মূলঃ হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছে দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ভাষান্তরঃ মাওলানা মুহম্মদ ফজলুল হক
হযরত খাজা জিয়া নাখশবী রহমতুল্লাহি আলাইহি
(৬৫৬ হিজরী-৭৫১ হিজরী)
পূর্ব প্রকাশিতের পর
শোন শোন একদা এক ব্যক্তি যাঁর পাল্লা (আমলনামা) আসমানের দিকে যাচ্ছিল তিনি দেখলেন যে, এক ব্যক্তি বাঘের পিঠে আরোহন করে হাতে সাপের কোড়া নিয়ে তার সম্মুখ দিয়ে চলে যাচ্ছে। দর্শক ব্যক্তি তাকে বললেন, তোমার এই কাজ খুবই সহজ ও নিরাপদ কিন্তু প্রকৃত ও কঠিন কাজ হচ্ছে নিক্তির দু’ পাল্লার মাঝে বসে সত্য ও সঠিক কাজের আঞ্জাম দেয়া। হযরত ইব্রাহীম আদহাম রহমতুল্লাহি আলাইহি অধিকাংশ সময়ই বলতেন, আমি অধিকাংশ সময় আল্লাহওয়ালা লোকদের সন্ধানে নির্জনতা তরক করে লোকালয়ে বের হতাম। তখনও আমাকে দুনিয়াদার হিসাবে তিরস্কার করা হত। একদা এক ব্যক্তি এইকথা বলতেছিল যে, আমি খুব ভাল করেই জানি যে, এই দুনিয়া একদিন সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। যদি আমি এখানে কোন জায়গা সম্পত্তি করি তবে তা কোন না কোন দিন আমার জরুরী কাজে বাধা হবে। অতঃপর তিনি বলতেন তুমি এতদিন কি করেছ? দুনিয়াবী বাড়িঘরের ঠিকানা তৈরী করেছ? এখন থেকে তুমি নেককার পরহিযগার আল্লাহওয়ালা হয়ে যাও। যদি দুনিয়াতে কোন নেককার লোক না থাকে তবে তুমি বুঝে নাও যে, দুনিয়া খারাপ হয়ে গেছে।
কিছু লোক হযরত খাজা জোনায়েদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন যে, আপনি নিজের কাজ (দায়িত্ব)কে কতটুকু পৌঁছে দিয়েছেন (পালন করেছেন)? উত্তরে তিনি বলেন, দুনিয়ার কাজকে আমি যতটুকু ধারণা করেছিলাম পরকালের কাজ তার চেয়ে অনেক কঠিন।
শোন শোন, একজন আল্লাহওয়ালা নেক্কার লোক একবার বাজারে গিয়ে কিছু ক্রয় করার ইচ্ছা করলেন। তিনি একটি আশরাফী নিয়ে স্বীয় ঘরে বসে তা ওজন করে বাজারে গিয়ে পুনরায় তা ওজন করতে দিয়ে দেখেন যে তার ওজন কম হয়েছে। তখন তিনি ক্রন্দন করতে লাগলেন। লোকজন তাকে কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আজকে ঘরের জিনিস যখন বাজারে এনে তার অনুরূপ থাকেনি তাহলে কিয়ামতের দিন যখন দুনিয়াবী বিষয়াবলী (আমলনামা) সামনে হাজির করা হবে তখন তা কিভাবে সঠিক থাকবে? মহান আল্লাহ পাক উনাদের উপর রহমত বর্ষণ করুন। (আমীন)
হযরত খাজা জিয়াউদ্দীন সানামী রহমতুল্লাহি আলাইহি
(৬৪১ হিজরী-৭০৯ হিজরী)
হযরত খাজা জিয়াউদ্দীন সানামী রহমতুল্লাহি আলাইহি সততা, ন্যায় পরায়নতা ও তাক্বওয়ার দিক থেকে সমসাময়িক যুগে শীর্ষস্থানীয় ছিলেন। ইসলামী শরীয়তের যাবতীয় হুকুম আহ্কাম খুব দৃঢ়তার সাথে পালন করতেন। তিনি কুতুবুল মাশায়িখ হযরত নিজামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সমসাময়িক ছিলেন। সামার মাহফিল শ্রবণের ব্যাপারে তিনি হযরত শায়খ নিজামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সাথে সর্বদা সহযোগিতা করতেন (খোঁজখবর রাখতেন)। হযরত খাজা নিজামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি সাধারণত বিনা প্রয়োজনে কোথাও বের হতেন না, কিন্তু হযরত মাওলানা জিয়াউদ্দীন সানামী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর তা’যীম-তাকরীম বা সাক্ষাত-এর ক্ষেত্রে সামান্য সময়ও বিলম্ব করতেন না। ‘নিছাবুল ইহতিসাব’ তাঁর একটি প্রসিদ্ধ গ্রন্থ। যাতে সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিভিন্ন বিদয়াতের বিরুদ্ধে এবং আহকামে শরীয়তের বিভিন্ন বিষয় সন্নিবেশিত হয়েছে।
বর্ণিত আছে যে, স্বয়ং হযরত খাজা নিজামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত খাজা জিয়াউদ্দীন সানামী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মুমূর্ষ সময় তাঁর সেবা শুশ্রুসা করার জন্য তাশরীফ এনেছিলেন। তখন হযরত মাওলানা খাজা জিয়া উদ্দীন সানামী রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বীয় খাদিমদেরকে তাঁর পাগড়ী মুবারক বিছিয়ে দেয়ার জন্য বললেন। যাতে হযরত নিজামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উহার উপর দিয়ে হেটে আসেন। কিন্তু হযরত খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উক্ত পাগড়ী মুবারক তুলে বুছা দিয়ে তা স্বীয় চক্ষু মুবারকে বুলালেন। অতঃপর যখন হযরত খাজা নিজামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকটে গিয়ে বসলেন তখন হযরত মাওলানা জিয়াউদ্দীন সানামী রহমতুল্লাহি আলাইহি লজ্জায় চক্ষু মুবারক খুলেননি। হযরত খাজা নিজামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি সেখান থেকে বাইরে বের হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই ভিতর থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসল যে, হযরত খাজা জিয়াউদ্দীন সানামী রহমতুল্লাহি আলাইহি বিছাল শরীফ লাভ করেছেন। তখন হযরত শায়খ নিজামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি খুব ভারাক্রান্ত হয়ে বললেন, হযরত খাজা জিয়াউদ্দীন সানামী রহমতুল্লাহি আলাইহি শরীয়ত জিন্দাকারী একজন বিশেষ মর্দে মুজাহিদ ছিলেন। আফসুস যে, আজকে তিনি দুনিয়াতে নেই। মহান আল্লাহ পাক উনার উপরে রহমত বর্ষণ করুন। (আমীন)