মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে- মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক যারা ভাঙবে, ভাঙ্গার কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করবে বা সমর্থন করবে তাদের প্রত্যেকের শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া- (পর্ব-২৪)

সংখ্যা: ২৮৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

(৩৬তম ফতওয়া হিসেবে)

“মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক যারা ভাঙবে, ভাঙ্গার কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করবে বা সমর্থন করবে তাদের প্রত্যেকের শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র খেদমত মুবারক-এ বেশুমার শুকরিয়া আদায় করছি। সুবহানাল্লাহ!

সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করা ফরয:

সুওয়াল: সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারী প্রতিষ্ঠানের নির্দেশে রাস্তা নির্মাণের দোহাই দিয়ে, সৌন্দর্য বর্ধনের কথা বলে এরকম আরো বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভাঙ্গা হচ্ছে। না‘ঊযুবিল্লাহ! এ ব্যাপারে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সঠিক ফায়ছালা কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।

জওয়াব: প্রাথমিকভাবে এবং সংক্ষিপ্তাকারে সম্মানিত ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম অর্থাৎ সম্মানিত ও পবিত্র শরীয়ত উনার ফতওয়া হচ্ছেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করা অর্থাৎ সার্বিকভাবে হিফাজত করা এবং হিফাযত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা ফরয। এর বিপরীত অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভাঙ্গা এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার মানহানী করা এবং মানহানী করার জন্য সহযোগীতা করা সুস্পষ্ট কুফরী ও কাট্টা হারাম এবং জাহান্নামী হওয়ার কারণ। কেননা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ হচ্ছেন যিনি খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক। তাই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ উনাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা প্রকৃতপক্ষে মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতিই সম্মান প্রদর্শন করার শামিল। যার প্রতিদান মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের হাক্বীক্বী সন্তুষ্টি মুবারক এবং চিরস্থায়ী সম্মানিত জান্নাত মুবারক। সুবহানাল্লাহ! আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ উনাদের প্রতি অসম্মান বা বেয়াদবী করা প্রকৃতপক্ষে মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতিই বেয়াদবী করার শামিল। যার পরিণাম মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের অসন্তুষ্টি এবং চিরস্থায়ী জাহান্নাম। না‘ঊযুবিল্লাহ! অর্থাৎ ওয়াক্বফকৃত স্থানে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মিত হলে ক্বিয়ামত পর্যন্ত ভাঙ্গা জায়িয নেই। এছাড়াও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ উনাদের জন্য ওয়াক্বফকৃত সম্পত্তিও ক্বিয়ামত পর্যন্ত অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা জায়িয নেই।

مَسْجِدٌ (মসজিদ) শব্দের আভিধানিক অর্থ সিজদার স্থান। আর পারিভাষিক অর্থ যিনি খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার উদ্দেশ্যে নামায অর্থাৎ রুকূ, সিজদা, ই’তিকাফ ইত্যাদি ইবাদত-বন্দেগীর জন্য নির্দিষ্ট স্থানকে ‘মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক’ বলা হয়।

যিনি খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

(৯৭১)

وَاَنَّ الْمَسٰجِدَ لِلّٰهِ

অর্থ: “আর নিশ্চয়ই সমস্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। অর্থাৎ সমস্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও সম্মানিত ও পবিত্র সূরা জিন শরীফ : সম্মানিত ও সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮)

আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন,

(৯৭২-৯৭৪)

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـى الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ تَـعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلْمَسَاجِدُ بُـيُـوْتُ اللهِ

অর্থ: “হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক।” সুবহানাল্লাহ! (শু‘য়াবুল ঈমান শরীফ ৪/৩৮০, জামিউল আহাদীছ লিস সুয়ূত্বী ২২/১৫৪, কানজুল উম্মাল ৭/৫৭৯ ইত্যাদি)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছেন,

(৯৭৫-৯৭৮)

عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ بُـيُـوْتَ اللهِ فِـى الْاَرْضِ الْمَسَاجِدُ وَاِنَّ حَقًّا عَلَى اللهِ اَنْ يُّكْرِمَ مَنْ زَارَهٗ فِيْهَا

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই দুনিয়ার যমীনে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক। যাঁরা ওই সকল সম্মানিত ও পবিত্র ঘর মুবারক উনাদের মধ্যে প্রবেশ করবেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে সম্মানিত করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (আল মু’জামুল কাবীর লিত ত্ববারনী ৯/৩, মাজমাউয যাওয়াইদ ২/৩২, জামি‘উল আহাদীছ লিস সূয়ূত্বী ৮/৪৮০, আল মাত্বালিবুল আলিয়াহ ৩/৪৬৬ ইত্যাদি)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছেন,

(৯৭৯-৯৮২)

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالـٰى عَنْهُ قَالَ اَلْمَسَاجِدُ بُـيُـوْتُ اللهِ فِـى الْاَرْضِ تُضِىْءُ لِاَهْلِ السَّمَاءِ كَمَا تُضِىْءُ نُـجُوْمُ السَّمَاءِ لِاَهْلِ الْاَرْضِ

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ হচ্ছেন দুনিয়ার যমীনে মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক।’ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ আসমানবাসী উনাদেরকে এমনভাবে আলোকিত করে থাকেন, যেমনিভাবে আসমানের তারকারাজি যমীনবাসী উনাদেরকে আলোকিত করে থাকে।” সুবহানাল্লাহ! (শু‘য়াবুল ঈমান লিলবাইহাক্বী ৪/৩৮০, মাজমাউয যাওয়াইদ ২/১৫, জামি‘উল আহাদীছ ৮/৩৩৮, আল মাত্বালিবুল আলিয়াহ ৩/৪৬৭ ইত্যাদি)

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

(৯৮৩)

اَلْـمَسْجِدُ بَـيْتُ اللهِ وَالْـمَدْرَسَةُ بَـيْـتِـىْ

অর্থ: “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মাদ্রাসা মুবারক আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক।” সুবহানাল্লাহ!

কাজেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক হওয়ার কারণে উনাদের প্রতি সম্মান ও আদব রক্ষা করা সম্পর্কে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে অনেক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আদেশ-নিষেধ মুবারক করা হয়েছে। নিম্নে সেখান থেকে কতিপয় আদেশ-নিষেধ মুবারক উল্লেখ করা হলো:

(১) মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার মধ্যে উচ্চস্বরে কথা

বলা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ:

এ প্রসঙ্গে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন-

(৯৮৪-৯৯২)

عَنْ حَضْرَتْ اَلسَّائِبِ بْنِ يَزِيْدَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالـٰى عَنْهُ قَالَ كُنْتُ قَائِمًا فِى الْمَسْجِدِ فَحَصَبَنِـىْ رَجُلٌ فَـنَظَرْتُ فَاِذَا سَيِّدُنَا حَضْرَتْ الْفَارُوْقُ الْاَعْظَمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ (سَيِّدُنَا حَضْرَتْ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ عَلَيْهِ السَّلَامُ) فَـقَالَ اذْهَبْ فَأْتِنِـىْ بِـهٰذَيْنِ‏.‏ فَجِئْـتُهٗ بِـهِمَا‏.‏ قَالَ مَنْ اَنْـتُمَا اَوْ مِنْ اَيْنَ اَنْـتُمَا قَالَا مِنْ اَهْلِ الطَّائِفِ‏.‏ قَالَ لَوْ كُنْـتُمَا مِنْ اَهْلِ الْبَـلَدِ لَاَوْجَعْتُكُمْ تَـرْفَـعَانِ اَصْوَاتَكُمَا فِـىْ مَسْجِدِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

 অর্থ: “হযরত সায়িব ইবনে ইয়াযীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, একদা আমি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার মধ্যে দাঁড়ানো অবস্থায় ছিলাম, এমন সময় এক ব্যক্তি আমার প্রতি একটি কঙ্কর নিক্ষেপ করলে আমি তাকিয়ে দেখি, তিনি আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, যান, ঐ দুই ব্যক্তিকে আমার নিকট নিয়ে আসুন। আমি তাদেরকে উনার নিকট নিয়ে আসলাম। তিনি বললেন, তোমরা কোন গোত্রের ও কোথাকার লোক? তারা বললো, আমরা তায়েফের লোক। তিনি বললেন, যদি তোমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার লোক হতে, তবে অবশ্যই আমি তোমাদেরকে কঠোর শাস্তি দিতাম। কারণ, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার মধ্যে তোমরা তোমাদের স্বর উচ্চ করেছো।” (বুখারী শরীফ, আস সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী ২/৪৪৭, শরহুস সুন্নাহ লিল বাগভী ২/৩৭৫, মুসনাদে ফারূক্ব লিইবনে কাছীর ১/১৫৭, তুহফাতুল আশরাফ ৮/২২, জামি‘উল আহাদীছ লিস সুয়ূত্বী ২৮/২৮১, জামি‘উল উছূল লিইবনে আছীর ১১/৮৭৫১, কানযুল ‘উম্মাল ৮/৩১৫, জাম‘উল ফাওয়াইদ লিল মাগরিবী ইত্যাদি)

উল্লেখিত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার মধ্যে উচ্চ স্বরে কথা বললেই যদি কঠিন শাস্তির উপযুক্ত হয়, তাহলে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভাঙ্গলে কত কঠিন ও শক্ত শাস্তির যোগ্য হবে, তা ফিকির করতে হবে।

(২) মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার মধ্যে দুনিয়াবী কথা

বলা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ:

এ প্রসঙ্গে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন-

(৯৯৩)

قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَكَلَّمَ بِكَلَامِ الدُّنْـيَا فِـى الْـمَسْجِدِ اَحْبَطَ اللهُ عَمَلَهٗ اَرْبَعِيْنَ سَنَةً

অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার মধ্যে দুনিয়াবী কথা বলবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার ৪০ বছরের আমল নষ্ট করে দিবেন। অর্থাৎ তার অপরাধের কারণে ৪০ বৎসরের আমল নষ্ট হয়ে যাবে। মূলত তার সমস্ত জীবনের আমলই নষ্ট হয়ে যাবে।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (লুবাবুল হাদীছ লিলইমাম জালালুদ্দীন আস সুয়ূত্বী ১/১৩)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছেন,

(৯৯৪)

وَقَدْ قَالَ النَّبِـىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَكَلَّمَ بِكَلَامِ الدُّنْـيَا فِـىْ خَـمْسَةِ مَوَاضِعٍ اَحْبَطَ اللهُ تَـعَالـٰى مِنْهُ عِبَادَةَ اَرْبَعِيْـنَ سَنَةً اَلْاَوَّلُ فِـى الْـمَسْجِدِ وَالثَّانِـىْ فِـى تِلَاوَةِ الْقُرْاٰنِ وَالثَّالِثُ فِـىْ وَقْتِ الْاَذَانِ وَالرَّابِـــعُ فِـىْ مَـجْلِسِ الْعُلَمَاءِ وَالْـخَامِسُ فِـىْ زِيَارَةِ الْقُبُوْرِ

অর্থ: “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি পাঁচ স্থানে দুনিয়াবী কথা বলবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার ৪০ বছরের ইবাদত নষ্ট করে দিবেন- অর্থাৎ তার অপরাধের কারণে ৪০ বৎসরের আমল নষ্ট হয়ে যাবে। মূলত তার জীবনের সমস্ত আমল নষ্ট হয়ে যাবে। ১. মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার মধ্যে, ২. মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করার সময়, ৩. সম্মানিত আযান উনার সময়, ৪. আলিম-উলামাগণ উনাদের মজলিসে এবং ৫. ক্ববর যিয়ারতের সময়।” (তাফসীরে আহ্মদী ৭১০ পৃষ্ঠা)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছেন,

(৯৯৫)

عَنِ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنَّهٗ قَالَ اِذَا اَتَى الرَّجُلُ الْمَسْجِدَ فَاَكْثَرَ مِنْ الْكَلَامِ تَـقُوْلُ لَهُ الْمَلَائِكَةُ اُسْكُتْ يَا وَلِـىَّ اللهِ فَاِنْ زَادَ تَـقُوْلُ اُسْكُتْ يَا بَغِيْضَ اللهِ فَاِنْ زَادَ تَـقُوْلُ اُسْكُتْ عَلَيْكَ لَعْنَةُ اللهِ

অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন কোন ব্যক্তি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার মধ্যে আসার পর দুনিয়াবী কথা বলতে শুরু করে, তখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা উক্ত ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

اُسْكُتْ يَا وَلِـىَّ اللهِ

‘হে মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী! চুপ করুন।’

এরপরেও যদি সে কথা বলতে থাকে, তখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা তাকে বলেন,

اُسْكُتْ يَا بَغِيْضَ اللهِ

‘হে মহান আল্লাহ পাক উনার দুশমন! চুপ কর।’

তারপরেও যদি সে কথা বলতে থাকে, তখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা তাকে বলেন,

اُسْكُتْ عَلَيْكَ لَعْنَةُ اللهِ

‘তোর উপর মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত, তুই চুপ কর’।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (আল মাদখাল ২/২২৭)

উল্লেখিত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা প্রমাণিত হয়, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনাদের মধ্যে দুনিয়াবী কথা বললেই যদি ৪০ বছরের আমল নষ্ট হয়ে যায়, অর্থাৎ তার জীবনের সমস্ত আমল নষ্ট হয়ে যায়, লা’নতের উপযুক্ত হয়ে যায় এবং তাকে মহান আল্লাহ পাক উনার শত্রু ও মাল‘ঊন হিসেবে সম্বোধনও করা হয়, তাহলে কেউ যদি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভাঙ্গে তার কত বছরের আমল নষ্ট হবে? এবং তাকে কি হিসেবে সম্বোধন করা হবে? সেটা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা।

প্রকৃতপক্ষে তার জীবনের সমস্ত আমল নষ্ট হবে এবং ঈমানও নষ্ট হবে। আর তাকে সবচেয়ে বড় যালিম, মাল‘ঊন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে সম্বোধন করা হবে। না‘ঊযুবিল্লাহ!

অসমাপ্ত- পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র, মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া – (৫)

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র, মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া – (৬)

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র, মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া – (৭)

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র, মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া – (৮)

 ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র, মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া – (৯)  প্রকাশিত ফতওয়াসমূহ