মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ১৮৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

আরবী বছরের প্রথম মাস মুর্হরম। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ যে চারটি মাসকে হারাম বা সম্মানিত বলে ঘোষণা করা হয়েছে মুর্হরম মাস তন্মধ্যে অন্যতম। আসমান-যমীন সৃষ্টিকাল হতেই এ মাসটি বিশেষভাবে সম্মানিত হয়ে আসছে।

বর্ণিত আছে যে, এ মাসেরই দশ তারিখ ‘আশূরা’ নামক দিনটি বিশ্বব্যাপী এক আলোচিত দিন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্্ নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুরু করে হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম পর্যন্ত প্রায় সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম-এর কোন না কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা এই আশূরা-এর দিনে সংঘটিত হয়েছে।

বর্ণিত রয়েছে, দশজন আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালাম-এর দশটি মু’জিযা যাহির বা প্রকাশ হয় বলে এই দিনকে ‘আশূরা’ নামে নামকরণ করা হয়েছে।

এক. এই দিনে হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম-এর দুয়া কবুল করা হয়।

দুই. এই দিন আল্লাহ তায়ালা হযরত ইদ্রীস আলাইহিস্ সালামকে আকাশে তুলে নেন।

তিন. এই দিন হযরত নূহ আলাইহিস্ সালাম-এর কিস্তিকে জূদি পাহাড়ে ভিড়িয়েছিলেন।

চার. এই দিন হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর বিলাদত শরীফ হয় এবং এই দিন তাঁকে খলীল উপাধি দেয়া হয় এবং তাঁকে নমরূদের আগুন থেকে হিফাযত করা হয়।

পাঁচ. এই দিন হযরত দাউদ আলাইহিস্ সালাম-এর মর্যাদা বৃদ্ধির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়।

ছয়. এই দিন হযরত আইয়ূব আলাইহিস্ সালাম অসুস্থতা থেকে আরোগ্য লাভ করেন।

সাত. এই দিন হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম-এর সাথে আল্লাহ পাক কথা বলেছিলেন এবং তাওরাত শরীফ নাযিল করেছিলেন এবং এ দিনেই হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম ও তাঁর সম্প্রদায় লোহিত সাগর পার হয়েছিলেন।

আট. এই দিন হযরত ইউনুস আলাইহিস্ সালাম মাছের পেট থেকে বের হয়েছিলেন।

নয়. এই দিন হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালামকে আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল।

দশ. এই দিনই আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মর্যাদা, সম্মান ও খুছূছিয়াত এবং হাবীবুল্লাহ হওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়।

উল্লেখ্য, আশূরা মিনাল মুর্হ্রম উপলক্ষে আলোচনা করতে গিয়ে মসজিদের প্রায় খতীব-ইমাম এবং ওয়ায়িজদেরকে আহ্্লে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত-এর আক্বীদার বিপরীত বক্তব্য প্রদান করতে দেখা যায়। যা সম্পূর্ণরূপে কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। যেমন তারা বলে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম-এর গুণাহ-খতা, দোষ-ত্রুটি থাকার কারণে উনারা তওবা-ইস্তিগফার করেছেন এবং উনাদেরকে ক্ষমা করা হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ! আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নূরের তৈরী নন। নাউযুবিল্লাহ! তিনি ইলমে গইব জানতেন না। নাউযুবিল্লাহ! তিনি আমাদের মত মানুষ। নাউযুবিল্লাহ! হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম গন্দম খেয়ে ভুল করেছিলেন। নাউযুবিল্লাহ! হযরত ইউনুস আলাইহিস্ সালাম দাওয়াতের কাজ বন্ধ করার কারণে আল্লাহ পাক-এর গযবে পড়েছিলেন। নাউযুবিল্লাহ! হযরত যাকারিয়া আলাইহিস্ সালাম গাছের কাছে আশ্রয় চেয়েছিলেন। নাউযুবিল্লাহ! ইত্যাদি ইত্যাদি।

অথচ আহ্লে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত-এর আক্বীদা হচ্ছে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামসহ সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম মা’ছুম বা নিষ্পাপ। এবং উনারা প্রত্যেকেই শিরক্, কুর্ফ, কবীরা, ছগীরা এমনকি অপছন্দনীয় কাজ থেকেও পবিত্র এবং উনারা ছিলেন সম্পূর্ণরূপে ওহীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কেউ কেউ বলতে পারে যে, হাদীছ শরীফে তো নবীগণের তওবা কবূল ও গুনাহ-খতা ক্ষমা করার কথা বলা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য মূলতঃ উনাদের মর্যাদা-মর্তবা বুলন্দ বা বৃদ্ধির বিষয়টা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়া।

কাজেই, যারা আহ্্লে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত-এর আক্বীদার বিপরীত বক্তব্য প্রদান করবে এবং সেটা যারা  শুনবে ও বিশ্বাস করবে তারা প্রত্যেকেই ঈমান ও ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে মুরতাদ ও কাফিরে পরিণত হবে।

আরো উল্লেখ্য, আশূরা-এর দিনে সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল্ জান্নাহ, আশবাহু বি-রসূলিল্লাহ, আলে রসূলিল্লাহ হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুসহ আহ্লে বাইত-এর মহান সদস্য ও সঙ্গীগণ-এর কারবালা প্রান্তরে মর্মান্তিক শাহাদাত-এর জন্য ইয়াযিদ অবশ্যই দায়ী।  উলামায়ে কিরাম-এর আম ফতওয়া মতে সে চরম ফাসিক আর খাছ ফতওয়া মতে কাট্টা কাফির ও চিরজাহান্নামী। কিন্তু তার অপরাধের জন্য তার যিনি পিতা জলীলুল ক্বদর ছাহাবী, কাতিবে ওয়াহ্য়ী, আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে দোষারোপ করা বা উনার সমালোচনা করা সম্পূর্ণরূপে কুফ্রী। কারণ কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে হযরত ছাহাবায়ে কিরামগণের বিরোধিতকারী, বিদ্বেষ পোষণকারী বা সমালোচনাকারীদেরকে সরাসরি কাফির বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

অতএব, আশূরা মিনাল মুর্হরম-এর মূল শিক্ষা হচ্ছে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম, হযরত আহ্লে বাইত ও ছাহাবায়ে কিরামগণ সম্পর্কে সঠিক আক্বীদা ও সুধারণা পোষণ করা।

আল্লাহ পাক সকলকে এ শিক্ষা গ্রহণের তাওফীক দান করুন। আমীন।

মাহে রজব ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে শা’বান ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সম্মানিত রজবুল হারাম শরীফ, সম্মানিত শা’বান শরীফ ও সম্মানিত রমাদ্বান শরীফ মাস এবং প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রমাদ্বান শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে শাওওয়াল ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা