বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার-১৪৭

সংখ্যা: ১৮৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

মূলঃ হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছে দেহ্লবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ভাষান্তরঃ মাওলানা মুহম্মদ ফযলুল হক

 

হযরত শায়খ শরফুদ্দীন আহমদ

রহমতুল্লাহি আলাইহি ৬৮৫-৭৫৬হি:

 

পূর্ব প্রকাশিতের পর

হে ভাই! শয়তান বিতাড়িত হয়ে ঐ আলমে মালাকুতে ইহাই চেয়েছিল যে, সে অধিকাংশ লোক ও কতিপয় বুযূর্গদেরকে গুমরাহ করে দিবে। যাদের অনেকে প্রাথমিকভাবে দৃঢ়ও থাকবে। আল্লাহ পাক দয়া করে আমাদেরকে মনজিলে মাকছূদে পৌঁছার তাওফিক দিয়েছেন। কঠিন মুছিবতের মধ্যে পরীক্ষিত জনৈক ব্যক্তির একটি ঘটনা শুনুন- “যাদুল আরওয়াহ কিতাবে হযরত ওহাব ইবনে মুনাব্বিহ রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, আমি অনেক কিতাবেই পেয়েছি একদা ইবলিস তুর পাহাড়ের নিকট হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম-এর সাথে সাক্ষাৎ করলো। কথাবার্তার এক পর্যায় হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম ইবলিসকে বললেন: তুমি যে হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে সিজদা করনি এটা তোমার জন্য সঠিক বা উচিত হয়নি। তখন ইবলিস বলল- আমি যা করেছি ঠিকই করেছি, আমি মানুষের মত নিজের দাবিকৃত বিষয়কে কখনো অস্বীকার বা অবজ্ঞা করিনা। কারণ আমি দাবি করেছি আল্লাহ পাক ছাড়া অন্য কাউকে সিজদা করবনা। আমি শাস্তি গ্রহণ করব তবুও মিথ্যা বলবনা। কিন্তু আপনি আল্লাহ পাক-এর মুহব্বতের দাবি করেন অথচ আল্লাহ পাক আপনাকে বলেছেন- পাহাড়ের দিকে দৃষ্টি দিন, যদি আপনি নিজ স্থানে স্থির থাকতে পারেন তবেই আমাকে দেখতে পাবেন। যদি আমি (আল্লাহ পাক) আপনাকে হিফাযত না করতাম তবে আপনাকে অবশ্যই দেখা দিতাম।”

মুহব্বতের দাবিদার ব্যক্তিদেরকে দুনিয়াতে অনেক কার্যাবলী ও অনেক রহস্যময়ী বিষয়ের মুখাপেক্ষী হতে হয়। দুনিয়াতে হযরত জিবরীল আলাইহিস্ সালাম যে সকল গুণাবলী অর্জন করেছেন তাঁর ব্যাপক কার্যাবলীর প্রতি দৃষ্টি রাখ। শে’র-

سرتافتہ آں رہ رو از سجدۂ غیراو + گر مرد رہ اوئی کم زانت نباید بد

আহলে মুহব্বত ব্যক্তিদের খুব ভালভাবেই জানা রয়েছে যে, দুনিয়াতে মুহব্বতের ব্যক্তিদের কি কি মুছিবত এসে থাকে। হযরত ইউসুফ আলাইহিস্ সালাম যখন তাঁর পিতা হযরত ইয়াকুব আলাইহিস্ সালাম-এর নিকট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেন তখন এ জুদায়ির কারণে হযরত ইয়াকুব আলাইহিস্ সালাম-এর চক্ষু মুবারক নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। যতক্ষণ পর্যন্ত উনার চক্ষু মুবারক দ্বারা হযরত ইউসুফ আলাইহিস্ সালামকে দেখতে পারেননি ততক্ষণ পর্যন্ত উনার চক্ষু দ্বারা অন্যান্য ভাইদেরকেও দেখতে পারেননি। যখনই তিনি হযরত ইউসুফ আলাইহিস্ সালাম-এর জামা মুবারকের সুঘ্রাণ পেয়েছেন তখনই উনার চক্ষু মুবারক দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছে। সেজন্যই বলা হয়-

ہر کہ او ررا یوسف گم کر دہ نیست+گر چہ ایماں آور د آوردہ نیست

যে কোন ব্যক্তি হযরত ইউসুফ আলাইহিস্ সালাম-এর ন্যায় পরীক্ষিত না হয়েছেন সে ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারে না।

হে ভাই! যদি দুনিয়াদার সকল লোক তোমার দুয়ারে হাজিরা দেয় বা উপস্থিত হয় এবং তোমাকে বলে যে, তোমার অন্তরে যা কিছুই আছে তা সবই তুমি মানুষকে দান করো, তবে সেক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করাও জরুরী। কেননা দুনিয়া ও আখিরাতে যা বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে গোপনীয় ইল্ম্ বা বিষয়। ঐ সকল লোকদের কথানুযায়ী কাজ করে পথভ্রষ্ট না হওয়া আবশ্যক। বরং ওলীআল্লাহগণ যা বলেছেন তা বলো ও করো। শে’র-

دنیا است بالا خانہ وعبقی ہوس آباد+ ما حصل ایں ہردو بیک جو نستانم

সুলত্বানুল আরিফীন হযরত খাজা বাইজিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, যদি তোমাকে হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম-এর রুহানিয়াত, হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম-এর মহান আল্লাহ পাক-এর সাথে কালামিয়াত, হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম-এর মহান আল্লাহ পাক-এর সাথে খুল্লাত বা বন্ধুত্বও দান করা হয় তবুও তার চেয়ে আধিক্যতা হাছিলের কোশেশ করো। কেননা মহান আল্লাহ পাক-এর নিয়ামতের খাযিনা অফুরন্ত বা তার চেয়েও অনেক বেশি।

হে ভাই! প্রতি যামানাতেই আলামে মাহবুব থেকে প্রত্যেক আশিক বান্দারকে এভাবে সম্বোধন করা হয়ে যে, হে মাশরিক-এর মুসাফির, হে মাগরিব এর মুজাহিদ, হে উচ্চ-শানের প্রতি নজরকারী ব্যক্তি, ওহে সুরিয়া তারকা পর্যন্ত অনুসন্ধানকারী ব্যক্তি, তুমি আমাকে যেখানেই তালাশ করোনা কেন সেখানেই আমাকে পেয়ে যাবে।

ওহে ভাই! যখন তোমার চিঠি পৌঁছেছে তখন খুব ব্যস্ততা ছিল। হে ভাই! যখন হযরত শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে লোকজন জিজ্ঞাসা করেছিল যে, আ’রিফ ব্যক্তিদের গুণাবলী কিরূপ হওয়া উচিত? উত্তরে তিনি বলেন, আ’রিফ ঐ ব্যক্তি যিনি সর্বাবস্থায় বোবা ও অন্ধের মত থাকেন। সে কারণেই আমি চাচ্ছি নিজ যবানকে সর্বদা দুর্বল করে রাখতে। কেননা, রং ঢং সুর করে কথাবার্তা বলায় কোনই ফায়দা নেই। আর এর বিপরীতে (আ’রিফ ব্যক্তিদের অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা পরিত্যাগ করা) জান নিঃশেষ হওয়ার নামান্তর।

বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার- ১৩৭

বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার- ১৩৮

বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার- ১৩৯

বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার-১৪০

বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার-১৪১