মূলঃ হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছে দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি,
ভাষান্তরঃ মাওলানা মুহম্মদ ফযলুল হক
পূর্ব প্রকাশিতের পর
মহান আল্লাহ পাক তাঁর কোন কোন বান্দাকে নিয়ামতরাজি দান করেন। আবার কাউকে বালা-মুছীবত, বিপদাপদ, রোগ-শোক ইত্যাদি দিয়ে মকবুল করে নেন। যেমন হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস্ সালামকে আগুণের চুলাতে নিক্ষেপ করেছেন, অতঃপর সিন্দুকে ভরে সমুদ্রে ভাসিয়েছেন, তারপর আবার দুশমনের হাতে তুলে দিয়েছেন। অতঃপর হযরত মুসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম-এর হাত মুবারকে জনৈক কিবতীর মৃত্যু হলো, যার ফলশ্রুতিতে স্বীয় দেশ ত্যাগ করে তাঁকে অন্যদেশেও যেতে হয়েছিল। তারপরে আবার দশ বছর যাবত বকরী চড়িয়েছেন। তখন একদিন আকাশে ছায়া নেমে আসল, বিদ্যুত চমকাতে লাগল, জঙ্গল থেকে বাঘ বের হয়ে আসল, ভয়ে বকরীগুলো পালিয়ে গেল। তিনিও অন্য রাস্তায় চলে গেলেন। তাঁর আহলিয়াকেও কঠিন প্রসব বেদনায় পেয়ে বসল। মারাত্মক ঠাণ্ডা পরতেছিল, বহুদূর দূরান্ত পর্যন্তও আগুন/বাতি পাওয়া যায়নি। এমন কঠিন ঠাণ্ডা ছিল যে, পাথর ঘর্ষণেও আগুন জ্বলেনা। যখন সবদিক থেকে আগুন বা আলো না পাওয়ার বিষয় নিশ্চিত হলেন। আলো পাওয়ার ব্যাপারে যখন তিনি পূর্ণ অপারগ হলেন ঠিক তখনই গায়েবী মদদ ওনার প্রতি বর্ষিত হলো। তখন তিনি বললেন,
انى انست نارا আমি আগুন দেখতেছি।
যখনই তিনি আগুন আনতে গেলেন, তখন তথায় অন্য নেদা হলো-
انا ربك فاخلع نعليك انك بالواد المقدس طوى وانا اخترتك فاسمع لما يوحى.
অর্থঃ আমি আপনার মহান পরওয়ারদিগার আল্লাহ পাক। আপনার জুতাদ্বয় খুলে ফেলুন, কেননা আপনি পূত পবিত্রতম স্থানে উপবিষ্ট রয়েছেন। আমি আপনাকে খাছভাবে মনোনীত করেছি। আমি যা বলি তা আপনি খেয়াল করে শ্রবণ করুন।
আল্লাহ পাক-এর রুবুবিয়তের ভেদ অজ্ঞাত। যদি আল্লাহ পাক-এর বিধানাবলী বান্দাদের প্রতি সর্বদা একই নিয়মে জারী করেন তবে বান্দার জ্ঞান আল্লাহ পাক-এর ছিফতসমূহকে আয়ত্ব করে নিবে, কিন্তু আল্লাহ পাক-এর ছিফতসমূহের জ্ঞান আয়ত্ব করা বান্দার পক্ষে অসম্ভব। সুতরাং এ দ্বারা বুঝা গেল যে, মহান আল্লাহ পাক-এর হুকুম আহকাম বা বিধানাবলী সকল বান্দাদের প্রতি একই পদ্ধতিতে জারী করেন না।
ہر چہ در خلق سوزی وسازے است اندراں مر خداےرا زے است
অর্থাৎ সৃষ্টির মধ্যে যা কিছু দুঃখ দুর্দশা ইত্যাদি রয়েছে তাতে আল্লাহ পাক-এর কোন না কোন গুপ্তভেদ বিদ্যমান রয়েছে।
দ্বিতীয় মাকতুবঃ হে ভাই! মানুষ মুছীবতে পতিত ব্যক্তির ন্যায় জঙ্গলে পরে থাকা ঐ সকল জিনিস পাওয়ার আকঙ্খা করে থাকে যে, সে মক্কা শরীফে পৌঁছে যাবে। যদি সে মক্কা শরীফে যাওয়ার যাবতীয় দ্রব্যাদি প্রস্তুত না করে তবে তার জন্য তথায় পৌঁছা অসম্ভব।
در داکہ غم کوہ بکاہ افتادہ است + معشوق دل مورچہ ماہ افتادہ است
ایں واقعہ طرفہ براہ افتادہ است + درویش بعشق بادشاہ افتادہ است
অর্থঃ হায় আফসুস! পাহাড়ের মৃত প্রায় ঘাস এর জন্য, আর মুছীবতে পতিত ব্যক্তির জন্য যে চাঁদ-এর ইশকে বিভোর। ঐ ঘটনা আশ্চর্য যে, দরবেশ বাদশার ইশকে বিভোর।
হে ভাই! আশিক ব্যক্তি ঐ শ্রেণীর মাশুককে তলব করে যে, যদি সে দয়ালু হয় তবে আশিকের কাছ থেকে নিজের উদ্দেশ্য হাছিল করে আর যদি সে আশিকের প্রতি অসন্তুষ্ট হয় তবে আশিকও তার থেকে নিজের উদ্দেশ্য পূর্ণ করে নেয়। আশিক ও মাশুকের উদ্দেশ্য মিলেই পূর্ণতা হাছিল করে। মূলতঃ প্রকৃত আশিক ঐ ব্যক্তি যে তার সমস্ত চাহিদাই মাশুকের ক্বদমে পেশ বা কোরবান করে দেয়। আর কেবলমাত্র মাশুকের কল্যাণই সে কামনা করে। যা তাকে ইহকাল ও পরকালের সমস্ত ব্যস্ততা থেকে মুক্ত করে। কিন্তু যে আশিকের অন্য কোন কর্মব্যস্ততা থাকে অথবা তার অন্তরে নিজের পরিণাম এবং পরকালীন কল্যাণের চিন্তা থাকে তবে সে নিজের মুনীবকে উত্তমভাবে খিদমত করতে পারে না। বুযুর্গানে দ্বীনগণের বক্তব্য হচ্ছে- দুনিয়াদাররা তাদের দুনিয়াদারীর চিন্তায় মশগুল থাকে আর পরকালের কল্যাণকামী ব্যক্তি তার পরকালীন যিন্দিগী পরিশুদ্ধ করায় সর্বদা ব্যস্ত থাকে। আবার দোযখী ব্যক্তিও ঐ সকল কাজেই ব্যস্ত থাকে যার দ্বারা সে দোযখে যাবে। সুতরাং এমন ব্যক্তি কে হবে যে দুনিয়া ও আখিরাতে সর্বাবস্থায়ই স্বীয় মুনীব এর খবর রাখে? অর্থাৎ সকলেই যার যার কাজে ব্যস্ত এবং আল্লাহ পাক থেকে বেখবর। (চলবে)