-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ
আরবী বছরের বারতম বা সর্বশেষ মাস যিলহজ্জ। এ মাসের ১০ম তারিখ হচ্ছে ঈদুল আযহা বা কুরবানীর ঈদের দিন। এ মহান দিনে সূর্যোদয়ের পর সামর্থ্যবান তথা মালিকে নিসাব মুসলমানগণ দু’ রাকায়াত ঈদুল আযহার ওয়াজিব নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করার পর ওয়াজিব কুরবানী করে থাকেন।
উল্লেখ্য, কুরবানীর বিধান শুধু আমাদের জন্যেই দেয়া হয়েছে তা নয় পূর্ববর্তী উম্মতের প্রতিও এর বিধান প্রবর্তিত ছিল। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-
لكل امة جعلنا منسكا ليذكروا اسم الله على ما رزقهم من بهيمة الانعام.
অর্থঃ আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কুরবানীর বিধান দিয়েছি, যাতে তারা গৃহপালিত পশুর উপরে আল্লাহ তায়ালার নাম স্মরণ করে। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্টি ও নির্দেশ মুতাবিক আল্লাহ তায়ালার নামে পশু কুরবানী করে। (সূরা হজ্জ-৩৪)
হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে, সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত ফাতিমাতুয্ যাহরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বর্ণনা করেন, কুরবানী করাকালে পশুর নিকট দাঁড়িয়ে থাক। কেননা, কুরবানীর পশুর গর্দান বা গলা হতে নির্গত রক্তের বিনিময়ে তোমাদের (কুরবানীদাতার) সমস্ত গুণাহ মাফ করে দেয়া হবে। এর প্রথম ফোঁটা রক্ত নির্গত হতেই এই দুয়া পাঠ করা উচিত-
ان صلاتى ونسكى و محياى ومماتى لله رب العالمين.
“নিশ্চয়ই আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার হায়াত, আমার মউত সবকিছুই আল্লাহ পাক-এর জন্য, যিনি সমগ্র সৃষ্টিজগতের রব- পালনকর্তা।”
হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত রয়েছে, ছাহাবী হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এই কুরবানী কি? তিনি জাওয়াবে বললেন, তোমাদের পিতা হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর সুন্নত। তাঁরা পূনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এতে আমাদের জন্য কি পরিমাণ নেকী রয়েছে? তিনি বললেন, কুরবানীর পশুর প্রতিটি পশমের পরিবর্তে একটি করে নেকী রয়েছে। ছাহাবীগণ আবার জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! পশমওয়ালা পশুর ক্ষেত্রে কি হুকুম? তিনি বললেন, পশমওয়ালা পশুর প্রত্যেকটি পশমের পরিবর্তেও একটি করে নেকী রয়েছে। সুবহানাল্লাহ। (আহমদ, ইবনে মাজাহ, মিশকাত)
বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “হযরত দাউদ আলাইহিস্ সালাম আল্লাহ তায়ালার দরবারে প্রর্থনা জানান, বারে ইলাহী! আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মতগণ কুরবানী করলে কি পরিমাণ ছওয়াব পাবে? আল্লাহ তায়ালা জবাব দেন, কুরবানীর পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে কুরবানীদাতা দশটি নেকী লাভ করবে, তার দশটি গুণাহ ক্ষমা করা হবে এবং দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেয়া হবে। সুবহানাল্লাহ।
হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম পুনরায় জিজ্ঞাসা করেন, কুরবানীর পশু পেট চিরলে কি পরিমাণ ছওয়াব পাবে? আল্লাহ তায়ালা বলেন, কুরবানীদাতা কবর হতে উঠলে ক্ষুধা-পিপাসায় অস্থির হবে না এবং ক্বিয়ামতের ভয়-ভীতিও তাকে পাবে না। সুবহানাল্লাহ। আরো বলেন, কুরবানীর পশুর প্রতি টুকরা গোশ্তের বদলে কুরবানীদাতা জান্নাতে একেকটি মহল লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, হে দাউদ আলাইহিস্ সালাম! আপনি জেনে রাখুন, কুরবানীদাতার জন্য কুরবানীর পশু (পুলছিরাত পার হওয়ার) বাহন স্বরূপ হবে।
হাদীছ শরীফ মারফত জানা যায়, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বরাবরই কুরবানী করেছেন কখনও তা ছাড়েননি এবং ছাহাবীগণও কুরবানী করার ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন। কুরবানী না করে তার অর্থ দান করে দেয়ার বিধান শরীয়তে নেই। কেননা, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিংবা হযরত ছাহাবায়ে কিরামগণ এরূপ করেননি, অথচ উনাদের যুগেই এর জরুরত ছিল অধিক। বরং উনারা কুরবানী করেছেন এবং তার গোশ্ত ও চামড়া অভাবগ্রস্থদের মধ্যে বণ্টন করতে বলেছেন।
অতএব, প্রত্যেক সচ্ছল সামর্থবান মুসলমান নর-নারীর উচিত আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি হাছিলের উদ্দেশ্যে সম্পূর্ণ দোষমুক্ত হৃষ্টপুষ্ট, সুস্থ ও সবল পশু কুরবানী করা।
মাহে রজব ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে শা’বান ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
সম্মানিত রজবুল হারাম শরীফ, সম্মানিত শা’বান শরীফ ও সম্মানিত রমাদ্বান শরীফ মাস এবং প্রাসঙ্গিক আলোচনা