ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৮৬)

সংখ্যা: ১৩৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

দরবার শরীফে অবস্থানের আদব ১৮। দরবার শরীফের খাদ্য-দ্রব্যকে ‘তাবাররুক’ মনে করে খেতে হবে। সুতরাং সেখানকার খাদ্য-দ্রব্যকে কোন অবস্থায় কোন প্রকার ত্রুটিপূর্ণ মনে করা বা মর্যাদা ক্ষুন্ন করা যাবেনা। সাধারনভাবে কোন খাবারের দোষ বর্ণনা করা সুন্নতের খেলাফ। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনও কোন খাবারের দোষ বর্ণনা করেননি। তাঁর সামনে সর্বপ্রকার খাবারই উপস্থিত করা হতো যেটা রুচীসম্মত হতো তা খেতেন আর যেটা রুচীসম্মত হতো না তা খেতেন না। তিনি যে বিনীত-বিনম্র হয়ে, খাবারের প্রতি যথাযথ তা’যীম-তাকরীম রেখে খাবার খেতেন এবং বলতেন, ‘আমি গোলাম, গোলামের মত খাবার খেয়ে থাকি’- মূলতঃ তা উম্মতকে হাতে-কলমে শিক্ষা দেয়ার জন্যই বলেছেন এবং করেছেন। তিনি খাবারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শণার্থে দস্তরখানা বিছিয়ে তার উপর খাবার রেখে খেতেন এবং একই কারণে রুটীতে হাত মুছতে নিষেধ করেছেন। খাবার আল্লাহ পাক-এর নিয়ামত। সুতরাং তা যথাযথ তা’যীম-তাকরীমের সাথে খাওয়া উচিত। যে খাবার খেয়ে আল্লাহ পাক-এর ইবাদত-বন্দিগী করার শক্তি লাভ করে তার মর্যাদা-মর্তবা সেরূপ হবে বৈকি।  আর সেক্ষেত্রে আউলিয়ায়ে কিরামগণের দরবার শরীফের খাবার তো বিভিন্ন দিক দিয়েই বরকতপূর্ণ। কাজেই তকে ক্রটিপূর্ণ মনে করা বা মর্যাদা ক্ষুন্ন করা কত বড় অন্যায় এবং ক্ষতিকরক তা সহজেই অনুমেয়। একটা কাগজ। সাধারনভাবে তার তেমন কোন মূল্য নেই। কাগজে লেখার উপর ভিত্তি করেই তার মূল্যায়ণ হয়। খাদ্য-দ্রব্যের বিষয়টিও অনুরূপ। যে ব্যক্তি বা বিষয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত হয় তার মূল্যায়ন ঠিক সেভাবে হওয়াই বাঞ্ছনীয়। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ শরীফ বা অন্য তার সাথে সংশ্লিষ্ট যে কোন বিষয় উপলক্ষে যখন কোন খাবারের ব্যবস্থা করা হয় তখন তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, তা’যীম-তাকরীম করা একান্ত আবশ্যক হয়ে পড়ে। কেননা সে খাবার অসাধারনে পরিণত হয়। সেটা হয় ‘তাবাররুক।’ তা জাহির, বাতিন ইছলাহ (পরিশুদ্ধ) করার মহাঔষধ। যারা যে নিয়তে বা উদ্দেশ্যে খায় তাদের সে উদ্দেশ্যই সফল হয়। কেননা, সেটা আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ার কারণে তার মর্যাদা এবং ফযীলত আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মর্যাদা এবং ফযীলতের মতই হয়ে থাকে প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, একদিন মদীনা শরীফে সাময়িক অবস্থানরত এক ব্যক্তি বললো যে, ‘মদীনা শরীফের দই খুবই টক।’ সে রাতেই আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বপ্নে ঐ ব্যক্তিকে বলে দিলেন, ‘হে ব্যক্তি! তুমি মদীনা শরীফ ছেড়ে চলে যাও। যে শহরের দই টক নয় সেই শহরে বসবাস কর।’ ঘুম থেকে জেগে ঐ ব্যক্তি খালিছ তওবা করলো। আর এক ব্যক্তি একদিন মসজিদে নববী শরীফের পাশে চশমা রেখে নামায পড়তেছিলেন। লোকজনের ভিড়ের কারণে এক ছেলের পায়ে লেগে তা কিছুটা সরে যায়। নামায শেষ করে সেই ব্যক্তি বলতে লাগলো, ‘মদীনা শরীফের ছেলেরা খারাপ।’ আর সেই রাতেই আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উক্ত ব্যক্তিকে স্বপ্নে জানালেন, ‘হে ব্যক্তি তুমি মদীনা শরীফের ছেলেকে মন্দ বললে। আমিও তো মদীনা শরীফের ছেলে।’ তখন সেই ব্যক্তি তওবা করলো এবং বললো, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ‘আমার ভুল হয়েছে, আমাকে ক্ষমা করুন। আমি আর কোন দিন এমন কথা বলবো না।’ মদীনা শরীফের অধিবাসী, উদপাদিত ফল, ফুল, ফসল, গাছপালা, মাটি, পানি, বাতাস ইত্যাদি সমস্ত কিছুকে যথাযথ মুহব্বত ও তা’যীম-তাকরীম করতে বলা হয়েছে। কোনভাবে সেগুলোর সম্মান-মর্যাদার যেন বিঘ্ন না ঘটে তার প্রতি জোড় তাকিদ দেয়া হয়েছে। আর এটা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কারণেই। আউলিয়ায়ে কিরামগণের বিষয়টিও সেভাবেই মূল্যায়ণ করতে হবে সংশ্লিষ্ট আউলিয়ায়ে কিরাম তথা পীর ছাহেব ক্বিবলার কারণেই। যার মাধ্যমে বরকত হাছিল করা হয় মূলতঃ তাকেই, তাবাররুক বলে। দরবার শরীফে বরকত হাছিলের যত মাধ্যম আছে তন্মধ্যে খাদ্য-দ্রব্য হচ্ছে একটি বিশেষ মাধ্যম। পীর ছাহেব ক্বিবলা-এর দরবার শরীফের খাদ্যের মধ্যে আছে এক প্রকার বিশেষ নূর (আলো) যা জাহিরী-বাতিনী সর্বরোগের মহাঔষধ। খলিফাতুলল্লাহ্, খরীফাতু রসূল্লিাহ, ইমামুল আইম্মা, মুহইস্ সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আযম, আওলাদে রসূল, সাইয়িদূনা, মামদুহ মুর্শিদ কিব্বলা, মুদ্দাজিল্লুহুল আলী-এর জবান মুবারকে শুনেছি “প্রত্যেক আউলিয়ায়ে কিরামের সাথে আল্লাহ পাক-এর একটা ওয়াদা থাকে।” যার ফলে কোন ব্যক্তি যদি ইয়াক্বীন (দৃঢ় বিশ্বাস) এবং যথাযথ তা’যীম-তাকরীমের সাথে একদিনও তাঁর দরবার শরীফের কোন খাবার তাবাররুক মনেকরে খায় তবে, তাকেও আল্লাহ পাক বিশেষ নিয়ামত দান করবেন। (সুবহানাল্লাহ) উল্লেখ্য যে, গাইব বা অদৃশ্য বিষয়ের প্রতি ইয়াক্বীন (দৃঢ় বিশ্বাস) রাখা হচ্ছে মু’মিন মুত্তাকীগণের প্রধান গুণ। যার ইয়াক্বীন যত মজবুত হবে প্রতিদান তত অধিক হবে। সুতারাং দরবার শরীফের খাবারের বিষয়টি ইয়াক্বীন বা দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। আউলিয়ায়ে কিরামের দরবার শরীফের সে খাদ্যের দ্বারা শারীরিক সকল রোগের যেমন উপশম হয় তেমনি আভ্যন্তরীণ রোগও দূরিভূত হয়ে যায়। দীর্ঘদিনের সাধনা তথা যিকির-ফিকির, রিয়াজত-মুশাক্কাতের দ্বারা যা হাছিল হয়না দরবার শরীফের খাদ্য-দ্রব্যের দ্বারা তা লাভ হতে পারে। কাজেই যথাযথ তা’যীম-তাকরীম, আদব-ইহতিরাম এবং সেই ইয়াক্বীন (দৃঢ় বিশ্বাস) রেখেই খাবার খাওয়া উচিত। আর খাবার গ্রহণকালে এরূপ নিয়ত রাখা  যেতে পারে, “আয় আল্লাহ পাক! এ মহান দরবার শরীফের বরকতময় এই খাবার দ্বারা আমার জাহিরী-বাতিনী সমস্ত রোগব্যাধি দূর করে দিন আর আপনাকে এবং আপনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পাওয়ার জন্য  যে ইলম্, আমল  ও ইখলাছের প্রয়োজন তা হাছিল করার শক্তি, সাহস এবং মনোবল দান করুন।” ইত্যাদি। আগেই বলা হয়েছে যে, পীর ছাহেব ক্বিবলার দরবার শরীফের ‘তাবাররুক’ যে ব্যক্তি যে নিয়তে খাবে তার সেই নিয়তই পূর্ণ হবে ইনশাআল্লাহ।  আমার নিজ কানে অনেক বারই শুনেছি, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুল আইম্মাহ্, মুহ্ইস্ সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা মামদুহ মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী “ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” উপলক্ষে আয়োজিত মাহ্ফিলে ‘তাবাররুক’ বন্টনের সময় বলেছেন, “এটা বিশেষ তাবাররুক। কাজেই প্রত্যেকেই নিয়ত করে খাবেন। অবশ্যই আল্লাহ পাক সেই নিয়ত পূর্ণ করবেন।” একবার তিনি কোন এক প্রসঙ্গে বললেন যে, “কলিকাতার একজন বুযূর্গ ছিলেন মাওলানা সফীহুল্লাহ ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি দীর্ঘদিন যিকির-ফিকির এবং কঠোর রিয়াজত-মুশাক্কাতে অতিবাহিত করেও জীবনের অভিষ্ট লক্ষ্যে কাঙ্খিত মাকামে পৌঁছতে পারলেন না। পরিশেষে একদিন সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ, হযরত খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দরবার শরীফে উপস্থিত হলেন। তখন ছিল ঈসালে ছওয়াবের মাহ্ফিল। সেই মাহ্ফিলে ‘তাবাররুক’ বিতরণ করা হয়েছিলো। তবে তিনি দরবার শরীফে পৌঁছার পূর্বে ‘তাবাররুক’ বিতরণ শেষ হয়েছে। তিনি যা পেলেন তা হলো একজনের অবশিষ্টাংশ। এক ব্যক্তি খাবার কিছুটা অবশিষ্ট রেখেই খাওয়া শেষ করেছিলেন।      খাওয়ার প্লেট ভালকরে চেটে খাওয়া সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “খাবারের প্লেট ভালভাবে চেটে খাবে। কোন্ খাবারের মধ্যে বরকত নিহীত আছে তা বলা যায় না।” তিনি আরো বলেন, “শেষাক্ত খাবারের মধ্যে বরকত নিহীত।” সত্যিকার অর্থে সেটা মাওলানা সফীহুল্লাহ ছাহেবে রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর জীবনেও তার বাস্তবতা পরিলক্ষিত হয়। তিনি সেই অবশিষ্ট খাবারই অত্যন্ত ভক্তি-শ্রদ্ধা, রেখে তা’যীম-তাকরীম ও মুহব্বতের সাথে খেলেন। আর সাথে সাথে ইলমে লাদুন্নীর রাস্তা খুলে গেলো। মূলতঃ সুলতানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, গরীবে নেওয়াজ খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দরবার শরীফের তাবাররুকের মাধ্যমে তিনি সমস্ত নিয়ামতই হাছিল করেছিলেন। (সুবহানআল্লাহ)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৮৩)

 ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৮৪)

 ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৮৫) –

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৮৭)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৮৯)