মাহে শাওওয়াল ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ১৮১তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

মাহে রমাদ্বান শরীফ-এর পরবর্তী মাস ‘শাওওয়াল’। এ মাসটিতে বান্দার গুণাহ করার আশঙ্কা খুব বেশি থাকে। কারণ, রমাদ্বান মাসে আবদ্ধ থাকার পর শয়তান এবং সদ্যমুক্ত কু-রিপুগুলি দ্বিগুণভাবে উত্তেজিত হয়ে মানুষকে কুপথে পরিচালনার জন্য উঠে পড়ে লেগে যায়। সুতরাং এ মাসে গুণাহ হতে বেঁচে থাকা খুবই কঠিন কাজ। এ জন্যেই আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক হাদীছ শরীফে ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি শাওয়াল মাসে নিজেকে গুণাহ থেকে হিফাযত করে তার জন্য আল্লাহ পাক বেহশ্ত নির্দিষ্ট করে রাখেন।” সুবহানাল্লাহ।

জানা আবশ্যক, বান্দার গুণাহ থেকে বাঁচার উপায় কি? এর জাওয়াবে মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, আল্লাহ পাক-এর রহমত ব্যতীত কারো পক্ষে পাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।

এখন মানুষ রহমত পাবে কোথায়? এর জাওয়াবে তিনি কালামুল্লাহ শরীফ-এর আয়াত শরীফ উল্লেখ করে বলেন-

ان رحمة الله قريب من المحسنين

“নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক-এর রহমত ওলীগণের নিকটে।” (সূরা আ’রাফ-৫৬)

আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর ওয়াজ শরীফ থেকে একটি ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ হলো, ত্রয়োদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আমীরুল মু’মিনীন হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে এক মাওলানা যে সবেমাত্র বাইয়াত গ্রহণ করেছে, সে জিজ্ঞেস করলো, হুযূর! পীর ছাহেব মুরীদের কি কাজে আসে? মৌখিক জবাব দিলে মুরীদ বুঝবে না জেনে পীর ছাহেব কোন জাওয়াব দিলেন না। এর কয়েকদিন পরেই উক্ত মাওলানা চাকুরীর খোঁজে কলিকাতা যাবে। যাওয়ার পূর্বে পীর ছাহেব ক্বিবলার অনুমতি নিতে আসলে পীর ছাহেব বললেন, কলিকাতায় গেলে সেখানে অমুক নামে আমার একজন মুরীদ আছে, তুমি তার সাথে দেখা করো। পীর ছাহেব ক্বিবলার ইজাযত ও দুয়া নিয়ে উক্ত মাওলানা কলিকাতা গিয়ে পৌঁছল। পৌঁছে পীর ছাহেব ক্বিবলার কথা মুতাবিক সেই মুরীদের সাথে সাক্ষাত করলো। উক্ত মুরীদ মাওলানার থাকা-খাওয়ার সব বন্দোবস্ত করলেন। সেখানে থেকে মাওলানা চাকুরি খুঁজতে থাকলো। বেশ কিছুদিন থাকার পরও যখন চাকুরির কোন ব্যবস্থা হলো না। তখন মাওলানা বাড়ীতে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিল। তার বাড়ীতে ফেরার কথা শুনে উক্ত মুরীদ পীর ছাহেব ক্বিবলাকে হাদিয়ার জন্য বেশ কিছু টাকা মাওলানার কাছে দিলেন। এবং আলাদাভাবে মাওলানার খরচের জন্যও কিছু টাকা দিলেন।

মাওলানা সেটা নিয়ে বাড়ীতে রওয়ানা করলো। কিছুদূর আসার পর রাস্তার পাশে পতিতাবৃত্তির একটা সাইন বোর্ড দেখে মাওলানা সেখানে থেমে গেল এবং সেই হাদিয়ার টাকা দিয়ে সেখানে রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নিল।

যেই বাড়ীতে পতিতাবৃত্তির কাজ হতো সেই বাড়ীর চারদিকে চারটি রাস্তা ছিল। প্রথমে মাওলানা একটা রাস্তা দিয়ে সেই বাড়ীতে প্রবেশ করতে গিয়ে দেখতে পেল, আল্লাহ পাক-এর ওলী হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি একটা তরবারী হাতে নিয়ে সেখানে পায়চারি করছেন। মাওলানা সেটা দেখে ভয়ে পালিয়ে গেল। বেশকিছু সময় অপেক্ষা করে বাড়ীর অপরদিকে দ্বিতীয় আরেক রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করতে গেল। কিন্তু সে রাস্তায় গিয়েও মাওলানা দেখতে পেল, আল্লাহ পাক-এর ওলী হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তরবারী হাতে নিয়ে পায়চারি করছেন। এমনিভাবে মাওলানা তৃতীয় ও চতুর্থ রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করতে গিয়ে একইভাবে বাধাগ্রস্ত হলো। আর এদিকে রাত্রিও শেষ হয়ে গেল।

যখন সকাল হলো তখন মাওলানা চিন্তা করতে লাগলো যে, ব্যাপারটা কি ঘটলো! চিন্তা-ভাবনা করে সে সেই বাড়ীতে গিয়ে বললো, আমি তো টাকা দিয়ে কন্ট্রাক্ট করেছিলাম আসার জন্য কিন্তু এই ঘটনা ঘটেছে। ঘটনা শুনে মহিলা বললো, আমি আল্লাহ পাক-এর ওলী হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে চিনি। এই ঘটনা মূলতঃ উনি আপনাকে পাপ থেকে সাবধান করার জন্যই ঘটিয়েছেন। আপনি যদি আমার সাথে সাক্ষাত করতেই চান তাহলে হালালভাবে করতে পারেন। তখন মাওলানা সেই মহিলাকে বিয়ে করে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসে। বাড়ীতে এসে চিন্তা করতে লাগলো, পীর ছাহেবের কাছে পাঠানো হাদিয়া তো খরচ করে ফেলেছি, এখন উনার দরবারে যাব কি যাব না। আবার এদিকে এটাও ভাবছে, হাদিয়া যে পাঠানো হয়েছে এটাতো আর উনি জানেন না। নাউযুবিল্লাহ। ইত্যাদি নানান ভাবনা-চিন্তা করে পীর ছাহেব-এর দরবারে সে পূর্বের মতো আসা-যাওয়া করতে লাগলো। পীর ছাহেবও কিছু বলছেন না। এভাবে কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর মাওলানা আবার জিজ্ঞেস করে বসলো, হুযূর! পীর ছাহেব মুরীদের কি কাজে আসে? এ কথা শুনামাত্র আল্লাহ পাক-এর ওলী হযরত সাইয়্যিদ আহমদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি ধমক দিয়ে বললেন, হে মাওলানা! তুমি এখনও জিজ্ঞেস করছো পীর ছাহেব মুরীদের কি কাজে আসে? আমার সেই হাদিয়া কোথায়? তুমি যে পতিতালয়ে প্রবেশ করার জন্য উদ্যত হয়েছিলে সেখান থেকে কে তোমাকে ফিরালো? এরপরও কি তোমার বুঝতে বাকী আছে যে, পীর ছাহেব মুরীদের কি কাজে আসে? তখন মাওলানা অনুতপ্ত হয়ে পীর ছাহেব ক্বিবলার ক্বদম মুবারকে পড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করতে লাগলো।

অতএব, আজকে তাবৎ নামধারী মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাসসির, শাইখুল হাদীছ, মুরুব্বী, ছূফী-দরবেশদের হরতাল, লংমার্চ, বেপর্দা, বেহায়াপনা, ছবি, টিভি, গান-বাজনা, খেলাধুলা, ভোট, নির্বাচন, গণতন্ত্র ইত্যাদি হারাম ও কুফরী কাজে জড়িত হওয়ার পিছনে মূলতঃ সে একই কারণ। সেটা হলো, তারা যামানার লক্ষ্যস্থল ওলী, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসুল, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর ছোহবত থেকে দূরে রয়েছে এবং তাদের অনেকে আবার উনার বিরোধিতা ও সমালোচনায়ও লিপ্ত রয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ।

মাহে যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে ছফর ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা