-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ
আরবী ষষ্ঠ মাস জুমাদাল উখরা। এ মাসটি অনেক কারণে ফযীলতপূর্ণ। তন্মধ্যে অন্যতম হলো, এ মাসেই আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের মূল ব্যক্তিত্ব সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, বিদ্ব্আতুম মিন রসূলিল্লাহ, শাবীহাতু রসূলিল্লাহ, উম্মু আবীহা হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি বিলাদত শরীফ লাভ করেন। বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়াবী ৩৭ বৎসর বয়স মুবারক-এ অর্থাৎ উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত প্রকাশের প্রায় তিন বৎসর পূর্বে ২০শে জুমাদাল উখরা জুমুয়ার দিন ছুবহি ছাদিকের সময় তিনি যমীনে আগমন করেন। সুবহানাল্লাহ!
উনার ফযীলত বেমেছাল। তিনি যাহির-বাতিন সবদিক থেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুবহু মেছাল, নকশা বা সাদৃশ্য ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! উনার মাধ্যমেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরানী বংশ মুবারক জারি রয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
انا اعطينك اللكوثر
অর্থাৎ- ‘নিশ্চয়ই আমি আপনাকে কাওছার হাদিয়া করেছি।’ (সূরা কাওছার: আয়াত শরীফ ১)
বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহেবযাদাহ হযরত ক্বাসিম আলাইহিস সালাম তিনি যখন শৈশবকালে বিছাল শরীফ লাভ করলেন তখন কাফির, মুশরিক, মুনাফিকরা বলাবলি করতে লাগলো যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বংশ বিস্তার হবে না; যেহেতু উনার ছেলে বিছাল শরীফ লাভ করেছেন। আর বংশ বিস্তার হওয়ার জন্য ছেলে সন্তান প্রয়োজন। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি ‘সূরা কাওছার’ নাযিল করেন। সেখানে সুসংবাদ দেয়া হলো যে, আমি আপনাকে অধিক ও উত্তম বিষয় হাদিয়া করেছি।
স্মরণীয় যে, ‘কাওছার’-এর একাধিক অর্থ ও ব্যাখ্যা রয়েছে। তন্মধ্যে একটি হলো, কাওছার দ্বারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনেক আওলাদ হাদিয়া করেছেন এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত উনার আওলাদ জারি থাকবে। সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-
لكل بنى اب عصبة الا ابنى فاطمة فانا وليهما وعصبتهما.
অর্থাৎ- ‘প্রত্যেক সন্তানের বংশীয় নিছবত পিতার দিক দিয়ে হয়ে থাকে। কিন্তু আমার ছাহেবযাদী হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম উনার দুই ছাহেবযাদা আলাইহিমাস সালাম উনাদের বংশীয় নিছবত আমার মাধ্যমে হয়েছে। আমিই উনাদের অভিভাবক ও তত্ত্বাবধায়ক।’ (তবারানী শরীফ)
হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, ‘হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহিস সালাম তিনি আমারই অংশ। যে উনাকে কষ্ট দিলো সে আমাকেই কষ্ট দিলো। আর যে উনাকে খুশি করলো, সে আমাকেই খুশি করলো। ক্বিয়ামতের দিন মানবজাতির সমস্ত আত্মীয়তা ছিন্ন হয়ে যাবে কিন্তু আমার বংশধরের আত্মীয়তা, শ্বশুর ও জামাতা এসব সম্পর্ক বিদ্যমান থাকবে। অর্থাৎ ক্বিয়ামত পর্যন্ত আমার নছব জারি থাকবে।’ সুবহানাল্লাহ! (আহমদ, হাকিম)
মূলকথা হলো, পৃথিবীতে মানুষের বংশধর জারি হয় ছেলের মাধ্যমে। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরানী বংশ মুবারক খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মাধ্যমে কুদরতীভাবে জারি হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, কোন বান্দা পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার জীবন অপেক্ষা অধিক প্রিয় না হবো এবং আমার পবিত্র বংশধর তার বংশধর থেকে তার নিকট অধিক প্রিয় না হবে এবং আমার নূরানী পরিবার তার পরিবার অপেক্ষা তার নিকট অধিক প্রিয় না হবে এবং আমার যাত বা অস্তিত্ব মুবারক তার অস্তিত্ব থেকে তার নিকট অধিক প্রিয় না হবে। (আশরাফুল মুআইয়াদ)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন যে, æনিশ্চয়ই তোমাদের মাঝে আমার আহলে বাইত-আওলাদ আলাইহিমুস সালাম হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার কিশতির ন্যায়। যারা কিশতিতে আরোহন করেছে তারা মুক্তি পেয়েছে। আর যারা তাতে আরোহন করেনি তারা ডুবে মরেছে। (মিশকাত শরীফ)
কাজেই, হযরত আহলে বাইত- আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত ও আদর্শের কিশতিতে যারা আরোহন করবে, তারা দুনিয়া ও আখিরাতে সকল বেড়াজালের তুফান থেকে রক্ষা পাবে। আর যারা উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ, সমালোচনা ও বিরোধিতা করবে তারা ইহকাল ও পরকালে লা’নতগ্রস্ত হবে এবং আযাব-গযবে নিপতিত হবে।
মাহে জুমাদাল উলা ও জুমাদাল উখ্রা এবং তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা