মূলঃ হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি,
ভাষান্তরঃ মাওলানা মুহম্মদ ফযলুল হক
হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন র্খুরদ
রহমতুল্লাহি আলাইহি-
(৭০২ হিজরী-৭৬১ হিজরী)
হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন র্খুরদ রহমতুল্লাহি আলাইহি সুলত্বানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা মঈনুদ্দীন হাসান চিশ্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর পৌত্র অর্থাৎ হযরত হুস্সামুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর আওলাদ ছিলেন। যেহেতু উনার নাম মুঈনুদ্দীন ছিল তাই এ নাম মুবারক বড় বুযূর্গ ওলী আল্লাহ-এর সে হিসেবে নিছবতের দিক থেকে উনার ক্ষেত্রে র্খুরদ অর্থাৎ ছোট শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এই পরিচয়ই উনার জন্য যথেষ্ট যে তিনি একজন কামিল বুযূর্গ ওলীআল্লাহ্্ ছিলেন। মুরীদ হওয়ার পূর্বেই এত বেশি রিয়াজত মুসাক্কাত করেছেন যার দৌলতে কোন ওসীলা ছাড়াই তিনি সুলত্বানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ফয়েজ তাওয়াজ্জুহ্্ হাসিল করেছিলেন।
পরিশেষে তিনি হযরত খাজা সাহেব রহমতুল্লাহি-এর নির্দেশে হযরত নাছীরুদ্দীন মাহমূদ চেরাগে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করেন। তাঁর কাছ থেকে খিলাফতের খিরকা লাভ করেন। হযরত শায়খ হুস্সামুদ্দীন ছূখ্তা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ছোট ছেলে হযরত শায়খ কিয়ামুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি অত্যন্ত খুবছূরত, বীরত্ব এবং পূর্ণ মহত্ব সম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। হযরত খাজা মঈনুদ্দীন র্খুরদ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত খাজা কিয়ামুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর অনেক সন্তানাদি ছিল। যারা চিশ্তিয়া খান্দানের অন্তর্ভুক্ত তাঁরাও তাঁদের বংশধর। যদিও তাঁর নাম শায়খ কুতুবুদ্দীন ছিল তথাপিও মাহমূদ খিলজী তাকে চিশ্তীয়া খান্দানের অন্তর্ভূক্ত লক্বব দিয়ে দু’হাজার সাওয়ারীর সরদার বানিয়েছিলেন। সুলতান মাহমূদ যখন আজমীর শরীফ বিজয় করেন তখন তিনি চিশ্তিয়া খান্দানকে দায়িত্ব দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু চিশ্তিয়া খান্দানের লোকদের সংশ্লিষ্টরা ছোট হওয়ার কারণে তারা আজমীর শরীফ-এর হুকুমতের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেন। হযরত শায়খ কিয়ামুদ্দীন বারইয়াল রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর আওলাদগণের মধ্যে হযরত শায়খ বায়েজিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি খুব বড় বুযূর্গ, সূক্ষ্ম আক্বলের অধিকারী ও সমঝদার ছিলেন। যিনি সুলত্বানুল হিন্দ হযরত খাজা সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দরবার শরীফে পড়াশুনা করেছেন। হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ অনেক বড় বড় বুযূর্গ ওলী আল্লাহগণ তাঁর ছাত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
হযরত খাজা সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সন্তানদের মধ্যে যার ব্যাপারে কিল-কাল রয়েছেন তিনিই হচ্ছেন বায়েজিদ বুযূর্গ রহমতুল্লাহি আলাইহি। কিল-কাল এর খোলাছা কথা হচ্ছে যখন দিল্লির খিলাফতে বিভিন্ন রকম ফিৎনা ফ্যাসাদ ও মতভেদের কারণে চরম পর্যায়ের দুর্বলতা দেখা দিয়েছে। যার ফলে আজমীর শরীফ-এর উপরে কাফিরদের বিভিন্ন রকম প্রাধান্য বিস্তার করল। তখন হযরত খাজা সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর আওলাদগণের মধ্যে হতে হযরত মুঈনুদ্দীন র্খুরদ রহমতুল্লাহি আলাইহি মন্দো নামক স্থানে চলে গেলেন, এবং সেখানেই অবস্থান করতে লাগলেন। বারইয়াল রহমতুল্লাহি আলাইহি গুজরাট গিয়ে ইল্ম হাছিলে মশগুল হলেন। অনুরূপভাবে শায়খ বায়েজিদ বুযূর্গ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইল্ম হাসিলের জন্য বাগদাদ শরীফ চলে গেলেন।
সুলতান মাহমূদ খিলজি দ্বিতীয় বার আজমীর শরীফ বিজয় করার পরে তথায় ইসলামী তর্জ তরীকা চালু করে দিলেন এবং সেখানকার সকল কাফিরদেরকে শাস্তি দিলেন। শায়খ বায়েজিদ বুযূর্গ রহমতুল্লাহি আলাইহি বাগদাদ শরীফ ও অন্যান্য এলাকা সফর করার পর সেখানে তাশরীফ আনলেন। যিনি শায়খুল ইসলাম হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন, হযরত শায়খ মাহমুদ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি, যাকে সমসাময়িক সমস্ত উলামায়ে কিরামগণ অনেক সম্মান করতেন। তাঁর শায়খ হযরত বায়েজিদ বুযূর্গ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সাথে কোন এক স্থানে বিশেষভাবে সাক্ষাৎ হল এবং ঐ সাক্ষাতের পরেই উভয়ের মধ্যে অনেক সুসম্পর্ক বৃদ্ধি পেয়েছিল। যার কারণে মন্দ এলাকাতেই হযরত শায়খ মাহমুদ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর আল্লাহওয়ালী বোনকে হযরত বায়েজীদ বুযূর্গ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সাথে বিয়ে দিয়েছেন। ইতোমধ্যেই সুলতান মাহমূদ খিলজি ও হযরত বায়েজীদ বুযূর্গ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সাথে অনেক সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।
এদিকে চিশত্খান-এর সাথে হযরত বায়েজীদ বুযুর্গ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সাথে কিছু বিষয় নিয়ে ইখতিলাফ দেখা দিয়েছিল। যার কারণে সুলতানের সাথে হযরত বায়েজীদ বুযুর্গ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সুসম্পর্কের কিছুটা ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছিল।
(অসমাপ্ত)