মূলঃ হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ভাষান্তরঃ মাওলানা মুহম্মদ ফযলুল হক
হযরত শায়খ শরফুদ্দীন আহমদ
রহমতুল্লাহি আলাইহি ৬৮৫-৭৫৬হি:
পূর্ব প্রকাশিতের পর
তৃতীয় মাকতুবঃ হে হযরত ইমাম মুজাফফর রহমতুল্লাহি আলাইহি! ইহা জেনে রাখা আবশ্যক যে, এই ধরনের মুয়ামিলাতের জন্য কোন এলাকা বা স্থান নির্ধারিত নেই বরং ইহা কাশফ এর সাথে সম্পৃক্ত।
আর মুকাশিফাত বা কাশফসমূহের হাক্বীক্বত বর্ণনা করে বা লিপিবদ্ধ করে প্রকাশ করা অসম্ভব। বরং যা কিছু বর্ণনা করা হয় তা কেবলমাত্র উপলব্ধি শক্তির যৎসামান্য বর্ণনা মাত্র।
ইহাকে আলমে মুলুক বা দুনিয়াবী যিন্দিগী এবং উপলব্ধি লব্ধ বিষয়কে আলমে মালাকূত আর শক্তি দ্বারা অর্জিত অস্তিত্বকে আলমে জাবারূত এবং এর চেয়েও বড় বিষয়াবলীকে আলমে লাহুত বলে। ঐ বিষয়সমূহকে ঐ সমস্ত স্থানসমূহ দ্বারা তাবীর করা হয়। যেমন- দুনিয়াকে আলমে শাহাদাত, মালাকূতকে আলমে গাইব আর জাবারূতকে গাইবুল গাইব বলা হয। আর স্বয়ং আল্লাহ পাক হচ্ছেন- গাইবে গাইবুল গাইব।
এর বিস্তারিত বর্ণনা এভাবে করা হয় যে, আলমে দুনিয়ার সাথে আলমে মালাকূতের সূক্ষ্মতার কোনই নিছবত নেই। কারণ আলমে মালাকূত খুবই সূক্ষ্ম বিষয় আবার আলমে মালাকূতের সূক্ষ্মতার সাথে আলমে জাবারূতের সূক্ষ্মতার কোন নিছবত নেই। একইভাবে আলমে জাবারূতের সাথে খোদ আল্লাহ তায়ালারও কোন নিছবত নেই। কেননা স্বয়ং রব্বুল আলামীন হচ্ছেন- জাতে লতীফে লতীফুল লতীফ (সূক্ষ্মতার সূক্ষ্মতারও সত্বা বা মূল)
আলমে দুনিয়া এবং আলমে মালাকূতের কোন যৎসামান্য অংশ এমন নেই যার উপরে আলমে জাবারূত পরিবেষ্টন করে না। আবার আলমে দুনিয়া, আলমে মালাকূত এবং আলমে জাবারূত এর অংশসমূহের মধ্যে এমন কোন অংশ নেই যার উপরে মহান আল্লাহ পাক-এর কুদরতের প্রভাব নেই।
স্বয়ং আল্লাহ পাক উহা থেকে কোন কিছু পাওয়ার প্রত্যাশি নন বরং তিনি সবকিছুরই লতীফ এবং খবীর। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম সর্ববিষয়ের সংবাদ রাখেন। স্বয়ং তিনিই লতীফে মুত্বলাক বা সূক্ষ্মাতি সূক্ষ্ম সবকিছু বিষয়ের খবর রাখেন। সুতরাং তিনিই মুহীতে মুত্বলাক বা সবকিছুকে বেষ্টনকারী। আর ইহা এজন্য যে, যাহা যতবেশি সূক্ষাতিসূক্ষ্ম হবে উহা ততবেশি মুহীত বা বেষ্টনকারী। এর দ্বারা এটাও বুঝা যায় যে,
وهو معكم اين ما كنتم
তুমি যেখানে যে অবস্থায়ই থাকনা কেন খোদ আল্লাহ পাক তোমার সাথেই আছেন। (সূরা হাদীদ-৪)
এছাড়া আল্লাহ পাক অন্যত্র একস্থানে ইরশাদ ফরমান-
نحن اقرب اليه من حبل الوريد
আমি মানুষের শাহ রগের চেয়েও নিকটে। (সূরা ক্বাফ-১৬)
শে’র-
آنچہ تو گم کردۂ گر کردہ + ہست اندر تو توخود راپردۂ
অর্থঃ যদি তুমি নিজেকে ‘জানো বা না চিনো তবে তুমি জেনে রেখ যে, তুমি নিজেকে নিজের মধ্যেই চুপিয়ে রেখে গোপন রয়েছো।
অনুরূপভাবে একথা প্রসিদ্ধ আছে যে, আলমে দুনিয়া, আলমে মালাকূত, আলমে জাবারূত এবং মহান রব্বুল আলামীন-এর জাতে পাক-ই হচ্ছে তোমাদের (ঈমানদারদের) সঙ্গী। আর মানুষের হাক্বীক্বত হচ্ছে ঐ সকল বিষয়ের প্রকাশক। কারণ মানুষ প্রকৃতপক্ষে মহান পরওয়ারদিগার এর রুবুবিয়্যত প্রকাশের মূল।
تانیاید جان أدم أشکار + رہ ندانستند سوئے کردگار
رہ پدید أمد چوں آدم شدپدید + زو کلید ہر دو عام شدپدید
অর্থ: যতক্ষণ পর্যন্ত হযরত আদম আলাইহিস সালাম-এর শরীর মুবারক-এর মধ্যে রূহ মুবারক আসেনি ততক্ষণ পর্যন্ত উক্ত শরীর মুবারক আল্লাহ পাক-এর পথ সম্পর্কে অনভিজ্ঞ ছিল। যখন তিনি পরিপূর্ণভাবে তৈরি হলেন তখনই মহান আল্লাহ পাক-এর সকল মত-পথ তাঁর জন্য খুলে গেল। এবং দুনিয়া ও আখিরাতের সকল নিয়ামতের খাজীনা হযরত আদম আলাইহিস সালাম-এর হাত মুবারকে এসে পৌঁছল।
এ বিষয়ে এর চেয়ে বেশি লিখার শক্তি নেই পরিশেষে ঈমানের ও কল্যাণের সাথে মহান আল্লাহ পাক-এর সান্নিধ্যে চলে যাওয়ার দুয়া তলব করছি। (অসমাপ্ত)