৩৩তম ফতওয়া হিসেবে
“মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া”-
পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
সম্মানিত চার মাযহাব হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বলী উনাদের সম্মানিত প্রতিষ্ঠাতা ও ইমাম উনাদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি মুবারক
সম্মানিত শরীয়ত অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের ফায়ছালা মতে প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ-মহিলা, জ্বিন-ইনসান সকলের জন্য সম্মানিত চার মাযহাব উনাদের যেকোনো একটি সম্মানিত মাযহাব উনাদের অনুসরণ করা যেরূপ ফরয-ওয়াজিব তদ্রƒপ সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মাযহাব পরিবর্তন করা বা এক মাযহাবের অনুসারী হয়ে অন্য মাযহাবের উপর আমল করা জায়িয নেই।
এ প্রসঙ্গে মুসলিম শরীফ উনার বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘মুসলিম শরীফ উনার’ টিকায় এবং ইমাম তাহাবী ‘দুররুল মুখতার’ কিতাবের হাশিয়াতে লিখেন-
عَلَيْكُمْ يَا مَعْشَرَ الْـمُؤْمِنِيْنَ اِتِّبَاعُ الْفِرْقَةِ النَّاجِيَةِ الْـمُسَمَّاةِ بِأَهْلِ السُّنَّةِ وَالْـجَمَاعَةِ فَأِنَّ نَصْرَةَ اللهِ وَحِفْظَهٗ وَتَـوْفِيْـقَهٗ فِيْ مُوَافِقَتِهِمْ وَخَذَلًالَّهٗ وَسَخْطَهٗ وَمَقْتَهٗ فِيْ مُـخَالِفَتِهِمْ وَهٰذِهِ الطَّائِفَةُ النَّاجِيَةُ قَدْ اِجْتَمَعَتِ الْيَوْمَ فِيْ مَذْهَبِ أَرْبَعٍ وَهُمُ الْـحَنَفِيُّـوْنَ وَالْـمَالِكِيُّـوْنَ وَالشَّـفِعِيُّـوْنَ وَالْـحَنَبِلِيُّـوْنَ رَحِـمَهُمُ اللهُ وَمَنْ كَانَ خَارِجًا مِّنْ هٰذِهِ الْأَرْبَعَةِ فَـهُوَ أَهْلُ الْبِدْعَةِ وَالنَّارِ
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! আপনারা নাজিয়া (নাজাতপ্রাপ্ত) দলকে অনুসরণ করে চলুন যা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ নামে মশহূর। কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার সাহায্য, হিফাযত ও তাওফীক্ব অর্জন সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের অনুসরণের মাধ্যমেই সম্ভব এবং মহান আল্লাহ পাক উনার অসন্তুষ্টি, গযব ও অপদস্ততা উনাদের সাথে বিরোধিতার কারণেই। আর ‘আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত’ বর্তমান যুগে চার মাযহাবে বিভক্ত। উনারাই হলেন সম্মানিত হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বলী মাযহাব। আর যারাই বর্তমানে এ ৪ মাযহাব বহির্ভূত তারাই বিদয়াতী ও জাহান্নামী। (তাম্বিহ ৪৬৬ পৃষ্ঠা)
অনুসরণীয় সকল ইমাম মুজতাহিদ উনারা এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন যে, অনুসরণীয় ও গ্রহণযোগ্য মাযহাব হচ্ছে চারটি।
১। হানাফী ২। মালিকী
৩। শাফিয়ী ৪। হাম্বলী।
সম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন ইমাম আ’যম ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি।
সম্মানিত মালিকী মাযহাব উনার প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি।
সম্মানিত শাফিয়ী মাযহাব উনার প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি।
সম্মানিত হাম্বলী মাযহাব উনার প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি।
নিম্নে সংক্ষিপ্তভাবে উনাদের পরিচিতি ও সাওয়ানেহ উমরী মুবারক তুলে ধরা হলো-
পূর্ব প্রকাশিতের পর
সাইয়্যিদুনা ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি মুনাযারা বা বাহাছ
যিনি খ্বালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে যে সম্মানিত ইলিম, আক্বল, সমঝ ও হিকমত মুবারক হাদিয়া করেছেন তা বেমেছাল, তুলনাহীন। উনার মিছাল উনি নিজেই। সুবহানাল্লাহ!
ইমামুল খামিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইমামুল মুত্তাক্বীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম বাকির আলাইহিস সালাম তিনি উনার ইলিম, আক্বল, সমঝ ও হিকমতের পরিচয় পেয়ে অত্যন্ত খুশি হয়েছিলেন। উনার কপাল মুবারকে বুছা দিয়ে বলেছিলেন: “আপনার সম্মানিত ইলিম, আক্বল, সমঝ ও হিকমত মুবারকই আপনাকে শত্রু বানিয়েছে।” অর্থাৎ আপনার সম্মানিত ইলিম, আক্বল, সমঝের মুকাবালা করতে না পারার কারণে প্রতিপক্ষ আপনার সাথে শত্রুতা করে থাকে।
ইমামুল মুসলিমীন, আশিকে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যদি একটি কাঠের খুঁটিকে স্বর্ণের খুঁটি বলতেন, তাহলে আমাদের মাঝে এমন কেউ ছিলেন না যে, উনার বিপরীতে কাঠের খুঁটিকে কাঠ এববং স্বর্নের খুঁটিকে স্বর্ণ প্রমাণ করেন। সুবহানাল্লাহ!
উনার বর্তমানে কোন ব্যক্তিই কোন বিষয়েই উনার সাথে মুকাবালা করে বিজয় লাভ করতে পারেনি। সকলেই উনার কাছে আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়েছিল। কেউই কোন বিষয়ে মুনাযারা বা বাহাছ করে বিজয়ী হতে পারেনি। নিম্নে কয়েকটি বাহাছ বা মুনাযারার বিষয় আলোচনা করা হলো।
অল্প বয়সে খৃষ্টান পাদ্রীর সাথে বাহাছ
ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, সাইয়্যিদুনা ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বয়স মুবারক তখন অল্প। শিশুকালের সেই ঘটনা। কেউ কেউ সাত বছরের কথা উল্লেখ করেছেন। রোমের শাসক এক পাদ্রী বা ধর্মযাজককে অনেক টাকা-পয়সা, ধন-দৌলত, আসবাবপত্র, মাল-সামানা দিয়ে বাগদাদ শরীফে পাঠালো। উদ্দেশ্য মুসলমান আলিম-উলামাগণ উনাদের সাথে মুনাযারা বা বাহাছে লিপ্ত হয়ে খ্রিস্ট ধর্মকে বিজিত করা।
পাদ্রী বাগদাদ শরীফে পৌছে ঘোষণা দিলো যে ব্যক্তি আমার চারটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে আমি তার ধর্ম গ্রহণ করবো। আর আমার নিকট রক্ষিত ধনসম্পদগুলো তাকে পুরস্কার স্বরূপ দিয়ে দিবো।
তবে যে আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না তাকে আমাদের ধর্ম গ্রহণ করতে হবে। আর আমাদেরকে ট্যাক্স বা জিজিয়া কর দিয়ে বশ্যতা স্বীকার করতে হবে। তার এই ঘোষণা যেন পুরো বাগদাদ শরীফের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ আকার ধারণ করলো।
সে পাদ্রী একটি প্রশস্ত রাস্তার মাথায় একটি উঁচু মিম্বর বসালো। তার উপর বসে তার বাহাদুরী জাহির করতে লাগলো। আম-খাছ সবধরণের লোকের উপস্থিতি ঘটলো। পাদ্রীদেরও আনাগোনা শুরু হলো। দিনের পর দিন সেই ভীড় বেড়ে যেতে লাগলো। সে তিনদিন ধরে গলা ফাটিয়ে সেই ঘোষণা দিতে লাগলো। প্রতিবাদী কোন লোকের আগমন না দেখে তার বাহাদুরীর পরিধি বেড়ে গেল।
উক্ত মজলিসে ৭/৮ বছরের একজন বালকের উপস্থিতি ঘটলো। যিনি উনার পিতার সাথে উপস্থিত হয়েছিলেন, এতো লোক একসাথে এখানে কেন জমা হয়েছে তা পর্যবেক্ষণ করার জন্য। বালক দেখতে পেলেন পাদ্রী তার কুট কৌশলের দাপট বাড়িয়ে দিচ্ছে। বাহাদুরী দেখাচ্ছে। কিন্তু কেউ কোন সন্তোষজনক জাওয়াব দিচ্ছে না।
বালক তিনি উনার সম্মানিত পিতা উনার কাছে পাদ্রীর প্রশ্নের জাওয়াব দেয়ার অনুমতি চাইলেন। বললেন, আব্বাজান! আপনি অনুমতি দিলে পাদ্রীর প্রশ্নের সন্তোষজনক জাওয়াব আমি দিতে পারি।
উনার পিতা বললেন, যেখানে অনেক বড় বড় আলিম-উলামাগণ কোন জাওয়াব দিচ্ছেন না, সেখানে আপনি কি জাওয়াব দিবেন? তিনি অনুমতি দিলেন না। পুনরায় বালক সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বীয় পিতার কাছে অনুমতি প্রার্থনা করলেন। পিতা ধমকের সাথে বললেন, আপনি কি প্রলাপ বকছেন? আলিম উলামাদের সামনে আপনার কি বা জাওয়াব দেয়ার প্রমাণ আছে?
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আযম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ভাবগাম্ভির্যের সাথে মিম্বরের উপর বসলেন। বললেন, বলুন! আপনার সেই প্রশ্নাবলী কি কি?
পাদ্রী বললো, প্রথম প্রশ্ন, মহান আল্লাহ পাক উনার পূর্বে কি ছিল?
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, গণিতের সংখ্যাগুলো আপনার স্মরণ আছে কি? স্মরণ থাকলে কিছু সংখ্যা গণনা করুন।
পাদ্রী বললো, এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, পূনরায় বলুন।
পাদ্রী বললো, এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, একের পূর্বে গণনা করুন।
পাদ্রী বললো, একের পূর্বে কিছু নেই। এক থেকে গণনা শুরু হয়।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, যখন রূপক সংখ্যার মাঝে একের পূর্বে কিছু না থাকে, তবে প্রকৃত একক মহান আল্লাহ পাক উনার পূর্বে কি কিছু থাকতে পারে?
পাদ্রী নিরুত্তর রইলো। কিছুক্ষণ পরে মাথা নেড়ে বললো, না কিছু থাকতে পারে না। আপনি ঠিকই বলেছেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, বলো, তোমার দ্বিতীয় প্রশ্ন কি?
পাদ্রী বললো, ২য় প্রশ্ন, মহান আল্লাহ পাক তিনি এখন কোথায় আছেন?
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, তুমি কি একথা বলতে পারো যে, তোমার শরীরে রূহ কোথায়? রূহ তো তোমার ভিতরে স্বয়ং বিদ্যমান আছে।
পাদ্রী বললো, রূহের নির্দিষ্ট কোন স্থান নেই। তা শরীরের সর্বত্র বিদ্যমান।
তিনি বললেন, রূহ যা মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুবারক মাত্র। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন-
يَسْأَلُوْنَكَ عَنِ الرُّوْحِ ۖ قُلِ الرُّوْحُ مِنْ أَمْرِ رَبِّيْ
অর্থ: আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তারা আপনাকে রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। আপনি বলুন, রূহ হচ্ছে, আমার মহান রব আল্লাহ পাক উনার আদেশ মাত্র। অর্থাৎ উনার আদেশে সৃষ্টি হয়েছে।”
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, রূহ যা মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশে সৃষ্টি হয়েছে এবং তা প্রত্যেক প্রাণীর মাঝে বিদ্যমান রয়েছে। অথচ তুমি তার অবস্থানের কথা বলতে পারছো না। তাহলে রূহের সৃষ্টিকারী মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দিষ্ট স্থান ও পরিপূর্ণ মর্তবা কি তুমি উপলব্ধি করতে পারবে? তিনি তো সর্বত্র বিরাজমান। তিনি সর্বত্র হাযির-নাযির।
পাদ্রী ইহা শুনে লা-জাওয়াব (নিরুত্তর) রইলো। ক্ষীণ আওয়াজে বললো, নিঃসন্দেহে আপনার কথা যথার্থ ও বাস্তব।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, তোমার তৃতীয় প্রশ্ন কি?
পাদ্রী বললো, ৩য় প্রশ্ন, মহান আল্লাহ পাক উনার চেহারা মুবারক কোন দিকে?
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উপস্থিত একজনকে বললেন, একটি মোমবাতি নিয়ে আসো। মোমবাতি নিয়ে আসা হলো। উনার নির্দেশে তা জ্বালানো হলো। তিনি পাদ্রীকে উদ্দেশ্য করে বললেন, বাতিটির মুখ কোন দিকে, বলো?
পাদ্রী বললো, বাতিটির মুখ সবদিকে রয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোন দিক নেই। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আয’ম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, বাতি একটি ধ্বংসশীল বস্তু। তার মুখ যদি সবদিকেই থাকতে পারে। চারিদিকে আলোকিত করতে পারে। তাহলে ফিকির করো, মহান আল্লাহ পাক যিনি ওয়াজিবুল ওজুদ এবং আসমান যমীনকে আলোকিতকারী। তাহলে উনার চেহারা মুবারক কেন এবং কিভাবে কোন নির্দিষ্ট দিকে থাকতে পারে?
পাদ্রী হিকমতপূর্ণ জাওয়াব শুনে লা-জাওয়াব- নির্বাক হয়ে গেলো। উপস্থিত সকল লোক সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নূরাণী চেহারা মুবারকের দিকে তাকিয়ে রইলো। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বললেন, বলো, তোমার চতুর্থ প্রশ্ন কি?
পাদ্রী বললো, ৪র্থ প্রশ্ন, মহান আল্লাহ পাক তিনি এখন কি করছেন?
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি এটাই করলেন যে, তোমার মতো বয়সধারী অহঙ্কারী ও পবিত্র তাওরাত শরীফ ও পবিত্র ইঞ্জিল শরীফ-এর অভিজ্ঞ এবং ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসীকে মিম্বর থেকে নীচে নামিয়েছেন। আর আমার মত অল্প বয়সী, একত্ববাদে বিশ্বাসী মুসলমানকে মহান আল্লাহ পাক উনার অনুগত ত্বলিবে ইলিম (ছাত্র) শিশু সন্তানকে মিম্বরের উপর বসিয়ে দিলেন। তোমাদেরকে দিলেন জিল্লত (অপমান) এবং আমাকে দিলেন ইজ্জত (সম্মান)। সুবহানাল্লাহ!
পরে রোমীয় পাদ্রী স্বীয় ওয়াদা ও শর্ত অনুযায়ী পবিত্র কালিমা শরীফ পাঠ করলো-
لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُـحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত আর কোন মা’বুদ নেই। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রসূল।” সুবহানাল্লাহ! (ইমামুল মুহাদ্দিসীন-১০৫)
রফয়ে ইয়াদাইন সম্পর্কে ইমাম আওযাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে মুনাযারা বা বাহাস
হযরত ইমাম আওযাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি শাম বা সিরিয়ার একজন বিখ্যাত ইমাম ছিলেন। পবিত্র হজ্জের সময় পবিত্র মক্কা শরীফে ইমামুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে উনার সাক্ষাত হয়। রফয়ে ইয়াদাইন (নামাযে হাত উঠানো) সম্পর্কে আলোচনা হয়। হযরত সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, হযরত ইমাম আওযাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইমামুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে উদ্দেশ্য করে বললেন-
مَالَكُمْ لَا تَـرْفَـعُوْنَ اَيْدِيْكُمْ عِنْدَ رَفْعِ الرَّأْسِ مِنَ الرُّكُوْعِ وَعِنْدَ الرُّكُوْعِ
অর্থ: “আপনাদের কি হলো যে, আপনারা রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময় এবং রুকুতে যাওয়ার সময় হাত উঠান না অর্থাৎ রফয়ে ইয়াদাইন করেন না।?”
ইমামুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ইহা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বিশুদ্ধভাবে ছাবিত (প্রমাণিত) হয়নি।
হযরত ইমাম আওযাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে উনি ইমাম ছালিম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে তিনি উনার পিতা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেছেন যে-
اِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَـرْفَعُ يَدَيْهِ عِنْدَ الْاِفْتِتَاحِ وَعِنْدَ الرُّكُوْعِ وَعِنْدَ رَفْعِ الرَّأْسِ مِنَ الرُّكُوْعِ
অর্থ: “স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত নামায শুরু করার সময়, রুকুতে যাওয়ার সময়, রুকু হতে মাথা মুবারক উঠানোর সময় হাত মুবারক উঠাতেন।”
ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উত্তরে বলেন-
فَـقَالَ اَخْبَـرَنِىْ حَضْرَتْ حَمَّادٌ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضْرَتْ اِبْـرَاهِيْمَ عَنْ حَضْرَتْ عَلْقَمَةَ وَ حَضْرَتِ الْاَسْوَدَ عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَـرْفَعُ يَدَيْهِ اِلَّا اِفْتِتَاحَ الصَّلَاةِ ثُمَّ كَانَ لَا يَـعُوْدُ بِشَىْءٍ مِّنْ ذٰلِكَ
অর্থ: “আমাকে হযরত হাম্মাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেছেন। তিনি হযরত ইবরাহীম নখঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বর্ণনা করেছেন হযরত আলক্বামা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত আসওয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের থেকে। তিনি বর্ণনা করেছেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজ হাত মুবারকদ্বয় একমাত্র নামায শুরু করার সময়ই উঠাতেন। তারপর এ কাজ আর পুনরায় করতেন না।”
ইমাম আওযাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, আমি আপনাকে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করলাম, ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম সালিম রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের সূত্রে। আর আপনি বর্ণনা করছেন হযরত হাম্মাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবরাহীম নাখঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আলক্বামা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আসওয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু উনাদের সূত্রে।
আপনি কিসের ভিত্তিতে আমার উপস্থাপিত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফখানা উনার উপর আপনার উপস্থাপিত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফখানা তারজীহ্ (প্রাধান্য) দিলেন।
ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, আমার উপস্থাপিত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফখানার বর্ণনাকারী (রাবীগণ) আপনার পেশকৃত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী (রাবীগণের) চেয়ে বেশি ছিক্বাহ ও নির্ভরযোগ্য। যা সর্বজন স্বীকৃত ও মান্য।
এ জাওয়াব শুনে ইমাম আওযাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি লা-জাওয়াব (নির্বাক) হয়ে গেলেন। (আল মানাকিব লিল কারদারী-১/১৭৩, মুসনাদুল ইমামিল আ’যম-৫০, ফতহুল ক্বাদীর-১/২৯১, ইমাম আবু হানীফা-এর অবদান-৫৬)
অসমাপ্ত- পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন