ভাষান্তরঃ মাওলানা মুহম্মদ ফযলুল হক
হযরত শায়খ হুসাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি
(৮২০-৯০১ হিজরী)
পূর্ব প্রকাশিতের পর
একথা স্বতঃসিদ্ধ যে, সর্বদা পানি পান করার দ্বারা শারীরিক গরম অবস্থা দূরীভূত হয় এবং পিপাসাও নিবারণ হয়। যখন কোন ব্যক্তি প্রচুর ক্ষুধার্ত হয় এবং পেট ভরে খানা খায় তখন সাধারণভাবেই সে পানি ব্যবহার করে। কিন্তু মূল কথা এই যে অধিক পরিমাণে ক্ষুধার্ত থাকাই- তার জন্য যথোপযুক্ত। এজন্যই মানুষ খুব বেশি করেই খাদ্য খায় আর এভাবেই বছরের পর বছর অতিবাহিত করে। হাক্বীক্বত কখনোই অধিক আহার দ্বারা কোন ফায়দা লাভ হয়না।
এর বিপরীতে অধিক পরিমাণে ক্ষুধার্ত থাকা অথবা রাত্রি জাগরণ করা যাতে কোন ওযুরই প্রয়োজন হয়না অথবা যৎসামান্য ঘুমিয়ে উঠে ওযু করে সারারাত ইবাদতে কাটিয়ে দেয়া ইত্যাদি সবই কল্যাণকর কাজ। এই সকল কার্যাবলীর মাধ্যমেই অন্তরের পবিত্রতা ও লজ্জাশীলতা অর্জিত হয়। যদি কারো কম বাক্যলাপের অভ্যাস ও অধিক যিকির-আযকারের মানসিকতা একইসাথে অর্জিত হয় তাহলে এর মাধ্যমেও ক্বলবের পবিত্রতা হাসিল হয়। কেননা ক্বল্ব্ বা দিলের হিফাযতই হচ্ছে উঁচু মর্যাদা লাভের কারণ। আর এর জন্য মূলত জিসমানী শক্তি ও যৌবনের জোর প্রয়োজন।
প্রতিদিন একটি সময় নির্ধারিত করে তখন প্রয়োজন মাফিক খাওয়া দাওয়া করে নিবে। অতঃপর অন্যান্য সকল বিষয়াবলী থেকে পৃথক হয়ে রাতে হুযূরী ক্বলবের সাথে আল্লাহ পাক-এর মা’রিফত মুহব্বত হাসিলের কোশেশ করবে। সাথে সাথে মহান আল্লাহ পাক-উনার রুবুবিয়্যত, মুবারক আক্বওয়াল, আফয়াল, ইজ্জত, হুরমত প্রভাব, প্রতিপত্তি ইত্যাদিকে প্রত্যক্ষ করতে থাকবে।
মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-
وهو معكم اينما كنتم
অর্থ: “তোমরা যেখানে যে অবস্থায়ই থাক না কেন আল্লাহ পাক তোমাদের সাথেই আছেন।”
এমনভাবে রিয়াযত মাশাক্কাত করবে যাতে এই আয়াত শরীফ-এর মিছদাক হতে পার। যদি এমন মাক্বাম তুমি হাসিল করতে পার, আর অধিকাংশ সময় এ আয়াত শরীফ-এর মুরাকাবায় থাকতে পার তবে মহান আল্লাহ পাক-উনার এহেন তায়াল্লুককে সবচেয়ে বড় সম্পদ মনে কর।
শের:
ہر کہ درد اہل ہزدر اہل عیب- أفتا بے دارد انرد جیب وغیب عاقبت روزے بود کاں آفتاب. دربرش گیرد براندازد نقاب
যে ব্যক্তি আহলে আয়েব থেকে আহলে হুনর হয়ে যায় প্রকৃতপক্ষে তিনি এক গোপন সূর্যের বাহক। পরিশেষে তিনিই একদিন হিদায়েতের সূর্য হয়ে যাবেন।
যদি কোন ব্যক্তি এই সকল গুণাবলী হাসিল করতে নাও পারে তবে কোন আফসুস না করে অন্যান্য অযীফাসমূহ অনুযায়ী আমল করতে থাকবে। শের:
از بخت بدم اگر فروشد خورشید- از نور رخت مہا چراغی گیرم
যদি আমার বদ আমলের দ্বারা চন্দ্র নিভেও যায় (তাতে কি হবে?) হে চাঁদ! তোমার নূরের পরিবর্তে অন্য বাতি থেকেও আমি আলো সংগ্রহ করতে পারবো।
যখন তোমার কার্যকলাপ বীর বাহাদুর লোকদের অনুরূপ না হবে তখন তুমি এহেন অপারগতার কারণে নিরাশ হয়োনা। বরং কাজ বা কোশেশ করতে থাকে। নিজের পক্ষ থেকে নিজের সমস্ত কাজ-কর্ম, কথা-বার্তা, মুয়ামিলাত, মুয়াশিরাত ইত্যাদি ক্ষেত্রে সর্বাবস্থায়ই কোশেশে মশগুল থাক। হক্ব মত-পথের কোন কিছুই তরক করো না।
সর্বদা হক্ব মত ও পথে ইস্তিক্বামত থাকবে। উপরোক্ত সকল নছীহত সঠিকভাবে পালন করলেই দীন ও দুনিয়াতে তথা উভয় জাহানে কামিয়াবী হাসিল করতে পারবে।
মাকতুব: মহান আল্লাহ পাক অধিক রিয়াযত মাশাক্কাতকারী তথা অধিক হিম্মতী লোকদেরকে সর্বাধিক মুহব্বত করেন। আর কমীনা শ্রেণীর লোকদেরকে অপছন্দ করেন। মূলত বুলন্দ হিম্মতী হচ্ছে দুনিয়াতে যা কিছুই হোক না কেন কেবলমাত্র দুনিয়াবী বিষয়াদীর প্রতি নজর দিবে বা দেখবে, হাক্বীক্বত সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহ পাক-উনার সন্তুষ্টি বা রেযামন্দী হাছিলে মশগুল থাকবে। হযরত শায়খ আব্দুল্লাহ তাসতারী রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজের নফসকে উদ্দেশ্য করে বলতেন, হে আব্দুল্লাহ! দুনিয়াতে নিজের খাহেশাতে নফসানী তথা কু-প্রবৃত্তির খিলাফ করার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই নেই। ছূফিয়ানে কিরামগণ নফসে আম্মারার সাথে শেষ জীবন পর্যন্ত জিহাদ করতে থাকেন। যদি কখনো নফসের অনুসরণ হয়েই যায় তবে সম্পূর্ণরূপে অনিচ্ছাকৃত। বাহ্যিক বা ইচ্ছাকৃতভাবে মোটেও নয়। মূলত এই শ্রেণীর বুযূর্গগণ উনাদের যাহিরকে বাতিন-এর মাধ্যমে পরিশুদ্ধ করতে চান। সেজন্য উনার কোন আমলে যাহির-বাতিন পৃথক হলেও তাঁর দ্বারা কোন নিফাক্বি প্রকাশ পায় না। (চলবে)