৩৬তম ফতওয়া হিসেবে
“মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, সম্মানিত ইজমা শরীফ এবং সম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার ও উনার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে এবং বিশেষ করে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক যারা ভাঙবে, ভাঙ্গার কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করবে বা সমর্থন করবে তাদের প্রত্যেকের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদ- ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার মাহবূব হাবীব, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ বেশুমার শুকরিয়া আদায় করছি। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার সম্মানিত আদব মুবারক-
১৮. মহিলাদের জামা‘য়াতে উপস্থিত না হওয়া
মহিলাদের জন্য স্বীয় ঘর বা বাড়ির বাইরে বের হওয়াটা আমভাবেই নিষেধ। তাদেরকে ঘর-বাড়িতে অবস্থান করার জন্য আদেশ মুবারক করা হয়েছে।
(৭৭৯)
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَقَرْنَ فِـىْ بُيُوْتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْـجَاهِلِيَّةِ الْاُوْلـٰى
অর্থ: “তোমরা তোমাদের ঘরের মধ্যে পর্দার সাথে অবস্থান করো, জাহিলিয়াত যুগের মেয়েদের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করোনা।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)
(৭৮০)
মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاِذَا سَاَلْتُمُوْهُنَّ مَتَاعًا فَاسْئَلُوْهُنَّ مِنْ وَّرَآءِ حِجَابٍ
অর্থ: “যখন তোমরা মহিলাদের নিকট কোনো জিনিস চাও, তখন পর্দার আড়াল থেকে চাও।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৩)
(৭৮১-৭৮৯)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اِنَّ الْـمَرْاَةَ عَوْرَةٌ فَاِذَا خَرَجَتْ اِسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ.
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহিলারা পর্দায় থাকবে। যখনই তারা বেপর্দাভাবে বাইরে বের হয়, শয়তান তখন উঁকি-ঝুকি দেয় (তাদের দ্বারা পাপ কাজ সংগঠিত করার জন্য)।” নাঊযুবিল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, ছহীহ্ ইবনে খুযায়মাহ্ ৩/৯৩, মুসনাদে বায্যার ৫/৪২৭, মুসনাদে আহমদ ৯/৩৩৭, মুশকিলুল হাদীছ ১/৩৭৪, আত্ তাওহীদ লি ইবনে খুযায়মাহ্ ১/২৭, আল আহ্কামুশ্ শার‘ইয়্যাহ্ লিল ইশবিলী ২/৪৬, আদ্ র্দুরুল মানছূর ১২/৩১, তাফসীরে ইবনে কাছীর ৬/৪০৯ ইত্যাদি)
(৭৯০-৮০০)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো উল্লেখ আছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَلْـحَسَنِ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ مُرْسَلًا قَالَ بَلَغَنِـىْ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَعَنَ اللهُ النَّاظِرَ وَالْـمَنْظُوْرَ اِلَيْهِ.
অর্থ: “হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মুরসালসূত্রে বর্ণনা করেন। আমার কাছে (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ) পৌঁছেছেন যে, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, দেখনেওয়ালা আর দেখানেওয়ালী উভয়ের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লানত।” নাঊযুবিল্লাহ! (মিশকাত শরীফ, সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী ৭/৯৯, শু‘আবুল ঈমান লিল বাইহাক্বী ১০/২১৪, তাফসীরে মাওয়ারদী ৪/৯৩, মিরক্বাত শরীফ ৫/২০৫৯, শরহুত্ব ত্বীবী ৭/২২৭৮, দায়লামী শরীফ ৩/৪৬৫, জামি‘উল আহাদীছ ৩/৪৩৯, কাশফুল খ¦ফা ২/৪০৮, কানযুল ‘উম্মাল ৭/৩৩৮, জাম‘উল জাওয়ামি’ ১/২৮৮৫ ইত্যাদি)
(৮০১)
মহাম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে, একদিন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আস সাদিসাহ্ আলাইহাস সালাম উনাকে এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছালিছাহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকেসহ বসা ছিলেন। এমন সময় বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি আসতে লাগলেন, যিনি চোখে দেখতে পেতেন না। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আপনারা ভেতরে তাশরীফ মুবারক নিন।” তখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা বললেন, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তিনি তো চোখে দেখেন না। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘তিনি আপনাদের দেখছেন না সত্যিই; আপনারা কি উনাকে দেখবেন না?”
এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রতিভাত হয় যে, পুরুষদের জন্য গাইরে মাহরাম মহিলাদের দিকে দৃষ্টি দেয়া যেরূপ কবীরা গুণাহ্, তদ্রƒপ মহিলাদের জন্যও গাইরে মাহরাম পুরুষের দিকে দৃষ্টি দেয়া কবীরা গুণাহ্। না‘ঊযুবিল্লাহ!
(৮০২)
এ প্রসঙ্গে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো উল্লেখ করা হয়, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি একদিন উনার মহাসম্মানিত আওলাদ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ইবনাতু আবীহা আলাইহাস সালাম উনার সাথে বসা ছিলেন। এমন সময় উনার একখানা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ মনে পড়ে যায় এবং সাথে সাথে তিনি দৌড় দেন। যেহেতু তিনি সাধারণ লোকের চেয়ে প্রায় ১ হাত লম্বা ছিলেন, সেহেতু দরজা দিয়ে বের হওয়ার সময় দরজার চৌকাঠে উনার কপাল মুবারক লেগে কপাল মুবারক ফেটে যায়, তিনি এ অবস্থায় মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক-এ হাজির হলেন। উনার কপাল মুবারক থেকে দর দর করে রক্ত মুবারক পড়তে লাগলো। মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “হে হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম! কে আপনার মাথায় আঘাত করলো?” তখন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আরবের বুকে এমন কোনো সন্তান জন্মগ্রহণ করেনি, যে ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার মাথায় আঘাত করতে পারে। তবে আপনার একখানা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ আমার মাথায় আঘাত করেছেন।” তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “হে হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম! কোন্ সেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ? যেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ আপনার মাথা মুবারক-এ আঘাত করেছেন।” তখন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আপনি ইরশাদ মুবারক করেছেন,
لَايَـخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِاِمْرَاَةٍ اِلَّا كَانَ ثَالِثُهُمَا الشَّيْطَانُ.
অর্থ: “কোনো গাইরে মাহরাম পুরুষ যেন কোনো গাইরে মাহরাম মহিলাদের সাথে নিরিবিলিতে একত্রিত না হয়, কেননা তখন তাদের তৃতীয় সঙ্গী হয় শয়তান।” না‘ঊযুবিল্লাহ!
যেহেতু আমি আমার মহাসম্মানিত আওলাদ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ইবনাতু আবীহা আলাইহাস সালাম উনার সাথে বসা ছিলাম। এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে দ্রুত গতিতে দরজা দিয়ে বের হওয়ার সময় চৌকাঠে লেগে কপাল মুবারক ফেটে যায়। সুবহানাল্লাহ!
এ ঘটনা থেকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা পর্দার কতখানি গুরুত্ব দিতেন তা সহজেই উপলব্ধি করা যায়। আর এ পর্দার গুরুত্বের কারণেই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহিলাদের ঘরে নামায পড়া সর্বোত্তম ও অধিক ফযীলতপূর্ণ বলে উৎসাহ প্রদান করেছেন। আর তাই দেখা যায় পর্দা ফরয হওয়ার পূর্বে হযরত মহিলা ছাহাবিয়াহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুন্না উনারা যেভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক-এ যেতেন, পর্দা ফরয হওয়ার পর ক্রমেই তা কমতে থাকে।
পর্দার গুরুত্ব ও মহিলাদের ঘরে নামায পড়ার উৎসাহ ও ফযীলতপূর্ণ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দিকে লক্ষ্য রেখে আমীরুল মু’মিনীন, খলীফায়ে ছানী, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি মহিলাদের জন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক-এ এসে জামা‘য়াতে নামায পড়তে নিষেধাজ্ঞা জারী করেন। তখন হযরত মহিলা ছাহাবিয়াহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুন্না উনারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম উনার নিকট গিয়ে এ ব্যাপারে অবহিত করেন, তখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, “যদি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আপনাদেরকে এ অবস্থায় পেতেন, যে অবস্থায় আমীরুল মু’মিনীন, খলীফায়ে ছানী, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি পেয়েছেন, তবে অবশ্যই তিনিও আপনাদেরকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক-এ যেতে নিষেধ করতেন। সুবহানাল্লাহ!
(৮০৩)
যেমন এ প্রসঙ্গে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ سَيِّدِنَا حَضْرَتْ اَلْفَارُوْقِ الْاَعْظَمِ عَلَيْهِ السَّلَامُ اَنَّهٗ نَـهَى النِّسَاءَ عَنِ الْـخُرُوْجِ اِلَـى الْـمَسَاجِدِ فَشَكَوْنَ اِلـٰى اُمِّ الْـمُؤْمِنِيْـنَ الثَّالِثَةِ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ اَلصِّدِّيْقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ فَقَالَتْ اُمُّ الْـمُؤْمِنِيْـنَ الثَّالِثَةُ سَيِّدَتُنَا حَضْرَتْ اَلصِّدِّيْقَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ لَوْ عَلِمَ النَّبِـىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا عَلِمَ سَيِّدُنَا حَضْرَتْ اَلْفَارُوْقُ الْاَعْظَمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ مَا اَذِنَ لَكُمْ فِـى الْـخُرُوْجِ.
অর্থ : “হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি মহিলাদেরকে বাইরে বের হয়ে মসজিদে আসতে নিষেধ করেন। অতঃপর মহিলা উনারা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার খিদমত মুবারকে পেশ করলে তিনি জাওয়াবে বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যদি আপনাদের বর্তমান অবস্থা দেখতেন, যেমনটি সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি দেখছেন তাহলে তিনি যে হুকুম মুবারক দিতেন, আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি সেই হুকুম মুবারকই দিয়েছেন অর্থাৎ উনার মতো তিনিও আপনাদেরকে নামাযের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হওয়ার ব্যাপারে অনুমতি দিতেন না।” সুবহানাল্লাহ! (মুহীতুল বুরহানী)
(৮০৪-৮০৫)
অপর এক বর্ণনায় ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
لَـمَنَعَهُنَّ كَمَا مُنِعَتْ نِسَاءُ بَنِـىْ اِسْرَائِيْلَ
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অবশ্যই মহিলাদেরকে (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক-এ আসতে) নিষেধ করতেন যেরূপ বনী ইসরাঈল মহিলাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল।” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে খুযাইমাহ, বুখারী শরীফ)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম উনার এই কথা মুবারক উনার আসল অর্থ হলো- আমীরুল মু’মিনীন, খলীফায়ে ছানী, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি যা করেছেন, ঠিকই করেছেন। অর্থাৎ তিনি উনার ফতওয়াকে তাছদীক্ব বা সত্যায়িত করেন, স্বীকৃতি মুবারক প্রদান করেন। সুবহানাল্লাহ!
তাই খাছ ফতওয়া মুতাবিক মহিলাদের জামায়াতে নামায পড়ার জন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক-এ এবং ঈদগাহে যাওয়া কুফরী। কেননা এর দ্বারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম উনার সত্যায়ন ও সমর্থন মুবারক উনাকে উপক্ষো বা অস্বীকার করা হয়। নাঊযুবিল্লাহ! মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম তিনি হচ্ছেন সমস্ত মু’মিন উনাদের মহাসম্মানিত মাতা আলাইহাস সালাম। কাজেই কোনো মু’মিন-মুসলমান উনাদের পক্ষে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম উনার সত্যায়ন ও সমর্থন মুবারক উপেক্ষা বা অমান্য করাটা চরম নাফরমানী, হারাম ও কুফরী। না‘ঊযুবিল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মতের প্রতি আদেশ মুবারক দিয়ে ইরশাদ মুবারক করেন-
(৮০৬-৮০৯)
خُذُوْا نِصْفَ دِيْـنِكُمْ مِّنْ هٰذِهِ الْـحُمَيْرَاءِ عَلَيْهَا السَّلَامُ
অর্থ: “তোমরা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ইল্ম তথা সম্মানিত ওহী মুবারক নাযিল হওয়া ব্যতীত সমস্ত ইল্ম মুবারক অর্জন করবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম উনার থেকে। সুবহানাল্লাহ! (মানারুল মুনীক, তুহফাতুত ত্বালিব, কাশফুল খ¦ফা, নিহায়া ইত্যাদি)
অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম উনার কাছ থেকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মাসয়ালা-মাসায়িল ফতওয়া বা ফায়ছালা জানার ব্যাপারে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত আদেশ মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! কাজেই, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি যেটা ফায়ছালা মুবারক দিবেন, এটাই চূড়ান্ত ফায়ছালা। এখানে অন্য কারো কোনো কথা কস্মিনকালেও গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা, এ বিষয়টি সকলের জানা রয়েছে যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা যখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ বা যে কোনো বিষয়ে ইখতিলাফে পতিত হতেন, তখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার কাছ থেকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নিতেন। তিনি যেই ফায়ছালা মুবারক দিতেন, তা সকলে মেনে নিতেন।
এ সম্পর্কে ‘মুয়াত্ত্বা শরীফ ও তিরমিযী শরীফ’সহ আরো অন্যান্য কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
(৮১০-৮২৪)
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ مُوْسٰى رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ مَا اَشْكَلَ عَلَيْنَا اَصْحَابِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَدِيْثٌ قَطُّ فَسَاَلْنَا اُمَّ الْـمُؤْمِنِيْـنَ الثَّالِثَةَ سَيِّدَتَنَا حَضْرَتْ اَلصِّدِّيْقَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ اِلَّا وَجَدْنَا عِنْدَهَا مِنْهُ عِلْمًا.
অর্থ: “হযরত আবূ মূসা আশআরী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের নিকট, (অর্থাৎ) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম আমাদের নিকট কোনো মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ অস্পষ্ট লাগলে অথবা হাদিছ শরীফ নিয়ে সমস্যায় পড়লে, আমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা করতাম। তখন আমরা ঐ বিষয়ে উনার নিকট থেকে পরিপূর্ণ ইল্ম মুবারক লাভ করতাম।” সুবহানাল্লাহ! (মুয়াত্ত্বা শরীফ ৬/১২৪, তিরমিযী শরীফ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ নং ৩৮৮৩, জামি‘উল উছূল লি ইবনে আছীর ৯/১৩৪, আল ইমা’ লিল আন্দালুসী ৪/১৭৬, আত্ তাফসীরুল মাযহারী ৬/৪৮৬, ত্বরহুত্ তাছরীব ফী শরহিত্ তাক্বরীব ১/১৪৭, ক্বূতুল মুগতাযী ২/১০৩৯, আল মাজালিসুল ওয়া’যিয়্যাহ্ ১/১৬১, মিরক্বাতুল মাফাতীহ্ ৯/৩৯৯৫, তুহ্ফাতুল আশরাফ ১১/৪৬৭, জাম‘উল ফাওয়াইদ ৩/৫৮১, শারহুস সুন্নাহ লিল বাগবী ১৪/১৬৬, শারহুত্ ত্বীবী ১২/৩৯২৪, কাওছারুল মা‘আনী ১/২১৬, আল ফত্হুর রব্বানী ২২/১২৮ ইত্যাদি)
হযরত আতা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
(৮২৫-৮৩২)
كَانَتْ اُمُّ الْـمُؤْمِنِيْـنَ الثَّالِثَةُ سَيِّدَتُنَا حَضْرَتْ اَلصِّدِّيْقَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ اَفْقَهَ النَّاسِ وَاَعْلَمَ النَّاسِ وَاَحْسَنَ النَّاسِ رَاْيًا فِـى الْعَامَّةِ
অর্থ: “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন মানুষের মাঝে অর্থাৎ কায়িনাতের সকলের থেকে সবচেয়ে বড় ফক্বীহ্, সবচেয়ে বড় আলিম এবং সর্বক্ষেত্রে সর্বোত্তম ফায়ছালা মুবারক দানকারী।” সুবহানাল্লাহ! (আল মুস্তাদরাক ৪/১৫, আদ্ র্দুরুল মানছূর ৬/১৭০, ত্বরহুত্ তাছরীব ১/১৪৮, ইরশাদুস সারী ৬/১৪২, কাওছারুল মা‘আনিইদ্ দুরারী ১/২১৬, মাশারিক্বুল আনওয়ারিল ওয়াহ্হাজাহ্ ১/২০১, রিয়াদ্বুল আফহাম ১/৫২, আল কাওকাবুল ওয়াহ্হাজ ২৩/৫৪০ ইত্যাদি)
অসমাপ্ত- (পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন)