মাহে রমাদ্বান শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ১৯০তম সংখ্যা | বিভাগ:

 -হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

আহলান ওয়া সাহলান হে মাহে রমাদ্বান। এ মাসটি উম্মতে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য ফযীলত হাছিলের মাস। এ মাসটির মধ্যে লাইলাতুল ক্বদর নামে একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উম্মতে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য এ মাসের রোযাকে ফরয করেছেন। আর আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তারাবীহ নামাযকে সুন্নত করে দিয়েছেন। এ মাসের একটি নফল আমল অন্য মাসের একটি ফরয আমলের সমান এবং একটি ফরয আমল অন্য মাসের সত্তরটি ফরয আমলের সমান। কিন্তু পাপের ক্ষেত্রে একটির জন্য একটিই লেখা হবে। এর প্রথমভাগ রহমতের, মধ্যভাগ মাগফিরাতের এবং শেষভাগ নাযাতের।

অতএব, এ মাসে প্রত্যেক মুসলমান, বালিগ-বালিগা ও সুস্থ ব্যক্তির জন্য দিনে রোযা রাখা এবং রাতে তারাবীহ নামায পড়া অপরিহার্য কর্তব্য। হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি ঈমান ও ইখলাছের সাথে এ মাসে রোযা রাখবে তার পূর্বের গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হবে এবং যে ব্যক্তি ঈমান ও ইখলাছের সাথে এ মাসে রাত্রিতে ইবাদতে কাটাবে তারও পূর্বের গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হবে এবং যে ব্যক্তি ঈমান ও ইখলাছের সাথে ক্বদরের রাত্রি ইবাদতে কাটাবে তারও পূর্বকৃত গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হবে।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত)

সাধারণতঃ রোযা বলতে ছুবহে ছাদিক থেকে শুরু করে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত নির্জন অবস্থান ও পানাহার থেকে বিরত থাকাকে বুঝায়। তবে এর সাথে সাথে মিথ্যা, গীবত, চোগলখুরী, ঝগড়া-বিবাদ, মারামারি-কাটাকাটি, গালিগালাজ, অশ্লীল-অশালীন, ফাসিকী ও নাফরমানিমূলক কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, “আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে রমযান মাসে খারাপ কাজ করে, শরাব পান করে, ব্যভিচার করে, এমন ব্যক্তি রমযানের রোযা রাখলেও তা কবুল হবে না। বরং আল্লাহ পাক, তাঁর ফেরেশতাকুল, আসমানের সব অধিবাসী পরবর্তী রমযান মাসের আগ পর্যন্ত ঐ ব্যক্তির উপর লা’নত বর্ষণ করতে থাকেন। যদি পরবর্তী রমযান মাসের আগে ঐ ব্যক্তি মারা যায় তবে তার কাছে এমন কোন নেকী থাকবে না, যা নিয়ে সে আল্লাহ পাক-এর সমীপে হাযির হবে।” (গুনিয়াতুত ত্বালিবীন)

প্রতিভাত হলো, শরীয়তের কোন বিধান পালনকালে বা পালন করতে গিয়ে শরীয়তের খিলাফ কোন কাজ করা যাবে না। যদি কেউ করে তাহলে সেটা আদৌ কবুল হবে না। যেমন কেউ রোযা রেখে বেগানা মহিলার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ, আলাপ-আলোচনা করলো কিংবা টিভিতে অনুষ্ঠান দেখলো সে তো ফাসিকী ও নাফরমানিমূলক কাজই করলো। এমন ব্যক্তির রোযা-নামাযের কি গুরুত্ব থাকতে পারে।

কেননা হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “কতক রোযাদার এরূপ আছে যাদের রোযা দ্বারা ক্ষুধার্ত বা পিপাসিত থাকা ছাড়া কিছুই অর্জিত হয় না এবং কতক রাত্রিতে সজাগ থেকে নামায আদায়কারী আছে যাদের রাত্রি জাগরণ ছাড়া আর কিছুই লাভ হয় না।” (দারিমী, মিশকাত, মাছাবীহুস সুন্নাহ, মিরকাত)

মূলতঃ ইবলীস তার অনুসারী উলামায়ে ‘ছূ’দের মাধ্যমে আমাদের নফসের চাহিদা অনুযায়ী ইসলাম পালন করাচ্ছে। ইবলীস উলামায়ে ‘ছূ’দের মাধ্যমে ফতওয়া দিচ্ছে, তুমি টিভি দেখ, ছবি তোল, গান-বাজনা করো বা শোন, খেলাধুলা করো বা দেখ, বেপর্দা হও, বেশরা কাজ করো, সুদ খাও, ঘুষ খাও, গণতন্ত্র করো ইত্যাদি যাই করো না কেন তুমি পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ো, রোযা রাখো, হজ্জ করো, যাকাত দাও, দান ছদক্বা করো ইহাই তোমার জন্য যথেষ্ট। আর উক্ত ফতওয়া অনুসারে আমরা নিশ্চিন্তে আমল করে যাচ্ছি। কিন্তু আমরা কখনও ভাবছি না যে, আসলে উক্ত ফতওয়া অনুযায়ী আমল করাটা কতটুকু ইসলাম তথা শরীয়ত সম্মত।

প্রকৃতপক্ষে উক্ত ফতওয়া অনুযায়ী চলা বা আমল করা আদৌ শরীয়ত সম্মত নয়। কারণ শরীয়ত যা করতে আদেশ করেছে আপনি তা করছেন ভাল কথা। কিন্তু শরীয়ত যা থেকে বিরত থাকতে বলেছে বা যা নিষেধ করেছে তা থেকে আপনি বিরত না থেকে বরং তা অবাধে করে যাচ্ছেন আর ধারণা করছেন আপনি সাচ্চা মুসলমান। নাঊযুবিল্লাহ। আপনি নামাযী, মুছল্লী, রোযাদার, দানশীল, হাজী ছাহেব। নাঊযুবিল্লাহ। আপনি কখনো কি ফিকির করেছেন, আপনি যে নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, দান-ছদক্বা করছেন তা আল্লাহ পাক-এর দরবারে কবুল  হচ্ছে না। অন্যথায় উক্ত সব আমল করার পরও আপনি কি করে হারাম ও কুফরী কাজে মশগুল থাকতে পারেন? আপনি কি জানেন, মুছল্লী তথা ইবাদতগোযার ব্যক্তিদের জন্য আল্লাহ পাক জাহান্নাম অপরিহার্য ঘোষণা করেছেন। যা কুরআন শরীফ-এর সূরা মাউন-এর মধ্যে এবং ছহীহ মুসলিম শরীফ-এ বর্ণিত হাদীছ শরীফ-এর মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে।

হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে “যে ছবি তোলে, আঁকে, রাখে প্রত্যেকেই জাহান্নামী।” (বুখারী ও মুসলিম)

হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে, “বেহেশতের দরজায় লিখিত রয়েছে, ‘দাইয়ূছ’ অর্থাৎ যে নিজে পর্দা করে না এবং তার অধিনস্তদেরকে পর্দা করায়না সে বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না।” (মুসনাদে আহমদ)

এখন আপনি নিজেই চিন্তা করে দেখুন, আপনার জায়ে ঠিকানা জান্নাতে না জাহান্নামে।

মাহে রজব ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে শা’বান ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সম্মানিত রজবুল হারাম শরীফ, সম্মানিত শা’বান শরীফ ও সম্মানিত রমাদ্বান শরীফ মাস এবং প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রমাদ্বান শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে শাওওয়াল ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা