ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৭৭)

সংখ্যা: ১২৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

 পীর ছাহেব ক্বিবলার দরবার  শরীফে অবস্থানের আদব

প্রসঙ্গঃ ওযু-গোসল, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি প্রাকৃতিক একান্ত প্রয়োজন ব্যতীত দরবার শরীফে অবস্থানের সবটুকু সময়ই স্বীয় পীর ছাহেব ক্বিবলা-এর ছোহবতে (সান্নিধ্যে) কাটাবে। আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মারিফাত-মুহব্বত হাছিলের রোকন দু’টি। (১) মুহব্বত, তা’যীম-তাকরীম সহকারে কোন আউলিয়া-ই-কিরামের ছোহবত বা সান্নিধ্য (২) আউলিয়া-ই-কিরামগণের প্রবর্তিত তরীক্বা মুতাবিক দায়িমী (সর্বদা) যিকির-ফিকির। যা আউলিয়া-ই-কিরামগণের ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ হাছিলের অত্যন্ত সহায়ক। কেননা ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ হাছিলের জন্য অন্তর পরিশুদ্ধ হওয়া ফরয। আর তরীক্বা মুতাবিক যিকির-ফিকিরের দ্বারা অন্তর পরিশুদ্ধ হয়। তবে পীর ছাহেব ক্বিবলা দরবার শরীফে অবস্থানকালীন সময় সর্বদা পীর ছাহেব ক্বিবলার ছোহবত (সান্নিধ্যে) ইখতিয়ার করবে। ছোহবতই হচ্ছে মুরীদের জন্য পরম নিয়ামত।   এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে,

عن ابى رزين انه قال ه رسول الله صلى الله عليه وسلم الا ادك على ملاك هذا الامر الذى تصيب منه خير ادنيا وااخرة عليك بمجالس اهل الذكر واذا خلوت قحرك لسانك ما استطعت بذكر الله تعاى واحب فى الله وابغض فى الله.

অর্থঃ- “হযরত আবূ রজীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। একদা সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হে আবূ রজীন! আমি কি তোমাকে এমন একটি আমলের সুসংবাদ দিব, যার মাধ্যমে তুমি দুনিয়া ও আখিরাতের শ্রেষ্ঠ নিয়ামত লাভ করতে পারবে? আর তা হচ্ছে, আহলে যিকির তথা আউলিয়া-ই-কিরামগণের ছোহবতকে ওয়াজিব তথা অপরিহার্য করে নিবে। আর যখন একাকী থাকবে (ছোহবত পাবেনা) তখন আল্লাহ পাক-এর যিকির দ্বারা সাধ্যমত তোমার জিহবাকে তরুতাজা রাখবে। আল্লাহ পাক-এর জন্যই মুহব্বত করবে এবং আল্লাহ পাক-এর জন্যই শত্রুতা পোষণ করবে।” (বাইহাক্বী, তাফসীরে মাযহারী ৫/ ৪০) অর্থাৎ দুনিয়া এবং আখিরাতের শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত হাছিলের আমল হচ্ছে পীর ছাহেব ক্বিবলার ছোহবত। কিন্তু তা সব সময় সম্ভব নয়। সুতরাং সালিক বা মুরীদ স্বীয় পীর ছাহেবের ছোহবত যখন হাছিল করতে পারবে না তখন তার উচিত পীর ছাহেব ক্বিবলার নির্দেশ মুতাবিক সাধ্যমত যিকির-ফিকির করা। দুনিয়া ও আখিরাতের সেই শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত কিরূপ। তার স্বরূপই বা কি।   সে প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক-এর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

ان من عباد الله لاناسا ماهم بانبياء ولا شهداء يغبطهم الانبياء والشهداء يوم القيامة بمكانهم من الله تعالى قاوا يا رسول الله صلى اله عليه وسلم تخبرن من هم قال هم تحابوا فى الله بروح الله على غير ارحام بينهم ولا اموا يتعاطونها فوالله ان وجوههم لنور وانهم على نور لايخافون اذا خاف الناس ولا يحزنون اذا حزن الناس.

অর্থঃ- “আল্লাহ পাক-এর বান্দাগণের মধ্যে এমন কতিপয় খাছ লোক (আউলিয়া-ই-কিরাম) আছেন যাঁরা নবীও নন এবং শহীদও নন; কিন্তু ক্বিয়ামতের দিন তাঁদের মর্যাদা-মর্তবা, নৈকট্য প্রাপ্তি দেখে স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর নবী আলাইহিমুস্ সালাম এবং শহীদগণ পর্যন্ত আশ্চর্যান্বিত হবেন। হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ আরয করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদেরকে তাদের পরিচয় দান করুন। তিনি বলেন, তাঁরা এমন এক সম্প্রদায় যারা শুধুমাত্র আল্লাহ পাক-এর সন্তুষ্টির জন্য একে অপরকে মুহব্বত করেন। অথচ তাঁদের মধ্যে কোন প্রকারের আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই। এবং তাঁদের মাঝে ধন-সম্পদের লেনদেনও নেই। অর্থাৎ পার্থিব কোন উদ্দেশ্য নেই। আল্লাহ পাক-এর কসম! তাঁদের চেহারা হবে নূরে নূরান্বিত এবং তাঁরা উপবিষ্ট হবেন নূরের উপর। তাঁরা তখনও কোন প্রকার ভীত-সন্ত্রস্ত হবেননা যখন সকল মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত হবে। আর তাঁরা দুশ্চিন্তাগ্রস্থও হবেননা যখন সকল মানুষ দুশ্চিন্তায় নিমগ্ন থাকবে।  অতঃপর তিনি এই আয়াত শরীফ পাঠ করলেন যে

 الا ان اولياء اله لا خوف عليهم ولاهم يحزنون.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ্ পাক-এর বন্ধু তাঁদের কোন ভয় নেই এবং তাঁরা দুশ্চিন্তাগ্রস্থও হবেন না।” (মিশকাত/৪২৬) মূলতঃ পীর ছাহেব এবং মুরীদের মাঝে এরূপই সম্পর্ক হওয়া আবশ্যক। এটাই হচ্ছে ছোহবতের হাক্বীক্বী অবস্থা। ইমামুল হুদা, রঈসুল মুফাস্সিরীন, শাইখুল উলামা, আল্লামা কাজী ছানাউল্লাহ পানি পথি রহমতুল্লাহি আলাইহি আউলিয়া-ই-কিরামগণের ছোহবতের গুরুত্ব এবং তাৎপর্য সম্পর্কে বলেন,

ان اولياء الله تعالى لهم قرب ومعية با لله تعالى غير متكيفه، يقتضى ذلك ان يكون مجالستهم كالمجالسة بالله تعالى ورؤيتهم مذكرا با لله تعالى وذكرهم جالبا الى ذكرة تعالى كالمرأة اذا قوبلت باشمس وامتلات بنورها حصت ها حاة اذا قوب شئ بذلك المرأة يستضئ بها كما يستضئ بمقابلة الشمس بل يحترق القطنة بمقابلة المرأة دون مقابلة الشمس لقرب القطنة بالمرأة دون المشمس وايضا ان الله سبحانه اودع فى ذوات اوليائه استعداد تاثر من الله تعالى لقرب ومناسبة خفية غير متكيفة به تعالى واستعداد تأثير فى الناس لاجل مناسبة جنسية ونوعية وشخضية فذلك التاثر والتأنير يقتضى حصول حضور بالله تعالى وذكره تعالى فيمن راهم وجالسهم بشرط عدم الانكار نعوذ بالله منه والله لايهدى القوم الفسقين.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আউলিয়া-ই-কিরামগণের রয়েছে আল্লাহ পাক-এর বেমিসাল সান্নিধ্য ও নৈকট্য। তাঁদের ছোহবতই আল্লাহ পাক-এর ছোহবত হিসেবে পরিগণিত। তাঁদের দীদার বা দর্শন আল্লাহ পাককে স্মরণ করিয়ে দেয়। আর তাঁদের স্মরণ আল্লাহ পাক-এর স্মরণের আকষর্ণকারী। অর্থাৎ একজনের স্মরণে অন্যজন সঙ্গে সঙ্গে মানসপটে উদ্ভাসিত হয়। যেমন সুর্য রশ্মির সম্মুখে স্থাপিত আয়না। সেই আয়নায় পড়ে সূর্য কিরণের প্রতিফলন। ফলে আয়নার সম্মুখে স্থাপিত বস্তুও সূর্য কিরণের প্রতিফলনে সমুজ্জল হয়ে উঠে। সেই আয়নার খুব কাছে তুলা রাখলে সেই তুলোতে আগুন ধরে। অথচ সরাসরি সূর্য কিরণে তাতে আগুন ধরেনা। অনুরূপভাবে আল্লাহ পাক এর সাথে আউলিয়া-ই-কিরামের নিবিড় সম্পর্ক এবং বেমিসাল (তুলনাহীন) নৈকট্যের কারণে আল্লাহ পাক আউলিয়া-ই-কিরাম গণকে ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ (জাহির-বাতিন পরিশুদ্ধকরণ নূর বা আলো) দান করেছেন। সুতরাং আউলিয়া-ই-কিরামগণের ছোহবত ইখতিয়ারকারী কিংবা অন্য যে কোন ভাবে তাঁদের সাথে নিছবত বা সম্পর্ক স্থাপনকারী সকল মানুষের মধ্যে সেই ফয়েজ বা নূর তাছির (প্রভাব বিস্তার) করে। ফলে প্রভাব-বিস্তারকারী তথা আউলিয়া-ই-কিরামগণ প্রভাবিত তথা ছোহবত ইখতিয়ারকারী কিংবা অন্য কোন ভাবে নিছবত বা সম্পর্ক স্থাপনকারী উভয়ই আল্লাহ পাক-এর দায়িমী হুজুরী এবং যিকিরকারী হিসেবে পরিগণিত হন।   সুতরাং আউলিয়া-ই-কিরামের দর্শন আল্লাহ পাক-এর দর্শনে পরিণত হয়। তাঁদের ছোহবত যেন আল্লাহ পাক-এরই ছোহবত। তবে শর্ত হচ্ছে তাঁদেরকে অস্বীকার না করা। তাদের প্রতি কু-ধারণা পোষণ না করা। কেননা, যারা আউলিয়া-ই-কিরামকে ইনকার (অস্বীকার) করে কিংবা তাঁদের প্রতি কুধারণা পোষণ করে তারা সেই ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ লাভ করতে পারেনা। (নাঊযুবিল্লাহ) কেননা তারা ফাসিকের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ পাক বলেন, “আল্লাহ পাক ফাসিকদেরকে হিদায়েত দান করেন না।” (তাফসীরে মাযহারী ৫/৪১)  আর হাদীছে কুদসীতে বর্ণিত আছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,    من عادى لى وليا فقد اذنته بالحرب. অর্থঃ- “আল্লাহ পাক বলেন, যে ব্যক্তি আমার ওলীগণের সাথে শত্রুতা পোষণ করে আমি তার বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করি। অর্থাৎ তার হালাকী বা ধ্বংস অনিবার্য। (বুখারী শরীফ) বাস্তবিক পক্ষে সেটাই দেখা যায় আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রহমত, বরকত, সাকিনা, ইহসান ও দয়া অবারিত ধারায় বর্ষিত হলেও যারা আউলিয়া-ই-কিরাম তথা কোন কামিল পীর ছাহেব ক্বিবলার ছোহবত ইখতিয়ার করেন কিংবা তাঁদের সাথে যে কোন প্রকার নিছবত বা সম্পর্ক রাখেন তারাই শুধু সেই রহমত, বরকত, সাকীনা, ইহসান  ও দয়া প্রাপ্ত হন। মা’রিফাত মুহব্বতের সুধাপানে পরিতৃপ্ত হন। গাউছ, কুতুব, ওলী, আবদাল-এর মাক্বামে উন্নীত হতে পারেন।  পক্ষান্তরে যারা তাঁদের বিরুদ্ধাচরণ করে। ছোহবত হাছিলের প্রয়োজন অনুভব করেনা তারা কস্মিনকালেও সেই সমস্ত নিয়ামত হাছিল করতে পারেনা। সর্বোপরি তাদের মধ্যে অনেকের ঈমান নিয়ে ইন্তেকাল নছীব হয়না। বরং কুফর ও নিফাকের উপর ইন্তিকাল করে  সৃষ্টির নিকৃষ্ট জীব হিসেবে পরিগণিত হয়। আউলিয়া-ই-কিরামগণের ছোহবত দ্বারা শুধু  যে আখিরাতের জীবনে কামিয়াবী আসে তাই নয়। বরং ছোহবত ইখতিয়ারকারীগণ দুনিয়াতেও সীমাহীন মর্তবা ও ফযীলতপ্রাপ্ত হন। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, একদিন বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত হানযালা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমীপে আরজ করলেন, “হে আল্লাহ পাক-এর প্রিয়তম হাবীব (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা যখন আপনার ছোহবতে থাকি। আপনি আমাদেরকে জান্নাত, জাহান্নামের অবস্থা বর্ণনা করেন। তখন মনে হয় যেন আমরা তা চাক্ষুষ দেখতে পাচ্ছি। আর আপনার ছোহবত থেকে চলে গিয়ে  পরিবার পরিজনদের সাথে মিলিত হলে সব কিছু যেন হারিয়ে ফেলি, ভুলে যাই। তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামূল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘হে হানযালা! সেই সত্তার কছম! যার কুদরতী হাতে আমার প্রাণ। তোমরা যেভাবে আমার ছোহবতে থাক, সেভাবে যদি দায়িমীভাবে (সর্বদা) থাকতে পারতে এবং যিকির করতে তাহলে ফিরেশ্তাগণ পথে-ঘাটে, শয়নে স্বপনে তোমাদের সাথে মুসাফাহা (করমর্দন) করতেন। কিন্তু হে হানযালা! আল্লাহ পাক এবং তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হক্ব আদায় করবে আর একটা সময় বান্দার হক্ব তথা পরিবার পরিজন আত্মীয়-স্বজনদের হক্ব আদয় করবে। তিনি একথাটি তিনবার বললেন।” (মুসলিম শরীফ, তাফসীরে মাযহারী ৫/৪১) হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণের সাথে শয়নে-স্বপনে, পথে-ঘাটে সার্বক্ষণিক ফেরেশ্তাগণ মুসাফাহা-মুয়ানাকা না করলেও অনেক সময়ই জিবরাঈল আলাইহিস্ সালামসহ অনেক ফেরেশ্তাদের জাহিরী ভাবে সরাসরি সাক্ষাৎ ঘটেছে। মুসাফাহা-মুয়ানাকা, সালাম-কালাম হয়েছে। সেটাও আখিরী রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছোহবত বা সহচর্যের  বরকতে। অনুরূপভাবে আউলিয়া-ই-কিরামগণের সাথেও তাঁদের মুসাফাহা-মুয়ানাকা হয় বিশেষ ভাবে। এমন কি শবে বরাত, শবে কদর, ঈদের রাত ও দিনগুলোতে সেই  রাত্রি জাগরণ কারীদের সাথে ফেরেশ্তাদের সাক্ষাৎ ঘটে, মুসাফাহা-মুয়ানাকা হয় একান্তভাবে। যদিও বা সাধারণ লোকেরা তা দেখতে পায়না তবে আলামত বা চিহ্ন অনুধাবন করতে পারে। কিতাবে উল্লেখ আছে, শবে বরাত, শবে ক্বদর, দুই ঈদের রাত্রি সহ অন্যান্য বিশেষ দিনে ফেরেশ্তারা যাদের সাথে সালাম-কালাম, মুসাফাহা-মুয়ানাকা করেন তাঁদের অন্তর বিশেষ ভাবে এতমিনান (শান্তি) লাভ করে। চোখে পানি আসে শরীর শিহরিয়ে উঠে। আনন্দ বোধ করে। শুধু ফেরেশতাদের সাক্ষাৎ মুসাফাহা-মুয়ানাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বিশেষত আউলিয়া-ই-কিরাম তথা পীর ছাহেব ক্বিবলার ছোহবত ইখতিয়ারকারী অথবা তাঁদের সাথে কোন নিছবত বা  সম্পর্ক স্থাপনকারীগণ এমন মর্যাদা-মর্তবায় উন্নীত হয় যে, স্বয়ং আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে তাঁদের নিবিঢ় সম্পর্ক  গড়ে উঠে। তাঁর সাথেই মুসাফাহা-মুয়ানাকা করার সৌভাগ্য হাছিল হয়, সালাম-কালাম হয়। তিনি বিভিন্নভাবে তাঁদেরকে সুসংবাদ দান করেন। সরাসরি ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ দেন। তরবিয়ত তথা প্রতিপালন করেন। তা কখনও স্বপ্নে  কখনওবা কাশফে,  মুরাকাবায়।  আবার কখনওবা জাগ্রত অবস্থায় সেই কাঙ্খিত পরম নিয়ামত লাভ করেন।  সুলতানুল আরেফীন, আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

 رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم فى اليقظة بضعا. وسبعين مرة وقلت له فى مرة منها هل انا من اهل الجنة يا رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال نعم قلت فى غير عذاب يسبق فقال لك ذاك.

অর্থঃ- “ আমি আখিরী নবী সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জাগ্রতাবস্থায় সত্তরবারের বেশী দেখেছি। একবার আমি আরজ করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি কি  জান্নাতী? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললাম কোন আযাব ভোগ করা ছাড়াই? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তোমার জন্য তাই হবে। (দালায়িলুছ ছুলুক, আল ইয়াকীতু ওয়াল জাওয়াহের ১ম জিঃ ১৩২ পৃষ্ঠা) সুলতানুল আরিফীন, আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ‘হাবী লিল্ ফতওয়া” কিতাবে উল্লেখ করেছেন, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত আবুল আব্বাস মারাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

 اوحجب عنى رسول الله صلى الله عيه وسلم طرفة عين ما عددت نفسى من امسلمين.

অর্থঃ- “যদি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক মূহুর্তের জন্য আমার দৃষ্টির অন্তরাল হতেন তবে আমি নিজেকে মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত মনে করতাম না।” (দালায়িলুছ্ ছুলূক) আখিরী নবী হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুলতানুল মাশায়িখ, ইমামুল আলম হযরত সাইয়্যিদ আহমদ কবীর রেফায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উদ্দেশ্যে রওজা মুবারক থেকে হাত মুবারক বের করে দেন আর তিনি সেই হাত মুবারক ধরে মুসাফাহা করেন। হাজার হাজার আউলিয়া-ই-কিরাম তার প্রত্যক্ষদর্শি ছিলেন। (হাবী লিল্ ফতওয়া) অনুরূপ অসংখ্য আউলিয়া-ই-কিরাম আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে মুসাহাফা  মুয়ানাকা, সালাম-কালাম করেছেন যার সামান্য বর্ণনা দিলেও বিরাট আকারের কিতাবে পরিণত হবে। আল্লাহ পাক-এর ইহসান। তিনি আমাদেরকেও এমনি একজন মহান ব্যক্তিত্বের ছোহবত দান করেছেন। যিনি যামানার ইমাম ও মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লহুল আলী তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অনুমোদনে দুনিয়াবী এবং উখরুবী সকল কাজই সম্পন্ন করে থাকেন। তাঁর অনুমতি ব্যতীত তিনি কোন কাজই করেননা। তিনি তাঁকে এমনভাবে প্রতিপালন করেন যেমন পিতা-মাতা সন্তানকে প্রতিপালন করেন। তিনি শুধু তাঁর জাগ্রতাবস্থায়, মুরাকাবা-মুশাহাদায় স্বপ্নে দীদারে সীমাবদ্ধ নয় বরং তিনি ইচ্ছা করলে যে কোন ব্যক্তিকে যে কোন সময়ই যে কোন অবস্থাতেই আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে দীদার করে দিতে পারেন। (সুবহানাল্লাহ) আর এই চিরন্তন সত্যি বিষয়টি সর্ব প্রথম প্রকাশ করেন তাঁর শ্রদ্ধে পীর  ছাহেব যিনি যাত্রাবাড়ীর পীর ছাহেব ক্বিবলা হিসেবে মশহুর। কতুবুল আলম,  আমীরুশ্ শরীয়ত, মাহতাবে ত্বরীক্বত, সুলতানুল আরিফীন, মাহিয়ে বিদয়াত,  মুহ্ইয়ে সুন্নাত, মুজাদ্দিদুয্ যামান, হুজ্জাতুল ইসলাম, রঈসুল মুহাদ্দিছীন, ফখরুল ফুক্বাহা, তাজুল মুফাস্সিরীন, শাহ ছূফী, হযরতুল আল্লামা আবূল খায়ের মুহম্মদ  ওয়াজীহুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি। যার প্রত্যক্ষ সাক্ষী অসংখ্য ছূফী দরবেশ এখনো জীবিত  আছেন। মূলতঃ এসবই  হচ্ছে, আউলিয়া ই-কিরামগণের ছোহবত বা সান্নিধ্যের প্রতিদান। কাজেই সকল মুরীদের উচিত স্বীয় পীর ছাহেব ক্বিবলার ছোহবত বেশী বেশী ইখতিয়ার করা এবং অন্য সকল ছোহবত থেকে নিজকে মুক্ত রাখার কোশেশ করা। আর যে সময় ছোহবত ইখতিয়ার করা সম্ভব হবে না সেই সময় পীর ছাহেব ক্বিবলার নির্দেশ মুতাবিক যিকির-ফিকির দ্বারা স্বীয় জ্বিহবাকে তরতাজা রাখা। আল্লাহ্ পাক যামানার মহান মুজাদ্দিদের উছীলায় সবাইকে সেই তাওফিক দান করুন। (আমীন)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৭৩)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৭৪)

 ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৭৫)

 ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৭৬) 

হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৫৮)