মূলঃ হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছে দেহ্লবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ভাষান্তরঃ মাওলানা মুহম্মদ ফযলুল হক
হযরত শায়খ শরফুদ্দীন আহমদ
রহমতুল্লাহি আলাইহি ৬৮৫-৭৫৬হি:
পূর্ব প্রকাশিতের পর
হে ভাই! সমস্ত কিছুই তরক করা প্রকৃতপক্ষে সব কিছুই পাবার অন্তর্ভুক্ত। যে ব্যক্তি দুনিয়াবী সবকিছু ছেড়ে দিয়ে একাকীত্ব অবলম্বন করে সে ব্যক্তিই একসময় সবকিছু পেয়ে যায়। আরবীতে একটি প্রবাদ রয়েছে-
لن يصل الى الكل الا من انقطع عن الكل
অর্থ: সবকিছুই তিনিই হাছিল করতে পারেন যিনি সবকিছু ছেড়ে দেন।
পরিপূর্ণ ইশক বা মুহব্বত এর ফলাফল এই হয় যে, (হাক্বীক্বী আশিক এর নিকট) দান করা বা না করা, গ্রহণ করা বা ফিরিয়ে দেয়া, দয়া করা বা কঠোর হওয়া ইত্যাদি সবই সমান হয়। মূলতঃ ইহাই চূড়ান্ত পর্যায়ের পরিপূর্ণতা। আর যে পূর্ণতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নিকট বর্ণিত ঐ সকল বিষয়ে বিভিন্নতা সৃষ্টি হয় সেটা প্রকৃতপক্ষে কোন পূর্ণতাই নয়। বরং এমন ব্যক্তিকে বেকার ব্যক্তি বলা হয়। কেউ কেউ তাকে পৃথক হওয়া বা দল ত্যাগী বলে অভিহিত করেছেন।
শে’র
ہجر تو خوشتراز وصال دگرا ں +منکر شدنت بہ از رضائے دگراں
অন্যদের সম্পর্ক স্থাপন-এর চেয়ে তোমার সম্পর্ক ছিন্ন করা উত্তম, আবার অন্যদের (সর্বসাধারণে) সন্তুষ্টি হাছিল করার চেয়ে তোমার না করাটা উত্তম।
এই ধরনের আশিক ব্যক্তিদের জন্য এমনও বলা হয় যে, তার রহমত থেকে দূরে থাকাটা ফখরের বিষয় যেমনটি অন্যদের রহমতের মধ্যে থাকা। এই ধরনের একজন আশিক ব্যক্তিকে একদা বলা হয়েছিল রহমত থেকে দূরে অবস্থানের কালো কম্বল আপনার ঘাড় থেকে কেন ফেলে দেন না? উত্তরে তিনি বললেন,
می نفروشم گلیم می نفروشم + گر بفروشم برہنہ ماندوشم
অর্থ: আমি কখোনই আমার জুব্বা ও কম্বল বিক্রি করব না, যদি আমি তা বিক্রি করি তবে আমার গর্দান পুনরায় খালি হয়ে যাবে।
এই কথা আক্বলের চেয়েও বেশি মূল্যবান। যার কারণে এই ধরনের কথা বুঝার ক্ষেত্রে আক্বল সৃষ্টিগতভাবেই দুর্বল বা অসম্পূর্ণ।
ইশক মহান আল্লাহ পাককে ঐ পরিমাণ মুহব্বত করার নাম যা বান্দাকে মস্তিহাল পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। সেজন্যই বলা হয় যে, মস্তিহালের পথ আর জ্ঞানী লোকদের পথ ভিন্ন ভিন্ন।
হে ভাই! ঐ সকল হাল বা অবস্থা যাতে আপনার ভাই চলছে যদিও ইহা পূর্ব থেকেই আপনার হাসিল হয়েছে, আমি নিজেকে ছোট মনে করছিনা। কারো কোন হাল জাহির হওয়া এবং পরবর্তিতে উহার উপরে আমল করা দু’টোই ভিন্ন ভিন্ন অবস্থা। এভাবেই ঐ পথের পথিকরা দিন দিন পাকা পোক্ত হতে থাকেন। যেমন যতক্ষণে প্রতিটি ফলের মধ্যে দু’অবস্থা অতিক্রম না করে ততক্ষণে উহা পোক্ত হয় না। একটি হলো ছায়া আর অন্যটি হলো রৌদ্র তাপ।
অনুরূপভাবে কোন কিছু নেয়া, দেয়া, রেখে দেয়া, খরচ করা, না থাকা বা থাকা ইত্যাদি দু’টোই বিশেষ হিকমত। এছাড়া মানবীয় গুণাবলী হাক্বীক্বতের জন্য বাধা দানকারী যতক্ষণ পর্যন্ত কারো মধ্যে মানবীয় স্বভাব বাকি থাকে। এজন্যই ঐ ব্যক্তির স্থায়ীত্ব নেই। মূলত তার জন্য ফানা ও বাক্বা দুটোই অসম্ভব।
হে ভাই! নিজের ক্বলবকে দৃঢ়, উঁচু হিম্মতওয়ালা এবং সত্য সঠিক পথের তলবকারী হিসেবে রেখো। কারণ ইহা এমন এক মহা সম্পদ যাকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করার জন্য মানুষ এবং ফেরেস্তাদের জ্ঞান বেকারার হয়ে যায়।
হযরত শুয়াইব আলাইহিস্ সালাম এক ব্যক্তিকে উনার খেদমতে রাখলেন। যিনি একজন রসূল-এর খেদমতে দশ বছর নিঃশেষ করে দিলেন। তিনি আগুন তালাশ করতেছিলেন। অনেক দূরে সে আগুন দেখতে পেলেন। মহান আল্লাহ পাক উনাকে স্বীয় নিয়ামতরাজীর খোশ খবর শুনিয়ে নবুওওয়াতের মাক্বামের মর্যাদার বর্ণনা প্রদান করলেন। আল্লাহ পাক বললেন, ঐ কথা জ্ঞান দ্বারা উপলব্ধি করো। মূলতঃ ঐ সকল কথা এমন লোককে বলা হলো যে প্রকৃতপক্ষে উহার হক্বদার নয়। বরং ইহা কেবলমাত্র মহান আল্লাহ পাক-এর ফজল করম ও দয়ায় যথাযোগ্যকে তিনি দান করেন।
(অসমাপ্ত)