-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ
আরবী বৎসরের চতুর্থ মাস রবীউছ্ ছানী। এ মাসটি ওলীআল্লাহগণের ছাওয়ানেহ উমরী বা জীবনী মুবারক বর্ণনার খাছ মাস। কারণ এ মাসটিতে আল্লাহ পাক-এর লক্ষ্যস্থল ওলী হিজরী ষষ্ঠ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ও ইমাম সাইয়্যিদুল আওলিয়া, গউছুল আ’যম, আওলাদে রসূল, বড় পীর হযরত শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বিছাল শরীফ লাভ করেন।
আল্লাহ পাক উনার ওলীগণকে আখিরী রসূল, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নায়িব বা স্থলাভিষিক্ত রূপে মনোনীত করে থাকেন ফলে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিছাল শরীফ-এর পর ওলীআল্লাহগণের ইতায়াত ও ছোহবত উম্মতের জন্য ফরয করে দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-
يايها الذين امنوا اتقو الله وكونوا مع الصادقين.
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো এবং ছাদিক্বীনগণের সঙ্গী হয়ে যাও।
আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
من ذكركم الله رؤيته ومن زاد فى علمكم منظقه ومن ذكركم بالاخرة عمله.
অর্থ: যাঁকে দেখলে আল্লাহ পাক-এর কথা স্মরণ হয়, যাঁর কথা বা নছীহত শুনলে দ্বীনি ইল্ম্ বৃদ্ধি হয় এবং যাঁর আমল দেখলে পরকালের আমল তথা সুন্নতের আমল করতে ইচ্ছে হয়।”
অতএব প্রকৃত ওলীআল্লাহর পরিচয় জেনে তারপর উনার কাছে বাইয়াত হয়ে অনুসরণ অনুকরণ করতে হবে। এ সম্পর্কে আল্লাহ পাক-এর হাবীব নিজেই বলেছেন
فانظروا عمن تأخذون دينكم
অর্থ: তোমরা কার নিকট থেকে দ্বীন গ্রহণ করছো তাকে দেখে নাও অর্থাৎ তার আক্বীদা-আমল-আখলাক্ব সবকিছু কুরআন-সুন্নাহ মুতাবিক কি না তা যাচাই করে দেখবে।
যেমন এ প্রসঙ্গে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, হযরত আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি ইলমে ফিক্বাহর উপর লেখা-পড়া শেষ করে ইলমে তাছাউফ হাছিল করার জন্য একজন ওলীআল্লাহ খোঁজ করছিলেন। তিনি অনেকের কাছেই গেলেন। কিন্তু উনি যেহেতু লেখা-পড়া জাননেওয়ালা অনেক বড় আলিম ছিলেন তাই কাউকে উনার পছন্দ হচ্ছিল না; যার নিকট উনি বাইয়াত গ্রহণ করবেন। তখন উনাকে উনার এক সঙ্গী তিনিও বড় আলিম ছিলেন তিনি সাইয়্যিদুত্ ত্বায়িফা হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর পরিচয় দিয়ে বললেন, আপনি উনার দরবার শরীফে যান, আশা করি উনাকে আপনার পছন্দ হবে। সে মুতাবিক হযরত আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি সাইয়্যিদুত্ ত্বায়িফা হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দরবার শরীফে গেলেন এবং সেখানে একাধারে দশদিন অবস্থান করলেন। অতঃপর বাইয়াত না হয়েই বাড়ীতে আসার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন। ঠিক সেই মুহূর্তে আল্লাহ পাক-এর ওলী উনাকে কাছে ডাকলেন এবং বললেন, আপনার নাম কি? তিনি বললেন, আবূ বকর শিবলী। আল্লাহ পাক-এর ওলী বললেন, আপনি কি ঐ আবূ বকর শিবলী যিনি চারশ উস্তাদের কাছে লেখা-পড়া করেছেন, চল্লিশ হাজার হাদীছ শরীফ মুখস্থ করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ আমি সেই আবূ বকর শিবলী। আল্লাহ পাক-এর ওলী বললেন, আপনি কেন এসেছিলেন? বললেন, বাইয়াত হওয়ার জন্য। বাইয়াত না হয়ে যে চলে যাচ্ছেন? বললেন, আমি দশদিন অবস্থান করলাম কিন্তু একটা কারামতও দেখলাম না সেজন্য চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা শুনে আল্লাহ পাক-এর ওলী বললেন, আপনি যে আমার দরবার শরীফে দশদিন অবস্থান করেছেন এই দশদিনের ভিতরে আমাকে কোন সুন্নত-মুস্তাহাবের খিলাফ আমল করতে দেখেছেন? তিনি জবাব দিলেন, না, তা দেখিনি। আল্লাহ পাক-এর ওলী বললেন, এটাই হচ্ছে আমার সবচেয়ে বড় কারামত। কারণ ইবলিস চোখের পলকে সারা দুনিয়া ঘুরে আসতে পারে, সে আগুনের তৈরি আগুনে বসে থাকতে পারে, বাতাসে উড়তে পারে, পানির উপর চলতে পারে অনেক অলৌকিক ঘটনাই সে দেখাতে পারে কিন্তু সে সুন্নতের আমল করতে পারে না।
হযরত আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি এসব শুনে মাথা নিচু করে ফেললেন এবং বললেন, হুযূর! বেয়াদবি মাফ করবেন, আমি বুঝতে পারিনি, আমাকে দয়া করে বাইয়াত করান। তিনি বাইয়াত হয়ে গেলেন।
এ ঘটনা থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, যিনি সুন্নতের পরিপূর্ণ অনুসারী হবেন তিনিই আল্লাহ পাক-এর প্রকৃত ওলী। উনার কাছে বাইয়াত হওয়া, উনার ছোহবত ইখতিয়ার করা, উনাকে ইতায়াত করে প্রকৃত মু’মিন মুসলমান হওয়ার জন্য কোশেশ করা সকলের জন্য ফরয।
মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে ছফর ও উনার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
সম্মানিত মাহে রবীউল আউওয়াল শরীফ ও উনার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে রবীউছ ছানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা -হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ