মূল হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছে দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ভাষান্তরঃ মাওলানা মুহম্মদ ফজলুল হক
হযরত খাজা শামসুদ্দীন
রহমতুল্লাহি আলাইহি
(৬৬৫হিজরী-৭২২ হিজরী)
হযরত খাজা শামসুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আমীর খসরু দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ভাতিজা এবং সেই যামানার একজন বড় আলিম ছিলেন। হযরত খাজা নিজামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সাথে উনার সীমাহীন সুসম্পর্ক ও মুহব্বত ছিল। ২বলা হয়েছে নামাযের নিয়ত করার সময় যতক্ষন পর্যন্ত শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহিকে না দেখতেন ততক্ষনে তাকবীরে তাহরীমা বাধতেন না। নামাযের কাতার থেকে মাথা বের করে দিয়ে শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দীদার লাভে ধন্য হতেন। অতঃপর আল্লাহু আকবার বলে তাকবীরে তাহরীমা বাধতেন। শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মুমূর্ষ অবস্থায় তার সেবা শুশ্রুষার লক্ষে তাকে দেখতে গিয়েছিলেন, পথিমধ্যে সংবাদ আসল যে, তিনি ইন্তিকাল করেছেন। তখন শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, আলহামদুলিল্লাহ। বন্ধুর (আল্লাহর) সাথে বন্ধুর সাক্ষাত হয়ে গেল। হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মাযার শরীফের পাশেই তাকে দাফন করা হয়। যাকে মানুষ মীর সাহেব-এর ভাতিজার কবর বলে থাকে সম্ভবত সেটাই হযরত খাজা শামসুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মাযার শরীফ।
হযরত খাজা জিয়াউদ্দীন বারুনী
রহমতুল্লাহি আলাইহি
(৬২৯ হিজরী-৭৩৮ হিজরী)
হযরত খাজা জিয়াউদ্দীন বারুনী রহমতুল্লাহি আলাইহি “তারিখে ফিরোজশাহী” কিতাবের লিখক ছিলেন। তিনি হযরত খাজা নিযামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর একজন খাছ মুরীদ ও তাঁর দয়া ও ইহ্সানে বিশেষ মর্যাদার আসনে সমাসীন হয়েছিলেন। তিনি সর্বপ্রকার বানীসমূহ ও ঘটনাবলী বিশেষভাবে স্মরণ রাখতে পারতেন। উলামায়ে কিরাম, মাশায়েখে ইজাম এবং কবি সাহিত্যিকদের মাহফিল বা মজলিসসমূহে তিনি লুত্ফ বা জজবা উঠাতেন। হযরত আমীর খসরু ও মীর হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সাথে তাঁর সীমাহীন মুহব্বত ছিল। তাঁদের দু’জনার কাছ থেকেই তিনি ফয়েজ তাওয়াজ্জুহ হাছিল করেছিলেন। প্রথমত তিনি শায়খ নিযামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট বাইয়াত হয়ে গিয়সপুরে অবস্থান করতে লাগলেন এবং শেষ জীবনে স্বভাবগত ও বন্ধুত্যের কারণে সুলতান মুহম্মদ তুঘলক বাদশা এর খাছ সঙ্গী হয়েছিলেন। সুলতান মুহম্মদ তুঘলক এর ইন্তিকালের পরে বাদশা ফিরোজ শাহ এর যামানায় জীবনের সমস্ত অত্যাবশ্যকীয় বিষয়াবলীর ব্যাপারেই তিনি অল্পে তুষ্টি অর্জন করে একাকীত্ব জীবন যাপন শুরু করলেন। দুনিয়া থেকে বিদায়ের সময় তিনি সম্পূর্ণ খালী হাতে এবং পুত পবিত্র হিসাবে মহান আল্লাহ পাক-এর দীদারে তাশরীফ নিয়েছিলেন। বলা হয় হযরত খাজা সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর জানাযার অল্প কিছু দিন পরে তিনি বিদায় নেন। এবং খাজা নিযামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর কবরস্থানে তাঁর মায়ের মাযার শরীফের পার্শ্বেই তাকে দাফন করা হয়।
সিয়ারুল আওলিয়া কিতাবের মধ্যে রয়েছে হযরত খাজা জিয়াউদ্দীন বারুনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তার হসরতনামাতে লিখেছেন যে, আমি একদিন ইশরাক থেকে চাশতের সময় পর্যন্ত হযরত খাজা নিযামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর খিদমতে ছিলাম এবং তাঁর কামালিয়াতপ্রাপ্ত রূহ মুবারক হতে ফয়েজ তাওয়াজ্জুহ হাছিল করলাম। সেদিন অনেক লোক তাঁর কাছে বাইয়াত হতে আসতে লাগলেন। তখন আমার অন্তরে এই খেয়াল আসতে লাগল যে, অতীতের মাশায়িখগণ বাইয়াত করানোর ব্যাপারে অনেক যাচাই বাছাই করতেন কিন্তু হযরত শায়খ নিযামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বীয় দয়া ও ইহ্সানের কারণে আম খাছ সব ধরনের লোকদেরকেই তিনি বাইয়াত করাতেন। আমার মনে তখন ইচ্ছা হলো যে, বাইয়াত করানোর ব্যাপারে যাচাই বাছাই না করার কারণ জিজ্ঞাস করব। শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি কাশফ-এর ব্যাপারে একজন বড় আলিম ছিলেন যার কারণে আমার অন্তরের বিষয় মহান আল্লাহ পাক তাঁকে জানিয়ে দিয়েছেন। তখন তিনি আমাকে বললেন, হে জিয়াউদ্দীন বারুনী (রহমতুল্লাহি আলাইহি) তুমি আমাকে সব কিছুই জিজ্ঞাসা কর কিন্তু আমার সকলকে আমভাবে বাইয়াত করানোর ব্যাপারে কেন প্রশ্ন করনি? অতঃপর বললেন, মহান আল্লাহ পাক প্রতি যামানায় স্বীয় হুকুমত পরিপূর্ণরূপে পরিচালনার জন্য কতিপয় বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট দিয়ে থাকেন যা সেই যামানার রসম বা অভ্যাস হয়ে যায় যা প্রকৃত পক্ষে অন্যান্য যামানার জন্য প্রযোজ্য নয়।
মূল কথা হলো এই যে, মুরীদের চাহিদা শুধুমাত্র এটাই হওয়া আবশ্যক যে, সে আল্লাহ পাক ব্যতীত অন্য সমস্ত কিছু থেকে আলাদা হয়ে শুধুমাত্র আল্লাহ পাক-এর যিকির আযকারের মশগুল হয়ে যাওয়া। (চলবে)