বিশ্ব সমাদৃত হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের অনুপম মুবারক চরিতগ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার-১৫৬

সংখ্যা: ১৯৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

মূল: হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছে দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি,

ভাষান্তর: মাওলানা মুহম্মদ ফযলুল হক

হযরত শায়খ হুসাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি

(৮২০-৯০১ হিজরী)

পূর্ব প্রকাশিতের পর

স্মরণ রাখবে যে, পানি বিদ্যমান থাকাই উহার জাত-এর বিদ্যমান থাকার অনুরূপ এবং খোদ উহার জাতই ব্যবহৃত হয়। এই পানিই সমস্ত শস্য ক্ষেতে এক খাছ তাছির করে থাকে এবং পানি তার নিজস্ব গুণের কারণেই সমস্ত গাছ গাছালিকে তরুতাজা রাখে, ফুলের মধ্যে বিভিন্ন রঙের সৃষ্টি করে, ফলের মধ্যেও মূলত পানির গুণ বিদ্যমান। গাছের ফল, পাতা, কা-, ডালপালা, ফুল ইত্যাদি সবকিছুর মধ্যেই পানির একটা তাছির বিদ্যমান থাকে। এই পানিই সবকিছুতে বিভিন্ন রকম রঙ ও ছূরত তৈরি করে। পানির মধ্যে যেমন এতই তাছির রয়েছে সেজন্যই সমস্ত কিছুই পানির প্রয়োজন অনুভব করে বা মুখাপেক্ষী হয়। আর এ কারণেই উহার দ্বারা সবকিছু পৃথক করার যোগ্যতা হাসিল হয়। এটাই পানি নামের তাছির বা গুণ। এতে কোনই সন্দেহ নেই যে, পানি তার হাক্বীক্বী গুণের কারণেই এরূপ তারতম্য করে দিতে পারে। আসলে এই পানি নামটি পানির একটি আলামত চিহ্ন বা পরিচিতি। এটা উহার এমনই আলামত যা তার মূল অস্তিত্ব থেকে আলাদা নয়। পানির সর্বপ্রকার তাছির প্রকৃতপক্ষে পানিই হয়ে থাকে। যা উহার নাম ও আলামত উভয়েরই ঐক্যবদ্ধতা। এজন্যই সত্তাগতভাবে পানিকে ছূরতে জামিয়া” বলে এবং উহার দ্বিতীয় নাম হচ্ছে “আলমে এজমাল”। আর পানির সর্বপ্রকার তাছিরকে “ছূরতে মুতাফাররিক্বাহ” ও “আলমে তাফসীল” বলে। কেননা পানির মধ্যে হাজার হাজার শেকেল ও ছূরত বিদ্যমান রয়েছে। ওই সকল ছূরতই পানির পরিপূর্ণতা জাহির করে। সুতরাং অন্য কোন প্রকারের তৃণলতা, উদ্ভিদ ইত্যাদি যদি দেখতে চাও তবে পানিকেই দেখ। পানির মধ্যেই মহান আল্লাহ পাক উনার

اينما تولوا فثم وجه الله

এ আয়াত শরীফ-এর বা এ মহান ছিফত-এর তাছির বিদ্যমান আছে।

অতঃপর খেয়াল করে শ্রবণ কর, মহান আল্লাহ পাক উনার পূত পবিত্রতম জাতে পাক সর্বপ্রকার প্রশংসনীয় গুণাবলী তথা উপরে, নিচে, ডানে, বামে, সামনে, পিছনে ইত্যাদি সর্বত্র বিরাজমান এ ধরনের সর্বপ্রকার মুবারক গুণাবলী থেকেও অনেক ঊর্ধ্বে। এজন্য যে, তিনি অপরিসীম ও সীমাহীন নূর অর্থাৎ হিদায়েত দানকারী বা সকল নূরের ¯্রষ্টা। সীমা আছে এমন জিনিসের অন্তর্ভুক্ত তিনি কখনোই নন। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রকার শুরু, শেষ, অবস্থান, পরিবর্তন, পরিবর্ধন ইত্যাদি সর্বপ্রকার অবস্থা থেকেও পবিত্র। অনুরূপভাবে তিনি সর্বপ্রকার তাগাইউর, তাবদীল, তাকছীম, ফানা হওয়া ও না হওয়া ইত্যাদি সর্বপ্রকার ছিফত থেকেও ‘ওয়ারাউল ওয়ারা’। প্রকৃতপক্ষে তিনি এক ও অদ্বিতীয়, উনার পূত পবিত্রতম জাতে পাক-এর মধ্যে কোন প্রকার কাছরত বা আধিক্যতার সম্ভাবনা নেই।

যখন আমার এই ভূমিকামূলক আলোচনা আপনার অন্তরে অনুধাবন করেছেন তখন আপনি আরো ভাল করে বুঝে নিন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনিই সমস্ত কায়িনাতের হাক্বীক্বী আলো দানকারী বা হিদায়েত দানকারী। কোন প্রকার সীমা ও পরিশেষ এর অন্তর্ভুক্ত তিনি নন। কম বেশি হওয়ার সর্বপ্রকার ছিফত থেকে তিনি পবিত্র।

মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক হিদায়েত- এর অন্য অনেক ছূরত রয়েছে। উক্ত হাক্বীক্বী হিদায়েতের তাছিরও ভিন্ন ভিন্ন। তবে হিদায়েতের এই নূর মহান আল্লাহ পাক উনার হাক্বীক্বত মুবারক থেকে আম বা ব্যাপক এবং উহা সমস্ত অস্তিত্ববান জিনিস-এর মধ্যেই বিরাজমান। ওই হাক্বীক্বী হিদায়েত মুবারক-এর তাছিরও ভিন্ন রকম হয়ে থাকে।

যখন আপনি এই কথাগুলো বুঝলেন তখন আপনি এটাও জেনে নিন যে, মহান আল্লাহ পাক উনার জাতে পাক মুবারকই সমস্ত মওজুদাতকে অন্তর্ভুক্ত করে। ওই মুবারক ছিফতের কারণে ও উহার বরকতময় তাছিরের কারণে সমস্ত কায়িনাতের মধ্যে বিভিন্ন ছূরতের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।

হে ভাই! এই মুবারক হিদায়েতের প্রভাব সমস্ত জিনিসের মধ্যেই ব্যাপকভাবে রয়েছে। মূলত সমস্ত জিনিসের বিদ্যমান থাকা ও না থাকাই মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক কুদরতের উপরেই নির্ভরশীল; দুনিয়াতে এমন কোন বিন্দু পরিমাণ জিনিসও নেই যার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক কুদরতের ইহাত্বা বা পরিবেষ্টন নেই। মুবারক কুদরতের এরূপ ইহাত্বাকে “ওয়াজহে নূর” বলে। যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরতী ওয়াজহ (চেহারা) মুবারক পর্যন্ত পৌঁছে যান বা হাসিল করেন তিনি মূলত মহান আল্লাহ পাক উনার মেছালী ছুরত মুবারক দেখতে পান। তিনি দেখে দেখেই উনার ইবাদত করে থাকেন অর্থাৎ অবস্থান করেন। যদিও বাতিলপন্থি একেশ্বর বাদীদের দৃষ্টিতে এই পরিভাষা শিরক।

وما يؤمن اكثرهم بالله الا وهم مشركون

অর্থ: অধিকাংশ লোক মহান আল্লাহ পাক উনার উপরে ঈমান আনয়নের ব্যাপারে মুশরিক হয়ে যায়। (অসমাপ্ত)

বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার- ১৩৭

বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার- ১৩৮

বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার- ১৩৯

বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার-১৪০

বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার-১৪১