“মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া”-
পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি ও কুফা নগরী:
ইমাম আ’যম ও হানাফী ফিক্বহের গুরুত্ব বুঝার জন্য কুফা নগরী সম্পর্কে ইলম অর্জন করা অতীব জরুরী। কারণ ফিক্বহে হানাফী উনার প্রধান প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে ‘কুফা নগরী’। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি ইরাকে একটি নতুন শহর প্রতিষ্ঠা করেন। শহরটির নাম রাখেন কুফা। এই নতুন শহরটি মূলত মুসলমানদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল এবং ইরাকের প্রশাসনিক কাজ এখান থেকেই পরিচালিত হত। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বিজিত এলাকার জনগণকে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য সুবিজ্ঞ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে বিভিন্ন এলাকায় মুআল্লিম হিসাবে পাঠাতেন। সেই ধারাবাহিকতায় তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে ইরাকের মুয়াল্লিম করে পাঠান। তখন থেকে তিনি কুফা নগরীতে বসবাস শুরু করেন।
ইসলামী ইতিহাস বিশেষজ্ঞ ইজলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (মৃ. ২৬১ হি.) তিনি বলেন, কুফা নগরীর অধিবাসী হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা ছাড়া এ নগরীতে পনেরশত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বসবাসের জন্য আসেন। উনাদের মধ্যে প্রায় সত্তরজন ছিলেন বদরী ছাহাবী।
তাছাড়া হযরত সা’দ ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত হুযাইফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আবু মূসা আশআরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রমূখ বড় বড় হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা এ শহরে এসেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
এরপর ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি যখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র খলীফা হলেন তখন ইরাকের কুফা নগরীতে বসবাস শুরু করেন। কুফা নগরীকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার রাজধানী বানান। এখান থেকেই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম প্রচার করেন এবং সম্মানিত খিলাফত মুবারক পরিচালনা করেন। সেখানকার অধিবাসীদের তিনি ফিকহ শিক্ষা দিতে শুরু করেন।
আর যারা কুফায় অস্থায়ীভাবে অবস্থান করে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম প্রচার করে অন্যত্র চলে গেছেন উনাদের সংখ্যাও অনেক। এতো গেলো শুধু কুফা নগরীর কথা। ইরাকের অন্যান্য নগরীতেও অনুরূপ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আগমন করেন এবং সম্মানিত ইলমে দ্বীন উনার প্রচার প্রসার করেন।
ফিকহে হানাফী উনার প্রধান প্রাণকেন্দ্র কুফা নগরী। পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে যে, খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূকে আলাইহিস সালাম তিনি এ শহরের গোড়াপত্তন করেন। এ নগরীর আশপাশে শুধু আরবী ভাষাভাষীদের বসবাসের ব্যবস্থা করে দেন এবং এর অধিবাসীদের ‘ফিকহ ফিদদীন’ তথা সম্মানিত শরীয়ত উনার যাবতীয় বিধি-বিধান শিক্ষা দেয়ার জন্য হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে কুফা নগরে প্রেরণ করেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি কুফাবাসীদেরকে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্পর্কে বলেন-
اِنِّيْ قَدْ اٰثَـرْتُكُمْ بِعَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ عَلٰى نَـفْسِيْ
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে তোমাদের নিকট পাঠিয়ে তোমাদেরকে প্রাধান্য দিয়েছি। (শরহে মুশকিলুল আছার ৭ম খণ্ড ২০০ পৃষ্ঠা, মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬ষ্ঠ খণ্ড ৩৮৪ পৃষ্ঠা)
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্পর্কে আরো বলেন-
كَبَـيْتٍ مَلِئٍ عِلْمًا
অর্থ: “তিনি ইলমে পরিপূর্ণ একটি ঘর সদৃশ। (মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বা-৭ম খণ্ড, ৪২৩ পৃষ্ঠা)
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সফরে সবসময় ছিলেন। তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন। উনার কথা মুবারক ও কাজ মুবারক খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হুজরা শরীফে উনার যাতায়াত এত বেশী ছিল যে, আগন্তুকেরা মনে করতেন তিনি হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সদস্য। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, ‘আমি যদি পরামর্শ ছাড়াই কাউকে আমার খলীফা নিযুক্ত করতাম তাহলে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকেই আমার খলীফা বানাতাম।” (ফাযায়িলে ছাহাবা)
তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
رَضِيْتُ لِاُمَّتِىْ مَا رَضِىَ لَـهَا ابْنُ اُمِّ عَبْدٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ
অর্থ: ‘আমার উম্মতের জন্য হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যা পছন্দ করেন আমিও তাই পছন্দ করি। (ফাযায়িলে ছাহাবা ২য় খণ্ড ৮৪০ পৃষ্ঠা)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, ‘তোমরা চারজন থেকে সম্মানিত ও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ইলম হাছিল করো। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযর আবু হুযায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আযাদকৃত ব্যক্তি হযরত সালেম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের থেকে। (সুনানে তিরমিযী, নং-৩৮১০)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
مَنْ اَحَبَّ اَنْ يَـقْرَأَ الْقُرْاٰنَ غَضًّا كَمَا اُنْزِلَ فَـلْيَـقْرَأْهُ عَلٰى قِرَاءَةِ بْنِ أُمِّ عَبْدٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ
অর্থ: “যে সুন্দরভাবে সম্মানিত ও পবিত্র কুরআনে কারীম তিলাওয়াত করতে চায় সে যেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানিত ও পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠরীতি অনুসরণ করে । সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদে আহমদ ১ম খণ্ড ৪৪৫ পৃষ্ঠা)
সাইয়্যিদুনা হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানিত ও পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠরীতি হযরত আসেম রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত যিরর ইবনে হুবাইশ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। যেমনিভাবে হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠরীতি হযরত আসেম রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আব্দুর রহমান আব্দুল্লাহ ইবনে হাবিব আস সুলামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।
সম্মানিত ও পবিত্র সূরা মুহাম্মদ উনার ১৬ নং সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, তাদের (মুশরিকদের) মধ্যে থেকে কিছু লোক আপনার কথা শ্রবণ করে, অতঃপর আপনার নিকট থেকে বের হয়ে যারা জ্ঞানপ্রাপ্ত তাদেরকে বলে এইমাত্র তিনি কী বললেন? এখানে জ্ঞানপ্রাপ্ত বলে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বুঝানো হয়েছে। কেননা তিনি কাতিবে ওহী ছিলেন।” (মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বা)
আর এটি সর্বজনবিদিত যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে পবিত্র ইলম উনার প্রকাশে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মর্যাদা ছিল অনেক ঊর্ধ্বে।
তিনি কুফা নগরীতে তালিবে ইলমের বিশাল মজলিসে সম্মানিত ও পবিত্র কুরআন শরীফ-সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ দরস দিতেন। সম্মানিত ও পবিত্র কুরআন শরীফ-সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে মানুষের দৈনন্দিন সমস্যার সমাধান পেশ করতেন।
ইবনুল কায়্যিম জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে সাতজন সর্বাধিক ফতোয়া ও ফারায়িযের কাজ করতেন। উক্ত সাতজনের মধ্যে হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম ও হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের দুজনের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। এ দু’জন কুফা নগরীতে নিজেদের সম্মানিত ইলম বিতরণ করেছেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি, হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিলাফতকাল থেকে শুরু করে হযরত যুননূরাইন আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতের শেষ পর্যন্ত কুফাবাসীদের ফিকহ শিক্ষা দেন। এমনকি কুফা নগরী ফিকহ চর্চায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়।
তাই হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি কুফায় এসে ফক্বীহদের আধিক্য দেখে বলেছিলেন-
رَحِمَ اللهُ اُمَّ عَبْدٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَدْ مَلَأَ هٰذِهِ الْقَرْيَةَ عِلْمًا
অর্থ: ‘মহান আল্লাহ তাআলা ইবনে উম্মে আব্দ (হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) উনার উপর রহম করুন। তিনি তো কুফা নগরীকে সম্মানিত ইলমে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
ফিক্বহের ক্ষেত্রে সাইয়্যিদুনা হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বিশেষ খিলাফত মুবারক লাভ
হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিছে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সুবিখ্যাত কিতাব “ইযালাতুল খাফা আন খিলাফাতিল খুলাফা’ কিতাবে লিখেন, ফিকহের ক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র খিলাফত মুবারক উনার অধিকারী ছিলেন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। সুবহানাল্লাহ!
মূল বিষয় হলো হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের একটি বড় অংশ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বরকতময় ছোহবত মুবারকে থেকে অনেক কিছুই অর্জন করেছেন। অনেকে তো কোনো কোনো বিষয়ে সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার স্তরেও উন্নীত হয়েছেন। যেমন কিরাত ও ফিকহ বিষয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সম্মানিত খিলাফত উনার পর্যায়ে উন্নীত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ ও তারীখের কিতাবে বর্ণিত হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ফাযায়িল-ফযীলত
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যেসকল জলীলুল ক্বদর ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ফিকহ ও ফতোয়ায় হানাফী মাযহাবে অধিক অনুসৃত হন। তন্মধ্যে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অন্যতম। এজন্য পাঠক সমীপে উনার জ্ঞানসমুদ্রের কিঞ্চিৎ তুলে ধরা হল।
মূলত এ মহান জলীলুল ক্বদর ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ সকল হাদীছ ও তারীখের ইমামগণ উনাদের কিতাবে তুলে ধরেছেন।
যেমন ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছহীহ বুখারীতে-
مَنَاقِبُ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ
শিরোনামে উনার মর্যাদা ও গুণাবলী তুলে ধরেছেন এবং তিনি যে মুবারক আকার-আকৃতি, চাল-চলন, আচার-ব্যবহার ও স্বভাব-চরিত্রে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ ছিলেন তাও ছহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন। সঙ্গে সঙ্গে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ও বড় বড় ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের দৃষ্টিতে উনার ইলমী মাক্বাম ও স্বীকৃতি তুলে ধরেছেন। সুবহানাল্লাহ!
ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছহীহ মুসলিম শরীফে-
فَضَائِلُ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ وَ اُمِّهٖ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْـهُمَا
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও উনার মাতার ফযীলত শিরোনামে উনার নাজাতের সুসংবাদ, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নৈকট্য এবং উনার থেকে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ইলম শিখার নির্দেশ মুবারক প্রদান ইত্যাদি গুণাবলী ও মর্যাদা বিষয়ক পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জামি’ আত-তিরমিযী শরীফে
مَنَاقِبُ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ
শিরোনামে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নছীহত মুবারক দৃঢ়ভাবে ধারণ করার নির্দেশ মুবারক প্রদান, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জলীলুল ক্বদর ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে ফক্বীহুল উম্মত হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার সর্বাধিক নিকটবর্তী হওয়ার স্বীকৃতি প্রদান এবং হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার ও হযরত হুযায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার দৃষ্টিতে উনার ইলমী মাক্বাম ইত্যাদি বিষয় ও গুণাবলী তুলে ধরেছেন। সুবহানাল্লাহ!
অসমাপ্ত- পরবতীর্ সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন