[সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি। মহান আল্লাহ পাক উনার অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-উনার ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব উনার অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীলভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে- ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহরীমি সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উনার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা) ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যা) এবং ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা) ২৭. ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬১-১৭৫তম সংখ্যা) ২৮. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬৮-২৩৭), ২৯. জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯২-১৯৩তম সংখ্যা) ৩০. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯৫-২১৩তম সংখ্যা), ৩১. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে “কুলাঙ্গার, পাপিষ্ঠ ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে শরীয়তের সঠিক ফায়ছালা ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” (২০৩তম সংখ্যা), ৩২. হানাফী মাযহাব মতে নামাযে সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর ইমাম ও মুক্তাদী উভয়ে ‘আমীন’ অনুচ্চ আওয়াজে বা চুপে চুপে পাঠ করাই শরীয়তের নির্দেশ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১২তম সংখ্যা), ৩৩. পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২২০তম সংখ্যা থেকে যা এখনো চলছে) পেশ করার পাশাপাশি-
৩৪তম ফতওয়া হিসেবে
“পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত ও দিনের আমলসমূহের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত ও দিনের আমলসমূহের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ
সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলাম উনার নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরক ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” উনার মধ্যে এমনসব লেখাই পত্রস্থ হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।
বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো “উলামায়ে সূ”। ইহুদীদের এজেন্ট উলামায়ে ‘সূ’রা হারাম টিভি চ্যানেলে, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদি ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে মুসলমান উনাদের বিশেষ বিশেষ ফযীলতযুক্ত আমলের রাত ও দিনসমূহ পালন করাকে বিদয়াত, নাজায়িয ও শিরক বলে ফতওয়া দিয়ে মুসলমান উনাদেরকে অশেষ খায়ের, বরকত, নিয়ামত, নাজাত অর্থাৎ রেযামন্দি বা সন্তুষ্টি মুবারক থেকে মাহরূম করছে। যেমন তারা বলে থাকে যে, পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা বিদয়াত, শিরক। নাউযুবিল্লাহ! পবিত্র শবে বরাত পালন করা বিদয়াত, নাজায়িয। নাউযুবিল্লাহ! পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ পালন করা বিদয়াত। নাউযুবিল্লাহ! অনুরূপ আরো অনেক বিষয়কেই তারা বিনা দলীলে মনগড়াভাবে নাজায়িয ও বিদয়াত বলে থাকে। নাউযুবিল্লাহ!
অপরদিকে বেদ্বীনী-বদদ্বীনী অর্থাৎ কাফির মুশরিক, ইহুদী, নাছারাদের যত পর্ব বা দিবস রয়েছে সেগুলোকে শুধু জায়িযই নয় বরং নিয়ামত বলে আখ্যা দিয়ে থাকে। নাউযুবিল্লাহ! যেমন বাইতুল মুকাররমের সাবেক খতীব ওবায়দুল হক্ব প্রকৃতপক্ষে উবাই বলেছিল, “পহেলা বৈশাখ আল্লাহ পাক উনার নিয়ামত।” নাঊযুবিল্লাহ!
অথচ তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, চরম বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক। তাদের এসব বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ্ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
কারণ, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যারা এ আক্বীদা পোষণ করবে যে, “পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা বিদয়াত শিরক এবং পহেলা বৈশাখ মহান আল্লাহ পাক উনার নিয়ামত।” নাউযুল্লিাহ! তারা ঈমানহারা হয়ে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। কারণ সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে হালাল বা জায়িয বিষয়কে হারাম বা নাজায়িয বলা এবং হারাম বা নাজায়িযকে হালাল বা জায়িয বলা কুফরী। কেননা কিতাবে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে-
استحلال الـمعصية كفر.
অর্থাৎ “গুনাহের কাজ বা হারামকে হালাল মনে করা কুফরী।” (শরহে আক্বাইদে নাসাফী শরীফ)
অতএব, বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, উলামায়ে “সূ”দের উক্ত বক্তব্য সাধারণ মুসলমান উনাদের আক্বীদা বা ঈমানের জন্য বিশেষভাবে হুমকিস্বরূপ।
অনুরূপ উলামায়ে “সূ”দের এ কুফরীমূলক বক্তব্য মুসলমানদের আমলের ক্ষেত্রেও বিশেষ ক্ষতির কারণ। কেননা যারা তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে “পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা থেকে বিরত থাকবে এবং হারাম পহেলা বৈশাখ পালন করবে” তারা অশেষ খায়ের, বরকত ও নিয়ামত থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কর্তৃক নিষিদ্ধকৃত কাজে তথা হারাম কাজে মশগুল হওয়ার কারণে কঠিন গুনাহগার অর্থাৎ জাহান্নামী হবে। নাউযুবিল্লাহ!
কাজেই, যারা এ ধরনের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী তারা ও হক্ব সমঝদার মুসলমানগণ তারা তাদের ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে অর্থাৎ সকল বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করে মহান আল্লাহ পাক উনার রিযামন্দি হাছিল করতে পারে সে জন্যেই “পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত ও দিনের আমলসমূহের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াটি” প্রকাশ করা হলো।
সম্মানিত ইসলামী মাস, বিশেষ বিশেষ রাত, দিন, মুহুর্ত ও সময় সমূহ সম্পর্কে এবং চন্দ্র ও সূর্যের গতিবিধির ব্যাপারে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার ২৬ খানা পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের তাফসীর বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ
সূর্য ও চন্দ্র এই দু’টি ইসলামী মাস, রাত, দিন, মুহুর্ত ও সময় নিরুপনের ব্যাপারে মানদন্ড হিসেবে বিবেচিত। অর্থাৎ সূর্য ও চন্দ্র উনাদের আবর্তনের কারণে বিশেষ বিশেষ রাত, দিন, মুহুর্ত ও সময়গুলো সুচারুরূপে আগমণ করে থাকে। এজন্য আমরা ইসলামী মাস, রাত, দিন, মুহুর্ত ও সময় ইত্যাদীর আলোচনার পাশাপাশি চন্দ্র ও সূর্যের আবর্তন ও তাদের গতিবিধি সম্পর্কে আলোচনা করবো। যাতে করে বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে যায় এবং বুঝতে সহজ হয়। নি¤েœ এ সম্পর্কিত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের তাফসীর বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হলো:
পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর-৫
فَالِقُ الْاصْبَاحِ وَجَعَلَ اللَّيْلَ سَكَنًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ حُسْبَانًا ذلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ. (سورة الانعام الشريفة ৯৬ الاية الشريفة)
অর্থ: তিনি প্রভাত রশ্মির উন্মেষক। তিনি রাতকে বিশ্রামের জন্য তৈরি করেছেন এবং সূর্য ও চন্দ্রকে হিসেবের জন্য সৃষ্টি করেছেন। এটি মহা পরাক্রান্ত মহাজ্ঞানী উনার নির্ধারণ। (পবিত্র সূরাতুল্ আনয়াম শরীফ ৯৬ নম্বর আয়াত শরীফ)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার বিশুদ্ধ তাফসীর বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ
{فَالِقُ الإصباح} خالق صبح النهار {وَجَعَلَ الليل سَكَناً} مسكناً للخلق {والشمس والقمر} يعنى خلق الشمس والقمر {حُسْبَاناً} منازلهما بالحساب ويقال معلقان بين السماء والارض يدوران بالدوران {ذلك تَقْدِيرُ العزيز} يعنى تدبير العزيز بالنقمة لمن لا يؤمن به {العليم} بتدبيره وبمن امن به وبمن لا يؤمن به. (تنوير المقباس من تفسير ابن عباس رضى الله عنهما المتوفى ۶۸ هجرى سورة الانعام الشريفة ৯৬ الاية الشريفة جمعه: محمد بن يعقوب الفيروز ابادى المتوفى ۸۱۷ هجرى)
অর্থ: (তিনি প্রভাত রশ্মির উন্মেষক) তিনিই প্রভাতকালের ¯্রষ্টা (তিনি রাতকে বিশ্রামের জন্য তৈরি করেছেন) তিনি রাতকে জগতবাসীর উপকারার্থে বিশ্রামের জন্য সৃষ্টি করেছেন। (এবং সূর্য ও চন্দ্রকে) অর্থাৎ সূর্য ও চন্দ্রকে তৈরি করেছেন (হিসাবের জন্য সৃষ্টি করেছেন।) হিসাবের সুবিধার্থে সূর্য ও চন্দ্রের কক্ষপথ তৈরি করেছেন। বলা হয়, সূর্য ও চন্দ্রকে আকাশ ও যমীনের মাঝখানে ঝুলন্ত অবস্থায় ঘুর্ণায়মান রেখেছেন। (এটি মহা পরাক্রান্ত উনার নির্ধারণ) যিনি এত পরাক্রমশালী যে, উনার প্রতি যে পবিত্র ঈমান আনে না তাকে তিনি শাস্তি দিতে সক্ষম (মহাজ্ঞানী উনার নির্ধারণ) কে পবিত্র ঈমান আনেনি আর কে পবিত্র ঈমান এনেছেন তারও তিনি খবর রাখেন। (তানবীরুল মাকবাস মিন তাফসীরি ইবনি আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ওয়াফাত মুবারক: ৬৮ হিজরী পবিত্র সূরাতুল্ আনয়াম শরীফ ৯৬ নম্বর আয়াত শরীফ সংকলক: হযরত মুহাম্মাদ বিন ইয়া’কূব ফিরোযাবাদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৮১৭ হিজরী)
القول فى تأويل قوله :{وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ حُسْبَانًا} قال ابو جعفر رحمة الله عليه: اختلف اهل التأويل فى ذلك:
فقال بعضهم: معنى ذلك وجعل الشمس والقمر يجريان فى افلاكهما بحساب. ذكر من قال ذلك:
حدثنى المثنى رحمة الله عليه قال حدثنا عبد الله بن صالح رحمة الله عليه قال حدثنى معاوية بن صالح رحمة الله عليه عن على بن ابى طلحة رحمة الله عليه عن ابن عباس رضى الله عنهما: “والشمس والقمر حسبانًا” يعنى عدد الايام والشهور والسنين.
عن ابن عباس رضى الله عنهما: “والشمس والقمر حسبانًا” قال: يجريان الى اجلٍ جُعل لهما.
عن السدى رحمة الله عليه: “والشمس والقمر حسبانًا” يقول: بحساب.
عن الربيع رحمة الله عليه فى قوله: “والشمس والقمر حسبانًا” قال: الشمس والقمر فى حساب، فاذا خَلَتْ ايامهما فذاك اخرُ الدهر، واول الفزع الاكبر “ذلك تقدير العزيز العليم”.
عن قتادة رحمة الله عليه فى قوله: “والشمس والقمر حسبانًا” قال: يدوران فى حساب.
عن مجاهد رحمة الله عليه: “والشمس والقمر حسبانًا” قال هو مثل قوله: “كُلٌّ فِى فَلَكٍ يَسْبَحُونَ” [سورة يس: ৪০] ، ومثل قوله: {الشَّمْسُ وَالْقَمَرُ بِحُسْبَانٍ} [سورة الرحمن: ৫].
وقال اخرون: معنى ذلك وجعل الشمس والقمر ضياء. ذكر من قال ذلك: عن قتادة رحمة الله عليه: “والشمس والقمر حسبانًا” اى ضياء.
قال ابو جعفر رحمة الله عليه: واولى القولين فى تأويل ذلك عندى بالصواب، تأويل من تأوَّله: وجعل الشمس والقمرَ يجريان بحساب وعددٍ لبلوغ امرهما ونهاية اجالهما ويدوران لمصالح الخلق التى جُعِلا لها. (جامع البيان فى تأويل القران اى تفسير الطبرى سورة الانعام الشريفة ৯৬ الاية الشريفة المؤلف: محمد بن جرير بن يزيد بن كثير بن غالب الاملى ابو جعفر الطبرى رحمة الله عليه الـمتوفى ৩১০ هجرى)
অর্থ: মহান আল্লাহ তায়ালা উনার ইরশাদ মুবারক: (সূর্য ও চন্দ্রকে হিসেবের জন্য সৃষ্টি করেছেন) উনার আলোচনা: হযরত ইমাম আবূ জা’ফর মুহাম্মাদ বিন জারীর ত্ববারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: অত্র পবিত্র আয়াতাংশ উনার তাফসীর সম্পর্কে হযরত মুফাসসিরীন কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ইখতিলাফ করেছেন।
উনাদের কেউ কেউ বলেন: উনার অর্থ হলো- মহান আল্লাহ সূর্য ও চন্দ্রকে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যে, এগুলো নিজ নিজ কক্ষপথে যথারীতি পরিভ্রমণ করে থাকে। যাঁরা এ মত পোষণ করেন উনাদের দলীল হলো:
হযরত ইমাম আবূ জা’ফর ত্ববারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: আমার কাছে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত মুছান্না রহমাতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন আমাদের কাছে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আব্দুল্লাহি বিন ছালিহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন আমার কাছে আলী বিন আবী ত্বলহাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে হযরত মুয়াবিয়া বিন ছালিহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, তিনি হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা উনার থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বলেন, অত্র والشمس والقمر حسبانًا আয়াতাংশ উনার অর্থ- দিন, মাস ও বছর সমূহের সংখ্যা গণনা।
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা উনার থেকে আরো বর্ণিত আছে। তিনি অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বলেন, অত্র والشمس والقمر حسبانًا পবিত্র আয়াতাংশ উনার অর্থ হলো- এ দুটোর জন্যে যে সময়কাল নির্ধারণ করা হয়েছে, তদনুযায়ী তারা পরিভ্রমণ করতে থাকবে।
হযরত সুদ্দী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত আছে। তিনি অত্র والشمس والقمر حسبانًا পবিত্র আয়াতাংশ উনার ব্যাখ্যায় বলেন, এ পবিত্র আয়াতাংশে উল্লেখিত حسبانًا উনার অর্থ بحساب অর্থাৎ গণনা অনুযায়ী।
হযরত রবী’ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত আছে। তিনি অত্র والشمس والقمر حسبانًا পবিত্র আয়াতাংশ উনার ব্যাখ্যায় বলেন, সূর্য ও চন্দ্র একটি গণনা ও হিসাবের মধ্যে রয়েছে। যখন এ দুটোর নির্ধারিত দিনসমূহ শেষ হয়ে যাবে তখনই হবে যুগের সর্বশেষ পরিসমাপ্তি ও মহাভীতির সর্বপ্রথম পরিসীমা। এ সবই মহাপরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ উনার নিরূপণ।
হযরত ক্বতাদাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত আছে। তিনি অত্র والشمس والقمر حسبانًا পবিত্র আয়াতাংশ উনার ব্যাখ্যায় বলেন, এ দুটো একটি গণনা ও হিসাব অনুযায়ী পরিভ্রমণ করে থাকে।
হযরত মুজাহিদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত আছে। তিনি অত্র والشمس والقمر حسبانًا পবিত্র আয়াতাংশ উনার ব্যাখ্যায় বলেন, অনুরূপ মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি পবিত্র সূরাহ ইয়া-সীন শরীফ উনার ৪০ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন- كُلٌّ فِى فَلَكٍ يَسْبَحُونَ অর্থাৎ ‘প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষপথে পরিভ্রমণ করছে।’ পবিত্র সূরার্তু রহমান শরীফ উনার ৫ নম্বর আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ তায়ালা অনুরূপ ইরশাদ মুবারক করেন- الشَّمْسُ وَالْقَمَرُ بِحُسْبَانٍ ‘সূর্য ও চন্দ্র নির্ধারিত পথে আবর্তন করে।’
উনাদের কেউ কেউ বলেন: উনার অর্থ হলো- মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে আলোক বর্তিকা হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। যাঁরা এ মত পোষণ করেন উনাদের দলীল হলো:
হযরত ক্বতাদাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি অত্র والشمس والقمر حسبانًا পবিত্র আয়াতাংশ উনার ব্যাখ্যায় বলেন, এখানে حسبانًا অর্থ ضياء অর্থাৎ আলো।
হযরত ইমাম আবূ জা’ফর ত্ববারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: অত্র পবিত্র আয়াতাংশ والشمس والقمر حسبانًا উনার তাফসীর প্রসঙ্গে উপস্থাপিত দুটি অভিমতের মধ্যে আমার নিকট শুদ্ধতার দিক দিয়ে ঐ ব্যাখ্যাটি অধিকতর গ্রহণীয়, যেখানে বলা হয়েছে যে, সূর্য ও চন্দ্র উনাদের জন্য নির্ধারিত হিসাব ও সংখ্যা মুতাবিক পরিভ্রমণ করতে থাকবে। পরিশেষে উনারা উনাদের জন্যে নির্ধারিত একটি পরিসমাপ্তিতে পৌঁছবে। আর উনারা মাখলূক্বাতের জন্যে নির্ধারিত সুবিধাকে লক্ষ্য রেখে পরিভ্রমণ করে যাচ্ছে। (জামিউল বয়ান ফী তাফসীরিল কুরআন অর্থাৎ তাফসীরুত্ ত্ববারী পবিত্র সূরাতুল্ আনয়াম শরীফ ৯৬ নম্বর আয়াত শরীফ লেখক: হযরত মুহাম্মাদ বিন জারীর বিন ইয়াযীদ বিন কাছীর বিন গালিব আমালী আবূ জা’ফর ত্ববারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৩১০ হিজরী)
وقوله: {وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ حُسْبَانًا} اى يجريان بحساب مقنن مقدر لايتغير ولايضطرب بل كل منهما له منازل يسلكها في الصيف والشتاء فيترتب على ذلك اختلاف الليل والنهار طولا وقصرا، كما قال تعالى “هُوَ الَّذِى جَعَلَ الشَّمْسَ ضِيَاءً وَالْقَمَرَ نُورًا وَقَدَّرَه مَنَازِلَ لِتَعْلَمُوا عَدَدَ السِّنِينَ وَالْحِسَابَ” الآية [يونس: ۵]، وكما قال: “لا الشَّمْسُ يَنْبَغِىْ لَهَا اَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِىْ فَلَكٍ يَسْبَحُونَ” [يس: ৪০]، وقال “وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُومَ مُسَخَّرَاتٍ بِاَمْرِه” [الاعراف: ۵۴]. (تفسير القران العظيم اى تفسير ابن كسير سورة الانعام الشريفة ۹۶ الاية الشريفة المؤلف: حضرت ابو الفداء اسماعيل بن عمر بن كثير القرشى الدمشقى الشافعى رحمة الله عليه الولادة ۷۰۰ هجرى الوفاة ۷۷۴ هجرى)
অর্থ: মহান আল্লাহ তায়ালা উনার ইরশাদ মুবারক: (সূর্য ও চন্দ্রকে হিসেবের জন্য সৃষ্টি করেছেন) সূর্য ও চন্দ্র নিজ নিজ রীতিনীতি ও নিয়ম শৃঙ্খলার উপর চলতে রয়েছে। উনাদের গতির নিয়মের মধ্যে অণু পরিবর্তন ঘটে না, উনারা এদিক ওদিক চলে যায় না, বরং প্রত্যেটির কক্ষপথ নির্ধারিত রয়েছে। গ্রীষ্মকালে ও শীতকালে উনারা নিজ নিজ কক্ষপথে চলতে আছে। এ শৃঙ্খলিত নিয়মের ফলেই দিন ও রাত কমতে ও বাড়তে রয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি সূরাহ ইঊনুস শরীফ উনার ৫ নম্বর আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, ‘তিনিই মহান আল্লাহ তায়ালা যিনি সূর্যকে দীপ্তিময় বানিয়েছেন এবং চন্দ্রকে কোমল আলো দান করেছেন এবং হ্রাস-বৃদ্ধির মানযিল নির্ধারণ করেছেন, যাতে তোমরা বছর গণনা করতে পারো ও হিসাবে রাখতে পারো।’ মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি সূরাহ ইয়া-সীন শরীফ উনার ৪০ নম্বর আয়াত শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক করেন, ‘সূর্যের ক্ষমতা নেই যে চন্দ্রকে ধরবে, আর না রাত দিনের পূর্বে আসতে পারবে এবং প্রত্যেকেই এক একটি কক্ষপথে ঘুরছে।’ মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি সূরাতুর রহমান শরীফ উনার ৫৪ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, ‘সূর্য, চন্দ্র ও তারকারাজি উনার আদেশ পালনে সদা নিয়োজিত রয়েছে।’ সুবহানাল্লাহ। (তাফসীরুল কুরআনিল্ আযীম অর্থাৎ তাফসীরে ইবনে কাছীর পবিত্র সূরাতুল্ আনয়াম শরীফ ৯৬ নম্বর আয়াত শরীফ লেখক: হযরত আবুল ফিদা ইসমাঈল বিন উমর বিন কাছীর কুরাশী দামেশকী শাফিয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বিলাদত: ৭০০ হিজরী ওয়াফাত: ৭৭৪ হিজরী)
وفى المراد بهذا الحساب ثلاثة اقوال: احدها: انهما يجريان الى اجل جُعل لهما رواه العوفى رحمة الله عليه عن ابن عباس رضى الله عنهما، والثانى: يجريان فى منازلهما بحساب ويرجعان الى زيادة ونقصان قاله السدى رحمة الله عليه، والثالث: ان جريانهما سبب لمعرفة حساب الشهور والاعوام قاله مقاتل رحمة الله عليه. (زاد المسير فى علم التفسير التفسير اى تفسير ابن الجوزى سورة الانعام الشريفة ۹۶ الاية الشريفة المؤلف: حضرت جمال الدين عبد الرحمن بن على بن محمد الجوزى الحنبلى الاشعرى رحمة الله عليه الـمتوفى ۵۹۷ هجرى)
অর্থ: পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখিত حسبانًا উনার তিনখানা ব্যাখ্যা রয়েছে। প্রথম: সূর্য ও চন্দ্র উভয়ের জন্যে যে সময়কাল নির্ধারণ করা হয়েছে, তদনুযায়ী উভয়ে পরিভ্রমণ করছে। ইহা হযরত আওফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা উনার থেকে বর্ণনা করেছেন।
দ্বিতীয়: সূর্য ও চন্দ্র নিজ নিজ কক্ষপথে হিসাব অনুযায়ী চলছে। আর এ কারণে রাত-দিন মাস কমছে ও বাড়ছে। ইহা হযরত সুদ্দী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেছেন।
তৃতীয়: সূর্য ও চন্দ্র উভয়ের গতিপথে পরিভ্রমণের কারণে মাস সমূহ ও বছর সমূহের হিসাব সুচারুরূপে করা যাচ্ছে। ইহা হযরত মুক্বাতিল রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেছেন। (যাদুল মাসীর ফী ইলমিত্ তাফসীর অর্থাৎ তাফসীরে ইবনুল জাওযী পবিত্র সূরাতুল্ আনয়াম শরীফ ৯৬ নম্বর আয়াত শরীফ লেখক: হযরত জামালুদ্দীন আব্দুর রহমান বিন আলী বিন মুহাম্মাদ জাওযী হাম্বালী আশয়ারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৫৯৭ হিজরী)
جعلَ منازلَ الشمسِ والقمرِ بحُسْبَانٍ معلومٍ لا يختلفُ، اذا انتهَى الى اقصى منازلهِ رجعَ، فان الشَّمسَ تدورُ على الفَلَكِ كلِّه فى ثلاثِ مائة وخمسةٍ وستِّين يوماً ورُبع يومٍ، والقمرَ يدورُ على الفَلَكِ كلِّه فى ثَمانٍ وعشرين ليلةً ويكون مستُورا فى ليلتين ثم يعودُ الى ما كان، فيعرفُ الناسُ بذلكَ اجالَ عقودِهم واوقاتَ معاملاتِهم وعبادتِهم وسنينَ أعمارهم. (تفسير القران العظيم للطبرانى سورة الانعام الشريفة ۹۶ الاية الشريفة المؤلف: حضرت ابو القاسم سليمان بن احمد بن ايوب بن مطير اللخمى الشامى الطبرانى رحمة الله عليه الوفاة ۳۶۰ هجرى)
অর্থ: মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি সূর্য ও চন্দ্র উভয়ের কক্ষপথ তৈরি করেছেন সুনির্দিষ্ট হিসাবের জন্য। যার কোন অন্যথা হয় না। যখন উনারা কক্ষপথে পরিভ্রমণের শেষ সীমায় পোঁছে তখন আবারো প্রথম থেকে শুরু করে। নিশ্চয়ই সূর্য উনার কক্ষপথে একবার ঘুরে আসতে সময় লাগে ৩৬৫ দিন ৬ ঘন্টা। আর চন্দ্র উনার কক্ষপথে ঘুরে আসতে সময় লাগে ২৮ রাত, আর দু’ রাত আবৃত থাকে। (অর্থাৎ অতিরিক্ত, কখনো এক রাত পরে চাঁদ প্রকাশ পায় কখনো দুই রাত পরে চাঁদ প্রকাশ পায় অর্থাৎ চাঁদের মাস ২৯ বা ৩০ দিনের হয়) অতপর আবারো পূর্বের দিকে ফিরে আসে। এ ভাবে মানুষ তাদের চুক্তিবদ্ধতার সময়, মুয়ামালাত-মুয়াশারাত সময়, ইবাদত সমূহের সময় এবং স্বীয় জীবনের বছরগুলো সময় হিসাব রাখতে পারে। (তাফসীরুল্ কুরআনির আযীম লিত্ ত্ববারানী পবিত্র সূরাতুল্ আনয়াম শরীফ ৯৬ নম্বর আয়াত শরীফ লেখক: হযরত আবুল্ কাসিম সুলাইমান বিন আহমাদ বিন আইয়ূব বিন মুতীর লাখমী শামী ত্ববারানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৩৬০ হিজরী)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ ও উনার তাফসীর থেকে প্রমাণীত হলো যে, মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষের হিসাবের সুবিধার্থে সূর্য ও চন্দ্রকে তৈরি করেছেন। উনারা উনাদের নিজ নিজ কক্ষপথে পরিভ্রমণ করে থাকেন। সূর্য উনার কক্ষপথে ঘুরে আসতে সময় লাগে ৩৬৫ দিন ৬ ঘন্টা। আর চন্দ্র উনার নিজ কক্ষপথে ঘুরে আসতে সময় লাগে ২৮ দিন, কিন্তু মাস হয় ২৯ অথবা ৩০ দিনে। এভাবে সময় আবর্তনের মাধ্যমে ইবাদত সমূহ পালন করতে সুবিধা হয়।
পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর-৬
انَّ رَبَّكُمُ الله الَّذِىْ خَلَقَ السَّموتِ وَالْاَرْضَ فِىْ سِتَّةِ اَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوى عَلَى الْعَرْشِ يُغْشِى اللَّيْلَ النَّهَارَ يَطْلُبُه حَثِيثًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُومَ مُسَخَّرَاتٍ بِاَمْرِه اَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْاَمْرُ تَبَارَكَ الله رَبُّ الْعَالَمِيْنَ. (سورة الاعراف الشريفة ۵۴ الاية الشريفة)
অর্থ: নিশ্চয়ই তোমাদের রব হচ্ছেন মহান আল্লাহ তায়ালা। তিনি আসমানসমূহ ও যমীনসমূহকে ছয় দিনে অর্থাৎ ছয় ধাপে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর সম্মানিত আরশ উনার প্রতি ইস্তাওয়া হয়েছেন। তিনি দিন দ্বারা রাতকে আচ্ছাদিত করেন এমতাবস্থায় যে, দিন দৌড়ে দৌড়ে রাতের পিছনে আসে। তিনি স্বীয় আদেশের অনুগামী সূর্য, চন্দ্র ও তারকারাজীকে সৃষ্টি করেছেন। জেনে রাখুন উনারই কাজ সৃষ্টি করা ও আদেশ দান করা। মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি বরকতময় বিশ্বজগতের প্রতিপালক। (পবিত্র সূরাতুল্ আ’রাফ শরীফ ৫৪ নম্বর আয়াত শরীফ)
অত্র পবিত্র আয়াত উনার বিশুদ্ধ তাফসীর
বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ
{اِنَّ رَبَّكُمُ الله الذى خَلَقَ السموت والارض فِى سِتَّةِ ايَّامٍ} من ايام الدنيا طول كل يوم الف سنة {ثُمَّ استوى عَلَى العرش} عمد الى خلق العرش ويقال استقر {يُغْشِى الليل النهار} يغطى الليل بالنهار والنهار بالليل {يَطْلُبُه} يعنى الليل النهار والنهار الليل {حَثِيثاً} سريعا يجيء ويذهب {والشمس} وخلق الشمس {والقمر والنجوم مُسَخَّرَاتٍ} مذللات {بِاَمْرِه} باذنه {اَلاَ لَهُ الخلق} خلق السموت والارض {والامر} يعنى القضاء بين العباد يوم القيامة {تَبَارَكَ الله} ذو بركة ويقال تعالى الله ويقال تبرا {رَبُّ العالمين} سيد العالمين ومدبرهم. (تنوير المقباس من تفسير ابن عباس رضى الله عنهما المتوفى ۶۸ هجرى سورة الاعراف الشريفة ۵۴الاية الشريفة جمعه: حضرت محمد بن يعقوب الفيروزابادى رحمة الله عليه المتوفى ۸۱۷ هجرى)
অর্থ: (নিশ্চয়ই তোমাদের রব হচ্ছেন মহান আল্লাহ তায়ালা। তিনি আসমানসমূহ ও যমীনসমূহকে ছয় দিনে অর্থাৎ ছয় ধাপে সৃষ্টি করেছেন) দুনিয়া ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন, প্রত্যেকটি দিন এক হাজার বছরের সমান (অতঃপর সম্মানিত আরশ উনার প্রতি ইস্তাওয়া হয়েছেন) আরশ তৈরিতে মনোনিবেশ করেন (তিনি দিন দ্বারা রাতকে আচ্ছাদিত করেন) দিন দ্বারা রাতকে আচ্ছাদিত করেন এবং রাত দ্বারা দিনকে আচ্ছাদিত করেন (এমতাবস্থায় যে, দিন রাতের পিছনে আসে) দিন রাতকে ত্বলব করে এবং রাত দিনকে ত্বলব করে (দৌড়ে দৌড়ে) দ্রুত গতিতে অনুসরণ করে। (সূর্য,) তিনি সৃষ্টি করেছেন সূর্যকে (চন্দ্র ও তারকারাজী আদেশের অনুগামী উনার নির্দেশের) উনারই আদেশ মুবারকে। (জেনে রাখুন! উনারই কাজ সৃষ্টি করা) তিনিই আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন (ও আদেশ দান করা) ক্বিয়ামতের দিন বান্দাদের তিনিই বিচার করবেন
(মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি বরকতময়) তিনিই বরকতময় (বিশ্বজগতের প্রতিপালক।) তিনিই জগত সমূহের মনিব ও নিয়ন্ত্রক। (তানবীরুল মাক্ববাস মিন তাফসীরি ইবনি আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা ওয়াফাত মুবারক: ৬৮ হিজরী পবিত্র সূরাতুল্ আ’রাফ শরীফ ৫৪ নম্বর আয়াত শরীফ সংকলক: হযরত মুহাম্মাদ বিন ইয়া’কূব ফীরোযাবাদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৮১৭ হিজরী)
قوله تعالى: {ان ربكم الله الذى خلق السموت والارض فى ستة ايام} اختلفوا اى يوم بدا بالخلق على ثلاثة اقوال:
احدها: انه يوم السبت روى مسلم رحمة الله عليه فى صحيحه من حديث ابى هريرة رضى الله عنه قال: اخذ رسول الله صلى الله عليه وسلم بيدى فقال خلق الله عز وجل التربة يوم السبت، وخلق الجبال فيها يوم الاحد، وخلق الشجر يوم الاثنين، وخلق المكروه يوم الثلاثاء، وخلق النور يوم الاربعاء، وبث فيها الدواب يوم الخميس، وخلق ادم بعد العصر من يوم الجمعة فى اخر الخلق، فى اخر ساعة من ساعات الجمعة فيما بين العصر الى الليل، وهذا اختيار محمد بن اسحاق رحمة الله عليه، قال ابن الانبارى رحمة الله عليه: وهذا اجماع اهل العلم.
والثانى: يوم الاحد قاله عبد الله بن سلام رضى الله عنه وكعب رضى الله عنه والضحاك رحمة الله عليه ومجاهد رحمة الله عليه واختاره ابن جرير الطبرى رحمة الله عليه وبه يقول اهل التوراة.
والثالث: يوم الاثنين قاله ابن اسحاق رحمة الله عليه وبهذا يقول اهل الانجيل. (زاد المسير فى علم التفسير اى تفسير الجوزى سورة الاعراف الشريفة ۵۴ الاية الشريفة المؤلف: حضرت جمال الدين عبد الرحمن بن على بن محمد الجوزى الحنبلى الاشعرى رحمة الله عليه الـمتوفى ۵۹۷ هجر)
অর্থ: (নিশ্চয়ই তোমাদের রব হচ্ছেন মহান আল্লাহ তায়ালা। তিনি আসমানসমূহ ও যমীনসমূহকে ছয় দিনে অর্থাৎ ছয় ধাপে সৃষ্টি করেছেন) কোন দিন সৃষ্টি শুরু হয়েছে এ ব্যাপারে মুফাসসিরীন কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের তিনটি ইখতিলাফী মতামত রয়েছে:
প্রথম: ইয়াওমুস সাব্ত (সাবত্বার বা শনিবার) থেকে শুরু হয়েছে। প্রমাণ স্বরূপ হযরত ইমাম মুসলিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘ছহীহ মুসলিম শরীফ’ উনার মধ্যে একখানা বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। হযরত আবূ হুরাইরাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি বলেন: একদা নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার হাত ধরে ইরশাদ মুবারক করলেন: মহান আল্লাহ তায়ালা আয্যা ওয়া জাল্লা তিনি ইয়াওমুস্ সাব্ত (তথা সাব্তবার বা শনিবার) দিন যমীন তৈরি করেছেন, ইয়ামুল্ আহাদ (তথা আহাদবার বা রবিবার) দিন পাহাড় তৈরি করেছেন, পবিত্র ইয়ামুল্ ইছনাইনিল আযীম শরীফ (তথা ইছনাইনিল আযীমবার বা সোমবার) দিনে গাছ-পালা বন-বনানী তৈরি করেছেন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (তথা ইয়াওমুছ ছুলাছা বা মঙ্গলবার) দিনে অপছন্দনীয় বিষয়গুলো তৈরি করেছেন, ইয়াওমুল আরবিয়া (তথা আরবিয়াবার বা বুধবার) দিনে নূর মুবারক তৈরি করেছেন, ইয়াওমুল খমীছ (তথা খমীছবার বা বৃহস্পতিবার) দিনে দাওয়াব্ব তথা সকল বিচরণশীল প্রাণী তৈরি করেছেন এবং ইয়ামুল জুমুয়াহ (তথা জুমুয়াবার বা শুক্রবার) শেষ সৃষ্টি হিসেবে আছর ওয়াক্তের পর হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে তৈরি করেছেন। হযরত মুহাম্মাদ বিন ইসহাক্ব রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ মতটিকেই পছন্দ করেছেন। হযরত ইবনুল আম্বারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: এ মতের উপরেই সমস্ত উলামা কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
দ্বিতীয়: রবিবার থেকে শুরু হয়েছে। যেমনটি বলেছেন হযরত আব্দুল্লাহ বিন সালাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত দ্বহহাক রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত মুজাহিদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি। এ মতটি হযরত ইমাম ত্ববারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি পছন্দ করেছেন। এমনটি আহলুত্ তাওরাত উনারাও বলেছেন।
তৃতীয়: পবিত্র ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ বা সোমবার শুরু হয়েছে। যা হযরত ইবনু ইসহাক্ব রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন। ইহাই আহলুল ইনজীল উনারা বলেছেন। (যাদুর মাসীর ফী ইলমিত তাফসীর অর্থাৎ তাফসীরুল্ জাওযী পবিত্র সূরাতুল্ আ’রাফ শরীফ ৫৪ নম্বর আয়াত শরীফ লেখক: হযরত জামালুদ্দীন আব্দুর রহমান বিন আলী বিন মুহাম্মাদ জাওযী হাম্বালী আশয়ারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৫৯৭ হিজরী)
يخبر تعالى بانه خلق هذا العالم: سماواته وارضه وما بين ذلك فى ستة ايام، كما اخبر بذلك فى غير ما اية من القران، والستة الايام هى: الاحد والاثنين والثلاثاء والاربعاء والخميس والجمعة، وفيه اجتمع الخلق كله وفيه خلق ادم عليه السلام. … فاما يوم السبت فلم يقع فيه خلق لانه اليوم السابع ومنه سمى السبت وهو القطع. (تفسير القران العظيم اى تفسير ابن كثير سورة الاعراف الشريفة ۵۴ الاية الشريفة المؤلف: ابو الفداء اسماعيل بن عمر بن كثير القرشى الدمشقى الشافعى رحمة الله عليه الولادة ۷۰۰ هجرى الوفاة ۷۷۴ هجرى)
অর্থ: মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি জানাচ্ছেন, তিনি সৃৃষ্টি জগতের মহান ¯্রষ্টা। সাত আকাশ ও পৃথিবী এবং উনার মধ্যবর্তী সকল কিছু তিনি ছয় দিনে তৈরি করেছেন। সে ছয় দিন হলো- ইয়াওমুল আহাদ (আহাদবার বা রবিবার), ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (ইছনাইনিল আযীমবার বা সোমবার), ইয়াওমুছ ছুলাছা (ছুলাছাবার বা মঙ্গলবার), ইয়াওমুল খমীছ (খমীছবার বা বৃহস্পতিবার) ও ইয়াওমুল জুমুয়া (জুমুয়াবার বা শুক্রবার)। এই ছয়দিনে সকল সৃষ্টির সন্নিবেশ ঘটানো হয়েছে। হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকেও তখন তথা জুমুয়াবার সৃষ্টি করা হয়েছে।… ইয়াওমুস সাব্ত (সাব্তবার বা শনিবার) কোন সৃষ্টি কর্ম করা হয়নি। কারণ, তা সপ্তাহের সপ্তম দিন ও বিশ্রামের দিন। (তাফসীরুল্ কুরআনিল আযীম অর্থাৎ তাফসীরে ইবনে কাছীর পবিত্র সূরাতুল্ আ’রাফ শরীফ ৫৪ নম্বর আয়াত শরীফ লেখক: হযরত আবুল ফিদা ইসমাঈল বিন উমর বিন কাছীর কুরাশী দামেশকী শাফিয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বিলাদত: ৭০০ হিজরী ওয়াফাত: ৭৭৪ হিজরী)
انَّ رَبَّكُمُ اللهُ الَّذِى خَلَقَ السَّموتِ وَالْارْضَ فِى سِتَّةِ اَيَّامٍ اى مقدار ستة ايام من ايام الدنيا وقيل ستة ايام كايام الاخرة كل يوم الف سنة، قال سعيد بن جبير رحمة الله عليه كان اللّه عز وجل قادرا على خلق السموت والارض فى لمحة ولحظة فخلقهن فى ستة ايام تعليما لخلقه التثبت والتأنى فى الامور وقد جاء فى الحديث التأنى من الرحمن والعجلة من الشيطان رواه البيهقى رحمة الله عليه فى شعب الايمان مرفوعا عن انس رضى الله عنه. (التفسير الـمظهرى سورة الاعراف الشريفة ৫৪ الاية الشريفة المؤلف: حضرت العلامة مولوى محمد ثناء الله الهندى البانى بنى النقشبندى الحنفى الماتريدى رحمة الله عليه الـمتوفى سنة ১২১৬ هجرى)
অর্থ:“নিশ্চয়ই তোমাদের রব হচ্ছেন মহান আল্লাহ তায়ালা। তিনি আসমানসমূহ ও যমীনসমূহকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন” অর্থাৎ দুনিয়ার দিনের হিসেবে ছয়দিন পরিমাণ সময়ে তা সৃষ্টি করেছেন। অপর পক্ষ বলেন, আখিরাতের দিনের হিসেবে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। সেখানকার একদিন এখানকার এক হাজার বছর সমতুল্য। তাবিয়ী হযরত সাঈদ বিন যুবাইর রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, মহান আল্লাহ তায়ালা এক মুহূর্তে এক পলকে আকাশরাজি ও পৃথিবী সৃষ্টিতে সক্ষম। কিন্তু জগতবাসীকে স্থিরতা ও ধীর নীতি শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশে ছয়দিনে এগুলো সৃষ্টি করলেন। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে, নূরুম্ মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: ‘ধীর স্থিরতা আসে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার পক্ষ থেকে আর চঞ্চলতা ও অস্থিরতা আসে শয়তানের পক্ষ থেকে।’ হযরত ইমাম বাইহাক্বী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে অত্র হাদীছ শরীফ খানা মারফূ’ সূত্রে স্বীয় ‘শুয়াবুল ঈমান’ কিতাবে বর্ণনা করেছেন। (আত্ তাফসীরুল মাযহারী পবিত্র সূরাতুল্ আ’রাফ শরীফ ৫৪ নম্বর আয়াত শরীফ লেখক: হযরত আল্লামা মাওলুবী মুহাম্মাদ ছানাউল্লাহ হিন্দী পানীপথী নক্বশাবন্দী হানাফী মাতুরীদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ১২১৬ হিজরী)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ ও উনার তাফসীর থেকে প্রমাণীত হলো যে, মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি সাত আসমান ও সাত যমীন ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। যার প্রথম দিনটি ছিলো ইয়াওমুস্ সাব্ত বা শনিবার। আখিরাতের হিসেব অনুযায়ী প্রতিটি দিন ছিলো এক হাজার বছরের সমান। এখানে কাজ করার তারতীব শিক্ষা দেয়া হয়েছে। নতুবা মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি তো এক মুহুর্তেই সবকিছু তৈরি করতে পারতেন। এখানে ক্রমধারা অনুযায়ী সপ্তাহের সাত দিনের নাম উল্লেখ করা হলো: পবিত্র ইয়াওমুল ইছনাইনিল্ আযীম শরীফ (তথা ইয়াওমুল আযীমবার বা সোমবার), ইয়াওমুছ ছুলাছা (তথা ছুলাছাবার বা মঙ্গলবার), ইয়ামুল্ আরবিয়া (তথা আরবিয়াবার বা বুধবার), ইয়াওমুল্ খমীছ (তথা খমীছবার বা বৃহস্পতিবার), ইয়াওমুল্ জুমুয়াহ (তথা জুমুয়াবার বা শুক্রবার), ইয়াওমুস্ সাব্ত (তথা সাব্তবার বা শনিবার) ও ইয়াওমুল আহাদ (তথা আহাদবার বা রবিবার)।
অসমাপ্ত