[সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামউনার প্রতি। মহান আল্লাহ পাক উনার অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ” উনার ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-উনার অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীলভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” পত্রিকায় যথাক্রমে- ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন উনার শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উনার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা) ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যা) এবং ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা) ২৭. ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬১-১৭৫তম সংখ্যা) ২৮. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬৮-চলমান), ২৯. জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯২-১৯৩তম সংখ্যা) ৩০. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯৫-২১৩তম সংখ্যা), ৩১. পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও ক্বিয়াস উনাদের দৃষ্টিতে “কুলাঙ্গার, পাপিষ্ঠ ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে শরীয়তের সঠিক ফায়ছালা ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করার পর-
৩২তম ফতওয়া হিসেবে
“পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া”-
পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব উনার উপর মউত পর্যন্ত ইস্তিক্বামত থাকা ফরয
পূর্ব প্রকাশিতের পর
পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র তাফসীর শরীফ উনাদের মধ্যে ‘আত-তাক্বলীদু গইরুশ শাখছী অর্থাৎ অনির্দিষ্ট বা একাধিক ইমাম-মুজতাহিদ উনাদেরকে অনুসরণ করা’ প্রয়োজন সাপেক্ষে জরুরী সম্পর্কিত দলীল-আদিল্লাহ
প্রয়োজনে অনির্দিষ্ট বা একাধিক ইমাম-মুজতাহিদ উনাদেরকে অনুসরণ করাকেই ‘আত-তাক্বলীদু গইরুশ শাখছী’ বলা হয়। উনাকে ‘আত-তাক্বলীদুল মুতলাক্ব অর্থাৎ আম বা সাধারণ অনুসরণ’ ও ‘আত-তাক্বলীদুল আম বা একাধিক ইমাম-মুজতাহিদ উনাদের অনুসরণ’ও বলা হয়ে থাকে। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআন মাজীদ, পবিত্র তাফসীর শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে অনেক দলীল-প্রমাণ রয়েছে। তবে এ তাক্বলীদের জন্য শর্ত হল: এ মাসয়ালা গুলো মাযহাব চতুষ্ঠয় অর্থাৎ হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বালী মাযহাব উনাদের ইখতিলাফী বা মতানৈক্য বিশিষ্ট মাসয়ালার বাইরের মাসয়ালা হতে হবে। যেমন: যার যার হক্কানী-রব্বানী মুরশিদ বা শায়েখ উনার কর্তৃক আদিষ্ট ওয়াযীফাহ বা নিয়ম-নীতি অনুসরণ করা প্রত্যেক মুরীদ বা সালিক-এর জন্য ফরয-ওয়াজিব। কেননা, এ ব্যাপারগুলো মাযহাব চতুষ্ঠয়ের ইখতিলাফী মাসয়ালার আওতাভুক্ত নয়। যেহেতু এ ব্যাপারে সমস্ত উলামা কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ইজমা’ তথা একমত পোষণ করেছেন যে, যে ব্যক্তি যে মাযহাবের অনুসারী সে ব্যক্তি ইখতিলাফী মাসয়ালায় সে মাযহাব উনার ফায়সালা অনুযায়ীই ইন্তিকাল পর্যন্ত আমল করবে। তার জন্য লাগামহীনভাবে স্বেচ্ছাচারীতার সাথে অনির্দিষ্ট, মুক্ত বা একাধিক ইমাম-মুজতাহিদ উনাদের অনুসরণ-অনুকরণ করা জায়িয নেই এবং নিজের নাফসানিয়াতের কারণে একেক সময় একেক মাযহাবের মাসয়ালা অথবা নিজের সুবিধা মতো মাযহাব পরিবর্তন করাও জায়িয নেই। নি¤েœ উদ্ধৃত বিষয় সম্পর্কিত দলীল-আদিল্লাহ পেশ করা হল:
(৮১৮-৮২১)
عَنْ حَضْرَتْ اِبْرَاهِيْمَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمنِ الْعَذَرِىِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَرِثُ هذَا الْعِلْمَ مِنْ كُلِّ خَلَفٍ عُدُوْلُه يَنْفُوْنَ عَنْهُ تَاْوِيْلَ الْجَاهِلِيْنَ وَانْتِحَالَ الْمُبْطِلِيْنَ وَتَحْرِيْفَ الْغَالِيْنَ.
অর্থ: ছহাবী হযরত ইবরাহীম ইবনে আব্দুর রহমান আযারী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: সুযোগ্য উত্তরসূরীগণ উনারা পূর্ববর্তী উনাদের কাছ থেকে ওয়ারিছ হিসেবে এই ইল্ম গ্রহণ করবে। আর মুর্খদের ভুল ব্যাখ্যা, বাতিলপন্থীদের মিথ্যাচার এবং বাড়াবাড়িকারীদের বাড়াবাড়ি থেকে এই ইল্ম উনাকে হিফাযত করবে। (আস-সুনানুল কুবরা লিল্ বাইহাক্বী পরিচ্ছেদ ৫০: বাবুর রজুল মিন আহলিল ফিক্হ ইউসয়ালু আনির রজুলি মিন আহলিল্ হাদীছ ফাইয়াকূলু কুফফূ আন্ হাদীছিহী লিআন্নাহূ ইয়াগলাতু আও ইউহাদ্দিছু বিমা লাম ইয়াসমা’ আও আন্নাহূ লা ইউবছিরুল ফুতইয়া, মুসনাদুল বায্যার, মাছাবীহুস সুন্নাহ, মিশকাতুল মাছাবীহ আল-ফাছলুছ্ ছানী)
ব্যাখ্যা: পবিত্র শরীয়াত উনার বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে মুর্খদের ব্যাখ্যার কঠোর নিন্দা করে এখানে বলা হয়েছে যে, জাহিল-মুর্খদের হাত থেকে ইল্ম উনাকে হিফাযত করা প্রত্যেক যুগের হক্কানী আলিম উনাদের পবিত্র দায়িত্ব-কর্তব্য। সুতরাং পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের নির্ভুল অনুসরণের জন্য উনাদেরকেই অনুসরণ করতে হবে। মূলত: এখানে পরবর্তীরা উনাদের পূর্ববর্তী ইমাম-মুজতাহিদ উনাদেরকে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যাপকভাবে তাক্বলীদ বা অনুসরণ করতে আদিষ্ট হয়েছেন। আর ইহাই তো ‘আত-তাক্বলীদু গইরুশ শাখছী তথা প্রয়োজন অনুযায়ী একাধিক ইমাম-মুজতাহিদ উনাদেরকে অনুসরণ’ উনার অন্তর্ভুক্ত।
(৮২২-৮২৮)
عَنْ حضرت اَبِىْ سَعِيْدن الْخُدْرِىّ رضى الله عنه عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنَّه قَالَ : اِئْتَمُّوْا بِىْ يَاْتَمُّ بِكُمْ مَنْ بَعْدَكُمْ.
অর্থ: ছহাবী হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে, তিনি নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নিশ্চয়ই তিনি (নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ মুবারক করেন: তোমরা আমাকে ইক্তিদা তথা অনুসরণ-অনুকরণ করো, আর তোমাদের পরবর্তীরা তোমাদেরকে দেখে ইক্তিদা করবে। (মুসনাদু আহমদ বিন হাম্বাল, পরিচ্ছেদ: মুসনাদু আবী সাঈদিনিল খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হাদীছ নন্বর: ১১১৫৮, খণ্ড: ৩ পৃষ্ঠা: ১৯, লেখক: ইমাম আবূ আব্দিল্লাহ আহমদ বিন মুহম্মদ বিন হাম্বাল বিন হিলাল বিন আসাদ শাইবানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি, ওয়াফাত: ২৪১ হিজরী, প্রকাশনা: মুয়াস্সাসাতু কুরতুবাতুল ক্বাহিরা, মোট খণ্ড সংখ্যা: ৬, অন্য প্রকাশনা: আলামুল কুতুব বইরূত, হাদীছ নম্বর: (১১১৪২) ১১১৫৯ মোট খণ্ড সংখ্যা: ৬; আল-জামিউছ ছহীহু লিল্ বুখারী, পরিচ্ছেদ ৪০: বাবুর রজুল ইয়া’তাম্মু বিল্ ইমাম ওয়া ইয়া’তাম্মুন্ নাস বিল্ মা’মূম, ছহীহ ইবনুল খুযাইমাহ বাবুল আমর বিই’তিমামি আহলিছ্ ছুফূফিল আওয়াখিরি বিআহলিছ্ ছুফূফিল আউওয়াল, হাদীছ নম্বর: ১৬১২, খণ্ড: ৩ পৃষ্ঠা: ৫১ লেখক: ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইসহাক্ব বিন খুযাইমাহ আবূ বকর সুলামী নীসাবূরী রহমতুল্লাহি আলাইহি। প্রকাশনা: আল-মাকতাবুল ইসলামী বইরূত লেবানন। মোট খণ্ড সংখ্যা: ৪; * মুসনাদুত্ ত্বয়ালাসী, পরিচ্ছেদ ২৮৭: মা রাওয়া আবূ সাঈদিনিল খুদরিয়্যি রদ্বিয়াল্লাহু আনহু আনিন নাবিয়্যি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিচ্ছেদ ১: মা রওয়া আনহু আবূ নাদ্রাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হাদীছ নম্বর: ২২৭৬ খণ্ড: ৩ পৃষ্ঠা: ৬১৯ লেখক: ইমাম সুলাইমান বিন দাঊদ বিন জারূদ আবূ দাঊদ ফারিসিল বাছরী আত-তায়ালাসী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ২০৪ হিজরী প্রকাশণা: হাজরুত্ ত্ববায়াহ ওয়ান নাশার মোট খণ্ড:৪; * মুসনাদু আবী আওয়ানাহ পরিচ্ছেদ ১৫: বাবু ঈজাবি তাক্বাদ্দুমি উলিল আহলাম ওয়ান নুহা মিনাল ইমাম ছুম্মাল লাযীনা ইয়ালূনাহুম ছুম্মা কাযালিক হাদীছ নম্বর: ১৩৮৬ খণ্ড: ১ পৃষ্ঠা: ৩৮২ লেখক: ইমাম আবূ আওয়ানাহ ইয়া’কূব বিন ইসহাক্ব বিন ইবরাহীম আসফারায়িনী নীসাবূরী রহমতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৩১৬ হিজরী প্রকাশনা: দারুল মা’রিফাহ বইরূত লেবনান মোট খণ্ড: ৫; * শরহুস সুন্নাহ বাবু ফাদ্ল পরিচ্ছেদ: ১ হাদীছ নম্বর: ৮১৪ খণ্ড: ৩ পৃষ্ঠা: ৩৭০ লেখক: ইমাম হুসাঈন বিন মাসঊদ বাগবী শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি জন্ম: ৪৩৬ হিজরী ওয়াফাত: ৫১৬ হিজরী প্রকাশনা: আল-মাকতাবুল ইসলামী দামেশ্ক বইরূত মোট খণ্ড সংখ্যা: ১৬; * মুসনাদ ইবনুল জা’দ হাদীছু আবিল আশহাব হাদীছ নম্বর: ৩১৩৭ খণ্ড: ১ পৃষ্ঠা: ৪৫৮ লেখক: আবুল হাসান আলী বিন জা’দ বিন উবাইদুল জাওহার বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি জন্ম: ১৩৪ হিজরী ওয়াফাত: ২৩০ হিজরী)
ব্যাখ্যা: এখানে স্পষ্টভাবে পরবর্তীদেরকে তাঁদের পূর্ববর্তী ইমাম-মুজতাহিদ তথা ওলীআল্লাহ উনাদেরকে ইত্তিবা বা অনুসরণ করতে মুবারক নির্দেশ করা হয়েছে। যাতে কোন নির্দিষ্টতা রাখা হয়নি। এতে বুঝা যায় যে, প্রয়োজন সাপেক্ষে ‘আত-তাক্বলীদু গইরুশ শাখছী তথা একাধিক ইমাম-মুজতাহিদ উনাদেরকে অনুসরণ’ করতে স্বয়ং নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আদেশ মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ।
(৮২৯-৮৩০)
عَنْ حضرت حَارِثَةَ بْنِ مُضَرِّبٍ رحمة الله عليه قَالَ: كَتَبَ اِلَيْنَا عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ عليه السلام: اِنِّىْ قَدْ بَعَثْتُ اِلَيْكُمْ عَمَّارَ بْنَ يَاسِرٍ رضى الله عنه اَمِيْرًا وَعَبْدَ اللهِ بْنَ مَسْعُوْدٍ رضى عنه مُعَلِّمًا وَوَزِيْرًا وَهُمَا مِنَ النُجَبَاءِ مِنْ اَصْحَابِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ اَهْلِ بَدْرٍ فَاسْمَعُوا وَقَدْ جَعَلْتُ اِبْنَ مَسْعُوْدٍ رضى الله عنه عَلى بَيْتِ مَالِكُمْ فَاسْمَعُوْا فَتَعَلَّمُوْا مِنْهُمَا وَاقْتَدُوْا بِهِمَا وَقَدْ اثَرْتُكُمْ بِعَبْدِ اللهِ رضى الله عنه عَلى نَفْسِىْ.
অর্থ: হযরত হারিছাহ বিন মুদ্বাররিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: ফারূক্বে আ’যম হযরত উমর বিন খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি আমাদের কাছে একখানা চিঠি প্রেরণ করেন। যাতে তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আমি আপনাদের কাছে হযরত আম্মার বিন ইয়াসির রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাকে আমীর রূপে এবং হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাকে দীনী শিক্ষক ও ওয়াযীর রূপে পাঠিয়েছি। উনারা দুজন নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের মধ্যে উচ্চবংশীয় সর্বগুণে গুণান্বিত বদরী ছহাবী। তাই আপনারা উনাদের কথা শ্রবণ করবেন অর্থাৎ মান্য করবেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাকে বাইতুল মাল উনার দায়িত্বে নিয়োগ করেছি। তাই আপনারা উনাদের দুজনের কথা শ্রবণ করবেন, উনাদের নিকট থেকে দীনী ইল্ম শিক্ষা গ্রহণ করবেন এবং উনাদেরকে ইক্তিদা তথা অনুসরণ-অনুসরণ করবেন। কারণ, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাকে আপনাদের জন্য আমার থেকে বেশি পছন্দ করি বা অগ্রাধিকার দেই। (আল্ মুস্তাদরাক আলাছ ছহীহাঈন লিল্ হাকিম পরিচ্ছেদ: মানাক্বিবে হযরত আম্মার বিন ইয়াসির রদ্বিয়াল্লাহু আনহু লেখক: ইমাম হযরত মুহম্মদ বিন আব্দুল্লাহ আবূ আব্দিল্লাহ নীসাবূরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি জন্ম: ৩২১ হিজরী ওয়াফাত: ৪০৫ হিজরী, মুছান্নাফ ইবনে আবী শাইবাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি পরিচ্ছেদ ২৮: মা যিক্রু ফী আব্দিল্লাহ বিন মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু লেখক: হযরত আবূ বকর আব্দুল্লাহ বিন মুহম্মদ বিন আবী শাইবাহ আবসী কূফী রহমতুল্লাহি আলাইহি জন্ম: ১৫৯ হিজরী ওয়াফাত: ২৩৫ হিজরী)
(৮৩১-৮৩৬)
عن حضرت مُوسَى بْنُ علَىّ رحمة الله عليه عَنْ اَبِيْهِ اَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ عليه السلام خَطَبَ النَّاسَ بِالْجَابِيَةِ فَقَالَ: مَنْ اَرَادَ اَنْ يَّسْاَلَ عَنِ الْقُرْانِ فَلْيَاْتِ اُبَىَّ بْنَ كَعْبٍ رضى الله عنه وَمَنْ اَرَادَ اَنْ يَّسْاَلَ عَنِ الْفَرَائِضِ فَلْيَاْتِ زَيْدَ بْنَ ثَابِتٍ رضى الله عنه وَمَنْ اَرَادَ اَنْ يَّسْاَلَ عَنِ الْفِقْهِ فَلْيَاْتِ مُعَاذَ بْنَ جَبَلٍ رضى الله عنه وَمَنْ اَرَادَ اَنْ يَّسْاَلَ عَنِ الْمَالِ فَلْيَاْتِنِىْ فَاِنَّ اللهَ تَعَالى جَعَلَنِىْ لَه خَازِنًا وَقَاسِمًا.
অর্থ: হযরত মূসা বিন আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে: ফারূকে আ’যম হযরত উমর বিন খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি মানুষদের উদ্দেশ্যে জাবিয়াহ নামক স্থানে খুতবাহ দিলেন এবং তাতে বললেন: যে ব্যক্তি পবিত্র কুরআন মাজীদ তথা ক্বিরায়াত উনার ব্যাপারে জানতে সুওয়াল করার ইচ্ছা পোষণ করে, সে যেন হযরত উবাই বিন কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার নিকট আসে। যে ব্যক্তি ফারায়িদ্ব তথা ওয়ারিছ স্বত্ত্ব উনার ব্যাপারে জানতে সুওয়াল করার ইচ্ছা পোষণ করে, সে যেন হযরত যায়েদ বিন ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার নিকট আসে। যে ব্যক্তি ইলমুল ফিক্হ তথা মাসয়ালা-মাসায়িল উনার ব্যাপারে জানতে সুওয়াল করার ইচ্ছা পোষণ করে, সে যেন হযরত মুয়ায বিন জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার নিকট আসে। আর যে ব্যক্তি মাল তথা অর্থ-সম্পদ উনার ব্যাপারে জানতে সুওয়াল করার ইচ্ছা পোষণ করে, সে যেন আমার নিকট আসে; এ জন্য যে নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি আমাকে ইহার তত্ত্বাবধায়ক ও বণ্টনকারী বানিয়েছেন। (আস-সুনানুল কুবরা লিল্ বাইহাক্বী পরিচ্ছেদ ২: বাবু তারজীহি ক্বওলি যায়দিব্নি ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু আলা ক্বওলি গইরিহী মিনাছ ছহাবাতি রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম আজমাঈনা ফী ইলমিল ফারায়িদ্ব লেখক: হযরত আহমদ বিন হুসাঈন বিন আলী বিন মূসা আবূ বকর বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি, সুনানুল ইমাম সাঈদ বিন মানছূর পরিচ্ছেদ: বাবু মা জায়া ফী ফাদ্বলিল্ মুজাহিদীনা ওয়ালা ক্বায়িদীন লেখক: ইমাম সাঈদ বিন মানছূর খুরাসানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইন্তিকাল: ২২৭ হিজরী, আল-মু’জামুল আওসাত লিল্ ত্ববারানী পরিচ্ছেদ: মান ইসমুহূ আলী লেখক: আবুল ক্বাসিম সুলাইমান বিন আহমদ ত্ববারানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি, কিতাবুল আমওয়ালা পরিচ্ছেদ: বাবু ফারদ্বিল আ’ত্বিয়াহ মিনাল ফাইয়ি ওয়া মাই ইউবদাউ বিহী ফীহা লেখক: হযরত আবূ উবাইদ ক্বাসিম বিন সালাম রহমতুল্লাহি আলাইহি ইন্তিকাল: ২২৪ হিজরী, আল- আমওয়ালা পরিচ্ছেদ: বাবু ফারদ্বিল আ’ত্বিয়াহ মিনাল ফাইয়ি ওয়া মাই ইউবদাউ বিহী ফীহা লেখক: হুমাইদ বিন যানজাবিয়াহ রহমতুল্লাহি আলাইহি ইন্তিকাল: ২৫১ হিজরী, মুছান্নাফ ইবনি আবী শাইবাহ অধ্যায় ২৯: কিতাবুল ফারায়িদ্ব পরিচ্ছেদ ১: মা ক্বালূ ফী তা’লীমিল ফারায়িদ্ব লেখক: হযরত আবূ বকর আব্দুল্লাহ বিন মুহম্মদ বিন আবী শাইবাহ আবসী কূফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি জন্ম: ১৫৯ হিজরী ওয়াফাত: ২৩৫ হিজরী)
ব্যাখ্যা: অত্র দুখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের থেকে প্রমাণিত হলো যে, একেক বিষয়ে অভিন্ন ইমাম-মুজতাহিদ উনাদেরকে অনুসরণ করার নযীর হযরত খুলাফাউর রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের থেকেই প্রমানিত। আর ইহাই তো ‘আত-তাক্বলীদু গাইরুশ শাখছী তথা প্রয়োজনে একাধিক ইমাম-মুজতাহিদ উনাদেরকে অনুসরণ’। ইহা থেকে প্রমাণিত হয় যে, প্রয়োজন সাপেক্ষে একাধিক ইমাম-মুজতাহিদ উনাদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করা জায়িয।
(৮৩৭-৮৪০)
عَنْ حضرت عَبْدِ اللهِ بْنِ عَامِرِ بْنِ رَبِيعَةَ رحمة الله عليه قَالَ: سَمِعَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ عليه السلام صَوْتَ رِباح اِبْنِ الْمُغْتَرِفِ رحمة الله عليه اَوْ اِبْنِ الْغَرِفِ الْحَادِى رحمة الله عليه فِىْ جَوْفِ اللَّيْلِ وَنَحْنُ مُنْطَلِقُونَ اِلى مَكَّةَ فَاَوْضَعَ عُمَرُ عليه السلام رَاحِلَتَه حَتّى دَخَلَ مَعَ الْقَوْمِ فَاِذَا هُوَ مَعَ عَبْدِ الرَّحْمنِ رضى الله عنه، فَلَمَّا طَلَعَ الْفَجْرُ قَالَ عُمَرُ عليه السلام: هَيْءَ الآنَ اُسْكُتِ الآنَ قَدْ طَلَعَ الْفَجْرُ، اُذْكُرُوا اللهَ، قَالَ: ثُمَّ اَبْصَرَ عَلى عَبْدِ الرَّحْمنِ رضى الله عنه خُفَّيْنِ قَالَ: وَخُفَّانِ، فَقَالَ: قَدْ لَبِسْتُهُمَا مَعَ مَنْ هُوَ خَيْرٌ مِنْكَ اَوْ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ عُمَرُ: عَزَمْتُ عَلَيْكَ اِلاَّ نَزَعْتَهُمَا فَاِنِّىْ اَخَافُ اَنْ يَّنْظُرَ النَّاسُ اِلَيْكَ فَيَقْتَدُوْنَ بِكَ.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমির বিন রবীয়াহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: আমরা একদা রাতের অন্ধকারে পবিত্র মক্কা শরীফ যাওয়ার জন্য সেদিকে চলছিলাম এমতাবস্থায় ফারূক্বে আ’যম হযরত উমর বিন খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি হযরত রিবাহ বিন মুগতারিফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অথবা হযরত ইবনুল গরিফ হাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আওয়াজ শুনতে পেলেন। এজন্য হযরত উমর ফারূক্ব আলাইহিস সালাম তিনি উনার বাহনকে থামিয়ে এক সম্প্রদায়ের কাছে প্রবেশ করলেন। যাঁদের মধ্যে হযরত আব্দুর রহমান বিন আওফ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি ছিলেন। যখন ফজরের ওয়াক্ত হল তখন হযরত উমর বিন খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি আমাদের উদ্দেশ্যে বললেন: এখন নামায উনার জন্য তাড়াতাড়ি উঠে আসুন, এখন চুপ করুন, ফজর নামায উনার ওয়াক্ত হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা উনার যিক্র করুন। রাবী বলেন: অতপর তিনি হযরত আব্দুর রহমান বিন আওফ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাকে দুটি মোজা পরিহিত অবস্থায় দেখলেন এবং আশ্চর্য হয়ে বললেন, এমন মোজা! জওয়াবে হযরত আব্দুর রহমান বিন আওফ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি বললেন: আমি এই মোজা দুটি উনার সামনে পরিধান করেছি যিনি আপনার থেকে শ্রেষ্ঠ অথবা (বললেন) নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সামনে পরিধান করেছি। তখন হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন: আমি আপনাকে ক্বসম দিয়ে বলছি, আপনি মোজা জোড়া খুলে ফেলুন। কেননা, আমার আশঙ্কা! মানুষ আপনাকে দেখে আপনার অনুসরণ শুরু করবে। (মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল পরিচ্ছেদ: মুসনাদু আব্দির রহমানিবনি আওফ যুহরী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু লেখক: ইমাম আবূ আব্দিল্লাহ আহমদ বিন মুহম্মদ বিন হাম্বল বিন হিলাল বিন আসাদ শাইবানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ২৪১ হিজরী, মাজমাউয্ যাওয়ায়িদ ওয়া মাম্বাউল ফাওয়ায়িল লিল্ হাইছামী, গাইয়াতুল মাকছাদ ফী যাওয়ায়িদিল মুসনাদ লিল্ হাহছামী, মাহাদ্দুছ ছাওয়াব ফী ফাদ্বায়িলি আমীরিল মু’মিনীন উমর বিন খত্তাব লিল্ মুর্বারাদ)
ব্যাখ্যা: এখানে ইল্ম ও ফিকহী মাসয়ালার ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যক্তিত্ব উনাদের ফায়সালার পাশাপাশি উনাদের আমল বা কর্মের আমভাবে বা ব্যাপকভাবে তাক্বলীদ বা অনুসরণ করা হতো। এ কারণেই অতি সামান্য বিষয়েও উনারা একে অপরকে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বনের তাকীদ দিতেন।
(৮৪১)
عَنْ حضرت مُصْعَبِ بْنِ سَعْدٍ رحمة الله عليه قَالَ: كَانَ اَبِىْ اِذَا صَلّى فِى الْمَسْجِدِ تَجَوَّزَ وَاَتَمَّ الرُّكُوْعَ وَالسُّجُوْدَ وَاِذَا صَلّى فِى الْبَيْتِ اَطَالَ الرُّكُوْعَ وَالسُّجُوْدَ وَالصَّلَاةَ قُلْتُ يَا اَبَتَاهُ اِذَا صَلَّيْتَ فِى الْمَسْجِدِ جَوَّزْتَ وَاِذَا خَلَوْتَ فِى الْبَيْتِ اَطَلْتَ قَالَ: يَا بُنَىَّ اِنَّنَا اَئِمَّةٌ يُقْتَدى بنا.
অর্থ: হযরত মুছয়াব বিন সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমার পিতা হযরত সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি যখন মাসজিদে নামায পড়তেন তখন সংক্ষিপ্ত করতেন, অথচ রুকূ’ ও সিজদাহ পূর্ণ করতেন। আর যখন তিনি বাড়ীতে নামায পড়তেন তখন দীর্ঘ রুকূ’ ও সিজদাহ সহ নামায আদায় করতেন। আমি একদা উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আমার সম্মানিত পিতা! আপনি যখন মাসজিদে নামায আদায় করেন তখন সংক্ষিপ্ত করেন, কিন্তু যখন বাড়ীতে একান্তে নামায আদায় করেন তখন দীর্ঘ করেন, এর কারণ কি? জাওয়াবে তিনি বললেন: হে আমার ছেলে! আমরা ইমাম তথা অনুসরণীয়, তাই আমাদেরকে ইক্তিদা বা অনুসরণ করা হয়। (আল-মু’জামুল কবীর লিত্ ত্ববারানী লেখক: আবুল ক্বাসিম সুলাইমান বিন আহমদ বিন আইয়্যূব বিন মুত্বীর লাখমী শামী ত্ববারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৩৬০ হিজরী)
ব্যাখ্যা: ‘আমরা ইমাম তথা অনুসরণীয়, তাই আমাদেরকে ইক্তিদা বা অনুসরণ করা হয়’ দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, সম্মানিত পিতা ও সম্মানিত পুত্র দুজনেই ইমাম বা অনুসরণীয়। ইহাই ‘আত-তাক্বলীদু গইরুশ শাখছী তথা প্রয়োজনে একাধিক ইমাম-মুজতাহিদ উনাদের অনুসরণ’।
(৮৪২-৮৪৫)
اَنَّ حضرت عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ عليه السلام رَاى عَلى طَلْحَةَ بْنِ عُبَيْدِ اللهِ رضى الله عنه ثَوْبًا مَصْبُوْغًا وَهُوَ مُحْرِمٌ، فَقَالَ عُمَرُ عليه السلام: مَا هذَا الثَّوْبُ الْمَصْبُوْغُ يَا طَلْحَةُ رضى الله عنه ؟ فَقَالَ طَلْحَةُ رضى الله عنه: يَا اَمِيْرَ الْمُؤْمِنِينَ عليه السلام اِنَّمَا هُوَ مَدَرٌ فَقَالَ عُمَرُ عليه السلام: اِنَّكُمْ اَيُّهَا الرَّهْطُ اَئِمَّةٌ يَقْتَدِىْ بِكُمُ النَّاسُ، فَلَوْ اَنَّ رَجُلًا جَاهِلًا رَاى هذَا الثَّوْبَ لَقَالَ اِنَّ طَلْحَةَ بْنَ عُبَيْدِ اللهِ رضى الله عنه كَانَ يَلْبَسُ الثِّيَابَ الْمُصَبَّغَةَ فِى الاِحْرَامِ فَلاَ تَلْبَسُوْا اَيُّهَا الرَّهْطُ شَيْئًا مِنْ هذِهِ الثِّيَابِ الْمُصَبَّغَةِ.
অর্থ: নিশ্চয়ই ফারূক্বে আ’যম হযরত উমর বিন খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি হযরত ত্বলহাহ বিন উবাইদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাকে ইহরাম অবস্থায় রঙ্গিন পোশাক পরিহিত দেখলেন এবং উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, হে হযরত ত্বলহাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু! আপনি যে রঙ্গিন পোশাক পরিধান করেছেন? উত্তরে হযরত ত্বলহাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি বললেন: হে আমীরুল মু’মিনীন আলাইহিস সালাম! এ পোশাকে তো সুগন্ধি নেই। (রঙ্গিন পোশাকে সুগন্ধি না থাকলে তো ইহরাম অবস্থায় তা পরিধান করতে আপত্তি থাকার কথা নয়।) তখন হযরত উমর বিন খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি প্রতিউত্তরে বললেন: নিশ্চয়ই আপনারা হলেন এমন ইমাম তথা অনুসরনীয় সম্প্রদায়, সর্বপ্রকার সাধারণ মানুষেরা আপনাদের অনুসরণ করে থাকে। কোনো মুর্খ লোক আপনাকে এ পোশাক পরিহিত অবস্থায় দেখলে বলবে যে, হযরত ত্বলহাহ বিন উবাইদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি ইহরাম অবস্থায় রঙ্গীন পোশাক পড়তেন। (অজ্ঞতাশত: সুবাসহীন ও সুবাসিত সবধরনের পোশাকই তারা পরিধান করা শুরু করবে) অতএব, ইহরাম অবস্থায় এ ধরনের রঙ্গিন পোশাক আপনারা পরিধান করবেন না। (আল-মুয়াত্তা লিল্ ইমাম মালিক বিরিওয়াইয়াতি ইয়াহ্ইয়া বিন ইয়াহ্ইয়া লাইছী আন্দালুসী রহমতুল্লাহি আলাইহি জন্ম: ১৫২ হিজরী ইন্তিকাল: ২৪৪ হিজরী কিতাবুল হজ্জ বাবু লুবছিছ্ ছিয়াবিল মুছাব্বাগতি ফিল্ ইহরাম লেখক: ইমাম মালিক বিন আনাস আছবাহী রহমতুল্লাহি আলাইহি জন্ম: ৯৩ হিজরী ইন্তিকাল: ১৭৯ হিজরী, আল-মুয়াত্তা লিল্ ইমাম মুহম্মদ কিতাবুল হজ্জ বাবু মা ইউক্রহু লিল্ মুহরিম আইঁইয়ালবিছা মিনাছ্ ছিয়াব লেখক: ইমামুন বিল্ ফিকহি ওয়াল্ ওয়াছূল ওয়া হুয়াল্লাযী নাশারা ইলমা আবী হানীফাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি- ইমাম আবূ আব্দিুল্লাহ মুহম্মদ বিন হাসান বিন ফারক্বাদ শাইবানী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি জন্ম: ১৩১ হিজরী ইন্তিকাল: ১৮৯ হিজরী, আস-সুনানুল কুবরা লিল্ বাইহাক্বী, মা’রিফাতুস সুন্নাহ ওয়াল আছার লিল্ বাইহাক্বী)
ব্যাখ্যা: অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে প্রমাণিত হল যে, হযরত ছহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের যামানায় একাধিক ব্যক্তিত্ব উনাদের তাক্বলীদ বা অনুসরণ করা হতো। আর ইহাই ‘আত-তাক্বলীদু গইরুশ শাখছী তথা প্রয়োজনে একাধিক ইমাম-মুজতাহিদ উনাদের অনুসরণ’, যা প্রয়োজনে কোন কোন সময় জরুরী হয়ে যায়।
অসমাপ্ত
পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন