় প্রমাণিত হয় তা হলো:

১)         মহান আল্লাহ তায়ালা উনার ফায়সালায় উনার নিকট আসমান ও যমীন সৃষ্টির শুরু থেকে মাস হচ্ছে ১২টি। সেই মাসগুলি হলো: মুহররম, ছফর, রবীউল আউওয়াল শরীফ, রবীউছ ছানী, জুমাদাল ঊলা, জুমাদাল্ উখরা, রজব, শা’বান, রমাদ্বান, শাওওয়াল, যুল্ ক্ব’দাহ, যুল্ হিজ্জাহ।

২)        ১২টি সম্মানিত মাস উনাদের মধ্যে হারাম তথা যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ মাস ৪টি। সেগুলি হলো: যুল্ ক্ব’দাহ, যুল্ হিজ্জাহ, মুহররম ও রজব।

৩)        আস-সানাতুল ক্বমারিয়্যাহ তথা চন্দ্র বছর গণনা করা মু’মিন-মুসলমান উনাদের জন্য ওয়াজিব। ইহাকে আস-সানাতুল হিজরী তথা হিজরী সন, আস-সানাতুল্ হিলালিয়্যাহ তথা চন্দ্র সন, আস-সানাতুল্ ইসলামিয়্যাহ তথা ইসলামী সন, আস-সানাতুল্ আরাবিয়্যাহ তথা আরবী সন, আস-সানাতুস সুন্নাতিয়াহ তথা সুন্নাতী সন বলা হয়।

৪)        চন্দ্র সনের সাথে সম্পর্কিত শরয়ী বিষয় সমূহ হচ্ছে: পবিত্র হজ্জ, পবিত্র উমরাহ, পবিত্র রোযা, পবিত্র যাকাত, পবিত্র ঈদ সমূহ, ঋণ পরিশাধ, ব্যবসা-বানিজ্য ইত্যাদী বিষয় সমূহের বিধি-বিধান পালন।

৫)        উল্লেখিত সকল ইবারতে আ’ইয়াদ তথা ঈদসমূহ উনাদের কথা উল্লেখ আছে। তাতে বুঝা যায় যে, ইসলামী শরীয়াতে ঈদ দুইটি নয়, বরং ঈদ উনার সংখ্যা অনেক। আর সকল ঈদ উনাদের সেরা ঈদ হচ্ছে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যা পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ হিসেবে সারা কায়িনাতে মাশহূর বা প্রসিদ্ধ। সুবহানাল্লাহ। তাই যারা দুই ঈদ ছাড়া অন্য কোন ঈদ মানতে চায় না, তাদের সে মত পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও গ্রহণযোগ্য তাফসীর উনাদের খিলাফ বা বিপরীত। এজন্য তাদের সেই গোমরাহীমূলক মতামত বাতিল বা পরিত্যাজ্য।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: পরবর্তী সংখ্যায় ১২টি মাস উনাদের বিশেষ বিশেষ দিনগুলোর উপর ধারাবাহিকভাবে আলোচনা শুরু হবে ইন্শা আল্লাহ।

অসমাপ্ত- পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা লুঙ্গি চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৭

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৮

ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া— (১)

ফতওয়া বিভাগ-গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া- (২)

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-(৩)