রমাদ্বান শরীফ মাস খালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার মাস, মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল হওয়ার মাস, ফরয রোযা ও ইফতারির মাস, তারাবীহ নামায আদায়ের মাস, ই’তিকাফ করার মাস, লাইলাতুল ক্বদর বা শবে ক্বদর উনার মাস, পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত ও খতম করার বিশেষ মাস, রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভের খাছ মাস, তাক্বওয়া অর্জনের মাস, ধৈর্য ও সহানুভূতির খাছ মাস, মু’মিন-মুসলমান উনাদের রিযিক বৃদ্ধির মাস, নেক আমল বৃদ্ধি হওয়ার মাস। এ মাসে একটি নফল আদায় অন্য মাসে একটি ফরয আদায়ের সমান এবং এ মাসে একটি ফরয পালন অন্য মাসে সত্তরটি ফরয পালনের সমান। এ মাসটি এত ফযীলতপূর্ণ যে, এ মাসে রোযা পালনকারীগণ উনাদের নিদ্রাযাপন ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত, উনাদের চুপ করে থাকাটা তাসবীহ পাঠের সামিল, উনাদের আমলগুলি বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয় এবং উনাদের প্রত্যেকটি দুআ কবুল করা হয়ে থাকে।
কাজেই, প্রত্যেক ঈমানদার মুসলমান পুরুষ-মহিলা, জিন-ইনসান উনাদের উচিত অতিশয় ফযীলত, রহমত, মাগফিরাত, নাজাত ও বরকতে পরিপূর্ণ মাহে রমাদ্বান শরীফ উনার যথাযথ সম্মান ও হক্ব আদায় করা অর্থাৎ রোযা রাখা, পাঁচ ওয়াক্ত নামায যথারীতি আদায় করা, অধীনস্তদের কার্যভার লাঘব করে দেয়া, ইফতার করা ও করানো, আহার করানো, তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ নামায পড়া, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা,সাহরী খাওয়া, শেষ দশ দিনে বিজোড় রাতসমূহে সজাগ থেকে ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে শবে ক্বদর তালাশ করা, ই’তিকাফ করা এবং যাকাত ও ছদাকাতুল ফিতর আদায় করা। পাশাপাশি মিথ্যা, গীবত, চোগলখুরী, ঝগড়া-বিবাদ, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, মারামারি, খুন-খারাবি, গালিগালাজ, অশ্লীল-অশালীন, বেপর্দা-বেহায়াপনা, ছবি, টিভি, সিনেমা, গানবাজনা, খেলাধুলা ইত্যাদি শরীয়তবিরোধী কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
উল্লেখ্য, মাহে রমাদ্বান শরীফ উনার স্মরণীয় বিশেষ দিনসমূহ হচ্ছে- ১, ৩, ৯ এবং ১৭ তারিখ।
১ তারিখ হচ্ছে- গওছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, আওলাদে রসূল হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিলাদত শরীফ উনার দিন।
৩ তারিখ হচ্ছে- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার লখতে জিগার, হযরত আহলু বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিতা সদস্য, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, বিদ্বআতুম মিন রসূলিল্লাহ, শাবীহাতু রসূলিল্লাহ, উম্মু আবীহা হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম উনার বিছাল শরীফ উনার দিন।
৯ তারিখ হচ্ছে- যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার লক্ষ্যস্থল আওলাদে রসূল, যামানার মুজতাহিদ ও ইমাম, মুজাদ্দিদে আ’যম ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার লখতে জিগার, একমাত্র ছাহিবযাদাহ, খলীফাতুল উমাম, সাইয়্যিদুনা হযরত শাহযাদাহ হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত বিলাদত শরীফ উনার দিন।
১৭ তারিখ হচ্ছে- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক উনার প্রথম আহলিয়া, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, আহলু বাইতিন নাবিয়্যি, উম্মুল মু’মিনীন হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার বিছাল শরীফ উনার দিন।
উক্ত তারিখে আরো বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন যাওজাতুন নাবিয়্যি, যাওজাতুম মুতাহ্হারাহ, আহলু বাইতিন নাবিয়্যি, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, আফক্বাহুন নিসা, আফছাহুল লিসান, আ’লামুন নিসা, উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম।
উক্ত তারিখে আরো বিছাল শরীফ তথা শাহাদাত মুবারক গ্রহন করেন হযরত আহলু বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের সদস্য এবং ইমামতি ধারার প্রথম ইমাম, হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের চতুর্থ খলীফা, আশারায়ে মুবাশ্শারাহ ছাহাবায়ে কিরাম উনাদের বিশেষ ব্যক্তিত্ব, বাবুল ইলম ওয়াল হিকমাহ, আসাদুল্লাহিল গালিব, সাইয়্যিদুনা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম।
এছাড়া উক্ত তারিখে ঐতিহাসিক বদর জিহাদ সংঘটিত হয়। মুসলমান ও কাফিরদের মাঝে এটিই হচ্ছে সম্মিলিতভাবে প্রথম জিহাদ। এ জিহাদে মুসলমান তথা ছাহাবাগণ ছিলেন মাত্র ৩১৩ থেকে ৩১৫ জন। আর কাফিরদের সংখ্যা ছিল এক হাজারেরও বেশি। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার চিরশত্রু আবু জাহিলসহ কাফিরদের ১১জন বড় বড় নেতা এ জিহাদে নিহত হয়ে চির জাহান্নামী হয়। আর মাত্র ১৪ জন মুজাহিদ ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা শাহাদাতবরণ করেন।
স্মরণীয় যে, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার স্মরণীয় দিনসমূহ মুসলমান উনাদের জন্য আলোচিত দিন, রহমত, বরকত, নিসবত হাছিল করার দিন। সঙ্গতকারণে উপরোক্ত স্মরণীয় দিনসমূহ উপলক্ষে উনাদের সম্পর্কে ব্যক্তিগতভাবে তো অবশ্যই সমষ্টিগতভাবে আলোচনা করা উচিত। উনাদের আলোচনা মুসলমানদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। বিশেষ করে মুসলমান দেশসমূহে সরকারিভাবে ছুটি ঘোষণা করে ব্যাপক কর্মসূচির মাধ্যমে অত্যন্ত জওক-শওকের সাথে উক্ত দিনগুলি উদযাপন করা উচিত। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তাওফীক দান করুন। আমীন।
মাহে রজব ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে শা’বান ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
সম্মানিত রজবুল হারাম শরীফ, সম্মানিত শা’বান শরীফ ও সম্মানিত রমাদ্বান শরীফ মাস এবং প্রাসঙ্গিক আলোচনা