‘শা’বান’ আরবী মাসসমূহের মধ্যে অষ্টম মাস। এ মাসটিও ফযীলতপূর্ণ হওয়ার পিছনে অনেক কারণ রয়েছে। তন্মধ্যে দুটি বিশেষ এবং উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে, এ মাসের পাঁচ তারিখ হিজরী ৪র্থ সনে বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন যিনি ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদুশ শুহাদা, শহীদে কারবালা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি এবং ইমামুর রাবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! আবার এ মাসেরই পনের তারিখ হিজরী তৃতীয় সনে বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন যিনি ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদুশ শুহাদা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
এ মাস অতিশয় কল্যাণ ও নেকীর মাস। হযরত আবূ উমামা বাহিলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, যখন শা’বান মাস উপস্থিত হতো তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করতেন, “এ মাসে তোমরা তোমাদের অন্তরকে পাক-পবিত্র করে নাও এবং নিয়তকে বিশুদ্ধ করে নাও।” সুবহানাল্লাহ! (তবারানী শরীফ)
হযরত উসামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আরজ করলাম: ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! শা’বান মাসে আপনাকে যত বেশি রোযা রাখতে দেখি অন্য কোনো মাসে তদ্রƒপ দেখি না, এর কি কারণ? তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, “এ মাসটি রজবুল হারাম ও রমাদ্বান শরীফ মাসের মধ্যবর্তী অতীব ফযীলতপূর্ণ মাস; অথচ লোকেরা এ মাসটির ব্যাপারে উদাসীন। এ মাসে মানুষের আমলসমূহ মহান রব্বুল আলামীন উনার দরবারে পেশ করা হয়। আমার আমলসমূহ পেশ করা কালে আমি রোযাদার অবস্থায় থাকা পছন্দ করি।” সুবহানাল্লাহ! (নাসায়ী শরীফ)
বস্তুত শা’বান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতটিই হচ্ছে সেই বরকতপূর্ণ রাত যেই রাতটিতে কেবল আমলনামা মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে পেশ করা হয় না বরং বান্দার রুযী-রোযগার, হায়াত-মউত ইত্যাদি বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ফায়ছালা করা হয়। সুবহানাল্লাহ!
যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র সূরা দুখান শরীফ উনার ৪নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
فيها يفرق كل امر حكيم
“এটি এমন এক রাত, যে রাতে সমস্ত প্রজ্ঞাসম্পন্ন বিষয়ের ফায়ছালা করা হয়।”
হযরত ইমাম সুবুকী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার তাফসীরগ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, শা’বানের মধ্যরাত অর্থাৎ শবে বরাতে ইবাদত করার ওসীলায় বিগত বছরের গুনাহ মাফ হয়। আর জুমুয়ার রাতে ইবাদতের ওসীলায় বিগত সপ্তাহের গুনাহ মাফ হয়। আর শবে ক্বদরে ইবাদতের ওসীলায় বিগত জীবনের গুনাহ মাফ হয়। এ কারণে শবে বরাতকে গুনাহ মাফীর রাতও বলা হয়। সুবহানাল্লাহ!
শবে বরাতকে শাফায়াতের রাতও বলা হয়। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মতের জন্য ১৩ই শা’বানের রাতে সুপারিশ করেছিলেন, তাতে কবুল হয়েছিল এক তৃতীয়াংশ। অতঃপর ১৪ই শা’বানের রাতে পুনরায় সুপারিশ করেছিলেন, তাতে কবুল হয়েছিল আরেক তৃতীয়াংশ। অতঃপর ১৫ই শা’বানের রাতের সুপারিশে অবশিষ্ট তৃতীয়াংশ কবুল হয়ে তা পূর্ণতা লাভ করে। সুবহানাল্লাহ! (মুকাশাফাতুল কুলূব)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “যখন শা’বান মাসের ১৫ই তারিখ উপস্থিত হয় তখন ওই রাতে তোমরা সজাগ থেকে ইবাদত-বন্দেগী করো এবং দিনে রোযা রাখো। কারণ ওই দিন মহান আল্লাহ পাক তিনি সূর্যাস্তের পর থেকে পৃথিবীর আসমানে অবতরণ করেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করে ঘোষণা করতে থাকেন, কেউ ক্ষমাপ্রার্থী আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। কেউ রিযিক প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে রিযিক প্রদান করবো। কেউ বিপদগ্রস্ত আছ কি? আমি তার বিপদ দূর করে দিব। কেউ তওবাকারী রয়েছ? তার তওবা কবুল করবো। কোনো প্রার্থনাকারী আছ? যার প্রার্থিত বিষয় দিয়ে দিব। এভাবে ফজরের পূর্ব পর্যন্ত প্রত্যেক হাজতমান্দকে সম্বোধন করে মহান আল্লাহ পাক তিনি ঘোষণা দিতে থাকেন।” সুবহানাল্লাহ!
কাজেই, প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ মহিলা, জিন-ইনসানের কর্তব্য হলো, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদকৃত “লাইলাতুম মুবারাকাহ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদকৃত লাইলাতুন নিছফি মিং শা’বান তথা পবিত্র শবে বরাত রাতটিতে সজাগ থেকে ইবাদত-বন্দেগী করা, জীবনের গুনাহখতার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা, ইসতিগ্ফার তওবা করা এবং যার যা নেক দোয়া ও নেক মকছূদ রয়েছে তা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ওসীলায় খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা উনার নিকট পরিপূর্ণ ইয়াক্বীনের সাথে আরজু করা বা দুআ- মুনাজাত করা।
স্মরণীয় যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মনোনীত ওলী উনার ওসীলায় বান্দা বান্দীকে ক্ষমা ও কবুল করে থাকেন। তাই শবে বরাতে পরিপূর্ণ বারাকাত, ফুয়ূযাত, নিয়ামত, রহমত, মাগফিরাত, নাজাত, সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করার জন্য যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার লক্ষ্যস্থল আওলাদে রসূল, যামানার মহানতম মুজাদ্দিদ ও ইমাম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার মকবুল মুনাজাতে শামিল হওয়া উচিত। আমীন।
মাহে যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা