ফিকহুস সুনানে ওয়াল আছার

সংখ্যা: ০১ম সংখ্যা | বিভাগ:

ফিকহুস সুনানে ওয়াল আছার

মূল : ওস্তাজুল মোহাদ্দেসীন মূফতী সাইয়্যেদ আমিমুল ইহ্সান রহমতুল্লাহি আলাইহি তরজমা ও ব্যাখ্যা : মুহম্মদ সিরাজুল ইসলাম আল বাযযাযী

 


 

কিতাবুত্ত্বাহারাত

عن ابى مالك الاشعرى رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الطهر شطر الا يمان (اخرجه مسلم) عن ابن عمر رضى الله تعالى عنه مرفوعا لاتقبل صلاة بغير طهور (اخرجه مسلم) عن ابى هرية عن محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لا تقبل صلاة احدكم اذ ا احدث حتى يتوضا بخارى

তরজমা : হযরত আবু মালেক আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল মুরসীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, “ত্বাহারাত (পবিত্রতা) হলো ঈমানের অর্ধেক।” (মুসলিম শরীফ) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত- পবিত্রতা ব্যতীত নামাজ কবুল হয় না। (মুসলিম শরীফ) হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমাদের কেহ নাপাকী অবস্থায় নামায পড়লে কবুল হবে না, যতক্ষন না পবিত্র হও।” (বুখারী শরীফ)

তাশরীহ (ব্যাখ্যা) : উক্ত হাদীছত্রয় সহীহ মুসলিম শরীফ ছাড়াও অন্যান্য সহীহ হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে কিতাবে উল্লেখ আছে। মুছান্নিফ রঈসুল মুহাদ্দেসীন, ইমামুল ফুক্বাহা মুফতি সাইয়্যিদ আমীমুল ইহসান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রথম ও দ্বিতীয় হাদীছ শরীফ উনাদেরকে বিষয়ের উপর ভিত্তি করে সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করেছেন। ইহা মূল হাদীসের অংশ বিশেষ। অবশিষ্টাংশ এ অধ্যায়ের বিষয় নয়, তাই উল্লেখ হতে বিরত থাকেন। ত্বাহারাত (طهاراة) -এর বিপ্রতীপ শব্দ হলো নাজাসাত (نجاسة) -এর অর্থ হলো অপবিত্র, আবর্জনা, ময়লাযুক্ত, মলিন্য, কলুষিত ইত্যাদি। এখানে ত্বাহারাত (পবিত্রতা) বলতে জাহেরী, বাতেনী উভয় প্রকার পবিত্রতাকেই বুঝানো হয়েছে। কোন মুসলমানের জন্য প্রথম অপরিহার্য্য কর্তব্য কাজ হলো আকিদা শুদ্ধ করে পরিপূর্ণভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুমের আনুগত্য প্রকাশ করা, আর এজন্য প্রয়োজন হলো সমস্ত মোহ মাৎসয কাম-ক্রোধ ইত্যাদী বাতেনী নাপাকী হতে পবিত্রতা হাসিল করা। এই সুপ্ত নাপাকীসহ কোন লোক যতই পরিচ্ছন্ন থাকুক না কেন তাকে পবিত্র বলা যাবে না। তাই প্রথম কাজ হলো অন্তকরণ পবিত্র রাখা। অতঃপর জাহেরী বা বাহ্যিক অবয়ব পবিত্র রাখা। এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে “পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক”-এর ঈমান (ايمان) শব্দটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হবে। সাধারন অবস্থায় উল্লেখিত অর্থ হবে। আর যদি ঈমান শব্দটি (صلاة) নামাজের পূর্বে উল্লেখ থাকে তাহলে ايمان শব্দের অর্থ হবে الطهور شطر الصلاة- ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন- الطهور شطر الصلاة- (শরহে সহিহ মুসলিম ৩য় খন্ড ১০০ পৃষ্ঠা, ফতহুল মুলহীম ১ম খ ২৮৪ পৃষ্ঠা) এখানে ঈমানের উদ্দেশ্য হলো -اصلاة যেমন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে আছে- وما كان الله ليضع ايمنكم اى صلو بكم الى ببت المقدس- দ্বিতীয় পবিত্র হাদীছ শরীফ অনুযায়ী নামায সহীহ হওয়ার জন্য পবিত্রতা হাছিল করা ওয়াজিব। প্রথম পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সাথে দ্বিতীয় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার পার্থক্য আছে। প্রথম পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার হুকুম আ’ম (ব্যাপক), আর দ্বিতীয় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার হুকুম নামাযের জন্য খাছ। তাই নামাযের জন্য পবিত্রতা হাছিল করা শর্ত। (শরহে সহীহ মুসলিম ইমাম নববী, ৩য় খন্ড, ১০২ পৃষ্ঠা) কেননা প্রত্যেক নামাযের পূর্বে ওযু করা ফরয। এর দলীল হলো মহান আল্লাহ পাক উনার বাণী। اذا قمتم الى الصلوة فاغسلوا وجوهكم وايديكم الى المرافق امسحرا برء وسكم واراجلكم الى الكعبين- অর্থ : “তোমরা যখন নামাযে দণ্ডায়মান হও তখন তোমাদের মুখমণ্ডল ও উভয় হাত কনুইসহ ধৌত কর, আর মোছেহ কর মাথা ও ধৌত কর উভয় পা।” (পবিত্র সূরা মায়েদা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৬)

তৃতীয় হাদীছ শরীফ দ্বিতীয় হাদীছ শরীফ এরই পরিপূরক। তৃতীয় হাদীছ শরীফ-এর حتى يتوابএর অর্থ হলো حتى يطهرة بما او ترار প্রকৃত কথা, প্রথম হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যা হলো দ্বিতীয় হাদীছ শরীফ আর দ্বিতীয় হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যা হলো তৃতীয় হাদীছ শরীফ। পবিত্রতা হাছিল করা ব্যতীত নামায কবুল হবেনা, তবে এ পবিত্রতা অবস্থা বিশেষে পানি অথবা মাটি দ্বারা (তায়াম্মুম) অর্জন করা যাবে। মোদ্দাকথা হলো নামায কবুল হওয়ার শর্ত দু’টিঃ (১) বাতেনী পবিত্রতা (২) জাহেরী বা বাহ্যিক পবিত্রতা। বাতেনী পবিত্রতার অর্থ হলো অন্তরকে সমস্ত প্রকার মোহ হতে পবিত্র করা যাকে শরীয়তে পৃথকভাবে ইখলাছ বলা হয়, যা ইলমে তাসাউফেরই নামান্তর। জাহেরী পবিত্রতা বলতে মাথা থেকে পা পর্যন্ত বাহ্যিক নাপাকী হতে শরীরকে পাক করা; আর এটাই হলো প্রত্যেকটি মানুষের ঈমানের পরিপূর্ণতার অর্ধেক। মহান আল্লাহ পাক তিনিই অধিক জ্ঞাত।