-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ
আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব নূরে মুজস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে চারটি মাস সম্মানিত বলে ঘোষণা করেছেন রজব মাস তারমধ্যে অন্যতম। এ মাসটি একাধিক কারণে ফযীলত লাভ করেছে।
যদিও সারা মাসের আমল করার তাকিদ রয়েছে তবে মাহে রমাদ্বান শরীফে আমলের তাকিদের বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। যার ফলে এ মাস আগমণের পূর্ব থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। বর্ণিত রয়েছে, মাহে রজব হচ্ছে বীজ বপনের মাস, মাহে শা’বান হচ্ছে পানি সেঁচের মাস আর মাহে রমাদ্বান শরীফ হচ্ছে ফসল কাটার মাস। অতএব, কেউ যদি রজব মাসে ইবাদতের বীজ বপন না করে এবং শা’বান মাসে তাতে পানি সেঁচ না করে তাহলে তার পক্ষে কি করে মাহে রমাদ্বান শরীফে তার ফসল কাটা সম্ভব হবে?
তাই হাদীছ শরীফ-এর বর্ণনায় দেখা যায়, যখন রজব মাসের চাঁদ উঠতো তখন আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুয়া করতেন, আয় আল্লাহ পাক! আমাদেরকে মাহে রজব ও শা’বান-এ বরকত দান করুন এবং মাহে রমাদ্বান শরীফ পর্যন্ত পৌঁছার তাওফীক দান করুন।
কাজেই, মাহে রজব-এর শুরু থেকেই আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি- রিযামন্দী লাভের জন্য নিয়ত করা, প্রস্তুতি গ্রহণ করা এবং কোশেশে নিয়োজিত হওয়া প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য অবশ্য কর্তব্য।
উল্লেখ্য, আজকে সাধারণ মুসলমান তো দূরের কথা মসজিদের অনেক ইমাম ও খতীব ছাহেবরাই জানেন না যে, বছরের কোন্ কোন্ রাতে খাছভাবে দুয়া কবুল হয়। এ বিষয়ে যামানার মহান মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী উনার তাজদীদী মুখপত্র ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ’-এ লেখা প্রকাশের পর হক তালাশী বহু মুসলমান পুরুষ-মহিলা সেটা জেনে ও আমল করে নিজেদেরকে ধণ্য করে নিয়েছেন।
হাদীছ শরীফ-এর বরাত দিয়ে আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এ উল্লেখ করা হয়েছে, নিশ্চয়ই দুয়া খাছভাবে পাঁচ রাতে কবুল করা হয়। প্রথম হচ্ছে রজব মাসের পহেলা রাত, এরপর হচ্ছে শা’বান মাসের মধ্য রাত অর্থাৎ শবে বরাত বা বরাতের রাত, তৃতীয় হচ্ছে লাইলাতুল ক্বদর বা ক্বদরের রাত আর চতুর্থ ও পঞ্চম হচ্ছে দু’ ঈদের দু’ রাত।
কাজেই, রজব মাসের পহেলা তারিখ রাতটি নামায-কালাম, যিকির-ফিকির, তওবা-ইস্তিগফার, দুরূদ শরীফ, ছলাত-সালাম, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, দুয়া-মুনাজাত ইত্যাদির মাধ্যমে সজাগ থেকে অতিবাহিত করা উচিত।
রজব মাসের পহেলা জুমুয়ার রাতটিও বিশেষ মর্তবার রাত। এ রাতের ফযীলত সম্পর্কেও অনেকেই অবহিত নয়। হাম্বলী মাযহাবের ইমাম যিনি হিজরী তৃতীয় শতাব্দীর মুজাদ্দিদ হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি একবার ফতওয়া দিলেন, লাইলাতুর রগায়িব-এর ফযীলত লাইলাতুল বরাত এবং লাইলাতুল ক্বদর অপেক্ষা বেশি। তিনি যখন এ ফতওয়া দিলেন তখন সমসাময়িক যারা ইমাম-মুজতাহিদ ছিলেন তাঁরা তাঁর কাছে এসে বললেন, হে সম্মানিত ইমাম! আমরা আপনাকে ইমাম মনে করি, মুজতাহিদ মনে করি। কিন্তু আপনি কি করে ফতওয়া দিলেন যে, লাইলাতুর রগায়িব-এর ফযীলত লাইলাতুল বরাত ও লাইলাতুল ক্বদর-এর চেয়ে বেশি। অথচ লাইলাতুল বরাত এবং লাইলাতুল ক্বদর-এর শ্রেষ্ঠত্ব ও ফযীলতের কথা কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে।
হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি আগন্তুক মুজতাহিদ-ইমামগণকে লক্ষ্য করে বললেন, আপনারা কি জানেন, লাইলাতুর রগায়িব কাকে বলে? তাঁরা জানতে চাইলে হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, লাইলাতুর রগায়িব হচ্ছে ঐ রাত যেই মুবারক রাতে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর আম্মা আলাইহাস সালাম-এর রেহেম শরীফ-এ তাশরীফ আনেন। (সুবহানাল্লাহ)
কাজেই, আল্লাহ পাক-এর হাবীব যদি তাঁর আম্মা আলাইহাস সালাম-এর রেহেম শরীফ-এ তাশরীফ না নিতেন তাহলে তিনি যমীনেও আসতেন না এবং তিনি যমীনে না আসলে লাইলাতুল বরাত ও লাইলাতুল ক্বদরও অস্তিত্ব লাভ করতো না। তিনি যখন একথা বললেন, তখন সকলেই তাঁর প্রদত্ত ফতওয়া মেনে নিলেন।
এ মাসেরই ২৭ তারিখ রাতটি হচ্ছে মি’রাজ শরীফ-এর রাত। এ মুবারক রাতে আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত প্রকাশের একাদশ বৎসরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ পাক মি’রাজ শরীফ করান। অর্থাৎ সরাসরি আল্লাহ পাক-এর দীদার বা সাক্ষাতে নিয়ে যান। হাক্বীক্বত যদিও আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টিকাল থেকেই সবসময় আল্লাহ পাক-এর দীদারে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল ধরে থাকবেন।
মাহে শা’বান ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
সম্মানিত রজবুল হারাম শরীফ, সম্মানিত শা’বান শরীফ ও সম্মানিত রমাদ্বান শরীফ মাস এবং প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে রমাদ্বান শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা