আরবী বছরের প্রথম মাস মুহররম। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ যে চারটি মাসকে হারাম বা সম্মানিত বলে ঘোষণা করা হয়েছে মুর্হরম মাস তন্মধ্যে অন্যতম। আসমান-যমীন সৃষ্টিকাল হতেই এ মাসটি বিশেষভাবে সম্মানিত হয়ে আসছে।
বর্ণিত আছে যে, এ মাসেরই দশ তারিখ ‘আশূরা’ নামক দিনটি বিশ্বব্যাপী এক আলোচিত দিন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুরু করে হযরত আদম আলাইহিস সালাম পর্যন্ত প্রায় সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম-উনাদের কোন না কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা এই আশূরা-এর দিনে সংঘটিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, আশূরা উপলক্ষে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে মসজিদের প্রায় খতীব-ইমাম এবং ওয়ায়িজদেরকে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর আক্বীদার বিপরীত বক্তব্য প্রদান করতে দেখা যায়। যা সম্পূর্ণরূপে কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। যেমন তারা বলে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম-উনাদের গুনাহখতা, দোষ-ত্রুটি থাকার কারণে উনারা তওবা-ইস্তিগফার করেছেন এবং উনাদেরকে ক্ষমা করা হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ! আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরের তৈরি নন। নাউযুবিল্লাহ! তিনি ইলমে গইব সম্পর্কে জানতেন না। নাউযুবিল্লাহ! তিনি আমাদের মত মানুষ। নাউযুবিল্লাহ! হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি গন্দম খেয়ে ভুল করেছিলেন। নাউযুবিল্লাহ! হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম তিনি দাওয়াতের কাজ বন্ধ করার কারণে আল্লাহ পাক-উনার গযবে পড়েছিলেন। নাউযুবিল্লাহ! হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম তিনি গাছের কাছে আশ্রয় চেয়েছিলেন। নাউযুবিল্লাহ! ইত্যাদি ইত্যাদি।
অথচ আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর আক্বীদা হচ্ছে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিসহ সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম মা’ছুম বা নিষ্পাপ। এবং উনারা সকলেই কুফর, শিরক, কবীরা, ছগীরা এমনকি অপছন্দনীয় কাজ থেকেও পবিত্র এবং উনারা ছিলেন সম্পূর্ণরূপে ওহী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
স্মরণীয় যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের তওবা কবূল ও গুনাহখতা ক্ষমার কথা যারা বলে তারা হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত تاب ও غفر শব্দের অভিধানগত অর্থের উপর ভিত্তি করে বলে থাকে যা আদৌ শুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা এবং হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে এমন অনেক শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে যার আভিধানিক অর্থ গ্রহণ করা হলে কুফরী হবে। যেমন আল্লাহ পাক উনার শান মুবারকে সূরা আলে ইমরান-এ مكر শব্দটি এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে সূরা দুহায় ضالا শব্দটি। এক্ষেত্রে উক্ত শব্দদ্বয়ের আভিধানিক অর্থ যথাক্রমে ‘চক্রান্ত’ ও ‘পথভ্রষ্ট’ গ্রহন না করে উনাদের মহানতম শান অনুযায়ী তা’বীলী অর্থ গ্রহনো করতে হবে। আর তাহলো مكر অর্থ ‘হিকমত বা কৌশল’ অর্থাৎ আল্লাহ পাক তিনি হিকমত বা কৌশল করলেন। এবং ضالا অর্থ ‘কিতাববিহীন’ অর্থাৎ আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কিতাববিহীন পেলেন অতঃপর কিতাব হাদিয়া করলেন।
ঠিক তদ্রপ تاب ও غفر শব্দ নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের শান মুবারকে ব্যবহৃত হয়েছে এর অর্থ উনাদের তওবা কবূল ও উনাদের ক্ষমা করা উদ্দেশ্য নয় বরং উদ্দেশ্য হচ্ছে উনাদের মা’ছূম বা নিষ্পাপ হওয়ার এবং উনাদের উচ্চতম মর্যাদা ও পবিত্রতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া এবং উনাদের নিজ নিজ উম্মতদেরকে তওবা ও ক্ষমাপ্রার্থনা করার জন্য তা’লীম দেয়া।
কাজেই, যারা আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর আক্বীদার বিপরীত বক্তব্য প্রদান করবে এবং সেটা যারা শুনবে ও বিশ্বাস করবে তারা প্রত্যেকেই ঈমান ও ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে মুরতাদ ও কাফিরে পরিণত হবে।
আরো উল্লেখ্য, আশূরা-এর দিনে সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, আশবাহু বি-রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালামসহ আহ্লে বাইত আলাইহিমুস সালাম-উনাদের মহান সদস্য ও সঙ্গীগণ-উনাদের কারবালা প্রান্তরে মর্মান্তিক শাহাদাত-এর জন্য ইয়াযিদ অবশ্যই দায়ী। উলামায়ে কিরাম-উনাদের আম ফতওয়া মতে সে চরম ফাসিক আর খাছ ফতওয়া মতে কাট্টা কাফির ও চিরজাহান্নামী। কিন্তু তার অপরাধের জন্য তার যিনি পিতা জলীলুল ক্বদর ছাহাবী, কাতিবে ওয়াহ্য়ী, আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দোষারোপ করা বা উনার সমালোচনা করা সম্পূর্ণরূপে কুফরী। কারণ কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-উনাদের বিরোধিতকারী, বিদ্বেষ পোষণকারী বা সমালোচনাকারীদেরকে সরাসরি কাফির বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
অতএব, আশূরা মিনাল মুহররমের মূল শিক্ষা হচ্ছে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম, হযরত আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে সঠিক আক্বীদা ও সুধারণা পোষণ করা।
-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ
মাহে যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা