হযরত শায়খ শরফুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি
(৬৫২-৭২৪ হিজরী)
পুর্ব প্রকাশিতের পর
হে ভাই কিছু গুড় চিনি হাতে নিয়ে তাদ্দ¦ারা বিভিন্ন ছূরতের শত শত গোলাকৃতির গোল্লা বানিয়ে প্রত্যেকটির আলাদা আলাদা নামকরণ করো। যেমন কোনটির নাম ঘোড়া, কোনটির নাম হাতি ইত্যাদি রাখ। যতক্ষণ পর্যন্ত ওইগুলি তোমার তৈরিকৃত ছূরতে থাকবে ততক্ষণই মানুষ উহাকে ওই (মূর্তির) ছূরতে ডাকবে ‘কিন্তু যদি উহাকে পানিতে ভিজিয়ে বা অন্য কোনভাবে উহার ছুরতকে মিটিয়ে দেয়া হয় তখন আর কেউ উহাকে ওই ছুরতে বলবেনা বরং উহার গুড় বা চিনিই বলা হবে।
তিনি অন্য একটি মাকতুব-এর মধ্যে ইরশাদ করেছেন, ওহে ভাই! মানুষের কোন খবরই নেই যে, মানুষকে কেন তৈরি করা হয়েছে, মানুষ কি করতেছে, কি করবে, প্রকৃতপক্ষে তার কি করা উচিত? এ সমস্ত বিষয় মানুষের কোন চিন্তাই নেই। আমি সর্বদা ওই পাঁচ বা ছয়টি বিষয়ের মধ্যে পরীক্ষিত হচ্ছি, কিছুই আমার বুঝে আসছে না। কখনো এমন খেয়াল আসে যে, তিনি (স্রষ্টা) আমার দিলের আয়নাকে এজন্য পরিচ্ছন্ন করেছেন যাতে আশিক ব্যক্তিগণ উহাতে স্বীয় সৌন্দর্য দেখতে পায়। উহার মাধ্যমে নিজেকে নিজে আশিক হিসেবে উপলব্ধি করতে পারে। আশিক ব্যক্তির জন্য ফরয বা আবশ্যক হচ্ছে, সে মাশুক এর সমস্ত আহকামের ফরমাবরদারী করবে, উনার মত পথে চলার কোশেশ করবে এবং ইশক মুহব্বতের সাথেই দিনাতিপাত করবে ওই উত্তম অবস্থার মধ্যে বিলীন হয়ে দুনিয়াবী সবকিছু থেকে বিরাগ হয়ে যাবেন। এবং অভ্যন্তরীণভাবে যা কিছু হয় তা দেখে উহার উপরে আমল করতে হবে।
হে ভাই! কখনো মানুষের মধ্য দুনিয়াবী খেয়াল আসলে তৎক্ষণাতই দুনিয়া কামাইয়ে মশগুল হয়ে যায়। এ অবস্থায় সে দুনিয়াবী কাজে অধিক পরিমাণে মজাও পেয়ে থাকে। তখন সে হয়রান পেরেশান হয়ে দুনিয়া প্রত্যাশীদের প্রতিও আকৃষ্ট হয়। মূলত: দুনিয়ার আশিক ও মাশুক উভয়ই লাঞ্ছিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। এ দু’ব্যক্তি দুনিয়ার মধ্যে বিলীন হয়ে নিজের ক্ষতি বা অনিষ্টতাকেও সে ভুলে যায়। শেষ পর্যন্ত দায়িমীভাবেই তার এমন অবস্থা হয় যে, তার থেকে কি করার ওয়াদা নেয়া হয়েছিল এবং কি করতে নিষেধ করা হয়েছিল তাও সে ভুলে যায়। এমনকি মৃত্যুকেও সে ভুলে যায়। দুনিয়ার আশিক ব্যক্তি দুনিয়ার চাকচিক্যের প্রতি এমনভাবে মনোনিবেশ করে যে, পরকালীন কোন কিছুরই খবর সে রাখে না। দুনিয়াকে এমনভাবেই তার মাশুক বানায় যে, শেষ পর্যন্ত সে যা ইচ্ছা তাই করে। এছাড়া দুনিয়ার আশিক ব্যক্তি শুধুমাত্র ওই কথার প্রতিই দৃষ্টি রাখে যে, পরকাল হবে। (পরকালীন হিসাব নিকাশ ইত্যাদি সবই সে ভুলে যায়)
হে ভাই! এই বিষয়টি তুমি খুব ভালভাবে উপলদ্ধি কর যে, তুমি একটি কঠিন মুছীবতের মধ্যে রয়েছ সুতরাং তোমার একজন অন্তরঙ্গ বন্ধু আবশ্যক। সাবধানতার সাথে শ্বাস-নিশ্বাস ত্যাগ কর এবং দৃঢ়ভাবে এই কথা ইয়াকীন কর যে, তুমি বর্তমানে নফসে আম্মারা বা প্রকৃতির গোলাম হয়ে গিয়েছো। উহা থেকে কিভাবে পরিত্রাণ পাবে তা গভীরভাবে ফিকির কর।
হে ভাই! কারোই জানা নেই যে, মানুষের চিন্তা-ফিকির বা খেয়াল (কৃপ্রবৃত্তি) কিভাবে মানুষকে খারাপ অবস্থার দিকে নিয়ে যায়। যখন কারো কোন বদ নছীবি প্রকাশ পায় তখন জানা যায় যে এই বদ নছীবি বা বদ বখতী মূলত খারাপ খেয়ালেরই ফসল।
হে ভাই! আমি বলতেছি বা কি করতেছি তা কোন কিছুরই খবর আমার নেই। আমার কাছে আমার কোন কাজেরই খেয়াল নেই। তবে আমার যবান মহান আল্লাহ পাক উনার তত্ত্বাবধানে রয়েছে সেজন্য আমার মুখ দিয়ে এমন সব কথাই বের হয় যাতে উভয় জাহানে কল্যাণ লাভ করা যায়।
ওহে ভাই! আমার কাছে এটা জরুরী মনে হচ্ছে যে, তুমি নিজেকে নিজে উপলদ্ধি কর। মহান আল্লাহ পাক তিনি যা ইচ্ছা তাই করে থাকেন উনার কোন কাজ বা ইচ্ছার মধ্যে কারোই কোন দখল বা অধিকার নেই। (চলবে)