-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ
আহলান সাহলান- হে মাহে রমাদ্বান। হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, রমাদ্বান শরীফ অত্যন্ত বরকতময় মাস। এ মাসের মধ্যে রয়েছে লাইলাতুল ক্বদর যা হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা তিনি এ মাসের রোযা ফরয করে দিয়েছেন। আর হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রাতের বেলা তারাবীহ নামাযকে সুন্নত করে দিয়েছেন। এ মাসে একটি নফল আমল একটি ফরয আমলের সমান এবং একটি ফরয আমল সত্তরটি ফরয আমলের সমান। এটি ছবরের মাস; যার প্রতিদান হলো জান্নাত। এটি আল্লাহ পাক উনার ভয় ও মুহব্বতে ক্রন্দনের মাস। এ মাসে মু’মিনদের রিযিক বৃদ্ধি পায়। যে একজন রোযাদারকে ইফতার করায় তার পাপ মোচন হয় এবং সে একজন ক্রীতদাস মুক্ত করে দেয়ার প্রতিদান প্রাপ্ত হয়। এছাড়া সে নিজের রোযার ছওয়াব তো পাবেই তদুপরি আরেক রোযাদারের ছওয়াবও সে লাভ করবে। এ ফযীলত শুনে ছাহাবায়ে কিরাম আরয করলেন, সকলের তো ইফতার করানোর সামর্থ্য নেই। তখন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, এক চুমুক দুধ অথবা একটি খেজুর অথবা এক গ্লাস পানি দ্বারা ইফতার করালেও বর্ণিত প্রতিদানসমূহ লাভ করবে। আর যে ব্যক্তি রোযাদারকে তৃপ্তিসহকারে পানাহার করাবে আল্লাহ পাক তিনি আমার হাউজে কাওছার থেকে তাকে এমনভাবে পরিতৃপ্ত করাবেন, জান্নাতে প্রবেশের পূর্ব পর্যন্ত সে আর পিপাসিত হবে না। এ মাসে প্রথমভাগে রহমত, মধ্যভাগে মাগফিরাত ও শেষভাগে জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের।
হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে, রোযা হচ্ছে ঢালস্বরূপ। রোযাদারের উচিত সে যেনো অনাবশ্যক বাক্যালাপ থেকে বিরত থাকে। কেউ যদি রোযাদারকে অন্যায় কথা বলে কলহে লিপ্ত হতে চায় তবে তাকে বিনয়ের সাথে বলো, আমি রোযাদার। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত রয়েছে, রোযা এবং কুরআনুল কারীম ক্বিয়ামতের দিন বান্দাদের জন্য সুপারিশ করবে। রোযা বলবে, বারে ইলাহী! আমি এই ব্যক্তিকে দিনের বেলা পানাহার ও নির্জন অবস্থান থেকে বিরত রেখেছিলাম। কাজেই আপনি আমার সুপারিশ কবুল করুন। কুরআনুল কারীম বলবে, বারে ইলাহী! আমি এই ব্যক্তিকে রাতের বেলা নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছিলাম। কাজেই আপনি আমার সুপারিশ কবুল করুন। অতঃপর উভয়ের সুপারিশ কবুল করা হবে। (বায়হাকী শরীফ)
হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে, রমযান মাসের শুভাগমন ঘটলে শয়তান ও অবাধ্য জ্বিনগুলোকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, দোযখের সবগুলো দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং বেহেশতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। একজন ঘোষক এই মর্মে ঘোষণা দেন, হে কল্যাণ অন্বেষণকারী! জাহান্নামের পথে চলা বন্ধ করো। রমযানের প্রতিটি রাতেই এ ঘোষণা দেয়া হয়।
মূলত এ মহিমান্বিত মাসটি হাক্বীক্বী তাক্বওয়া হাছিলের মাস। তাক্বওয়ার একটা অর্থ হলো আল্লাহভীতি অর্থাৎ আল্লাহ পাক উনার ভয়ে যাবতীয় পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা। যেমন- রোযাদারের ঘরে খাদ্য-পানীয় মওজুদ থাকা সত্ত্বেও এবং তার পানাহার করার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সে কিন্তু তা খায় না বা পান করে না। এমনকি দেখা যায়, কেউ রোযা রেখে স্বপ্নেও কিছু খেলে এ ব্যাপারে শরীয়তের মাসয়ালা জিজ্ঞেস করে। এই যদি হয় রোযার ক্ষেত্রে তাক্বওয়ার অবস্থা তাহলে অন্যান্য আমলের ক্ষেত্রে কি তাক্বওয়ার হুকুম নেই? অবশ্যই রয়েছে।
আল্লাহ পাক তিনি মুসলমান নর-নারীর জন্য মাহে রমাদ্বান শরীফ-এর রোযা যেমনি ফরয করেছেন তেমনি তাদের জন্য ফরয করেছেন পর্দা। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, æহে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি মু’মিন ও মু’মিনাদেরকে বলুন, তারা যেনো তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের ইজ্জত-আবরুকে হিফাযত করে।”
হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, æবেহেশতের দরজায় লিপিবদ্ধ রয়েছে, ‘দাইয়ূছ’ বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না। ‘দাইয়ূছ’ হলো ওই ব্যক্তি যে নিজে পর্দা করে না এবং তার অধীনস্থদেরকে পর্দা করায় না।” (মুসনাদে আহমদ)
অনুরূপ মুসলমান পুরুষ-মহিলাদের জন্য ছবি তোলা হারাম করা হয়েছে। হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন- æপ্রত্যেক ছবি তোলনেওয়ালা ও তোলানেওয়ালা জাহান্নামী।” (মুসলিম শরীফ)
এমনিভাবে আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা যেসব বিষয় পালন করার জন্য আদেশ কিংবা নিষেধ করেছেন সেসব বিষয় পালনের ক্ষেত্রে তাক্বওয়া কোথায়? বরং সেসব বিষয়ের ক্ষেত্রে তাক্বওয়ার বিপরীতে চরমভাবে নাফরমানীর অনুসরণ করা হচ্ছে। ফলে জান্নাতের পরিবর্তে তারা জাহান্নামকে ওয়াজিব করে নিচ্ছে। নাঊযুবিল্লাহ!
কাজেই, রোযার ন্যায় সর্বক্ষেত্রে ‘তাক্বওয়া’ বা আল্লাহভীতি অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য অবশ্য কর্তব্য। আর এই তাক্বওয়া সত্যিকার ওলীআল্লাহ উনার ছোহবত ব্যতীত অর্থাৎ উনার রূহানী ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ ব্যতীত অর্জন করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। এ মর্মে আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, æহে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো অর্থাৎ আল্লাহভীতি অর্জন করো। এবং এজন্য অর্থাৎ আল্লাহভীতি অর্জন করার জন্য ছাদিক্বীন অর্থাৎ আল্লাহ পাক উনার ওলী উনাদের ছোহবত ইখতিয়ার করো।” (সূরা তওবা : আয়াত শরীফ-১১৯)
‘ছাদিক্বীন’-এর ব্যাখ্যায় হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, যাঁকে দেখলে আল্লাহ পাক উনার কথা স্মরণ হয়, যাঁর কথা শুনলে দ্বীনি ইলম বৃদ্ধি হয় এবং যাঁর আমল দেখলে পরকালের আমল করতে আগ্রহ পয়দা হয়। (মুসনাদে আহমদ)
বলার অপেক্ষা রাখে না, উক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর হাক্বীক্বী মিছদাক্ব যামানার মুজাদ্দিদ ও ইমামগণ। আর বর্তমান যামানার মুজাদ্দিদ ও ইমাম হলেন মুজাদ্দিদ আ’যম, আওলাদে রসূল, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী।
অতএব, প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উচিত উনার মুবারক ছোহবত ইখতিয়ার করে হাক্বীক্বী তাক্বওয়া অর্জনের কোশেশ করা। আল্লাহ পাক তিনি সবাইকে এই তাওফীক দান করুন। আমীন।
মাহে যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা