হযরত শায়খ হুস্সামুদ্দীন মুলতানী
রহমতুল্লাহি আলাইহি
হযরত খাজা নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি নছীহত প্রসঙ্গে আরো বললেন, দরবেশ তথা আল্লাহওয়ালা লোকদের ব্যক্তিত্বহীন হওয়া অনুচিত। এটা দুধরনের- ১. ছুরী ২. মা’নুবী। ছুরি (যাহিরী) বা আকৃতিগতঃ এমন দরবেশ যে মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে সাহায্য তলব করে। আর মা’নুবী হলো এমন দরবেশ যে নিজের ঘরে অবস্থান করে ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থেকেই অন্তরে অন্তরে মানুষের অর্থের লালসা রাখে। ছুরী দরবেশ প্রকাশ্য ফকীরের ন্যায় যে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ভিক্ষা করে। যাহিরী দরবেশ মা’নুবী দরবেশ থেকে এজন্য উত্তম যে, সে প্রকাশ্যেই সবকিছু করে, মানুষের মাঝে নিজেকে নিজেই প্রকাশ করে অর্থাৎ তার ভিতর বাহির একই রকম। কিন্তু মা’নুবী দরবেশ সে সর্বত্র বাতিনই থাকে। অর্থাৎ সে নিজের ঘরে থেকেই দিবারাত্রি ইবাদত বন্দেগী করাকে প্রকাশ করে যাদ্বারা আভ্যন্তরীনভাবে তার গায়রুল্লাহই উদ্দেশ্য। সে যাহিরী দরবেশের চেয়ে উত্তম নয়। (যাহির ও বাতিন উভয়ই পরিশুদ্ধ হলেই সে হাক্বীক্বীভাবে উত্তম)।
মাওলানা শায়খ হুস্সামুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, একদা আমি আমার শায়খ হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহিকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, মানুষ আমার কাছে কারামত দেখতে চায়। শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, শরীয়তের উপর পরিপূর্ণ ইস্তিক্বামত থাকাই হাক্বীক্বী কারামত। মানুষ যতই কারামত তলব করুক না কেন আপনি আপনার নিজের কাজেই মশগুল থাকুন। বর্ণিত আছে যে, সুলতান মুহম্মদ তুখলক যে বছর দিল্লির একটি নুতন শহর “দেওগীর” আবাদ করার জন্যে দিল্লি থেকে রওয়ানা হলেন তখন মাওলানা শায়খ হুস্সামুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি দিল্লি থেকে গুজরাটে চলে গেলেন। আল্লাহ পাক-এর রহমতে গুজরাটের পাঠান এলাকাই তার অবস্থান স্থল নির্ধারিত হল। সেখানেই তাঁর মাযার শরীফ অবস্থিত।
মাওলানা ফখরুদ্দীন ঝরাদী
রহমতুল্লাহি আলাইহি
মাওলানা ফখরুদ্দীন ঝরাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি মস্তবড় ওলী আল্লাহ, অনেক ইলমের অধিকারী ও মুত্তাক্বী ছিলেন। তিনি হযরত খাজা নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর খলীফা ছিলেন। শরীয়তের উপর পরিপূর্ণরূপে ইস্তিক্বামত ছিলেন। প্রথম জিন্দিগীতে দিল্লিতে মাওলানা ফখরুদ্দীন হান্সি রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর কাছে তিনি ইলমে দ্বীন হাছিল করেন। স্বীয় মেধা, বুদ্ধিমত্তা ও সুস্পষ্ট ভাষা জ্ঞানের কারণে স্বীয় শহরের প্রসিদ্ধ ব্যক্তিদের অন্তর্ভূক্ত হয়েছিলেন। শেষ জিন্দিগীতে তিনি হযরত খাজা নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মজলিসে হাজির হলেন। সেখানে তিনি শীর্ষস্থানীয় ছাত্রদের শিরোমনি হয়ে পরিশেষে দরবেশ (আল্লাহওয়ালা)গণের অন্তর্ভূক্ত হয়ে মানব কল্যানে আত্মনিয়োগ করলেন। স্বীয় শায়খের বিদায়ের পর যমুনার কিনারে স্বীয় অবস্থানস্থল নির্ধারণ করেন। সেজন্যে তাঁকে ফিরোজাবাদী বলা হতো। কিছুদিন “হু’জে ইলায়িতে” অবস্থান করেন এবং অনেক দিন পর্যন্ত বসনাবন্দ (একটি পাহারের মধ্যবর্তী স্থান) নামক জায়গায় আল্লাহ পাক-এর ইবাদত-বন্দিগীতে মশগুল ছিলেন। তাঁর যামানাতে সেই এলাকা বাঘ, ভল্লুক ইত্যাদির আবাসস্থল ছিল। এর পরেই তিনি সূলতানুল হিন্দ হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশ্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মুবারক জিয়ারতের উদ্দেশ্যে আজমীর শরীফ গমন করেন। তথা হতে হযরত শায়খ ফরীদুদ্দীন গঞ্জে শোকর রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর জিয়ারতের জন্য পাক পাটন যান। মূল কথা এই যে, হযরত মাওলানা ফখরুদ্দীন ঝরাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি জীবনের অধিকাংশ সময়ই ছফরে কাটান। বনজঙ্গলে ইবাদত-বন্দিগী করেন এবং অধিকাংশ সময়ই রোযা রাখতেন। বর্ণিত আছে যে, মাওলানা ফখরুদ্দীন ঝরাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি একবার হযরত খাজা নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট জানতে চাইলেন যে, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত উত্তম, না আল্লাহ পাক-এর যিকির করা উত্তম? হযরত খাজা নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, যিকির করনেওয়ালা যদিও তাড়াতাড়ি মঞ্জিলে মকসুদে পৌঁছতে পারে তবে (যথাযথ আদব, তমীয বজায় না রাখতে পারলে) তার পদস্খলনেরও সম্ভাবনা রয়েছে। আর কুরআন শরীফ তিলাওয়াতকারী (সাধারণ লোক হওয়ার কারণে) দেরীতে মঞ্জিলে মকসুদে পৌছলেও তার পদস্খলনের সম্ভাবনা থাকে না।
বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার-১০