আরবী বছরের প্রথম মাস মুহররম। চারটি হারাম বা সম্মানিত মাসের অন্যতম মাস এটি। এ মাসের দশ তারিখ দিনটি হচ্ছে ইয়াওমে আশূরা। যে দিনটি স্মরণীয় ও মার্যাদাম-িত দিন। আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে শুরু করে প্রথম নবী ও রসূল হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার পর্যন্ত প্রায় সকল নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের কোন না কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা এদিনেই সংঘটিত হয়েছে। ফলে এ দিনটির সাথে বহু আক্বীদা ও আমলের বিষয় সম্পৃক্ত হয়েছে।
উল্লেখ্য, বান্দা ও উম্মতের নাজাতের জন্য العقائد الصحيحة অর্থাৎ সঠিক বা শুদ্ধ আক্বীদা গ্রহণ পূর্বশর্ত। আর الاعمال الصالحة অর্থাৎ নেক বা সৎ কাজ হলো বান্দা ও উম্মতের মর্যাদা হাছিলের কারণ।
স্মরণীয় যে, আক্বীদা ও ঈমান এ বিষয় দু’টি এক ও অভিন্ন। আক্বীদা শুদ্ধ মানে ঈমান শুদ্ধ। কাজেই যার আক্বীদা শুদ্ধ তার ঈমান শুদ্ধ। শুদ্ধ আক্বীদা বা ঈমান ব্যতীত কেউই নাজাত লাভ করতে পারবে না। সে প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
والعصر ان الانسان لفى خسر الا الذين امنوا
অর্থ: “সময়ের ক্বসম, নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই মানুষেরা ক্ষতিগ্রস্ত তবে তারা নন যারা ঈমান এনেছেন।”
অর্থাৎ যে সকল বান্দা ও উম্মতের ঈমান-আক্বীদা শুদ্ধ কেবল তাঁরাই ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হওয়া থেকে রেহাই পাবে। আর যাদের ঈমান-আক্বীদা শুদ্ধ নয় তারা বাতিল ও নাহক্ব ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত। ফলে তারা যত আমলই করুক না কেন তাদের সে আমল আল্লাহ পাক উনার নিকট কবুল হবে না।
উল্লেখ্য, বান্দা ও উম্মতের হিদায়েত ও নাজাতের জন্য, সর্বোপরি আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি পাওয়ার জন্য যে বিষয়টি অপরিহার্য তাহলো হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের প্রতি শুদ্ধ আক্বীদা ও সুধারণা পোষণ করার পাশাপাশি উনাদেরকে অনুসরণ অনুকরণ করা। অথচ এ বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে বান্দা ও উম্মত সম্পূর্ণরূপে বিপরীত আক্বীদা পোষন করছে এবং মনগড়া আমলের অনুসরণ করছে। ফলে তারা হিদায়েতের পরিবর্তে গোমরাহী এবং জান্নাতের পরিবর্তে জাহান্নামের পথে ধাবিত হচ্ছে। নাঊযুবিল্লাহ!
যেমন তারা বলছে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের গুনাহখতা, দোষ-ত্রুটি থাকার কারণে উনারা তওবা-ইস্তিগফার করেছেন এবং উনাদেরকে ক্ষমা করা হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ! আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরের তৈরি নন। নাউযুবিল্লাহ! তিনি ইলমে গইব সম্পর্কে জানতেন না। নাউযুবিল্লাহ! তিনি আমাদের মত মানুষ। নাউযুবিল্লাহ! হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি গন্দম খেয়ে ভুল করেছিলেন। নাউযুবিল্লাহ! হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম তিনি দাওয়াতের কাজ বন্ধ করার কারণে আল্লাহ পাক উনার গযবে পড়েছিলেন। নাউযুবিল্লাহ! হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম তিনি গাছের কাছে আশ্রয় চেয়েছিলেন। নাউযুবিল্লাহ! ইত্যাদি ইত্যাদি।
অথচ আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর আক্বীদা হচ্ছে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিসহ সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা মা’ছুম বা নিষ্পাপ এবং উনারা সকলেই কুফর, শিরক, কবীরা, ছগীরা এমনকি অপছন্দনীয় কাজ থেকেও পবিত্র এবং উনারা ছিলেন সম্পূর্ণরূপে ওহী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
কাজেই, যারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর আক্বীদার বিপরীত আক্বীদা পোষণ করবে তারা প্রত্যেকেই ঈমান ও ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে মুরতাদ ও কাফিরে পরিণত হবে।
আরো উল্লেখ্য, আশূরা-এর দিনে শহীদে কারবালা, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, আশবাহু বিরসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনিসহ আহ্লে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহান সদস্য ও সঙ্গীগণ উনাদের কারবালা প্রান্তরে মর্মান্তিক শাহাদাতের জন্য ইয়াযিদ অবশ্যই দায়ী। শরীয়তের আম ফতওয়া মতে সে চরম ফাসিক আর খাছ ফতওয়া মতে কাট্টা কাফির ও চিরজাহান্নামী। কিন্তু তার অপরাধের জন্য তার যিনি পিতা জলীলুল ক্বদর ছাহাবী, কাতিবে ওয়াহ্য়ী, আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দোষারোপ করা বা উনার সমালোচনা করা সম্পূর্ণরূপে কুফরী। কারণ কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বিরোধিতকারী, বিদ্বেষ পোষণকারী বা সমালোচনাকারীদেরকে সরাসরি কাফির বলে উল্লেখ করা হয়েছে। একইভাবে হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম উনাদের বিরোধিতা ও সমালোচনা করাও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।
মাহে রজব ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে শা’বান ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
সম্মানিত রজবুল হারাম শরীফ, সম্মানিত শা’বান শরীফ ও সম্মানিত রমাদ্বান শরীফ মাস এবং প্রাসঙ্গিক আলোচনা