-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ
মাহে শাওওয়াল-এর পরবর্তী মাস ‘মাহে যিলক্বদ’। এটি আরবী এগারতম মাস এবং চারটি হারাম বা সম্মানিত মাসের মধ্যে একটি। এছাড়া এ মাসটি হজ্জের মাসসমূহেরও একটি। এ মাসেই হজ্জ পালনকারীগণ হজ্জের প্রস্তুতি গ্রহণপূর্বক হজ্জ পালনের উদ্দেশ্যে মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ গমন করে থাকেন।
প্রকাশ থাকে যে, হজ্জ দ্বীন ইসলামের পাঁচটি বুনিয়াদের একটি। অর্থাৎ প্রত্যেক স্বাধীন, বালেগ, সুস্থ, দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন মুসলমানের যদি সাংসারিক প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পর হজ্জে যাওয়া ও ফিরে আসা পর্যন্ত পরিবারবর্গের ভরণ-পোষণের অতিরিক্ত সম্বল বা পাথেয় থাকে, যানবাহনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকে এবং জান-মাল, ঈমান ও আমলের নিরাপত্তা থাকে, তবে তার প্রতি জীবনে একবার হজ্জ করা ফরয। মহিলাদের জন্য স্বামী অথবা কোন সচ্চরিত্রবান মাহরাম সঙ্গে থাকা শর্ত।
স্মরণযোগ্য যে, হজ্জ পালন করার জন্য যেসব শর্তের কথা উল্লেখ রয়েছে তারমধ্যে ঈমান ও আমলের নিরাপত্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “যার উপর হজ্জ ফরয সে যেন হজ্জ করতে গিয়ে নির্জনবাস ও তার সংশ্লিষ্ট কোন কাজ না করে এবং কোন প্রকার ফাসিকী বা নাফরমানীমূলক কাজ না করে এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে।” (সূরা বাক্বারা : আয়াত শরীফ-১৯৭)
অত্র আয়াত শরীফ দ্বারা সুস্পষ্টরূপে প্রতিভাত যে, হজ্জ করতে গিয়ে যদি কাউকে কোন ফাসিকী বা হারাম কাজের সম্মুখীন হতে হয় যেমন- ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া ইত্যাদি তাহলে তার উপর তখন আর হজ্জ ফরয হবে না। যেমনিভাবে কোন মহিলা যদি সারা পৃথিবীর মালিকও হয় আর তার যদি স্বামী কিংবা কোন সচ্চরিত্রবান মাহরাম না থাকে তাহলে তার উপর হজ্জ ফরয হবে না। কারণ স্বামী অথবা সচ্চরিত্রবান মাহরাম ব্যতীত হজ্জে যাওয়া শরীয়তে গ্রহনযোগ্য নয়। অর্থাৎ সচ্চরিত্রবান মাহরাম ব্যতীত হজ্জে যেতে শরীয়ত নিষেধ করেছে। অর্থাৎ হজ্জ ফরয হয় না।
উল্লেখ্য, হজ্জের জন্য যখন ছবি তুলতে বাধ্য হতে হয় এবং ছবি তোলার কারণে মহিলাদের পর্দা তরক হয় এছাড়া সউদী ওহাবী সরকারের মদদে মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ-এ হজ্জের স্থানসমূহে শত শত সিসি টিভি ও ক্যামেরা স্থাপন করে কোটি কোটি ছবি তোলা হয় এবং পর্দার প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে পুরুষ-মহিলা উভয়ের পর্দা নষ্ট করা হয় তখন এ অবস্থায় কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর নির্দেশ মুতাবিক মুসলমানদের জন্য কি করণীয় তা ছহীহ মুসলিম শরীফ-এ বর্ণিত হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন অন্যায় কাজ সংঘটিত হতে দেখে সে যেন তা হাত দ্বারা বাধা দেয়। যদি সে তা হাত দ্বারা বাধা দিতে না পারে তাহলে সে যেন যবান দ্বারা বাধা দেয়। যদি যবানের দ্বারাও বাধা দিতে না পারে তাহলে সে যেন অন্তরে তা ঘৃণা করে দূরে সরে থাকে। এরপর ঈমানের আর সরিষা পরিমাণ অংশও অবশিষ্ট থাকেনা।” (মুসলিম শরীফ)
অর্থাৎ প্রথমতঃ হাতে বাধা দেয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যারা হাতে বাধা দিবে না। দ্বিতীয়তঃ মুখে বাধা দেয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যারা মুখে বাধা দিবে না। তৃতীয়তঃ অন্তরে খারাপ জেনে যারা দূরে সরেও থাকবে না। তাদের মূলত ঈমান নেই। অথচ হজ্জ ফরয হওয়ার জন্য ঈমান থাকা বা ঈমানদার হওয়া প্রথম ও পূর্ব শর্ত।
উপরন্তু ছবি ও বেপর্দার মতো কঠিন হারাম ও কবীরা গুনাহর মধ্যে ডুবে গিয়ে যারা হজ্জ পালনের ইচ্ছা করবে তাদের সে হজ্জ কবুল হওয়া তো দূরের কথা সে হজ্জই তাদের জন্য লা’নতগ্রস্ত ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ হবে। কেননা ছহীহ হাদীছ শরীফ-এ সুস্পষ্টরূপে বর্ণিত রয়েছে, যে বেপর্দা হয় সে লা’নতগ্রস্ত, দাইয়ূছ ও জাহান্নামী। একইভাবে যে ছবি তোলে সেও জাহান্নামী ও গযবপ্রাপ্ত।
তাই হজ্জ ও উমরাহ করার পর যেখানে আমল আরো ভাল হওয়ার কথা সেখানে দেখা যায় সম্পূর্ণ বিপরীত। নাঊযুবিল্লাহ। তার মানে হলো- শরীয়তের হুকুম মুতাবিক হজ্জ ও উমরাহ পালিত হয়নি।
অতএব, শরীয়তের হুকুম মুতাবিক হজ্জ ও উমরাহ করার জন্য যামানার মহানতম ইমাম ও মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী উনার অনবদ্য তাজদীদ সউদী সরকারসহ প্রত্যেক সরকারের কাছে পৌঁছে দেয়া এবং তা মানতে বাধ্য করা।
আরো উল্লেখ্য, হজ্জের ফরযটি বদনী ও মালী উভয় ইবাদতের সমন্বয়ে আদায় করতে হয়। এজন্য আয়াত শরীফ-এ হজ্জ পালন করতে যেয়ে বদন অর্থাৎ শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা যেনো আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের আদেশ-নিষেধের খিলাফ অর্থাৎ উনাদের কোন নাফরমানীমূলক কাজ সংঘটিত না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে।
অনুরূপভাবে হজ্জ মালী ইবাদত অর্থাৎ হজ্জ পালন করতে অনেক টাকা-পয়সা খরচ করতে হয়। এখন এই টাকা-পয়সা হারাম পন্থায় অর্থাৎ চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, সুদ, ঘুষ, অপরের টাকা আত্মসাৎ ইত্যাদির মাধ্যমে উপার্জন করে হজ্জ করলে হজ্জ আদায় হবে না। সম্পূর্ণ হালাল পন্থায় উপার্জিত অর্থ বা টাকা-পয়সা ব্যয় করে হজ্জ করতে হবে।
কাজেই, শরীরকে হারাম ও কবীরা গুনাহ থেকে পবিত্র রেখে এবং পবিত্র মাল অর্থাৎ হালাল অর্থ দিয়ে হজ্জ আদায় করা হলে সে হজ্জই কেবল আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির জন্য হবে এবং সে হজ্জই হবে হজ্জে মাবরূর তথা আল্লাহ পাক উনার কাছে মকবুল হজ্জ। আর এ হজ্জেরই প্রতিদান জান্নাত বলে হাদীছ শরীফ-এ ঘোষণা করা হয়েছে।
মাহে রজব ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে শা’বান ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
সম্মানিত রজবুল হারাম শরীফ, সম্মানিত শা’বান শরীফ ও সম্মানিত রমাদ্বান শরীফ মাস এবং প্রাসঙ্গিক আলোচনা